Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নন-এমপিও’র অনশনে ১৬ জন অসুস্থ অনশনে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী শিক্ষকরা

| প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : এমপিওভুক্তির দাবিতে অনশনরত ১৬জন শিক্ষক-কর্মচারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গতকাল (সোমবার) দ্বিতীয় দিনের মতো জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তারা অনশন কর্মসূচি পালন করেন। সরকারস্বীকৃত ৫ হাজার ২৪২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্তির জন্য তারা এই আন্দোলন করছেন। শিক্ষকদের দাবি, শিক্ষকতা করে পরিবার চালাতে পারছেন না তারা। যুগের পর যুগ কেটে গেলও তাদের বেতন ছাড়াই চাকরি করতে হচ্ছে।
আন্দোলনরত নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ বিনয় ভূষণ রায় জানান, ১৬ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অসুস্থ শিক্ষকদের সরকারিভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে চিকিৎসা টিম দেওয়ার আবেদন করেছিলাম, কিন্তু তারা আমাদের আবেদন গ্রহণ করেনি। এখন যারা অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের কাছ থেকেও টাকা আদায় করা হচ্ছে। বাধ্য হয়ে কয়েকজন শিক্ষককে কর্মসূচিস্থলেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সরকারের কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি বলে জানান এই শিক্ষক নেতা। এর আগে গত মঙ্গলবার থেকে শনিবার পর্যন্ত একই দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি করে শিক্ষক কর্মচারি ফেডারেশন। বিনয় ভূষণ রায় জানান, সরকারের তালিকায় যোগ্য ও স্বীকৃতপ্রাপ্ত পাঁচ হাজার ২৪২টি নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক বছরের পর বছর বিনা বেতনে পাঠদান করে যাচ্ছেন, তাদেরকে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। নন-এমপিও এসব স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২৫ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। এই শিক্ষক নেতা জানান, ২০১০ সালে সরকার এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে। বাকি ওই নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে পর্যায়ক্রমে এমপিওভুক্ত করার কথা ছিল। কিন্তু কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১০ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত বিনা বেতনে শিক্ষকরা শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন।
শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের কৃতিত্বের দাবিদার হলেও আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের সাথে সেই ফলাফলের আনন্দের অংশীদার হতে পারিনি। তাছাড়াও ১ জানুয়ারি বই উৎসবেও অংশগ্রহণ করতে পারিনি। আমরণ অনশনের ২য় দিনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দ শারীরিক ও মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। আজকে (গতকাল) ১৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী অসুস্থ্য হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম চিলখালা মডেল কলেজের মোঃ ফরহাদ, বরিশালের আল-ইখন দাখিল মাদরাসার মোঃ বজলুর রহমান, কুষ্টিয়া খোকসা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আব্দুর রাজ্জাক, বরিশালের আল ইখওয়াসা দাখিল মাদরাসার ফজলুর রহমানের অবস্থা গুরুতর। এদিকে গতকাল আমরণ অনশন কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন, ডক্টরস ফর হেলথ এন্ড এনভায়রনমেন্ট এর সভাপতি প্রফেসর ডাঃ এম.এ সাঈদ (বারডেম), গণতান্ত্রিক বামমোর্চার সমন্বয়ক সাইফুল হক, সিপিবি’র কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশিদ ফিরোজ ও খালেকুজ্জামান লিপন, ন্যাপের সম্পাদক পার্থ সারথী চক্রবর্তী, সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য ক্বাফি রতন ও জলি তালুকদার, ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা আকবর খান প্রমুখ।
ইবতেদায়ী শিক্ষকদের অনশন:
এদিকে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের নিবন্ধিত ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবিতে গতকাল সকাল থেকে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেছেন শিক্ষকরা। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষক সমিতির মহাসচিব কাজী মোখলেছুর রহমান বলেন, ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকরা তেমন বেতনভাতা না পায় না, তারপরও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মত তারা শিক্ষকতা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিছু মাদরাসার শিক্ষক আড়াই হাজার থেকে দুই হাজার ৩০০ টাকা বেতন পেলেও অধিকাংশ শিক্ষকই গত ২৯ বছর ধরে বেতনভাতা থেকে বঞ্চিত। ১৯৯৪ সালে ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকদের বেতনভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত হলেও তা বাস্তবায়নে হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, জাতীয়করণের ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার অবস্থান ধর্মঘট চালিয়ে যাব। বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাসরাসা জাতীয়করণের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান ধর্মঘট করছেন শিক্ষকরা।
বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাসরাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি কাজী রুহুল আমিন চৌধুরী বলেন, ১৯৯৪ সালে একই পরিপত্রে রেজিস্ট্রার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকদের বেতন ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ২০১৩ সালে বর্তমান সরকার ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে। প্রাথমিকের ন্যায় স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলো শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হয়নি। এতে করে হাজার শিক্ষক-শিক্ষকা মানবেতর জীবনযাপন করছে। সংগঠনটির মহাসচিব কাজী মোখলেছুর রহমান বলেন, জাতীয়করণের ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অনির্দিষ্টকালের অবস্থান ধর্মঘট চলবে। রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণে প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের লাটশালা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান এসেছেন অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচিতে যোগ দিতে। তিনি বলেন, ১৯৮২ সালে আমাদের প্রতিষ্ঠান চালু হয়। শুরু থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকারা সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু শিক্ষকরা বেতন-ভাতা না পাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলো জাতীয়করণ করে সরকার এসব শিক্ষক পরিবারের হাসি ফুটাবে এটাই আমাদের আশা। অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব আবু মুছা ভূইয়া, দফতর সম্পাদক ইনতাজ বিন হাকমি, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সাধারণ সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম প্রমুখ।



 

Show all comments

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ