Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাষ্ট্রীয় নৌযানে যাত্রী সেবার মান তলানীতে

| প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : রাষ্ট্রীয় নৌ-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান-বিআইডবিøউটিসি’র দায়িত্বশীল মহলের যথাযথ নজরদারীসহ সেবার মানসিকতার অভাবে দেশের একমাত্র যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিসে সেবার মান নিয়ে যাত্রীদের অসন্তুষ্টি ক্রমশ বাড়ছে। বাড়ছে লোকসানের মাত্রাও। গত নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর হয়ে বর্তমান সময় পর্যন্ত রাজধানীর সাথে দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথের বেসরকারী নৌযানগুলোতে নজিরবিহীন যাত্রীর চাপ অব্যাহত থাকলেও সরকারী নৌযানে লোকসানের কোন কমতি নেই। এর পছেনে যাত্রীবান্ধব সময়সূচির অভাবসহ ঢাকা ও বরিশাল বন্দরে যাত্রীদের সুবিধাজন স্থান থেকে নৌযান পরিচালনা করার রহস্যজনক অনিহার পাশাপাশি স্বল্পব্যায়ী নৌযানের পরিবর্তে ব্যায়বহুল নৌযান পরিচলনকে দায়ী করেছেন ওয়াকিবাহাল মহল। এমনকি বেসরকারী নৌযান মালিকগণ যেখানে নিয়মিত মুনফা করে ব্যাংক ঋণ পরিশোধসহ নতুন নৌযান তৈরী করছে, সেখানে রাষ্ট্রয়ত্ব এ নৌ-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠনটি সরকারী অর্থে নৌযান তৈরী করেও শুধু লোকসানের বোঝা বৃদ্ধি করছে। অথচ নিকট অতীতেও বেসরকারী নৌযান পরিচালনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিআইডবিøউটিসি’র কাছ থেকেই পেশাগত জ্ঞানসহ যাত্রী সেবার জ্ঞান অর্জন করেছে। আর বর্তমানে যাত্রী সেবার মানেও সরকারী এ প্রতিষ্ঠানটি বেসরকারী সেক্টরের কাছে পৌঁছতে পারছে না।
২০১৪ ও ’১৫ সালে প্রায় ৫৬ কোটি টাকায় ‘এমভি বাঙালী’ ও ‘এমভি মধুমতি’ নামের দুটি যাত্রীবাহী নৌযান চালু করে গত তিন বছরে সংস্থাটি এখাতে লোকসান দিয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা। কিন্তু এর পরেও মাত্রাতিরিক্ত জ্বালানী ব্যয়সহ অধিক পরিচালন ব্যয়বহুল এ দুটি নৌযান পরিচালনে সংস্থার কতিপয় কর্মকর্তার আগ্রহ বেশি। এদুটি নৌযানে জ্বালানী ব্যায় প্রায় শতবর্ষের পুরনো প্যাডেল জাহাজগুলোর তুলনায় আড়াই গুন বেশী। উপরন্তু এসব নৌযান যাত্রীবান্ধব নয় বলে তাতে ভ্রমণেও আগ্রহ কম। নৌযান দুটির ডেক থেকে প্রথম শ্রেণী ও কথিত ভিআইপি শ্রেণীতে যাত্রী সেবার মানে সন্তুষ্ট নয় কেউ। সরকারী ৮০ ভাগ অর্থে সংগ্রহ করা এ নৌযান দুটি ঢাকা-বরিশালের সংক্ষিপ্ত নৌপথে পরিচালন-এর জন্য সংগ্রহ করা হলেও তা এখন মোড়েলগঞ্জ পর্যন্ত দ্বিগুণ দুরত্বে পাঠাতে গিয়ে প্রতি ট্রিপে প্রায় ৩ লাখ টাকা পরিচালন লোকসান গুনছে। এমনকি এসব নৌযান এর আগে খুলনা পর্যন্ত পাঠাতে গিয়ে প্রতি ট্রিপে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকাও লোকসান দিয়েছে। বিপুল অংকের লোকসানের পরে সংস্থাটির ওপর মহলে বোধদয় হয়ে পরবর্তিতে প্যাডেল জাহাজ পরিচালন শুরু করায় লোকসান কিছুটা কমেছে।
কিন্তু দীর্ঘ দুরত্বে চালাতে গিয়ে অধিক লোকসান গুনলেও এসব নৌযানের রক্ষণাবেক্ষণে উদাসীনতাও বাড়ছে। পাশাপাশি ব্যয় সাশ্রয়ী প্যাডেল জাহাজগুলোর প্রতিও সংস্থার দায়িত্বশীল মহলের উদাসীনতা ক্রমশ বাড়ছে। উপরন্তু অদক্ষ ও অকর্মন্য চালকদের কারণেও যাত্রীবাহী নৌযানগুলোতে ছোট-বড় দুর্ঘটনা লেগেই আছে। পিএস অষ্ট্রিচ জাহাজটি গত জুন মাসে ঈদ-উল ফিতরের আগে ঢাকার সদর ঘাটে একটি বেসরকারী নৌযানের ধাক্কায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবার তিন মাস পরে তার মেরামত শুরু হয়ে শেষ করতে সময় লেগেছে প্রায় একমাস। পুনরায় গত ৮ ডিসেম্বর শেষ রাতে খুলনা ঘাট ত্যাগ করার সময় অপর একটি নৌযানের গায়ে আছড়ে পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে নৌযানটি। দুর্ঘটনার ১৫ দিন পরে গত ২১ ডিসেম্বর অষ্ট্রিচ সংস্থার ডকইয়ার্ডে নেয়ার পরে কাজ চলছে ঢিমে তালে।
পিএস মাহসুদ জাহাজটির মেরামত জরুরী হলেও তা এখনো শুরু হয়নি। সংস্থার অপর দুটি প্যডেল জাহাজ ‘পিএস লেপচা’ ও ‘পিএস টার্ণ’-এর অবস্থা যথেষ্ট শোচনীয়। এরমধ্যে টার্ণ জাহাজটির মূল ইঞ্জিনের টার্বো চার্জার বিকল গত দু বছর। ফলে নৌযানটির গতি প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। ফলে গন্তব্যে পৌঁছতে অনেক বাড়তি সময় ব্যয় হওয়ায় জ্বালানী ব্যয়ও বাড়ছে। এসব নৌযানে যাত্রী সেবার মান তলানীতে ঠেকেছে অনেক আগে। সবগুলো নৌযানের ডেক থেকে প্রথম শেণী পর্যন্ত খাবার মান নিয়ে সন্তুষ্ট নন যাত্রীরা। প্রায় কোন যাত্রীবাহী নৌযানেই এখন বাটলার নেই। এমনকি বাবুর্চীকে বাটলারের দায়িত্ব দিয়ে প্রথম শ্রেণীর যাত্রী সেবা করা হচ্ছে। সংস্থাটির নৌযানে দ্বিতীয় শ্রেণীর কক্ষের যাত্রীভাড়া বেসরকারী নৌযানের প্রথম শ্রেণীর প্রায় সমান হলেও সেখানে যাত্রী সেবা বলতে এখন আর কিছু অবশিষ্ট নেই বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিআইডবিøউটিসি’র নৌযানসমূহ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে কারিগরি ও বাণিজ্য পরিদফ্তরে বিশাল জনবলের পাশাপাশি আছে খরচের বিশাল বহরও। কিন্তু তার কোন সেবা যাত্রী পর্যায়ে পৌঁছছে না। এমনকি সদ্যবিদায়ী বর্ষা মওশুমে ৪টি প্যাডেল জাহাজের প্রথম শ্রেণীতেও বৃষ্টি পানি যাত্রীদের চরম দূর্ভোগে ফেললেও তা থেকে উত্তরণের বাস্তব পদক্ষেপ এখনো অনুপস্থিত।
ওয়াকিফহাল মহলের মতে বিআইডবিøউটিসি’র ৪টি প্যাডেল জাহাজই পরিপূর্ণ পুনর্বাসন ও মেরামত জরুরী। একাজটি করতে পারলে এসব নৌযান আরো অন্তত ২৫ বছর নির্বিঘেœ যাত্রী সেবা দিতে পারবে। ১৯৯৫-৯৬ সালে পুনর্বাসনের পরে এসব নৌযানের মূল ইঞ্জিনগুলোও আজ পর্যন্ত মেজর ওভারহলিং করা হয়নি। নৌযানগুলোর তলা থেকে লেয়ার ডেক এবং উপরী কাঠামোর পরপূর্ণ পুনর্বাসনেরও কোন বিকল্প নেই।
এসব ব্যাপারে গতকাল বিঅইডবিøউটিসি’র পরিচালক-বাণিজ্যের সাথে সেল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘প্যাডেল জাহাজগুলো পুনর্বাসন করে কোন লাভ নেই, কারণ ডিজি শিপিং ৪০ বছরের পুরনো কোন নৌযানের সার্ভে সনদ দেবে না। সংস্থার প্যডেল জাহাজগুলো পর্যটন করপোরেশনকে দেয়ার কথাবার্তা চলছে’ বলে জানান তিনি। পাশাপাাশি সংস্থাটির বহরে আরো দুটি নতুন যাত্রীবাহী নৌযান যূক্ত হচ্ছে বলে তিনি জানান। তবে এসব নৌযানে লোকসান কমানো প্রসঙ্গে তিনি কিছু বলতে পারেননি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাষ্ট্রীয় নৌযানে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ