পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মাহফুজুল হক আনার : চাকুরীজীবি ও উচ্চ শ্রেণীর আয় বৃদ্ধির তুলনায় খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষের আয় বাড়েনি। কিন্তু বাজারে চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। আকষ্মিকভাবে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় জোৎদাররা উপকৃত হলেও অসহায় হয়ে পড়েছে আধিসত্বের ভিত্তিতে জমি আবাদ করা কৃষক ও দিনমজুরেরা। ফলে মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে কৃষি নির্ভর দিনাজপুরসহ সমগ্র উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতিতে মন্দাভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। কৃষি পণ্যের বাজার অনিয়ন্ত্রিত হয়ে উঠাই মূলত অর্থনৈতিক মন্দার অন্যতম কারণ বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে খেটে খাওয়া মানুষের কল্যাণে একের পর এক উদ্যোগ নেয়া হলেও মাঠ পর্যায়ের তদারকিকে চরম গাফিলতি বাজার অনিয়ন্ত্রিত হওয়ার অন্যতম কারণ বলেই মনে করছেন বিজ্ঞজনেরা। আর এর উপর যোগ হয়েছে সাম্প্রতিককালের ভয়াবহ বন্যা। ফলে মধ্যম সারীর কৃষক হয়েছে দরিদ্র আর দরিদ্র কৃষক পরিণত হয়েছে হত দরিদ্রতে। মাঝারী আর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পথে বসলেও ব্যাংকিং সেবা’র সুবাধে বড় ব্যবসায়ীরা হয়েছে আরো বড়। সময় থাকতে যথাযত পদক্ষেপ গ্রহনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক কার্যক্রমসমূহ চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া না হলে সামনের পরিস্থিতি খুব একটা সুখকর হবে না বলেই মত প্রকাশ করেছে বিশ্লেষকরা।
দিনাজপুর-রংপুর অঞ্চলে গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন হাট বাজার এবং ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে সরেজমিনে যাচাই করে যা পাওয়া যায় তা হলো গত তিন বছর আগে মন্দা সময়ে একজন দিনমজুরের মজুরী ছিল ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। ভরা কৃষি মওসুমে এই মজুরী ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় উঠে আসতো। বছরে প্রাপ্ত গড় মজুরী দিয়ে তিন থেকে চার সদস্যের পরিবারের ভোরন পোষনে এই মজুরী মোটামুটি গ্রহনযোগ্য ছিল। কেননা তখন চালের কেজি ছিল ১৫ থেকে ১৮ টাকায়। পেয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ছিল নাগালের মধ্যে। এর মধ্যে সরকারী চাকুরীজীবিদের বেতন বাড়িয়ে দ্বিগুন করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে প্রথম শ্রেণী থেকে উচ্চ শ্রেণীর কর্মকর্তাদের। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সে সকল পরিবারের ব্যায়ের মাত্রাও বেড়ে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে সমাজ ও বাজারে। কিন্তু এর উল্টো চিত্র হচ্ছে ধানসহ কৃষি পণ্যের দাম কমে যাওয়া। ধানের দাম কমে যাওয়ায় মাঠে খেটে খাওয়া কৃষক ও বর্গাচাষীরা যতটা ক্ষতিগ্রস্থ হয় তার চেয়ে বেশী ক্ষতির মুখে পড়ে আবাদী জমির মালিকেরা। জমি বর্গা দিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে শহরে বসবাস করে এমন পরিবারের সংখ্যা ৫০ শতাংশ। যারা মূলত মধ্যম আয়ের মধ্যে পড়ে। এছাড়া ক্যারানী থেকে পিওন পদের চাকুরী জীবিরাও মধ্যম আয়ের মধ্যে পড়ে থাকে। অপরদিকে এক একর জমির অধিকারী এমনসারীর একজন কৃষকও নি¤œবিত্তশালী হিসাবে জীবন যাপন করে আসে। কেননা সারাবছর দুই থেকে তিন কোন কোন ক্ষেত্রে চারটি ফসল আবাদের পাশাপাশি টুকিটাকি কাজ করে সচ্চলতার সাথে সংসার চালিয়ে নিতে পারতো। এসকল পরিবারের ছেলে-মেয়েরা স্কুল-কলেজ এমনকি বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করে থাকে। সংসারের মূল খরচ চাল। আর চালের বাজার ছিল নিয়ন্ত্রিত। ফলে জীবন-জীবিকায় সেরকম টানা পড়েন ছিল না। কিন্তু হঠাৎ করেই ১৮ টাকার চাল হয়ে যায় ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা কেজি। চরম বেকায়দায় পড়ে যায় দিনান্তে খেটে খাওয়া সাধারন ও কৃষি মজুরেরা। দিনভর খেটে হাতে ২০০ টাকা নিয়ে বাজারে গিয়ে প্রয়োজনীয় চাল কেনাই মুশকিল হয়ে পড়ে। মধ্যম আয়ের পরিবারগুলিও চরম সংকটের মুখে পড়ে। পাইজাম আর মিনিকেট চালের দাম বেড়ে হয়ে যায় ৪৪ থেকে ৪৮ টাকায়। মধ্যম থেকে নি¤œ আয়ের পরিবারগুলি সবচেয়ে বেশী সংকটে পড়ে গত বছর। যা তাদের মধ্যম থেকে দরিদ্র আর দরিদ্র থেকে হত দরিদ্র বানিয়ে দেয়। কেননা গত বছর ৮’শ থেকে এক হাজার টাকা বস্তা দরে ধান বিক্রির কয়েক মাসের মধ্যে চালের দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়। ফলে এই পরিবারগুলি চাল ক্রয়ে চোখে শরসের ফুল দেখতে শুরু করে। এর মধ্যে নেমে আসে স্মরণাতীতকালের বন্যা। যা কিছু ছিল তার সব কেড়ে নিয়ে যায়। এবার ধানের দাম আছে। আবাদও হয়েছে ভাল। কিন্তু বেশী দামে ধান বিক্রি করে কর্জ পরিশোধ হবে। কিন্তু খাওয়ার চাল থাকছে না মধ্য, নি¤œ ও হতদরিদ্রদের ঘরে। বাজারে চালের দাম অস্বাভাবিক। তাই চাল কিনে সংসার চালাতে ছেলে-মেয়ের পড়াশোনাসহ আনুসাঙ্গিক ব্যায় কমাতে বাধ্য হচ্ছে এসব পরিবার। সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষেরা। বেতন বৃদ্ধি আর ধানের দাম বেীি হওয়ায় খেটে মানুষদের অবস্থা করুন আকার ধারণ করেছে। কেননা বেতন বৃদ্ধির হার আর ধান চালের দাম বৃদ্ধি’র হারের সাথে মজুরীর ফারাক অনেক। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মজুরী আগের মত ২০০ টাকাই রয়ে গেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেড়ে ৩শ’ টাকা হয়েছে। বর্তমান উর্ধগতির চালের বাজারে এই মুজুরীতে একটি সংসার চালানো সম্ভব নয় তা সহজেই বোঝা যায়।
অপরদিকে বেসরকারী পর্যায়ের বানিজ্যিক ব্যাংকগুলির শিল্প বা কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতি গুরুত্ব না ব্যাংকিং ব্যবসার প্রতি ঝুকে পড়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সিসি আর প্লেজ নামক ঋন ব্যবসা বাণিজ্যকে ঘর বন্দি করে ফেলেছে। অর্থাৎ ব্যাংকের টাকায় স্বল্প দামে ধান, ভুট্টা ক্রয় করে গুদামজাত করা এখন দিনাজপুর-রংপুর অঞ্চলের মূল ব্যবসা। মৌসুমের শুরুতে কম দামে ধান কিনে গুদামজাত করে বাজারে সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে দাম বৃদ্ধি’র পর বাজারে ছাড়া হয়ে থাকে। হোল্ডিং ব্যবসা আর ব্যাংকিং চ্যানেলে থাকা দায়িত্বশীল ব্যাংকারদের মতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধি মেনে শাখা ভিত্তিক আমানতের নির্দিষ্ট অংকের টাকা বিনিয়োগ করা হলে অনেক ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাবে। একই সাথে শুধু সিসি আর প্লেজ নয় শিল্প ও কর্মসংস্থানমূলক ব্যবসায় অর্থ লগ্নি’র বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। হোল্ডিং এর উপর বাড়াতে হবে সরকারী নজরদারী। দীর্ঘ সময় হোল্ডিং এর ক্ষেত্রে কঠোর নজরদারী আর বাণিজ্যিক ব্যাংকের দেয়া অর্থের গতি সঞ্চালনের ব্যবস্থা নেয়া হলেই বাজার নিয়ন্ত্রিত হবে। রক্ষা পাবে সাধারণ মানুষ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।