Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নেতৃত্বহীন বিক্ষোভের লক্ষ্য নিশ্চিত নয়

ইরানের আন্দোলন সম্পর্কে গার্ডিয়ান

দি গার্ডিয়ান | প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নতুন বছরটিতে কি ঘটবে তা বলা সাহসের বিষয় বটে। আর ইরানে আগামী প্রহর ও দিনে কি ঘটবে সে বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা হবে বোকামি। সেখানে সরকার বিরোধী যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে রবিবার তা চতুর্থদিন পেরিয়েছে।
এ বিক্ষোভ দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে সকল প্রদেশে যা ২০০৯ সালে গ্রীন মুভমেন্টের বিশাল সংস্কারপন্থী সমাবেশের পর বৃহত্তম আন্দোলন। এ বিক্ষোভে নজিরবিহীন সেøাগান শোনা গেছে- ‘খামেনির (আয়াতুল্লাহ আলি) মৃত্যু চাই।’ তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা। এমনকি ১৯৭৯ সালের বিপ্লবে উৎখাতকৃত শাহকে জনগণের প্রশংসা করারও খবর পাওয়া গেছে। তেহরানের ভ‚রাজনৈতিক উচ্চাকাক্সক্ষার সমালোচনাও করা হয়েছে এভাবে- ‘সিরিয়া থেকে সরে এস, আমাদের কথা ভাব।’ ইরানের ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে উন্নয়ন ও সউদী আরবের সাথে প্রতিদ্ব›িদ্বতার আরো তীব্রতা দেশের অভ্যন্তরীণ গোলযোগকে আরো বৃদ্ধি করেছে।
গ্রীন মুভমেন্টের নির্মম দমন লোকের মনে প্রচন্ড প্রভাব ফেলে গেছে। ইরানের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে যারা জনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করবে তাদের মাশুল দিতে হবে। ইরানের বিপ্লবী রক্ষীরা কঠোর ব্যবস্থার হুমকি দিয়েছে যার পরিণতিতে ২ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে, কিছু সামাজিক মাধ্যম অ্যাপস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
কিন্তু এ বিক্ষোভের ঢেউয়ের বিষয়টি পরিষ্কার নয়। কেউই নিশ্চিত নয় যে কিভাবে তা শুরু হয়েছে ও ছড়িয়ে পড়েছে অথবা বহু দাবির কোনটি সবচেয়ে শক্তিশালী। এটা জানা অসম্ভব যে কোনদিকে তা অগ্রসর হচ্ছে। মতাদর্শ ও নীতির মধ্যে মতপার্থক্য প্রকাশক আন্তঃ এলিট ফাটল এবং অর্থ ও ক্ষমতার প্রতি ব্যক্তিগত স্বার্থ এ অনিশ্চয়তা আরো বৃদ্ধি করছে। সংস্কার পন্থীরা বিশেষ করে সন্দেহ করছেন যে গত মে মাসে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হাসান রুহানির কাছে পরাজিত কট্টরপন্থী ধর্মীয় নেতা ইবরাহিম রাইসির নিজ শহর মাশাবাদে এ বিক্ষোভের শুরু। ‘রুহানির মৃত্যু চাই’ ¯েøাগানটি সেখানে সুপরিচিত। কর্তৃপক্ষ প্রথমে এ বিক্ষোভে নমনীয় মনোভাব প্রদর্শন করে এবং সত্য যে যা ঘটেছে তা অস্বাভাবিক ভাবে সংবাদপত্রের কাছে গুরুত্ব লাভ করায় প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে।
প্রথম দিকের বহু ¯েøাগানে উচ্চ বেকারত্ব ও খাদ্যমূল্য, দুর্নীতি ও অসমতা জনিত দুর্ভোগ-দুর্দশার প্রতিফলন ঘটে। ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি প্রতিশ্রæতি মোতাবেক বাস্তব উন্নয়ন ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে। অবরোধ এখনো অর্থনৈতিক দুর্দশার প্রধান কারণ যদিও অভ্যন্তরীণ নীতিও এর জন্য দায়ী। বিক্ষোভকারীদের দেখে মনে হয় তারা বেশিরভাগই কর্মজীবী শ্রেণির, ২০০৯ সালের বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল মধ্যবিত্ত শ্রেণি। বিক্ষোভ নেতৃত্বহীন মনে হচ্ছে, ২০০৯-এ বিরোধীদের যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সেই মির হোসেন মুসাভি ও মেহেদী কারুবির পক্ষে অল্পই ¯েøাগান শোনা গেছে। তারা এখন গৃহবন্দী রয়েছেন।
ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি ছিন্ন করার হুমকি দাতা ডোনাল্ড ট্রাম্প আনন্দিত ভাবে টুইট করেছেন ঃ জবরদস্তিকারী শক্তি চিরকাল থাকতে পারে না। এ সব ঘটনায় পর্যাপ্ত প্রমাণ মিলেছে যে তারা শাসনের যে পরিবর্তন চাইছে তা আসন্ন। কিন্তু ওয়াশিংটনের মতলবি চিন্তার লেন্সে তাদের দেখা বিক্ষোভকারীদের প্রেরণা ও বিভিন্ন দাবির জন্য তাদের প্রতি সমর্থনের পর্যায়ের মাত্রা নিরূপণে সাহায্য করবে না।
এ হচ্ছে প্রেসিডেন্ট রুহানির জন্য একটি পরীক্ষা যিনি শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিশ্রæতি দিয়েই ভোটে জয়ী হননি, তাকে একজন মধ্যপন্থী বলেও বিবেচনা করা হয়েছিল। রবিবার তিনি বলেন যে বিক্ষোভ বৈধ, প্রতিষ্ঠানের উচিত সমালোচনা অনুমোদন করা এবং রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ভিন্নমতের প্রতিফলন থাকা উচিত। তিনি এ কথাও বলেন, জনগণের সমাধানের প্রতি গুরুত্ব দেয়া উচিত, তাদের সহিংসতার পথ গ্রহণ করা বা সরকারী সম্পত্তির ক্ষতি নয়।
গোলযোগ কি মিটে যাবে? তিনি কি শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে পারবেন? নাকি মাহমুদ আহমাদিনেজাদ ২০০৯ সালে যে দমন চালিয়েছিলেন সে রকম কিছু হবে? এ বিক্ষোভ সকল শিবিরে উদ্বেগের সৃষ্টি করবে। তা আরো বিস্তার লাভ করতে পারে এবং ইরানের অভ্যন্তরীণ বিরোধে তা ব্যবহৃত হতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নেতৃত্বহীন বিক্ষোভের লক্ষ্য নিশ্চিত নয়
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ