পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : প্রতি রাতের পর ভোর হয়; প্রতিদিনই পুব আকাশে সূর্য উঠে। কিন্তু নতুন বছরের সূর্যের প্রতি মানুষের থাকে অন্যরকম প্রত্যাশা। সুখ-সমৃদ্ধি ও অনাবিল আনন্দের বারতা নিয়ে উদয় ঘটবে নতুন বছরের সূর্য; সে আশায় মুখিয়ে থাকে মানুষ। জোতিষবিদরা আগাম বার্তা দেন। রাজনীতিকরা আশার বাণী শোনান। প্রশ্ন হলো কেমন হবে নতুন বছর? পুরনো জঞ্জাল মুঁছে মানুষ কি নতুন বছরে আলোর দিশা দেখতে পাবেন? নাকি পুরনো জঞ্জালের গর্তেই আবার ঢুবে যাবেন? স্বপ্নচারী মানুষ চায় এগিয়ে যেতে।
৩১ ডিসেম্বর সূর্যাস্তের মধ্য দিয়ে ঘোষিত হলো নতুন বছরের আগমনবার্তা। স্বাগত ২০১৮। প্রত্যাশা পুরোনো সব জ্বরা-জঞ্জাল দুরে ঠেলে নতুন বছর নিয়ে আসবে মানুষের জীবনে নতুন প্রেরণা। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশে স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ‘সমতা-মানবিক মর্যাদা-সামাজিক ন্যায় বিচার’ প্রতিষ্ঠা হয়নি। অর্জন-স্খলন-প্রাপ্তি-বিষর্জনের চুলচেরা বিশ্লেষন করা এখন সুদূর পরাহত। একাত্তরের পর দেশের জাতীয় জীবনে যদি ধরা হয় ‘১৯৯০’ সাল গণতান্ত্রিক অধিকার অর্জনের বছর; তবে ‘২০১৪’ হচ্ছে নাগরিকের ভোটের অধিকার বিসর্জনের। তবু মানুষ আশায় বুক বাঁধে; নতুন বছরে নতুন প্রত্যাশা করে। পূর্ব দীগন্তে নতুন সুর্যের আলোকরশ্মিতে হতাশার অমানিসা কেটে যাবে।
২০১৭-তে বছর জুড়ে ছিল ‘উন্নয়নের শ্লোগান’ এবং ‘আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র’ বিতর্ক। উন্নয়নের বড় বড় প্রকল্পে দেশ এগিয়ে চলছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ হচ্ছে। ঢাকায় মেট্রো রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা টু চট্টগ্রাম ৮ লেন, ঢাকা টু ময়মনসিংহ ৪ লেন, পায়রা সমুদ্র বন্দর, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর ইত্যাদি মেগা প্রকল্পের কোনোটির কাজ শুরু হয়েছে; কোনোটির কাজের প্রক্রিয়া চলছে। তবে বড় উন্নয়নের চাপে অতি প্রয়োজনীয় ছোট ছোট উন্নয়ন চাপা পড়ে গেছে। অস্থিরতা-উদ্বেগ-গুম আতঙ্ক, বিদেশে টাকা পাচার, গণধর্ষণ, রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থী সংকট, রাজনৈতিক ডামাডোলে আগাম নির্বাচনের গুজব, বন্যা-পাহাড়ি ঢল, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবীতে বিদেশী কূটনীতিকদের তৎপরতা, প্রশ্নফাঁস, ভূঁয়া মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বিতর্ক ও ব্যাংক পাড়ায় অস্থিরতা সবই ছিল বছরজুড়ে। রাজনৈতিক উত্তপ্ততা না থাকায় অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনীতির প্রায় সব সূচক ইতিবাচক থাকলেও চাল-পিঁয়াজ নিয়ে চরম অস্থিরতা এখনো বিদ্যামান।
কেমন হবে ২০১৮ সাল? প্রতিদিন সূর্যোদয় যেমন সত্য তেমনি কোনো অঘটন না ঘটলে সংবিধানের বিধান অনুযায়ী ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে এটাও সত্য। রাজনৈতিক অঙ্গনের নির্বাচনী আবহ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর গতি-প্রকৃতি কর্মতৎপরতায় বোঝা যায় নতুন বছর হবে কার্যত নির্বাচনের বছর। প্রশ্ন হলো নির্বাচন কেমন হবে; আবারো কি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের মতো মানুষ ভোট দেয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে; নাকি ‘আমার ভোট আমি দেব/ যাকে খুশি তাকে দেব’ শ্লোগানের অধিকার ফিরে পাবে? এটা নির্ভর করছে আগামী দিনে রাজনীতিকদের চিন্তা-চেতনা, বিশ্ব রাজনীতির গতিপ্রকৃতি, ভোটারদের ইচ্ছাশক্তি উপর। তবে ভোটাররা আছে সব দলের অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের প্রত্যাশায়। মানুষ চায় অর্র্থনৈতিক সুসংবাদের পাশাপাশি রাজনৈতিক সুসংবাদ। ‘স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে’ কবির এই পংক্তির মতোই গণতান্ত্রিক দেশে ‘ভোটের অধিকার ছাড়া’ কে বাঁচতে চায়?
নতুন বছরে সুসংবাদের আশায় মুখিয়ে আছে আমজনতা। বেকাররা চায় চাকরি, ছাত্রছাত্রীরা চায় শিক্ষা শেষে কর্মক্ষেত্রের নিশ্চয়তা, শ্রমিকরা চায় মিলকারখানায় কাজের নিশ্চয়তা, ব্যবসায়ীরা চায় মুনাফা, পেশাজীবীরা চায় নিজ নিজ পেশার উৎকর্ষ সাধন, ভোটাররা চায় নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার ভোট দিয়ে জনপ্রিতিধি নির্বাচিতের উৎসব। অর্থনীতির দিকে তাকালে কী দেখি? মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জুয়ারিপনায় বিশ্ব শান্তি হুমকির মুখে; অর্থনৈতিক মন্দার কবলে। তারপরও বাংলাদেশে অর্থনীতির প্রায় সব সূচক ইতিবাচক এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধির গতি-প্রকৃতি আশানুরূপ। বছর জুড়ে মূল্যস্ফীতি ছিল নিয়ন্ত্রণে। রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির হার লক্ষ্য মাত্রা অর্জিত না হলেও গতি ছিল-ঊর্ধ্বমুখী। আমদানিতে যথারীতি ঘাটতি। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ পরিস্থিতি ভালো থাকলেও রেমিটেন্স প্রবাহ কমে গেছে। রেমিটেন্স প্রবাহ নতুন বছরে বাড়বে সে প্রত্যাশা সবার। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিদেশে ¤্রমিক পাঠানো হবে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে কিন্তু কমেনি বৈষম্য। অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী আগামী অর্থ বছরে প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হবে। সম্ভাব্য এই বাজেট বাস্তবায়ন করার পরিবেশ-পরিস্থিতি কি সৃস্টি হবে? মানুষ দেখতে চায় বাজেটের স্বচ্ছ বাস্তবায়ন। বিগত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের ৪ লাখ ২শ ৬৬ কোটি টাকার বাজেট পাস করা হয়। অপরিপক্কতা, পরিকল্পনার অদূরদর্শিতা ও প্রশাসনের ধীর গতির কারণে সে বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায়নি। বিনিয়োগে বরাবরের মতোই মিশ্র অবস্থা বিরাজমান এবং সরকারি-বিনিয়োগ ছিল আগের মতোই। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটে অনেক মিলকারখানা কাঙ্খিত উৎপাদন করতে পারেনি। আবার রানা প্লাজা ধ্বস, হোলি আর্টিজানের হত্যাকাÐ, রাজনীতির গুমোট পরিবেশসহ নানা কারণে বিদেশী বিনিয়োগ আশঙ্কাজনক ভাবে কমে গেছে। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং বাংলাদেশ সফরে প্রায় ৩০-৪০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের নানা প্রস্তাব দেন। সেটা কাজে লাগানো যায়নি। নতুন বছরে কি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে নতুন কোনো কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে? দেশের প্রধান শক্তি এবং আগামীর ভবিষ্যৎ হচ্ছে কিশোর-তরুণ-তরুণীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক গবেষণা করে জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে হতাশা বিষন্নতা প্রভন্ডভাবে বেড়ে গেছে। লেখাপড়া শেষে উজ্বল ভবিষ্যতের ভাবনার বদলে জীবনে আসন্ন বেকারত্বের যন্ত্রণায় হতাশার আগুনে তারা পুরছেন। সামাজিক অস্থিরতা হতাশা ও নৈতিক শিক্ষার অভাবে মাদকের আগ্রাসনে ডুবে যাচ্ছে নতুন প্রজন্মের একাংশ। নতুন বছরে তাদের কি মরণনেশা থেকে ফেরানোর কর্মপন্থা গ্রহণ করা হবে? প্রতি বছর কয়েক লাখ ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া শেষ করছে। সর্বচ্চো ডিগ্রী নেয়া শিক্ষার্থীদের সামান্যই কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারছে। সরকারি চাকরি সীমিত। দেশী বিদেশী বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় ব্যাক্তি মালিকানায়ও শিল্পায়ন হচ্ছে না। নতুন ‘কাজের ক্ষেত্র’ সৃষ্টি করে কি তরুণ-তরুণীদের চাকরির ব্যবস্থা করে বিষন্নতা দূর করার কি উদ্যোগ নেয়া হবে? নতুন বছরে এই আশায় বুক বাঁধছে মানুষ।
উন্নয়নের মহাসড়কে দেশ। রাস্তাঘাটের সামগ্রীক উন্নয়ন না হলেও পদ্মাসেতুসহ অনেকগুলো বড় বড় প্রকল্পের কাজ অর্ধেক হয়ে গেছে। ঢাকায় অনেকগুলো উড়াল সড়ক নির্মাণ হয়েছে-হচ্ছে। কাজ চলছে মেট্রোলে, ইলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এগুলো চালু হলে রাজধানীর যানজট যন্ত্রণা থেকে মানুষ রেহাই পাবেন তো? রাজধানীতে রাস্তায় রাস্তায় ঘটনার পর ঘন্টা যানজটে আকটে থাকার দৃশ্য মানুষ আর দেখতে চায় না। পাবনায় রুপপুরে পারমানবিক চুল্লির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং সুন্দরবনের পাশে রামপালে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। পরিবেশ ধ্বংস না করেই এ সব উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রাখার কি সম্ভব হবে? দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের অবস্থা নাজুক। ব্যাংকের সংখ্যা বাড়লেও গ্রহক সেবা বাড়েনি। বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ঘটেছে চরদখল-জবরদখল এবং লুটপাটের মহোৎসব। ব্যক্তি মালিকানাধীন বেশ কয়েকটি ব্যাংকের প্রশাসনিক পদে রদবদল যেমন হয়েছে; তেমনি ব্যাংকগুলোতে ঘটেছে টাকা লুটের মহাকান্ড। এই অবস্থায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত বুদ্ধিজীবী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত গবেষণা করে জানান, সঠিক তদন্ত হলে দেখা যাবে দেশের ব্যাংকগুলোর অর্ধেকই দেউলিয়া। ব্যাংকগুলোকে সচল রেখে এবং পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে গ্রহক সেবা বৃদ্ধির পরিস্থিতি কি নতুন বছরে সৃষ্টি করা সম্ভব হবে? অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন একটি ব্যাংকেও মরতে দেয়া হবে না। তিনি এ ঘোষণা কি ভাবে বাস্তবায়ন করেন তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছে মানুষ।
বিগত বছর জুড়েই ছিল আগাম নির্বাচনের গুঞ্জন। এমনকি নির্বাচন কমিশন পর্যন্ত ঘোষণা দেয় সরকার চাইলে ইসি আগাম একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে পারে। বছর গেল; সংবিধানের বিধান অনুযায়ীই ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। তার আগে হবে ঢাকা উত্তর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনসহ অনেকগুলো স্থানীয় পৌরসভা নির্বাচন। নতুন বছরের দ্বিতীয় মাসে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে নির্বাচন হবে। নির্বাচনে কি মানুষ রংপুর সিটির মত্্্্্ োনিজেদের ভোট দেয়ার সুযোগ পাবেন। নাকি বিগত ঢাকা-চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের মতো এবারও কেন্দ্র দখলের মহোৎসব হবে? ভোট কেন্দ্রের বুথে আইন শৃংখলা বাহিনীর সামনেই ‘ব্যালট ছিনতাই’ দেখে প্রতিপক্ষ্যের প্রার্থীরা দুপুরের মধ্যে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেবেন? বিগত বছর জুড়ে রাজনীতি ছিল নিস্তেজ; মাঠের রাজনীতির চর্চা হয়েছে একপক্ষীয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সারাদেশ দাপিয়ে বেড়ালেও বিএনপিকে আইন শৃংখলার অজুহাত দেখিয়ে মাঠে নামতে দেয়া হয়নি। অথচ নতুন বছরকে বলা হচ্ছে নির্বাচনের বছর। এখন কি বিএনপিকে সংগঠনিক তৎপরতা চালাতে মাঠে নামার সুযোগ দেয়া হবে? নাকি কূট-কৌশলী ভাবে বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখার ফন্দি করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর মতো আরেকটি পাতানো নির্বাচনের চেস্টা হবে? সরকারের হাত অনেক লম্বা। তারা যা খুশি তাই করতে পারেন। কিন্তু মানুষ ভোটের অধিকার ৫ জানুয়ারীর গর্তে ফেলার পরিস্থিতি আর দেখতে চায় না।
জাতিসংঘ, ওআইসি, কমনওয়েলসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দাতাদেশগুলো বাংলাদেশের সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন দেখার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ৫ জানুয়ারীর বিতর্কিত নির্বাচনের কারণেই আমেরিকা জিএসপি সুবিধা স্থগিত করেছে, ইউরোপও জিএসপি সুবিধা স্থগিত করার হুমকি দিয়েছে। নতুন বছরে আমেরিকা জিএসপি সুবিধা পুনরায় চালূ করবে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও জিএসপি বহাল রেখে বাংলাদেশের গর্মেন্টস শিল্পকে এগিয়ে নেবে সে স্বপ্ন দেখছে তৈরি পোকাশ শিল্পে কর্মরত অর্ধ কোটি শ্রমিক।
গেল বছর বিএনপির নেতাদের সাংগঠনিক তৎপরতায় মাঠে নামতে দেয়া হয়নি। বিএনপি নেতাদের নামে হাজার হাজার মামলা। বেগম জিয়াসহ দলের অধিকাংশ নেতা সারাবছর আদালতে দৌঁড়িয়েছেন। অথচ আওয়ামী লীগ বছর জুড়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় খরচে দেশের যেখানে গেছেন সেখানেই আবার নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য ভোটারদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হাওড় এবং বন্যা দূর্গত এলাকায় দূর্গতদের ত্রাণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যত নির্বাচনী সমাবেশ করেছেন। সমাবেশে নৌকায় ভোট চেয়েছেন। ২০১৭ সালের ‘এই পরিস্থিতি’ কি নতুন বছর ২০১৮ সালেও চলতে থাকবে? নাকি সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে সকল দলকে প্রচার প্রচারণার পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে?
বিগত বছরের শেষ দিকে এসেছে রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থী ইস্যু। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পৈচাসিক হত্যাকান্ড থেকে বাঁচতে রাখাইন রাজ্যের কয়েক লাখ রোহিঙ্গা মসুলিম জীবন বাঁচাতে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। মানবিক কারণে আশ্রয় দেয়া হলেও অধিক জনসংখ্যার এই দেশে বাড়তি ১০ লাখ রোহিঙ্গার ভরণপোষণ বহন করা কঠিন। আন্তর্জাতিক মহলও চায় রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিক মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার দাবিতে জাতিসংঘসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো চাপ দিচ্ছে এবং বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায়নি উন্নয়ন সহযোগী চীন এবং তথাকথিত বন্ধু ভারত-রাশিয়া। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন ফেব্রæয়ারীর মধ্যে এক লাখ রোহিঙ্গা ফেরত যাবে। মানুষ এটার বাস্তবায়ন দেখতে চায়।
মানুষের প্রত্যাশা নতুন বছর হোক জঙ্গীমুক্ত; গুম-ধর্ষন খুনের পৈচাসিকতা নি¤œমুখীর বছর। জঙ্গী নিধনে আইন শৃংখলা বাহিনী সাফল্য দেখালেও গেল বছরজুড়ে ছিল গুম আতঙ্ক। শেষ দিকে গুম হওয়া ৫ জন ফিরে আসায় গুমে স্বাজন হারানো পরিবারগুলো আশায় বুক বাঁধছে। হঠাৎ হঠাৎ করে মানুষ গুম হয়ে যাওয়ার ঘটনা নতুন বছরে কি বন্ধ হবে? মানুষ গুমের সংস্কৃতির চর্চা থেকে মুক্তি চায়। ধর্ষণের পৈচাসিকতার খবর মিডিয়ায় ছিল সারাবছর। গণধর্ষণ-সিরিজ ধর্ষণের খবরও মানুষ দেখেছে। মূল্যবোধহীন শিক্ষা এবং সামাজিক অস্থিরতায় সন্তানের হাতে বাবা-মা খুন; আবার বাবা মায়ের হাতে সন্তান হত্যার ঘটনা অনেকগুলো ঘটেছে। বিচারবহিভূত ক্রসফায়ারে হত্যাকান্ড একশ ছাড়িয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং দলটি সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে শতাধিক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। নতুন বছরে মানুষ এ ধরনের পৈচাসিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না। চায় নির্ভয়ে নিশ্বাস নিতে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, স্কুল-কলেজের পরীক্ষা ও বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা নির্বিঘেœ হোক এটাই সবার প্রত্যাশা। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘৃর্ণ খেলা মানুষ দেখতে চায় না। নতুন বছরে প্রশ্নফাঁস বন্ধ এবং শিক্ষাক্ষেত্রের নৈরাজ্যকর অবস্থার অবসান দেখতে চায় মানুষ। গ্যাস-বিদ্যুৎ মানুষের যাপিত জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ।
দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী দেখতে চায় মানুষ। প্রতিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান তার নিজস্ব স্বত্তা বজায় রেখে কাজ করবে এটাই সবার প্রত্যাশা। বিচারবিভাগে অস্থিরতা দেখতে চায় না মানুষ। নতুন বছর সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি কোনো ধরণের অস্তক্ষেপ ছাড়াই এগিয়ে যাবে সে প্রত্যাশা সবার। সীমিত সম্পদের ঘণবসতিপুর্ণ এই দেশে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে ফরাক থাকবেই। তারপরও অনেকগুলো বিষয় রয়েছে যা ইচ্ছে করলেই সুরাহা করা যায়। মতপথ আদর্শের ভিন্নতা থাকবে কিন্তু গণতান্ত্রিক অধিকার সবার সমান। গেল বছরের যন্ত্রণা-গøানি ভুলে মানুষ চায় নতুন বছর উন্নয়নের পাশাপাশি নিয়ে আসুক গণতন্ত্র-সুশাসন। সব ক’টা জালানা খুলে দিলেই নতুন বছরে আলোকিত হবে বাংলাদেশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।