পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : তানভীর হাসান জোহাকে ফিরে পেলেও নিখোঁজ হওয়ার রহস্য এখন পর্যন্ত উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, এ ব্যাপারে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। অন্যদিকে জোহার পরিবারও ভয়ে মুখ খুলতে রাজি হচ্ছে না। তার স্ত্রী ডা. কামরুন্নাহার চৌধুরী বলেছেন, ‘আমারা এখনো আতঙ্কিত। এ ব্যাপারে কোনো কথাই বলতে চাই না। আমরা তাকে ফিরে পেয়েছি, এটাই আমাদের কাছে বড় পাওয়া। তবে তাকে কোথা থেকে কে বা কারা ফেরত দিয়ে গেছেন, তা সঠিকভাবে তার পরিবার ও পুলিশ জানাতে পারেনি। তানভীর নিজেও কারো সাথে কোনো কথা বলছেন না। তার চোখে-মুখে ভয়ভীতি আর আতঙ্কের চাপ। যেন এক অজানা আতঙ্ক তাড়া করছে তাকে। পরিবার বলছে, প্রচ- ভয় পেয়েছেন তিনি।
ঢাকা বিমানবন্দর থানা পুলিশ বলছে, তাদের এলাকা থেকে তানভীর জোহাকে উদ্ধার করা হয়নি। কে বা কারা এ ধরনের একটি গুজব রটিয়েছে বলে থানা পুলিশ দাবি করছে। ফলে জোহাকে ফেরত পেলেও আড়ালেই রয়ে গেছে প্রকৃত ঘটনা। তাকে অপহরণ করা হয়েছিল নাকি তিনি আত্মগোপনে ছিলেন, তাও কেউ বলতে পারছেন না।
বিমানবন্দর থানার ওসি ফরমান আলী বলেছেন, তানভীর জোহাকে আমার থানা এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়নি। এ ব্যাপারে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। তিনি তানভীর হাসান জোহাকে জিজ্ঞাসা করার পরামর্শ দেন।
গতকাল সকাল থেকেই নগরীতে খবর ছড়িয়ে পড়ে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর জোহাকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাতে বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। এরপর তাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তবে কোথায় কীভাবে তিনি ছিলেন, তা জানা যায়নি। টানা ৭ দিন নিখোঁজ থাকার পর তানভীর জোহাকে ফিরে পেয়েছে তার পরিবার।
গতকাল বুধবার সকাল থেকেই জোহার কলাবাগানের বাড়িতে ভিড় করেন সাংবাদিকরা। তবে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা করেননি। জানাননি এতদিন কোথায়, কী অবস্থায় ছিলেন। তবে তার চাচা মাহবুবুল আলম সাংবাদিকদের জানান, জোহা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তার এখন বিশ্রামের প্রয়োজন। পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন না তিনি।
গতকাল বুধবার দুপুরে কলাবাগানে বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে জোহার চাচা, বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রাক্তন উপ মহাপরিচালক মাহবুবুল আলম বলেন, তানভীর হাসান জোহাকে সাদা পোশাকের লোকজন কালো গ্লাসের একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। গাড়ির ভেতরেই তার হাত, পা ও চোখ বেঁধে ফেলা হয়। এরপর কোনো এক অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে বাসার কক্ষে আটকে রাখে। সেখানে তাকে প্রয়োজনীয় খাবার-দাবার দেওয়া হয়েছে। প্রায় এক সপ্তাহ নিখোঁজ থাকার পর জোহাকে উদ্ধার করা হয়।
এ সময় তিনি বলেন, ‘পুলিশ মঙ্গলবার রাতে জোহাকে বাসায় পৌঁছে দেয়। তিনি এখন ঘুমাচ্ছেন। তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। ঘুম থেকে বারবার লাফিয়ে উঠছেন। মনে হচ্ছে তিনি আতঙ্কে আছেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুবুল আলম বলেন, ‘জোহার গায়ে কোনো নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এখন তিনি বিশ্রাম নিচ্ছেন। পুরোপুরি সুস্থ বোধ করার পরই তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন।
মাহবুবুল আলম আরো বলেন, ‘গত ১৬ মার্চ অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে জোহা নিখোঁজ হন। প্রায় এক সপ্তাহ নিখোঁজ থাকার পর মঙ্গলবার দিনগত রাত একটা-দেড়টার দিকে বাসার কলবেল বাজে। সাদা পোশাকের কয়েকজন এসে তাকে দিয়ে যান।
জোহাকে কারা বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে গেলেন তাদের বিষয়ে মাহবুবুল আলম বলেন, তারা সাদা পোশাকে ছিলেন, নিজেদের পরিচয় দেননি। শুধু বললেন, গণমাধ্যমে জোহার ছবি দেখে তারা তাকে শনাক্ত করেছেন। আমাদের ধারণা তারা ডিবির সদস্য।
গতকাল বুধবার সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার জানান, জোহাকে তার পরিবার ফিরে পেয়েছে। তবে তিনি কোথায় ছিলেন, কে বা কারা তাকে নিয়ে গিয়েছিল, কিংবা তিনি নিজেই আত্মগোপনে ছিলেন কিনা তা কিছুই জানা যায়নি।
জোহার শ্যালক বেলায়েত হোসেন বেলাল জানান, গত রাতে তানভীর জোহা বিমানবন্দর এলাকায় পাগলের মতো ঘুরছিলেন। এ সময় বিমানবন্দর থানা-পুলিশ তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে বাসায় দিয়ে যায়।
তানভীর জোহার স্ত্রী কামরুন নাহার চৌধুরী বলেন, ‘আমার স্বামীকে ফেরত পেয়েছি। আমার আর কিছু দরকার নেই।’
গত ১৬ মার্চ মধ্যরাতে ঢাকা সেনানিবাস এলাকায় অটোরিকশা থামিয়ে তাকে ও তার বন্ধুকে আলাদা গাড়িতে তুলে নেয় দুর্বৃত্তরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার (প্রায় ৮০০ কোটি টাকা) চুরির ঘটনায় গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়া তানভীর হাসান জোহা তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইনসাইড বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সাইবার নিরাপত্তা প্রকল্পে কাজ করতেন বলে দাবি করেন। তবে সরকারের আইসিটি বিভাগ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তানভীর জোহা বা তানভীর হাসান জোহা নামে কোনো ব্যক্তির সঙ্গে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের (আইসিটি) কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
এর আগে গত বুধবার রাতে কচুক্ষেত থেকে নিখোঁজ হন জোহা। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার তদন্তের প্রথম দিকে কাজ করেছিলেন। তদন্তের বিষয়ে একটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেয়ার দুদিন পর নিখোঁজ হন তিনি।
এর পর থেকেই তার স্ত্রী বলে আসছিলেন, জোহাকে অপহরণ করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার কলাবাগানের নিজ বাড়িতে জোহার স্ত্রী কামরুন্নাহার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, বুধবার রাত সোয়া ১১টায় কাজ শেষে কচুক্ষেত থেকে শেষবারের মতো ফোন করেছিলেন জোহা। ফোনে বলেছিলেন, ‘বাড়ি ফিরছি।’ তবে সোয়া ১২টার পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
তিনি তখন জোহার এক বন্ধুর বরাত দিয়ে আরো বলেছিলেন, ‘আমাকে ফোন দেয়ার পরপরই জোহা তার এক বন্ধুকে ফোন দেন। তিনি কচুক্ষেতে গিয়ে জোহার সঙ্গে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হচ্ছিলেন। তবে সিএনজি ছাড়ার আগেই দুটি গাড়ি এসে তাদের সামনে থামে। সশস্ত্র কয়েকজন তাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যায়।’
মানিক মিয়া এভিনিউয়ের সামনে জোহার বন্ধুকে গাড়ি থেকে ফেলে দেয়া হলেও জোহাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জোহার স্ত্রী কামরুন নাহার চৌধুরী দাবি করেছিলেন।
জোহার স্ত্রী আরো অভিযোগ করেছিলেন, বুধবার রাত থেকে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট, কাফরুল ও কলাবাগান থানায় জোহার অপহরণ-নিখোঁজের জন্য জিডি করতে গেলে পুলিশ তার অভিযোগ আমলে নেয়নি।
জোহা নিখোঁজের এক দিন পর সাংবাদিকেরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে। তবে গ্রেফতারের বিষয়টি আমি নিশ্চিত নই।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।