Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় পতাকার মর্যাদা সমুন্নত রাখার শপথ

প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তে অর্জিত জাতীয় পতাকার মর্যাদা সমুন্নত রাখার শপথ করেছে শিশু-কিশোরসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। গতকাল বুধবার দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় পতাকা উৎসবে এই শপথ নেয় তারা। বাংলাদেশ পুলিশের সহযোগিতায় জাতীয় পতাকা উৎসব উদযাপন কমিটি আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাজধানীর বিভিন্ন বিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিশু-কিশোর অংশ নেয়।
মুক্তিযুদ্ধ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ আয়োজনে ওই উৎসবে শপথবাক্য পাঠ করান পতাকা উৎসব উপদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি অধ্যাপক মাহফুজা খানম। শপথবাক্যে বলা হয়, আমরা শপথ করছি যে, জাতীয় পতাকার মর্যাদা সমুন্নত রাখব। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস, বাঙালির বীরত্বের কাহিনি সব সময় নিজের মধ্যে ধারণ করব। বাংলাদেশের জন্য আমাদের সবটুকু ভালোবাসা সব সময় আমাদের হাতিয়ার হয়ে থাকবে।
আমি শপথ করছি যে, ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মমর্যাদা সর্বদা স্মরণে রাখব। এ দেশের কৃষ্টিকে সব সময় লালন করব। স্রষ্টা আমাদের সহায় হোন।
সকালে শিখা চিরন্তনের সামনে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উৎসবের সূচনা হয়। এরপর জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের পর শুরু হয় জাতীয় পতাকা মিছিল।
মিছিলের উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক-মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এ সময় অন্যদের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক, বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস, পতাকা উৎসব উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক, ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
শিখা চিরন্তন থেকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে দিয়ে মৎস্য ভবন মোড় ঘুরে পুনরায় সোহরাওয়ার্দী পৌঁছে পতাকা মিছিল শেষ হয়।
এরপর আলোচনা পর্বে অংশ নিয়ে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বলেন, কোমলমতি শিশুদের সামনে মুক্তিযুদ্ধে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা জন্য আজকের এই উৎসব। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করে নতুন ধারা সৃষ্টির নানা চেষ্টা হয়েছিল, তার বিপরীতে আমরা নতুন কিছু আনছি না, সঠিক ইতিহাস তুলে ধরারই চেষ্টা করছি।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সকলকে উজ্জীবিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কারও একার নয়। সারাদেশ থেকে আজ দাবি উঠেছে বাংলাদেশের সরকারি দল কিংবা বিরোধী দলে যারাই তাদের সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের দল হতে হবে।
শিক্ষার্থীরা যাতে পঠন-পাঠন ও মননে মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে সেজন্য শিক্ষকদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রাথমিক ও গনশিক্ষা মন্ত্রী বলেন, জাতীয় সঙ্গীত ও পতাকার চেতনা শিশুদের মাঝে তুলে ধরুন, ছড়িয়ে দিন। যাতে শিশুরা নিজেদের অস্তিত্বে সেটাকে ধারণ করে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক-মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, বাংলাদেশ সৃষ্টির নানা ইতিহাস ধারণ করে আছে এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। কিন্তু এখানে শিশুপার্ক করে নতুন প্রজন্মের কাছ থেকে সেই ইতিহাস মুছে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল।
এটা তাদের জন্য বুমেরাং হয়েছিল। আমরা এখানে সাতই মার্চের ভাষণ, পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের স্থানসহ মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনার স্থান তুলে ধরার কাজ করছি। এখানে শিশুপার্কও থাকবে, পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ধারণ করা সব কিছুই থাকবে।
অনুষ্ঠানে মানচিত্র খচিত পতাকা তৈরির ইতিহাস তুলে ধরেন এই পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস। তিনি বলেন, পতাকা তৈরির পেছনের কথা মনে পড়লে আমি বিহ্বল হয়ে পড়ি। নানা রকম অত্যাচার নির্যাতন ও শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার ঐকান্তিক ইচ্ছা থেকে উৎসারিত এই পতাকার ইতিহাস।
পতাকা তৈরির আগেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য জাতি সংগ্রাম মুখর হয়ে উঠেছিল।
তিনি বলেন, তখনকার ইতিহাস মনে করলে পতাকা তৈরির ক্ষেত্রে আমি কিছুই না। কিছু আঁকাআঁকি করতাম বলে আমাকে এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আমি সামান্য শ্রম দিয়েছি মাত্র।
অতীত-বর্তমান সব প্রজন্মকে জাতির পতাকার মর্যাদা রক্ষা করতে হবে মন্তব্য করে শিব নারায়ণ দাস বলেন, বাংলাদেশ বললে এই বাংলা এবং ওপার বাংলার বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল বোঝাতো। এ কারণে বিভ্রান্তি দূর করতে পতাকায় মানচিত্র দেওয়া হয়েছিল।
তখন এই সিদ্ধান্তও ছিল দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পতাকা থেকে মানচিত্র সরিয়ে নেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক।
আলোচনা সভার একপর্যায়ে টেলিভিশন অনুষ্ঠান সিসিমপুরের পাপেট চরিত্র টুকটুকি, হালুম ও ইকরির পরিবেশনা শিশুদের মাঝে বাড়তি আনন্দ যোগ করে।
দিনব্যাপী উৎসবে বিকেলের আয়োজনে রয়েছে পতাকার জন্য গান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় পতাকার মর্যাদা সমুন্নত রাখার শপথ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ