Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যাংক খাতের অনিয়ম লুটপাট

বছরজুড়ে আলোচনায়

| প্রকাশের সময় : ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রাজনৈতিক কারণ দায়ী -ড. আকবর আলি খান : অর্থনীতি বিকাশে সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক ব্যাংকিং খাত জরুরি -ড. রেহমান সোবহান
হাসান সোহেল : একাধিক ব্যাংকের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় আকস্মিক পরিবর্তন ও খেলাপি ঋণসহ নানা অনিয়মে বছরব্যাপি দেশের ব্যাংকিং খাত ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। পরিষদ (বোর্ড) সদস্যদের স্বেচ্ছাচারিতা, অব্যবস্থাপনা আর অদক্ষতায় ব্যাংক খাত যেন নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে খেলাপি ঋণ অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়েছে। বেসরকারি ৪৮টি ব্যাংকের মধ্যে ১৩টির আর্থিক অবস্থা বেশ খারাপ। এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ অনেক বেড়েছে। সব ব্যাংকেই যেন সুশাসনের অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। নামে-বেনামে ইচ্ছামতো অর্থ তুলে নেয়া হয়েছে। ঋণে বেড়েছে অনিয়ম। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও একাধিকবার ব্যাংকিং খাতের নাজুক অবস্থার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এমনকি জাতীয় সংসদেও একাধিকবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল ব্যাংকখাত।
এদিকে মালিকদের চাপে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনেরও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর মাধ্যমে পরিবারকেন্দ্রিক ব্যাংক ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি ব্যবস্থা আগের চেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই এ খাতে বেড়েছে ঝুঁকি। অবশ্য স¤প্রতি ফারমার্স ব্যাকের চেয়ারম্যান এবং এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের এমডিকে অপসারণ করে কিছুটা নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
স¤প্রতি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডবিøউইএফ) প্রকাশিত ‘গেøাবাল কম্পিটিভনেস রিপোর্ট ২০১৭-১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনেও বাংলাদেশের আর্থিক খাতের অস্থিরতার চিত্র উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, ৫১ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন ব্যাংকিংখাতে অনিয়ম রোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শন কমানো হয়েছে। ব্যাংকিংখাতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বড় আকারের মন্দ ঋণ আদায় হচ্ছে না। বড় বড় কোম্পানির কাছে ঋণ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। অপরদিকে ব্যাংকিং খাতে ক্ষমতার অপব্যবহার, রাজনৈতিক প্রভাব ও যোগসাজশের মাধ্যমে লাগামহীন জালিয়াতি, দুর্নীতি ও ঋণ খেলাপির দৌরাত্ম্য, অন্যদিকে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের অকার্যকর পদক্ষেপ ও দৃশ্যমান অসহায়ত্বের ফলে সৃষ্ট অরাজকতা ও ঝুঁকিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সঙ্গে এর মাধ্যমে জনমনে অরাজকতা ও আস্থার সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের সরকারি ব্যাংক খাত মৃতপ্রায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যথাযথ তদারকির অভাবে ব্যাংকিং খাত নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। এত দিন সরকারি ব্যাংকের অবস্থা ভয়াবহ খারাপ থাকলেও এখন তা বেসরকারি ব্যাংকেও ছড়িয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় দেয়া নতুন কয়েকটি ব্যাংকের টিকে থাকাটাই মুশকিল হয়ে গেছে। ভালো চলছিল বেসরকারি ব্যাংকখাত। কিন্তু সরকারি হস্তক্ষেপে এই বেসরকারি ব্যাংক খাতও অস্থির হয়ে পড়েছে। এছাড়া ব্যাংকখাতের শীর্ষ ব্যক্তিদের মতে, যে পদ্ধতিতে ব্যাংকের বোর্ড ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে, তাতে গ্রাহকদের আস্থা হারিয়ে যাবে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, লেখক-গবেষক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান ব্যাংক খাতের দূরাবস্থার জন্য দায়ী করেছেন রাজনৈতিক কারণকে। পাশাপাশি সুশাসনের অভাবে আর্থিক খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি বিরাজ করছে বলে উল্লেখ করেন।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ ড. রেহমান সোবহান বলেছেন, অর্থনীতি বিকাশে সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক ব্যাংকিং খাত জরুরি। তিনি বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাতে সংকট চলছে। নৈতিকতার অভাব, নিয়ন্ত্রক সংস্থার ব্যর্থতা, রাজনৈতিক ও ক্ষমতার প্রভাবের কারণে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ খাতে সুস্থ প্রতিযোগিতা কমেছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে চলমান সংকট নিরসন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে তার সুপারিশের ভিত্তিতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি নিরসন পরিকল্পনাসহ একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন ছাড়া সরকার ও বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো বিকল্প নেই।
সূত্র মতে, দেশে সরকারি-বেসরকারি-বিদেশি মিলে মোট ৫৭টি ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে আর্থিক অবস্থার চরম অবনতিতে আছে ১৩টি ব্যাংক। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয়মালিকানাধীন ও বিশেষায়িত ব্যাংক আটটি। এছাড়া বেসরকারি খাতের একাধিক ব্যাংকের মালিকানা বদল নিয়েও নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে।
বছরের শুরুতেই বেসরকারি খাতের অন্যতম ইসলামী ব্যাংকের পরিষদে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়। একইভাবে অন্য দুটি ব্যাংকেও পরিবর্তন আনা হয়। এর মধ্যে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইসলামী ব্যাংক, অক্টোবরে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) পরিষদে পরিবর্তন আনা হয়। ব্যাংক তিনটির শেয়ার বিক্রি করে মালিকানায় পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রæপ এখন ব্যাংক তিনটির মালিক। এদিকে সম্প্রতি আরব বাংলাদেশ (এবি) ব্যাংকের পরিষদেও এসেছে পরিবর্তন। আর তাই সার্বিক পরিস্থিতিতে আমানতকারীদের মধ্যে বড় ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, নদী ও চর দখলের মতোই একের পর এক ব্যাংক দখল হচ্ছে, যার কোনো বিচার নেই। ফলে তৈরি হচ্ছে অসমতা, বাড়ছে বৈষম্য। তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়নের কথা বলা হলেও সেজন্য যে রাজনৈতিক প্রতিশ্রæতি দরকার তার ঘাটতি রয়েছে। ফলে বিভিন্ন খাতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে অর্থনীতি ঝুঁকিতে পড়বে।
এদিকে রাষ্ট্রীয়মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। ফলশ্রæতিতে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে সেগুলো চালু রাখতে হচ্ছে। অন্যদিকে বিদ্যমান বেসরকারি চালু ব্যাংকগুলো যেখানে ভালো চলছে না, সেখানে নতুন ব্যাংক অনুমোদনের তোড়জোড় চলছে। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী নতুন করে আরো তিনটি ব্যাংক অনুমোদনের কথা বলেছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, এর আগে যখন নয়টি ব্যাংক দেয়া হয়েছিল তখন আমরা বলেছিলাম বাংলাদেশের অর্থনীতির যে আকার সেখান থেকে আর ব্যাংক দেয়া ঠিক হবে না। তারপরও শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন দেয়া হয়। ব্যাংকগুলোর এখন নাজুক অবস্থা। তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম আর জালিয়াতির যে রীতি চালু হয়েছে নতুন ব্যাংক এলে তার ক্ষেত্র আরো প্রসারিত হবে। তাই এসব প্রতিরোধে সরকারকে বেশি মনোনিবেশ করা প্রয়োজন।
সূত্র মতে, খেলাপি ঋণে ঘাটতিতে প্রভিশন ও মূলধন বছরের শুরু থেকে ব্যাংকিং খাতে লাগামহীনভাবে বাড়ে খেলাপি ঋণ। নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) ও মূলধন ঘাটতিতে পড়ে সরকারি-বেসরকারি বেশকিছু ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাত লাখ ৫২ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা, যা ১৬ ডিসেম্বর শেষে দাঁড়ায় ৬২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। অর্থাৎ নয় মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৮ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। সরকারি ও বেসরকারি খাতের সাতটি বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে। সেপ্টেম্বর শেষে এসব ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা।
প্রভিশন ঘাটতির পাশাপাশি মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে আটটি ব্যাংক। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে আট ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, যার মধ্যে তিনটি রাষ্ট্রীয় মালিকানার বাণিজ্যিক ব্যাংক, তিনটি রাষ্ট্রীয় মালিকানার বিশেষায়িত ব্যাংক এবং তিনটি বেসরকারি খাতের ব্যাংক রয়েছে। নতুন করে যোগ হয়েছে চতুর্থ প্রজন্মের ফারমার্স ব্যাংক।
বিশ্লেষকদের মতে, অনিয়ম হলেও শাস্তি না হওয়ায় বাড়ছে অপকর্ম। প্রায় চার হাজার কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতির নেপথ্যে থেকেও ধরাছোঁয়ার বাইরে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় কেউই কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি তার বিরুদ্ধে। অনিয়মের অভিযোগে দুই দফা জিজ্ঞাসাবাদেই দায় সারছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আর এসব কারণে আর্থিক খাতে বাড়ছে অনিয়ম-দুর্নীতি আর নানা কেলেঙ্কারি।
এদিকে বছরজুড়ে ব্যাংকগুলোর পরিষদে পরিবর্তন ও নানা অনিয়মে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা থাকলেও বেশকিছু কার্যকর পদক্ষেপও নিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক এ সংস্থা। ব্যাংকের পরিষদ পরিচালনায় ব্যর্থ হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপে চেয়ারম্যান পদ ছাড়তে বাধ্য হন ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও এনআরবিসির চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার ফরাসাত আলী। সর্বশেষ ফারমার্স ব্যাংকের এমডি একেএম শামীমকেও সরিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া অনিয়মের অভিযোগে অপসারণ করা হয় এনআরবিসির এমডি দেওয়ান মুজিবুর রহমানকে। সুশাসনের অভাব, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি ও প্রভিশন ঘাটতিসহ বিভিন্ন কারণে এবার এবি ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ‘অনিয়মের অন্তর্নিহিত সুনির্দিষ্ট কারণ উদঘাটন করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হওয়ায় অনিয়ম লাগামহীন হয়েছে, একই সঙ্গে বেড়েছে আমানতকারীসহ দেশবাসীর মধ্যে দুশ্চিন্তা ও আস্থার সংকট’ বলেছেন- টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
এছাড়া ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধন করে ব্যাংকের পরিষদে একই পরিবার থেকে চারজন এবং একটানা নয় বছর দায়িত্ব পালনের সুযোগ রাখা হচ্ছে। বেসরকারি ব্যাংকে এক পরিবার থেকে চারজন পরিচালক থাকলে ব্যাংকে সুশাসনের ঘাটতি দেখা দেবে বলে জানিয়েছেন একাধিক সংসদ সদস্য।
সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম মিলন বলেন, ব্যাংক খাতে এক লাখ কোটি টাকার বেশি খেলাপি ঋণ। বেশির ভাগ পরিচালক তা ভাগাভাগি করে নিয়ে গেছেন। পুরো ব্যাংক খাত জিম্মি হয়ে আছে ব্যাংকের মালিক-পরিচালকদের কাছে। রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, সরকারি ব্যাংকের পরিচালকরা বিদেশে টাকা পাচার করছেন। এখন বেসরকারি ব্যাংকেও নিয়ম করা হচ্ছে যে, এক পরিবার থেকে চারজন পরিচালক হবেন।
কাজী ফিরোজ রশীদ সংসদে বলেন, ব্যাংক খাতে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকে এক পরিবার থেকে চার পরিচালক দেয়ার নিয়ম হচ্ছে, ব্যাংকগুলোতে স্বতন্ত্র পরিচালকও নেই। এভাবে চললে ব্যাংকগুলো মুদির দোকান হয়ে যাবে।
সম্প্রতি সংসদ সচিবালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ও ফারমার্স ব্যাংক পরিচালনায় অনিয়ম ও দুর্নীতি সম্পর্কে অধিকতর তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করে ব্যাংকগুলোকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে গ্রাহকদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়। ইসলামী ব্যাংক নিয়েও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক বলেন, স¤প্রতি ইসলামী ব্যাংক এগ্রেসিভ লোন দিচ্ছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক জোর অবস্থান নিতে পারতো এসবের বিরুদ্ধে। তাদের ব্যর্থতায় এগুলো হচ্ছে। আর সরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে সরকারকেই দায়ভার নিতে হবে। তিনি বলেন, যে প্রক্রিয়ায় ব্যাংকগুলোতে পরিষদ সদস্যের পরিবর্তন আনা হচ্ছে, তা ব্যাংক খাতের সুশাসনের জন্য অন্তরায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদের মতে, ব্যাংকের এমডি যদি শক্ত অবস্থান না নেয়, চাকরি হারানোর ভয়ে যদি কাজ করে তবে তা দুঃখজনক।
অর্থনীতিবিদ ড. রেহমান সোবহান বলেন, ব্যাংক ঋণের উল্লেখযোগ্য অংশ খেলাপি। আর খেলাপিদের জন্য এক ধরনের উদ্ধার তৎপরতা দেখা যায়। তার মতে, খেলাপিরা প্রায় সবাই এলিট শ্রেণির। তাদের প্রভাব ও ক্ষমতা রয়েছে। ঋণের সুদের হার (কস্ট অব লেন্ডিং) সবার জন্য এক রকম নয়। একেকজন একেক রেটে ঋণ পাচ্ছে। প্রতিযোগিতার বাজার প্রায় ধ্বংস হয়েছে। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বাংলাদেশ ব্যাংক) বড় ধরনের ব্যর্থতা রয়েছে। সবকিছুতেই রাজনৈতিক আধিপত্য বাড়ছে।



 

Show all comments
  • তানবীর ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৪:০৭ এএম says : 0
    এভাবে লুটপাট চলতে থাকলে দেশটা তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত হবে।
    Total Reply(2) Reply
    • নাঈম ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:২৭ পিএম says : 4
      একদম খাঁটি কথা বলেছেন। এখনই প্রায় তার দারপ্রান্তে চলে এসেছে
    • তৃণা ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৭:৩৮ পিএম says : 4
      একদম ঠিক কথা বলছেন।
  • Babul ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ২:২৮ পিএম says : 0
    Nice Report.....
    Total Reply(0) Reply
  • সাকিব ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:২৪ পিএম says : 0
    দেশের অর্থনীতি বিকাশে এবং অর্থনৈতিক সার্বিক উন্নয়নে সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক ব্যাংকিং খাত জরুরি
    Total Reply(0) Reply
  • ফাতেমা ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:২৫ পিএম says : 0
    আশা করি সরকারের নীতিনির্ধারনী মহল এই নিউজটি দেখবেন এবং বিষয়টি অত্যান্ত গুরুত্বের সাথে আমলে নিবেন।
    Total Reply(0) Reply
  • বাবুল ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:৩১ পিএম says : 0
    কেউ কী বলতে পারে অনিয়ম ও লুটপাট থেকে কোন খাতটা রক্ষা পেয়েছে ?
    Total Reply(0) Reply
  • ইশিতা ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:৩১ পিএম says : 0
    সরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে সরকারকেই দায়ভার নিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • পান্না ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:৩২ পিএম says : 0
    নদী ও চর দখলের মতোই একের পর এক ব্যাংক দখল হচ্ছে, যার কোনো বিচার নেই। আল্লাহ জানে আমাদের কপালে কি আছে
    Total Reply(0) Reply
  • রবিউল ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:৩৪ পিএম says : 0
    সংসদে কাজী ফিরোজ রশীদ একদম সঠিক কথা বলেছেন যে, ব্যাংক খাতে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকে এক পরিবার থেকে চার পরিচালক দেয়ার নিয়ম হচ্ছে, ব্যাংকগুলোতে স্বতন্ত্র পরিচালকও নেই। এভাবে চললে ব্যাংকগুলো মুদির দোকান হয়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Al Amin ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:৩৫ পিএম says : 0
    Thanks to The Daily Inqilab and the reporter of this news
    Total Reply(0) Reply
  • তৃণা ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৭:৪০ পিএম says : 0
    সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্যাংক

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৭ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ