পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : ইব্রাহিম ও খালিদ আল বাকরাউকে ব্রাসেলস বিমানবন্দর ও পাতাল রেলে আত্মঘাতি বোমা হামলাকারী হিসেবে নাম প্রকাশের পর হামলার মূল হোতা নাজিম লাচরাউইকে (২৪) গ্রেফতারের কথা জানানো হয়েছে। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে জোড়া বোমা হামলায় বেঁচে যাওয়া মূল সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে বেলজিয়াম মিডিয়া দাবি করে। হামলায় ৩৭ জন নিহত ও দুই শতাধিক আহত হয়। আহতদের মধ্যে কয়েকজন মার্কিন নাগরিকও রয়েছে বলে জানা গেছে। অবশ্য মূল হোতা হিসেবে যাকে গ্রেফতারের দাবি করা হয়েছে তা নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
হামলার তদন্তে নেমে ৩ সন্দেহভাজনের ছবি দেখিয়ে বিমানবন্দরের ভিতরের একটি সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করে বেলজিয়াম পুলিশ। সেখানে পুলিশের তরফে জানানো হয়, প্রাণ হারানো ২ আত্মঘাতী জঙ্গির পাশাপাশি এক জীবিত জঙ্গিও রয়েছে। সেই তৃতীয় জঙ্গির খোঁজে রাতভর তল্লাশি শুরু করে বেলজিয়াম প্রশাসন। বুধবার এক যুবককে ধরে পুলিশ। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের একাংশ দাবি করে, এই সেই তৃতীয় সন্দেহভাজন যাকে খোঁজা হচ্ছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর সেই দাবি নাকচ করে দেয় অন্য অংশ। জানা যায়, ধৃত ব্যক্তি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা ব্যক্তি নয়।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টার দিকে শক্তিশালী জোড়া বিস্ফোরণে কেঁপে উঠে যাভেনতেম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এর ৭৯ মিনিটের মাথায় অপর এক আত্মঘাতি হামলায় কেঁপে উঠে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে অবস্থিত মায়েলবিক পাতাল রেল স্টেশন।
পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে স্থানীয় একটি সংবাদ মাধ্যম দাবি করেছে, হামলা চালানো তিন সন্দেহভাজনের নাম খালিদ আল বাকরাউ, ইব্রাহিম আল বাকরাউ ও নাজিম লাচরাউই। এর মধ্যে খালিদ ও ইব্রাহিম সহোদর ভাই।
খালিদ ও ইব্রাহিম যাভেনতেম বিমানবন্দর ও মেট্রোস্টেশনে আত্মঘাতি হামলা চালায়। আর শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বোমার স্যুটকেস বিমানবন্দরে রেখেই নাজিম লাচরাউই সটকে পড়ে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, পলাতক নাজিম লাচরাউই পুলিশের ওয়ান্টেড লিস্টে ছিলেন আগে থেকেই। গতবছর নভেম্বরে প্যারিস হামরার ঘটনায় হামলাকারীদের তিনি ‘আত্মঘাতি ভেস্ট’ তৈরি করে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই হামলায় ১৩০ জন নিহত হয়। চার মাস আগে প্যারিস হামলার হোতা সালাহ আবদেসালামের সঙ্গে তিনি ব্রাসেলসে প্রবেশ করেন। গত ১৮ মার্চ গুলিবিব্ধ অবস্থায় আবদেসালামকে যে অ্যাপার্টমেন্ট থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ সেই অ্যাপার্টমেন্ট খালিদ আল বাকরাউই ভাড়া করেছিলেন বলে জানানো হয় খবরে।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো আরো জানিয়েছে, ব্রাসেলস হামলার আগে টানা ১০ দিন পুলিশের তাড়া খেয়ে এখান থেকে সেখানে পালিয়ে বেড়িয়েছেন আবদেসালামসহ হামলাকারী বাকিরা। কিন্তু গত ১৮ মার্চ তাদের সর্বশেষ ডেরায় পুলিশ হানা দিলে গুলি বিনিময় হয় উভয়পক্ষের মধ্যে। এ সময় আহত অবস্থায় গ্রেফতার হন আবদেসালাম। কিন্তু বাকিরা পালিয়ে যান। ধারণা করা হচ্ছে আবদেসালামকে গ্রেফতার করার পর হামলাকারীরা নতুন একটি ডেরা খুঁজে বের করেন। সেখানেই তারা ব্রাসেলসে মঙ্গলবারের হামলার প্রস্তুতি নেন।
গতকালের পুলিশের অভিযান সম্পর্কে বেলজিয়াম কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সরকারিভাবে কিছু নিশ্চিত করা হয়নি।
হামলার পর বেলজিয়াম পুলিশ সিসিটিভিতে যাদের দেখা গেছে তাদের সম্পর্কে তথ্য প্রদানের জন্য আবেদন জানায়। গতকাল দিনের প্রথম দিকে পুলিশ কালো পোশাক পড়া দুইজনকে বাকারাউ ভ্রাতৃদ্বয় বলে শনাক্ত করে। তৃতীয় ব্যক্তিকে নাজিম লাচারউই বলে শনাক্ত করে।
এদিকে সম্ভাব্য চতুর্থ কোনো হামলাকারীর অস্তিত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে যে, বিমানবন্দরে দ্বিতীয় বোমার বিস্ফোরণটি ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাকরাউই ভ্রাতৃদ্বয় বেলজীয় নাগরিক। তারা বেলজিয়ামের রাজধানীতে দীর্ঘদিনের অপরাধী হিসেবে পুলিশের কাছে পরিচিত। অতিসম্প্রতি জানা যায় যে, নভেম্বরে প্যারিসে রক্তক্ষয়ী হামলার সঙ্গে তারা সুস্পষ্টভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। প্যারিস হামলায় ১৩০ জন প্রাণ হারায়। বিমানবন্দরে বোমা হামলাকারীরা যদি প্যারিস হামলাকারীদের মতো একই সেলের সদস্য বলে প্রমাণিত হয় তাহলে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের সম্ভাব্য ব্যার্থতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠবে।
ব্রাসেলসের বাসিন্দা বাকারাউই ভ্রাতৃদ্বয়ের বিরুদ্ধে বেলজিয়ামে সংগঠিত অপরাধের দীর্ঘ রেকর্ড রয়েছে। তাদের এক ভাই ব্রাসেলসের দক্ষিণ-পশ্চিমে ফরেস্টে ফ্ল্যাট ভাড়া করেছিলেন যে ফ্ল্যাটে পুলিশ ব্রাসেলস হামলার এক সপ্তাহ আগে হানা দিয়েছিল। সেখানে আবদেসালামকে পাওয়া যায়। সেখানে প্যারিস হামলাকারীদের সেলের এক সদস্যকেও পাওয়া যায়। তার নাম মোহামেদ বেলকাইদ। আলজেরীয় বংশোদ্ভূত বেলকাইদ পুলিশের গুলিতে মারা যায়।
নাজিম লাচরাউই’র জাতীয়তা সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। এ সপ্তাহে তাকে মূল সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আগে পুলিশের কাছে তার পরিচিতি ছিল সুফিয়ান কায়েল এই ছদ্মনামে। তিনি ২০১৩ সালে সিরিয়া ভ্রমণ করেন এবং ২০১৫ সালে ছদ্মনামেই তিনি আবদেসালামের সঙ্গে ভ্রমণ করছিলেন তখন তাদের মার্সিডিজ অস্ট্রিয়ার সঙ্গে হাঙ্গেরী সীমান্তে আটকে দেয়া হয়েছিল।
ইসলামিক স্টেট আইএস মঙ্গলবারের হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে। আইএসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ‘আমাক’ নিউজ এজেন্সি আইএসের বরাত দিয়ে জানায়, আইএস যোদ্ধারা এক্সপ্লোসিভ বেল্ট ও ডিভাইস নিয়ে সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। তারা বিমানবন্দরে গুলিবর্ষণও করে এবং উভয় স্থানে আত্মঘাতি বেল্ট বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়।
তিন সন্দেহভাজনের সিসিটিভির ফুটেজ প্রকাশের পর এক ট্যাক্সি ড্রাইভার তাদের শনাক্ত করতে এগিয়ে আসেন। তিনি জানান যে, একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক থেকে তাদের তিনজনকে তিনি তার ট্যাক্সিতে করে বিমানবন্দরে নিয়ে এসেছিলেন। এই তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ স্ক্যারবিকে অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে হানা দেয় এবং সেখান থেকে বিস্ফোরক ডিভাইস, আইএসের পতাকা ও বেশ কিছু রাসায়নিক উদ্ধার করা হয়।
ইব্রাহিম আল বাকরাউই
পুলিশের ধারণা ইব্রাহিম বাকরাউই ব্রাসেলসের প্রধান বিমানবন্দরে বেশ কিছু বিস্ফোরকে বিস্ফোরণ ঘটায়। তিনি এবং তার ভাই খালিদ দুজনেরই বেলজিয়ামে সংগঠিত অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে এবং এজন্য তারা পুলিশের কাছে খুবই পরিচিত। পুলিশের আরো ধারণা প্যারিস হামলার সঙ্গে দুই ভাইই জড়িত ছিলেন। তারা অন্য সন্দেহভাজনদের সঙ্গে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন।
খালিদ আল বাকারাউই
পুলিশ বেলজিয়াম মিডিয়াকে বলছে, তারা মনে করে খালিদ আল বাকারাউই মায়েলবিক পাতাল রেল স্টেশনে বোমা বিস্ফোরণের জন্য দায়ী। এই হামলায় অন্তত ১৪ জন নিহত ও ১৩০ জনের বেশি আহত হয়। তার ভাই ইব্রাহিমের মতো সেও বিমানবন্দরে হামলার জন্য সন্দেহভাজন। প্যারিস হামলার সঙ্গে তারও যোগসূত্র ছিল। বেলজিয়াম পুলিশের কাছে সেও একজন অপরাধী হিসেবে পরিচিত। মূলত তারই ভাড়া করা ফ্ল্যাট থেকে সালেহ আবদেসালামে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
নাজিম লাচরাউই
গ্রেফতারকৃত নাজিম লাচারাউইকে ব্রাসেলস বোমা হামলার মূল হোতা হিসেবে পুলিশ শনাক্ত করেছে। প্যারিস হামলাকারীদের ব্যবহৃত দুটি গোপন আস্তানা থেকে তার ডিএনএ নমুনা পাওয়া যায়। বেলজিয়ামের প্রসিকিউটর জানান, তিনি ছদ্ম পরিচয়ে আবদেসালামের সঙ্গে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভ্রমণে গেলে অস্ট্রিয়ার সঙ্গে হাঙ্গেরি সীমান্তে পুলিশ তাদের আটকে দিয়েছিল।
গ্রেফতার নিয়ে ধোঁয়াশা
ব্রাসেলসে হামলার পরই নড়েচড়ে বসে বেলজিয়াম প্রশাসন। বিস্ফোরণের ঠিক আগের মুহূর্তের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করে দুই সন্দেহভাজন আত্মঘাতী জঙ্গির ছবি প্রকাশ করেছে পুলিশ।
পুলিশের অনুমান ছিল, বিমানবন্দরের সিসিটিভি ফুটেজে ওঠা কালো টুপি, সাদা জ্যাকেট পরা যুবকই ব্রাসেলস বিস্ফোরণের একমাত্র জীবিত জঙ্গি। বেলজিয়ামের স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের একাংশ দাবি করে, ইতিমধ্যেই ছবির তৃতীয় ব্যক্তিকে ধরতে সক্ষম হয়েছেন গোয়েন্দারা, যার নাম, নাজিম লাচরাউই। কিন্তু পরে তারা তাদের এই দাবি থেকে সরে আসেন। গ্রেফতার নিয়ে শুরু হয় ধোঁয়াশা।
বেলজিয়াম পুলিশের দাবি, প্যারিস হামলার সঙ্গেও যোগ ছিল বছর পঁচিশের নাজিমের। গত বছরের শেষের দিকে প্যারিস হামলার অন্যতম হোতা ধৃত আবদেসালামের সঙ্গে নাজিম হাঙ্গেরি গিয়েছিল। নাজিম আইএস-এর বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ। প্যারিসের হামলাকারীদের ডেরায় নাজিমের ডিএনএ’র নমুনাও পাওয়া গিয়েছিল। পরনে কালো জ্যাকেট। হাতে কালো গ্লাভস। ট্রলি নিয়ে যে দুই যুবকের ছবি সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে তাদের নাম, ইব্রাহিম ও খালিদ। পুলিশ সূত্রকে উদ্ধৃত করে বেলজিয়ামের সরকারি সংবাদ মাধ্যমের দাবি, এই দুই জঙ্গি ভাইই মঙ্গলবার আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায় ব্রাসেলসে!
তদন্তকারীদের অনুমান, ব্রাসেলসে নিখুঁত অপারেশন চালানোর জন্য নিজেদের মধ্যে কাজ ভাগাভাগি করে নিয়েছিল খালিদ ও ইব্রাহিম। প্রথমে বিমানবন্দরে নিজেকে বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেয় আত্মঘাতী জঙ্গি খালিদ। কিছুক্ষণের মধ্যে তার ভাই ইব্রাহিম আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায় মলবিক মেট্রো স্টেশনে।
দুই ভাইয়ের হত্যালীলায় তছনছ হয়ে যায় টিনটিনের দেশ। পুলিশের অনুমান, হাতের এই কালো গ্লাভসের মধ্যে ডিটোনেটর লুকিয়ে রেখেছিল জঙ্গিরা। ভ্রাতৃদ্বয়ের বাঁ-হাতে সন্দেহজনক কালো গ্লাভস থাকলেও, নাজিমের ক্ষেত্রে তেমন কিছু দেখতে পাওয়া যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে বেলজিয়াম পুলিশ আরও জানতে পারে, বিস্ফোরণের পরই ব্রাসেলস বিমানবন্দর থেকে গা ঢাকা দিয়েছিল নাজিম। যদিও এই গ্রেফতারির কিছুক্ষণের মধ্যেই বেলজিয়ামের এক সংবাদ মাধ্যম পাল্টা দাবি করে, ধৃত ব্যক্তি নাজিম নয়।
এর আগে নাজিমের খোঁজে রাতভর দেশজুড়ে তল্লাশি শুরু হয়। সারা রাতজুড়ে বেলজিয়ামের আকাশে চক্কর কেটেছে হেলিকপ্টার। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলেছে অভিযান।
প্রসঙ্গত, ব্রাসেলসের হামলার পর গোটা ইউরোপীয় ইউনিয়নে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, দীর্ঘদিন ধরেই ব্রাসেলস ইইউ’র সদর দফতর। এর আগেও প্যারিস হামলার অন্যতম সন্দেহভাজন সালাহ আবেদেসালাম প্রায় চারমাস বেলজিয়ামে আত্মগোপন করেছিল। মাত্র পাঁচদিন আগেই তাকে এই শহরের মলিনবিক অঞ্চল থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখানেই নাশকতা প্রসঙ্গে বেলজিয়াম প্রশাসনের গা-ছাড়া মনোভাবের প্রশ্ন উঠেছে।
জোড়া বিস্ফোরণের জেরে গতকালও বন্ধ ছিল বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসের যাভেনতেন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। যাত্রীদের বিমান সংস্থাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে পাতাল রেলও। ব্রাসেলসের দমকল বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, বিমানবন্দরে অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে পাতাল রেলে নিহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন।
হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহরের প্লেস দি লা বুর্জ এলাকায় মোমবাতি-মিছিল করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বেলজিয়ান প্রধানমমন্ত্রী চার্লস মিচেল এ দিনটিকে কালো দিবস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে বেলজিয়াম প্রশাসন। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই কাপুরুষোচিত হামলা দিয়ে তার দেশকে নত করা যাবে না। তিনি জানান, একটা হামলার জন্য বেলজিয়ামবাসী নিজেদের স্বাভাবিক জীবন ত্যাগ করবে না।
হামলার ঘটনায় তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করছে বেলজিয়ামবাসী। হামলার প্রতিবাদ এবং হতাহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ব্রাসেলসবাসী মোমবাতি জ্বালায়। বেলজিয়ামের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানজামবোন হামলার ঘটনার পর দেশে সন্ত্রাসী হামলার সতর্কতা সর্বোচ্চ মান চারে উন্নীত করার ঘোষণা দেন। লোকজন যে যেখানে আছে, সেখানেই অবস্থান নিতে বলা হয়। এছাড়া দেশটির সব পারমাণবিক স্থাপনায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। হামলার ঘটনার পর ইউরোপজুড়ে বিভিন্ন রাজধানীতে সতর্ক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ।
আবদেসালামকে গ্রেফতারের পর থেকে সতর্ক অবস্থায় ছিল বেলজিয়ামের কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাকে গ্রেফতারের চারদিনের মাথায় সন্ত্রাসী হামলায় রক্তাক্ত হলো ব্রাসেলস। ইসলামিক স্টেট (আইএস) একটি অনলাইনে এই হামলার দায় স্বীকার করে এর চেয়েও ভয়াবহ হামলা আসছে বলেও হুমকি দিয়েছে।
অনেকের ধারণা করছেন, প্যারিসে বোমা হামলাকারী আবদেসালামের গ্রেফতারের প্রতিশোধ নিতেই এই হামলা চালানো হতে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা বলেছেন, এই বোমা হামলা হলো মুক্ত ও গণতান্ত্রিক সমাজের উপরে হামলা। অপরাধীকে ধরতে সকল রকম সহযোগিতার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। বেলজিয়ামের রাজা কিং ফিলিপ এই হামলাকে একটি কাপুরুষোচিতএবং ঘৃণ্য হামলা বলে বর্ণনা করেছেন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী চার্লস মিশেল বলেছেন, বেলজিয়ামকে আতঙ্কগ্রস্ত করা যাবে না।
ব্রাসেলস হামলার নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব বানকি মুন বলেছেন, জড়িতদের অবিলম্বে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ বলেন, পুরো ইউরোপের উপরই আঘাত করা হয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, আমরা এই সন্ত্রাসীদের কখনোই জিততে দেব না। হামলার নিন্দা জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস ও ইইউ’র পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক প্রধান ফেডারিকা মোঘারিনি। কিউবা সফরে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, জাতীয়তা-বর্ণ-ধর্ম-বিশ্বাস নির্বিশেষে আমাদের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বিশ্বজুড়ে যারা মানুষের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি সৃষ্টি করছে, আমরা তাদের পরাজিত করতে পারি এবং আমরা তাদের পরাজিত করবই। গত আট মাসে সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য বস্তু হওয়া রাশিয়া ও তুরস্কও বলেছে, এই হামলা জাতি-ধর্ম-বর্ণ-সীমানা নির্বিশেষে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রয়োজনীয়তাকেই সামনে এনেছে।
স্কাই নিউজের ইউরোপীয় সংবাদদাতা মার্ক স্টোন বলেছেন, যদি লাচরাউই গ্রেফতার হয়ে থাকেন তাহলে এটাকে বড় ধরনের সাফল্য হিসেবেই দেখা হবে এবং কর্তৃপক্ষের জন্য নিঃসন্দেহে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
সূত্র : বিবিসি, সিএনএন, দ্য গার্ডিয়ান, রয়টার্স, নিউজ রিপাবলিক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।