পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো : সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলের ষড়যন্ত্র বন্ধ এবং রাষ্ট্রধর্মের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে শুনানির কার্যতালিকায় থাকা রিট মামলা বাতিলের দাবিতে কাল (শুক্রবার) বাদজুমা সারাদেশে হেফাজতে ইসলামের ডাকা বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি সর্বাত্মক পালনের জন্যে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অরাজনৈতিক সংগঠনটির আমীর দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
গতকাল (বুধবার) এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম বহাল রাখার লক্ষ্যে এই প্রতিবাদে শামিল হওয়া প্রতিটি মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব। শান্তিপূর্ণভাবে লাখ লাখ মুসলমান রাস্তায় বিক্ষোভ করে জোরালোভাবে সকল মহলে এই বার্তা পৌঁছিয়ে দিতে হবে, ৯২ ভাগ মুসলমানের বাংলাদেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল আগেও ছিল, বর্তমানেও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে ইনশাআল্লাহ। এ নিয়ে যে কারও ষড়যন্ত্র জনগণ কঠোরভাবে প্রতিহত করবে।
বিবৃতিতে হেফাজত আমীর আরো বলেন, ইসলামী আকিদা-বিশ্বাস ও মুসলিম চেতনাবোধের বিরুদ্ধে যে কোন ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে এদেশের ওলামা-মাশায়েখের নেতৃত্বে কোটি কোটি মুসলমান চূড়ান্ত ত্যাগ স্বীকার করতে হলেও কখনো পিছপা হবে না। ষড়যন্ত্রকারীদের বোঝা উচিত মুসলমান নিজের প্রাণের চেয়েও আল্লাহ-রাসূল (সা.) ও ঈমান-ইসলামের মর্যাদা রক্ষাকে অধিক মূল্য দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, সংবিধানের প্রথম পরিচ্ছদের ২-ক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রীস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন’। এরপরও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলের প্রশ্ন তোলার মানেই হচ্ছে সংবিধানিকভাবে এদেশে নাস্তিক্যবাদ প্রতিষ্ঠা ছাড়া আর কিছু নয়। এটা দেশকে অস্থিতিশীল করে দেশের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র। তিনি প্রশ্ন রাখেন, রাষ্ট্রভাষা থাকতে পারলে রাষ্ট্রধর্ম কেন নয়?
হেফাজত আমীর আদালতের বিচারপতিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, রাষ্ট্রধর্ম বাতিল নিয়ে শুনানির জন্য গ্রহণ করা রিট মামলাটি দয়া করে খারিজ করুন। কারণ, দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তি-শৃঙ্খলার প্রতি হুমকিজনক বা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা হাইকোর্ট থেকে সরাসরি খারিজ করে দেওয়ার রেওয়াজই আমরা দেখে আসছি। ইতিপূর্বেও রাষ্ট্রধর্মে বৈধতা চ্যালেঞ্জ এবং পবিত্র কুরবানী নিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা হাইকোর্ট সরাসরি খারিজ করে কোন কোন ক্ষেত্রে বাদীকে জরিমানা পর্যন্ত করেছেন। গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে বহাল রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আইনজীবী সোমেন্দ্রনাথ গোস্বামির দায়ের করা রিট মামলাও হাইকোর্ট সরাসরি খারিজ করে দিয়েছে। মাত্র ৫ মাসের মাথায় একই বিষয়ে ২৮ বছরের পুরনো একটি মামলা পুনরায় সচল করায় জনমনে ব্যাপক প্রশ্ন জেগেছে। হেফাজত আমীর এ পর্যায়ে রাষ্ট্রধর্ম বাতিল নিয়ে রিট মামলায় আদালত কর্তৃক পরামর্শ নেয়ার জন্য নিয়োগ দেয়া ১৪ জন অ্যামিকাস কিউরি থেকে ১২ জন প্রত্যাহার করে নেয়াকেও গভীর উদ্বেগজনক বলে মত প্রকাশ করেন।
হেফাজত আমীর বলেন, সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলের কোন সিদ্ধান্ত দেশবাসী মেনে নেবে না। ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকবে কি থাকবে না, এ নিয়ে কোনভাবেই আদালতে মামলা ও শুনানি চলতে পারে না। সরকারকেই এই মামলা বাতিলের জন্যে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে হেফাজত আমীর বলেন, জনগণের মনের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন। ইসলামের বিধি-বিধান ও মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে আদালতকে দিয়ে রুল বা আদেশ জারির ষড়যন্ত্র বন্ধ করুন। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে দেশবাসীর আকিদা-বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যদি কোন রায় আসে, তাহলে কোটি কোটি তৌহিদী জনতার ক্ষোভের আগুনে ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্ত ছারখার হয়ে যাবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা অবশ্যই দেশের শত্রু, দেশের গণমানুষেরও শত্রু, এরা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয়। তিনি বলেন, শাসকমহলকে জনগণের প্রত্যাশা ও হৃদয়ের ভাষা বুঝতে হবে। ষড়যন্ত্রকারীরা দিন দিন সরকারকে জনবিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। তিনি সরকারের প্রতি রাষ্ট্রের প্রধান আইনজীবীর মাধ্যমে এই মামলা বাতিলে ত্বরিত পদক্ষেপ নেয়ারও আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, আমরা ঈমান-আকীদা, দেশ, জনস্বার্থ ও শান্তির পক্ষে কথা বলি। আমরা ক্ষমতার জন্য অথবা কাউকে ক্ষমতায় বসানো বা নামানোর জন্যে কথা বলি না। হেফাজত আমীর সরকারের প্রতি কোন অদৃশ্য অপশক্তির চাপে নয়- বরং দেশের গণমানুষের প্রত্যাশা মতো রাষ্ট্র পরিচালনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, হুমকি-ধমকি ও ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে মানুষকে চুপ রাখার নীতি পরিহার করে গণমানুষের মনের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন। ক্ষমতার জন্য দেশকে গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দেয়ার নীতি পরিহার করুন। মানুষের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিন। দেশের বৃহৎ মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় মতাদর্শ নিয়ে নাস্তিক্যবাদীদের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করুন। অন্যথায় আল্লাহর আযাব ও গযব থেকে কেউ রক্ষা পাবেন না।
হেফাজত আমীর সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম বহাল রাখার অরাজনৈতিক ঈমানী দাবীতে দলমত নির্বিশেষে সকল মুসলমানকে আগামীকাল ২৫ মার্চ বাদজুমা শান্তিÍপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে শরীক হওয়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, ঈমান-আকীদা ও ইসলামের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আমরা কে কি করেছি, সেই হিসাব আমাদের সকলকেই পরকালে আল্লাহর দরবারে অবশ্যই দিতে হবে
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।