Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাইফুরসের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার

প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ইংরেজি শেখানোর মাধ্যমে ‘দক্ষ হ্যাকার তৈরি’র বিতর্কিত বিজ্ঞাপন দিয়ে ফেঁসে যাচ্ছে কোচিং সেন্টার সাইফুরস। এই বিজ্ঞাপনের জন্য প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল (বুধবার) সচিবালয়ে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষাসংক্রান্ত আইনশৃঙ্খলা মনিটরিং কমিটির সভায় ওই বিজ্ঞাপনের কঠোর সমালোচনা করে ‘সাইফুরসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ‘চোর বানানোর বিজ্ঞাপন’ দিয়ে সাইফুরস মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে দাবি করে শিক্ষামন্ত্রী কোচিং সেন্টারটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ লোপাট এবং একটি শব্দের বানান ভুলে ২ কোটি ডলার রক্ষা পাওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর একটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দেয় সাইফুরস। ওই বিজ্ঞাপনের শিরোনামে বলা হয়, ইংরেজির ভুলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৬০ কোটি টাকা হ্যাকারদের হাতছাড়া! মন্ত্রী বলেন, ‘সাইফুরস নামে একটি কোচিং সেন্টার একটি বিজ্ঞাপন দিয়েছে। সেই বিজ্ঞাপনে তারা বলেছে, ভালো ইংরেজি না জানতে পারলে ভালো লেখাপড়া করতে পারবে না, বিদেশে যেতে পারবে না। ভালো ডাক্তার, শিক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবে না। এমনকি ভালো হ্যাকারও হতে পারবে না।’ দেখুন হ্যাকার হওয়ার জন্য তার কাছে গিয়ে পড়তে হবে, বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। এটা অবশ্যই বেআইনি, এটা (বিজ্ঞাপন) দিতে পারে না। আমরা তাদের (সাইফুরস) বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ তিনি বলেন, ‘চিন্তা করে দেখেন, এ কোচিং সেন্টার কত অধঃপতনে নেমেছে। সে কত মানুষকে বিভ্রান্ত করে আস্থা অর্জন করেছে, মানুষ হাজার হাজার টাকা খরচ করে সেখানে তার বাচ্চাকে পড়াচ্ছে। এমন একজন মানুষ যে বিজ্ঞাপন দেওয়ার ক্ষেত্রে বলছে যে ভালো হ্যাকার হতে হলে ভালো ইংরেজি শিখতে হবে। তাই সাইফুরসে এসে ভালো ইংরেজি শিখে যাও, ভালো চোর হয়ে যাবে। এ রকম লোকের বিরুদ্ধে যদি আমরা সোচ্চার না হই, তাহলে আমরা কীভাবে সমাজে থাকব?’
নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘আমি বলতে বাধ্য হলাম। অবস্থা এ রকম পর্যায়ে চলে গেছে যে, এদের বিরুদ্ধে আমরা সহনশীল হতে পারি না। তারা আমাদের ছেলেমেয়েদের প্রলোভন দেখাচ্ছে, ভালো ইংরেজি শিখলে চোর হতে পারবা, ভালো করে হ্যাকিং করতে পারবা।’ হ্যাকিং করে গত ৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক থেকে বাংলাদেশের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার (প্রায় ৮০০ কোটি টাকা) সরিয়ে নেওয়া হয় শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইনে। এর মধ্যেই ‘ইংরেজির ভুলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৬০ কোটি টাকা হ্যাকারদের হাতছাড়া!’ শিরোনামে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রচার করে সাইফুরস। বিবিসিকে উদ্ধৃত করে ওই বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘হ্যাকিংকৃত ডলার শ্রীলঙ্কাতে স্থানান্তরের সময় ফাউন্ডেশন শব্দকে ফান্ডেশন লেখাতে বিদেশী ডয়েটসে ব্যাংকের সন্দেহ হয়। তারা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানালে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এই ২০ মিলিয়ন ডলার স্থানান্তর বন্ধ করে দেয়।’ সাইফুরসে গিয়ে ইংরেজি শিখতে প্রলুব্ধ করে ওই বিজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, ‘একইভাবে ইংরেজিতে দুর্বলতার কারণে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, এমবিএ, অফিসার, আইনজীবী (এমনকি দক্ষ হ্যাকার!) প্রভৃতি হতে হলে রিডিং, রাইটিং, স্পিকিং, লিসেনিং ও স্পেলিং সবকিছুতেই ভালো হওয়া জরুরি!
মন্দ কাজে প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বেগ প্রকাশ করে নাহিদ বলেন, আমরা ছেলেমেয়েদের প্রযুক্তি শেখাচ্ছি। তবে যদি ছেলেমেয়েদের ভালো মানুষ না করতে পারি, তবে এই শিক্ষাটা খারাপও হতে পারে। এই প্রযুক্তি কার হাতে পড়ল, তা নির্ভর করবে। কারণ ভালো মানুষের হাতে পড়লে জনগণের কল্যাণে কাজে লাগাবে। আর খারাপ মানুষের হাতে পড়লে সে জনগণের ক্ষতি করে দিতে পারে। আপনারা দেখেছেন আমাদের টাকা প্রযুক্তিগত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে চুরি করে নিয়ে গেছে।
এদিকে এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এবার এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ৩ এপ্রিল। পরীক্ষা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়ে নাহিদ বলেন, পরীক্ষার নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা খুবই সতর্ক আছি। আমাদের বিভিন্ন বাহিনী অবস্থা মনিটর করছে, প্রশ্ন ফাঁস করে কেউ রেহাই পাবেন না। এটা পরিষ্কার কথা। যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাতে বিজি প্রেস থেকে প্রশ্ন ফাঁসের আশঙ্কা একেবারেই নেই। তাই বলে আমরা আত্মসন্তুষ্টিতে ভুগছি এমন নয়, আমরা আরো সিরিয়াস হয়েছি। নজরদারি অনেক বেশি জোরদার করা হয়েছে। বিজি প্রেসের সংশ্লিষ্টরা ও তাদের আত্মীয়-স্বজন আমাদের নজরদারিতে আছেন। এসময় সভায় শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুন, শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, বিজি প্রেস, পুলিশ, র‌্যাব, ডিবির প্রতিনিধিসহ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সাইফুরসের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ