Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ খালেদা জিয়ার খালাস দাবি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো অভিযোগ প্রমাণ করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে তাকে খালাস দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন আইনজীবী আব্দুর রেজাক খান।
খালেদা জিয়ার পক্ষে পঞ্চম দিনের মতো যুক্তি উপস্থাপন শেষে তার আইনজীবী এই দাবি জানান। যুক্তি উপস্থাপনে আদালতে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া কুয়েতের টাকা রাখার জন্য অ্যাকাউন্ট খুলেছেন তার প্রমাণশূন্য। শুধু তাই নয়, তার (খালেদা জিয়া) বিরুদ্ধে লিখিত ও মৌখিক কোনো প্রমাণও নেই। রাজধানীর পুরান ঢাকার বকশীবাজারে অস্থায়ী আদালতে পঞ্চম বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামানের এজলাসে গত ২০ ডিসেম্বর যুক্তিতর্কের শুনানি শুরুর পর পাঁচ কার্যদিবসের চারদিনই খালেদার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন এই আইনজীবী। গতকাল সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে বেলা ১১ টা ২০ মিনিটে বক্তব্য শুরু করেন রেজাক খান। মাঝে ১৫ মিনিটের বিরতি দিয়ে দুপর পৌনে দুইটা পর্যন্ত যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করেন তিনি।
চারদিন নিজের যুক্তি তুলে ধরে শেষে এসে তিনি আদালতকে বলেন, এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণ করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তাকে খালাস দেওয়ার দাবি জানাই। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে কুয়েত থেকে আসা টাকা আত্মসাৎ করেছেন এর কোন প্রমাণ নেই। মামলার কোনো সাক্ষীও এ বিষয় কিছু বলেন নাই। মামলার এফআইআর-এ আছে বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তা মোটেও ঠিক নয়। আর এফআইআর-এ কথা যে বেদের মত বিশ্বাস করতে হবে তাও ঠিক না।
রেজাক খানের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শেষ হলে বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষে নতুন করে যুক্তি তুলে ধরা শুরু করেন তার আরেক আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। তিনি প্রথম বারের মতো যুক্তি-তর্ক শুরু করলেও দিনের শুনানি শেষ হওয়ার আগে মাত্র ১৫ মিনিট সময় পান। বিচারক আজ বৃহস্পতিবারও তার যুক্তি উপস্থাপনের সময় রেখেছেন। ১৫ মিনিটের বক্তব্যে খন্দকার মাহবুব বলেন, আমরা যাই বলি না কেন, এই মামলার স্বাক্ষী প্রমাণে যাই থাকুক না কেন, বলতে হবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলা; এবং এই মামলার উদ্দেশ্য হল যে কোনোভাবেই বলতে হবে- এটাই চোর, আমাদেরকে চোর বলতে হবে। আদালতের দিনের কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরে বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, সাক্ষ্যপ্রমাণে দেখা যায়, কোনো বিষয়েই খালেদা জিয়ার বিপক্ষে বলা হয়নি। তিনি যে জড়িত ছিলেন না, সেটাই বরং প্রমাণিত হয়। সংবিধান অনুযায়ী ওই লেনদেনের সঙ্গে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এটা প্রাইভৈট ট্রাস্ট। রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য, বেগম জিয়ার চরিত্র হননের জন্য, তাকে জনগণের সামনে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য দূরভিসন্ধিমূলকভাবে এই মামলা দায়ের করা হয়। এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টে আসা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা এ মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে মোট সাত দিন বক্তব্য দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
গত ৫ ডিসেম্বর তার বক্তব্য শেষ হলে বিচারক যুক্তিতর্ক শুনানির দিন ঠিক করেন। যুক্তিতর্ক শুনানির শুরুর দিন ২০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছিলেন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। পরের কার্যদিবস থেকে আসামিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরা শুরু হয়। মামলার প্রধান আসামি খালেদার পক্ষে আইনজীবী রেজাক খান ও খন্দকার মাহবুব হোসেন ছাড়াও তার আরও দুই আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারের যুক্তি উপস্থাপন করার কথা রয়েছে।
পঞ্চম দিনে মামলার প্রধান আসামির এক আইনজীবীর যুক্তি উপস্থাপন শেষ হওয়ার পর দুদকের আইনজীবী কাজল সাংবাদিকদের বলেন, তারা বলছে খালেদা জিয়া কোনো অন্যায় করেনি। আমরা বলছি প্রধানমন্ত্রীর যে দায়িত্ব, সাংবিধানিকভাবে অর্থ-সম্পদ সব কিছুর ব্যাপারে দায়-দায়িত্ব তার। অর্থ যেটা এসেছিল- তা দুইভাগে ভাগ করে এক ভাগ তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানকে, আরেকভাগ তারেক রহমানকে দিয়েছিলেন। তারা বলছে (খালেদা জিয়ার পক্ষ) মোস্তাফিজুর রহমান বা তার সুবিধাভোগীদের বিরুদ্ধে কেন মামলা হয়নি। এসবের জবাব আমরা দেব। মোস্তাফিজুরর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করা না করা প্রসিকিউশনের ব্যাপার। জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় এ মামলা করে দুদক। তদন্ত শেষে ২০০৯ সালের ৫ অগাস্ট তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দেন। পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ অভিযোগ গঠন করে খালেদাসহ ছয় আসামির বিচার শুরু করেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ। খালেদা জিয়া এ মামলায় জামিনে আছেন। তারেক রহমান গত নয় বছর ধরে দেশের বাইরে, তার বিরুদ্ধে এ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক। সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ রয়েছেন কারাগারে।



 

Show all comments
  • নিঝুম ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ২:২৩ এএম says : 1
    তাকে খালাস দেওয়া হবে এমনটাই আশা করতেছি
    Total Reply(0) Reply
  • Md Mains ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:২৭ পিএম says : 0
    সত্যের জয় চিরকাল
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খালেদা জিয়া

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ