পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজনীতির মাঠে চাঙ্গা হয়ে ওঠেছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। দলের সাম্প্রতিক কর্মসূচিতে ব্যাপক জনসম্পৃক্ততা উজ্জীবিত করে তুলেছে নেতাকর্মীদের। এসব কর্মসূচিতে মানুষের ভালবাসা ও সমর্থন দেখে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও অভিভূত। তাই মানুষের গণতান্ত্রিক ও ভোটের অধিকার নিয়ে রাজপথে নামার অঙ্গীকার করেছেন তিনি। দলের নেতাকর্মীদের আন্দোলন, সংগ্রাম ও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। দলও সংগঠিত হচ্ছে সেভাবেই। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও আন্দোলনকে টার্গেটে রেখেই দল ও সংগঠন গুছিয়ে নিচ্ছেন নেতাকর্মীরা। তবে এরই মধ্যে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও এসে দাঁড়াচ্ছে দলটির সামনে। দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়াপারসনের সাজা হওয়ার আশঙ্কা, নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন আদায় এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করাসহ নানা চ্যালেঞ্জিং ইস্যু।
এতো কিছুর মধ্যেই সবার আগে সকল দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আদায় করতে চায় বিএনপি। এজন্য যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন নেতাকর্মীরা। এ লক্ষ্যে আলোচনার দ্বার খোলা রেখে আগামীদিনে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতিটি স্তরে ইতিবাচক ভূমিকা রেখে সামনে এগোনোর পরিকল্পনা নিয়েছে দলের হাইকমান্ড। সরকারের মনোভাব ও কার্যক্রম দেখেই একে একে নিজেদের পরিকল্পনা কাজে লাগাতে চায় দলের শীর্ষ নেতারা। তবে আগামী নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে সরকারকে সংলাপের জন্য আবারো সময় দিতে চাই বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট। তা না হলে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায়ে আন্দোলনই সর্বশেষ বিকল্প হিসেবে বেছে নেবেন বলে দলের নেতারা জানান।
সম্প্রতি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা, স্থায়ী কমিটির সদস্যদের একাধিক বৈঠক, ভাইস চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টাদের সাথে বৈঠকে এসব ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এসব বৈঠকে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম ছাড়াও ২০ দলীয় জোটের অবস্থান, দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিএনপির কর্মসূচিসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া দলের সাংগঠনিক কর্মসূচিতেও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নেতাকর্মীদের আগামী দিনের কর্মসূচি, আন্দোলন, সংগ্রাম ও একইসাথে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, তিনটি সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ নিয়ে সামনে এগুচ্ছে দলের শীর্ষ নেতারা। সেভাবেই রাজনৈতিক পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রথমত- বিএনপির শীর্ষ দুই নেতার সাজা হলে পরবর্তী পদক্ষেপ, দ্বিতীয়ত- নির্বাচনকালী নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা ও দাবি আদায় এবং তৃতীয়ত- একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটগত ও দলীয়ভাবে প্রার্থী চূড়ান্ত করা।
বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা জানান, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির অভিযোগে পৃথক দুই মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। প্রতি সপ্তাহেই আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন বেগম জিয়া। গত ১৮ অক্টোবর লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পরদিনই তিনি আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্যের পর সাফাই সাক্ষী ও যুক্তিতর্কও শেষ পর্যায়ে। এরপরই মামলার রায় হবে। এ মামলায় প্রধান আসামি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দুই মামলায় তার ‘সাজা’ হওয়ার আশঙ্কা করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। ইতোমধ্যে বিশেষ আদালতে নিজের ‘সাজা’ হওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া নিজেই। বিএনপি চেয়াপারসনের সাজা হলে বিএনপির হাল কে ধরবে? এ নিয়েও চলছে নানা আলোচনা। কিন্তু এ নিয়ে দলের পক্ষে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খোলেনি। আবার দ্বিতীয় সারির কয়েকজন নেতা মনে করেন সরকার বিএনপি চেয়ারপারসনকে সাজা দেওয়ার মতো ভুল সিদ্ধান্ত নিতে যাবে না। কারণ এতে সরকারের পতন নিজেরাই ত্বরান্বিত করবে।
দলের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শুধু বেগম খালেদা জিয়াকেই নয় গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতাকেও সাজা দিতে পারে সরকার। বেগম জিয়া ও তারেক রহমানকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হতে পারে। তবে বেগম খালেদা জিয়া তার মামলার রায় বা সাজা নিয়ে চিন্তিত নন বলে তিনি নিজেই বলেছেন। দলটির সিনিয়র নেতারাও বলছেন জীবনের শেষমুহুর্তে এসে বেগম জিয়া তার মামলার বিষয়ে চিন্তিত নয়। তিনি ন্যায় বিচার পাবেন বলে নেতারা প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদের প্রতীক। তিনি জীবনের শেষ মুহুর্তে এসেও গণতন্ত্রের জন্য লড়ছেন। তাকে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবেনা। তিনি সহ আমরা দলের নেতাকর্মীরা মামলা আর জেলের ভয় করিনা। নির্বাচনে অযোগ্য করার ষড়যন্ত্রও কাজে আসবে না। আমরা জনগণের সাথে ছিলাম এবং আছি। জনগণও বিএনপির সাথে আছে। যা দলের সাম্প্রতিক কর্মসূচিতে প্রমাণিত হয়েছে। বেগম জিয়া ন্যায় বিচার পেলে নির্দোষ প্রমাণিত হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এদিকে আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপি বেশ সতর্ক। নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে এই মুহুর্তে অতি উৎসাহ দেখানোর পক্ষপাতী নয় দলটি। সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্লেষণ করেই নতুন সিদ্ধান্ত নিতে চায় তারা। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কোনো সমঝোতা না হলে নির্বাচনের ছয় মাস আগে আন্দোলনের পথ বেছে নেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা। এই সময়ের মধ্যে বিএনপি আগামী নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা ও অন্যান্য কার্যক্রম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চায়। মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, সরকার কিভাবে নির্বাচন করতে চায় তাদের মনোভাব বুঝেই আমরা রূপরেখাসহ অন্যান্য কর্মসূচি দিব। সরকারের কার্যক্রমের উপরই নির্ভর করবে বিএনপি কি ধরণের কর্মসূচিতে যাবে।
দলীয় সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনে জোটগত ও দলীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করা নিয়ে কাজ করছে বিএনপি। এ নিয়ে দলটি বেশ কিছু কাজও সেরে ফেলেছে। যদিও রাজনৈতিক অঙ্গণে আলোচনা চলছে যে জামায়াতে ইসলামীর সাথে বিএনপির দূরত্ব তৈরি হয়েছে। ফলে জামায়াতকে ছাড়াই আগামী নির্বাচনে প্রার্থী দিবে বিএনপি। এ বিষয়ে কেউ কোনো স্পষ্ট বক্তব্য না দিলেও আগামী নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবেই নির্বাচনে যাবে বিএনপি। কারণ জামায়াতের সাথে বিএনপির জোট হচ্ছে নির্বাচনী জোট। দলটির সিনিয়র নেতারা বলছেন, বিএনপির অভ্যন্তরে একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা ভাবনা কাজ করছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা নেই। কেননা বিএনপি সরকার পরিচালনাকারী দল। নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে কোনো সমস্যা হবেনা। প্রার্থীরও সঙ্কট নেই। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বিভিন্ন সভায় স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনে প্রার্থী ঠিক করতে ৭ দিনই যথেষ্ট। কিন্তু তার আগে নির্বাচন কি পদ্ধতিতে হবে সেটা নির্ধারণ হতে হবে। কারণ বিএনপি শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচনে অংশ নেবে না এবং নির্বাচন হতে দেবে না।
দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র করছে সরকার। তবে তা কোনভাবেই সফল হবে না। বিএনপি আন্দোলনের মাধ্যমে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত আছে। তিনি নেতাকর্মীদের আন্দোলন ও নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহŸান জানান।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রুপরেখা নিয়ে এই মুহূর্তে বলার প্রয়োজন নেই। সরকার যখন বলছে- ‘সংবিধান ছাড়া কোনো কিছুতে যাবে না’ তখন তো আমরা বলবো- আগে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে, তাহলে আমরা সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবো। আমরা আলোচনায় রাজি আছি। আলোচনায় বসলে পথ বেরিয়ে যাবে। বারবার এ কথা বলে আসছিÑ আসুন আমরা বসি। রূপরেখা কী হবে না হবে তা বিস্তারিত আলোচনার বিষয়। এতে অনেক রকম বিষয় আসতে পারে। আমাদের ও তাদের প্রস্তাব থাকবে। এরপর গ্রহণ-বর্জনের মধ্য দিয়ে একটি ফর্মুলা বেরিয়ে আসবে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সংলাপ ছাড়া এই সঙ্কট সমাধান করা যাবে না। সঙ্কট সমাধানে আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে, নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার থাকতে হবে। যখন সরকার এ বিষয়ে রাজি হবে তখন আমরা রূপরেখা দেবো। নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।