Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উৎসাহ-উদ্দীপনায় বড় দিন পালিত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে গির্জাগুলো ফুল, রঙ্গিন কাগজ আর আলোয় আলোয় সাজানো হয়েছে মনোরম সাজে। ক্রিসমাস ট্রি থেকে ঝুলছে আলোর মালা। বানানো হয়েছে খ্রিস্টের জন্মের ঘটনার প্রতীক গোশালা। সেই সঙ্গে বড়দিনের কেক। গতকাল (সোমবার) বড়দিন হলেও আগের রাত থেকেই উৎসবে মেতে উঠেন খ্রিস্টানরা, তাদের বাড়ি বাড়ি চলে উৎসব। খ্রীস্টধর্ম অনুযায়ি, এই দিনে খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট বেথলহেমে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। খ্রিস্টধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতে প্রভু যিশুর এই ধরায় আগমন ঘটেছিল। তাই অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের খ্রিস্টধর্মানুসারীরাও যথাযথ ধর্মীয় আচার, আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার মধ্যদিয়ে দিনটি উদযাপন করেন। এ উপলক্ষে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় রাজধানীসহ সরাদেশে। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। পৃথক পৃথকভাবে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাবিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
গতকাল বিভিন্ন চার্চে প্রার্থনায় শান্তি ও মঙ্গলের কামনা করার পাশাপাশি বড়দিনে উৎসবের আনন্দেও মেতে উঠেছিলেন ওই ধর্মাবলম্বীরা। সকালে কাকরাইলের সেন্ট মেরিস ক্যাথেড্রালে বড়দিনের প্রার্থনায় অংশ নেয় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী হাজারও নারী-পুরুষ ও শিশু। প্রার্থনায় অংশ নেওয়া নিয়তি রায় বলেন, আজকের এই দিনে যিশুকে আমরা বলি, পেছনে যা যা করেছি তা ভুলে গিয়ে নতুনভাবে সব কিছু শুরু করতে চাই। মনের ভেতরে যত ক্ষোভ-রাগ ছিল তা এখানে এসে যিশুর চরণে দিয়ে দেই। আনন্দ নিয়ে আমরা ঘরে ফিরতে চাই, সেই আনন্দ সারা বছর ধরে রাখার চেষ্টা করি। চার্চের ফাদার ক্যারুবিন বাকলা বলেন, আজ যিশুর জন্মদিন। এই ঈশ্বর আমাদের প্রেমময়, দয়াবান, জীবনদাতা, রক্ষাকারী- এমন অনেকভাবেই আমরা ব্যাখ্যা করি এবং বিশ্বাস করি। তেজগাঁওয়ের হোলি রোজারিও চার্চে তিন দফায় প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে কয়েক হাজার নানা বয়সী মানুষ মিলিত হন। বড়দিনের উৎসবকে ঘিরে বর্ণিল করে সাজানো হয়েছে চার্চ এলাকা; ক্রিসমাস ট্রি আর আলোকসজ্জা ছিল নজরকাড়া। চার্চ প্রাঙ্গণে ঢুকতেই প্রার্থনাকারীদের চোখে পড়ে যিশু কোলে মা মেরির বড় আকারের ভাস্কর্য, যার চরণে প্রণাম জানিয়ে পূজারীরা প্রবেশ করেন ভেতরে। ফার্মগেট এলাকা থেকে স্ত্রী আর ছেলেকে নিয়ে হোলি রোজারিও চার্চে প্রার্থনা করতে এসেছিলেন মার্টিন গোমেজ। তিনি বলেন, যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন আমাদের উৎসবের দিন, প্রার্থনার দিন। প্রার্থনার সময় নিজের, পরিবারের এবং সকল মানুষের মঙ্গল কামনা করেছি।
গির্জার পাশাপাশি খ্রিস্টানদের বাড়ি বাড়ি এবং রাজধানীর বিভিন্ন হোটেলে বড়দিনের নানা অনুষ্ঠান, বিশেষ করে শিশুদের জন্য আলাদা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে পাঁচ তারকা হোটেলগুলো। পাঁচ তারকা হোটেল সোনারগাঁওয়ে টিকেট কেটে বড়দিনের আয়োজনে অংশ নেন অনেকে। শিশুদের কেন্দ্র করে ‘কিডস ক্রিসমাস পার্টির’ আয়োজন সাজানো হলেও তাদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে দেখা যায় বড়দেরকেও।
বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশনের দপ্তর সম্পাদক স্বপন রোজারিও জানান, রোববার রাতে গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা এবং সোমবার সকালে থেকে বড়দিনের প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। গির্জা ও এর আশপাশে রঙিন বাতি জ্বালানোর ব্যবস্থা ও প্রচুর জরি লাগিয়ে গির্জার ভেতর সুসজ্জিত করা হয়। ভেতরে সাজানো হয় ক্রিসমাস ট্রি।
বড়দিন উপলক্ষে দেশের অনেক খ্রিস্টান পরিবারে কেক তৈরি ও বিশেষ খাবারেরও আয়োজন করা হয়। দেশের অনেক অঞ্চলে কীর্তনের পাশাপাশি ধর্মীয় গানের আসর বসে। বড়দিন উপলক্ষে আয়োজিত মেলার দোকানগুলোতে বড়দিন ও ইংরেজি নতুন বছরের কার্ড, নানা রঙের মোমবাতি, সান্তা ক্লজের টুপি, জপমালা, ক্রিসমাস ট্রি, যিশু-মরিয়ম-যোসেফের মূর্তিসহ নানা জিনিস বিক্রি হতে দেখা যায়। বড়দিন উপলক্ষে বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও এবং মহাসচিব হেমন্ত আই কোড়াইয়া এক যুক্ত বিবৃতিতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজনকে প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বড়দিন ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সকলের জন্য আনন্দ বার্তা বয়ে আসুক এই কামনা করেছেন নেতৃদ্বয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উৎসাহ-উদ্দীপনায় বড় দিন পালিত
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ