Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্দোলন সংগ্রাম ও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হোন : খালেদা জিয়া

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আন্দোলন, সংগ্রাম ও নির্বাচন সবকিছুর জন্য প্রস্তুতি নিতে দলের নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, আগামী দিনে যে কর্মসূচি আসবে তার জন্য সকলকে প্রস্তুত হতে হবে। আন্দোলন-সংগ্রাম ও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। তিনি অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসুন আপনারা-আমরা সকলে একসঙ্গে মিলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করি। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি। গতকাল (রোববার) মুক্তিযোদ্ধা দলের কাউন্সিল ও মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন এসব কথা বলেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়েরা আপনাদের বয়স হয়েছে কিন্তু অভিজ্ঞতা আছে। অভিজ্ঞতার আলোকে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন কিন্তু সেই স্বাধীন দেশ আওয়ামী লীগের জন্য আমরা পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে আছি। আওয়ামী লীগের শৃঙ্খলমুক্ত হতে হবে। দেশকে মুক্ত করতে হবে। মুক্ত করতে গেলে আমাদেরকে আরেকবার জেগে ওঠতে হবে। সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচন হতে পারে না। নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে। কারণ আওয়ামী লীগ থাকলে জনগণ ভোট কেন্দ্রে আসতে ভয় পায়। তারা ভোট দিতে আসতে পারবে না। এজন্য হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে কোন নির্বাচন হবে না। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, আপনারা তো উন্নয়নের কথা বলেন, এতোই যদি উন্নয়ন করে থাকেন তাহলে আসেন সুষ্ঠু নির্বাচন দিন। জনগণ যাদের পছন্দ করবে যাদের কাজ তাদের ভাল লাগবে তাদেরকে ভোট দেবে। জনগণ যাদের বেছে নিবে তারাই সরকার গঠন করবে। আওয়ামী লীগ নিজেরাই সংবিধান লঙ্ঘন করছে মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ কথায় কথায় সংবিধানের কথা বলে কিন্তু তারা নিজেরাই সংবিধান লঙ্ঘন করে চলেছে। সংবিধান লঙ্ঘন করে ১৫৪জন বিনা ভোটে এমপি হয়েছে। আর বাকীরা ৫ শতাংশও ভোট পায়নি। এটা কোন সংসদ না। এটা ভেঙে দিতে হবে। আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে যে ভোটারবিহীন নির্বাচন করলো। সেই নির্বাচনের পরে তারা বললো সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নির্বাচন দিচ্ছি। সেখানে কোন দল অংশ নেয়নি। এরশাদও চায়নি, তবে তাকে জোর করে নির্বাচন করানো হয়েছে। তারা বললো ধারাবাহিতা রক্ষার জন্য নির্বাচন দিচ্ছি। আমরা শীঘ্রই নির্বাচন দিব। এই শীঘ্রই নমুনা এই! পরবর্তীতে আমরা নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করতে গেলেই আমাদের নেতাকর্মীদের গুম-খুন করা হচ্ছে। মামলা দিয়ে জেলে নেয়া হচ্ছে। আজকে ইলিয়াস আলী কোথায়? এর জবাব এদের দিতে হবে। চৌধুরী আলম, সুমন এরকম আরও অনেক নাম আছে। গুম-খুন তাদের সময় শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই গুম-খুন শুরু করে। স্বাধীনতার পর ক্ষমতায় ছিল তখনও তারা মানুষ গুম-খুন করেছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড হয়েছে তাদের সময়। এখনো আবার তারা একই কাজ করছে। ফলে দেশে কোন শান্তি আসছেনা অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা অশান্তি চাই না, নির্বাচন করতে চাই। নির্বাচন করেই জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসতে চাই। আপনাদের মতো বিনা ভোটে নির্বাচিত হতে চাই না। কিন্তু আপনারা সেটা ভয় পান। সভা-সমাবেশ করার সুযোগ দিন। ঘরে-বাইরে উভয় জায়গায় নিজেরা করছেন, নৌকায় ভোট চাইছেন। আর বিএনপি ঘরে বসেও সভা-সমাবেশ করতে পারবেনা সেটা তো হতে পারে না। এর নাম কি গণতন্ত্র। স্বাধীনতার সুফল কি আমরা পাচ্ছি। আজকে আওয়ামী লীগ ও তার দলের লোকেরা সব সুফল ভোগ করছে। লুটপাট করে তারা দেশকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। সকল প্রতিষ্ঠান আজকে অকার্যকর। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতিকে এজলাসে বসতে দেয়া হয়নি। জোর করে তাকে ছুটি দেয়া হয়েছে এবং পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। তার অপরাধ তিনি সত্য কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ১৫৪জন অনির্বাচিত প্রতিনিধি কিভাবে সংসদে বসে। এই সংসদ ও সংসদে যা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সবই অকার্যকর। এজন্য তাকে অপসারণ করা হলো। তিনি বলেন, দেশে এখন এক ব্যক্তির শাসন চলছে। তার নির্দেশ সব জায়গায়। আওয়ামী লীগের লোকেরা যত অন্যায়-অপরাধ করুক তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়না। আর বিএনপির লোকদের মামলা দিয়ে বাড়ি, অফিস, রাস্তা-ঘাট সব জায়গা থেকে ধরে নিয়ে যায়। আজকে কারাগার বিএনপির লোকজন দিয়ে ভরে গেছে। আওয়ামী লীগ মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে উল্লেখ করে বিএনপি প্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ মুখে কেবল মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে। মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা বললেও তাদের কাজে মুক্তিযুদ্ধের কোন লক্ষণ নেই। মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করলে আজকে দেশে একদলীয় শাসন থাকতো না।
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, চালের দাম ৭০ টাকা কেন? চাল তো ১০ টাকা কেজি খাওয়ানোর কথা ছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে তো ১০ টাকা কেজি চাল দেখি নাই। এখন মানুষ পেঁয়াজের কথা কথা ভুলেই যাবে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে মানুষ আজকে দিশেহারা। চালের কেজি আজকে ৭০ টাকা, ডাল ১০০ টাকা, পেঁয়াজ ১৪০ টাকা, রসুন ৩০০ টাকা, সবজী ৬০ টাকার নিচে নাই। ভাত খাওয়ার কোন অবস্থাই এখন নাই। এ অবস্থার জন্য সরকারের লুটপাট দায়ী। কারণ গ্রাম থেকে সবজী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য যখন ঢাকায় আসে তখন প্রতিটি ঘাটে আওয়ামী লীগের লোকজনকে চাঁদা দিতে হয়।
স্বাধীনতার ঘোষণার বিতর্ক নিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা কে দিয়েছে তা নিয়ে আওয়ামী লীগ সব সময় হীনমন্যতায় ভোগে। তারা সব সময় সত্য গোপন করে। শহীদ জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন সেটা দেশে-বিদেশে সকলেই জানে। তার ডাকে সেদিন সাধারণ জনগণ ও সেনাবাহিনী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। তিনি বলেন, বিএনপি ও মুক্তিযোদ্ধাদের কথা শুনলেই আওয়ামী লীগের মাথা নষ্ট হয়ে যায়। আজকে মুক্তিযোদ্ধের সমাবেশ করার জন্য অনুমতি দিয়েছে দুপুর ১২ টায়। এর আগে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুমতি চাওয়া হয়েছিল হঠাৎ করে সেটা বাতিল করে দিয়েছে কারণ তারা মুক্তিযোদ্ধাদের ভয় পায়। আওয়ামী লীগ কাউকে সম্মান দিতে জানে না, এজন্য তারা জনগণের কাছেও সম্মান পায় না। বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসে বিএনপি ও মুক্তিযোদ্ধাদের ডাকা হয় না। আমরা এখন অচ্যুত হয়ে গেছি। দেশে এখন পাকিস্তানের মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল পাকিস্তান গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আজকেও একই অবস্থা। জনগণকে ভোট কেন্দ্রে আসতে দেয় না। ভোটার বিহীন নির্বাচন হয়। ব্যালট বাক্স ভর্তি করে নিজেরা নিয়ে নেয়। অথচ আওয়ামী লীগ ও তাদের সাথে থাকা দু’একটি দল ছাড়া সকল দলই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু গালাগালি করে, বাজে কথা বলে, মিথ্যা কথা বলা তাদের স্বভাব। চুরি করবে তারা আর দোষ দিবে আমাদের। এ অবস্থায় কোন দেশ চলতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান অনস্বীকার্য, তবে এখানে বিদেশীদেরও অবদান আছে। বিশেষ করে আমাদের পার্শ¦বর্তী দেশ ভারতের। ওই সময় তারা আমাদের আশ্রয় দিয়েছিল। এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। এসময় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান কর্ণেল (অব.) অলি আহমদ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম (বীর প্রতীক), বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, ড আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইসতিয়াক আজিজ উলফাত প্রমুখ। এর আগে কাউন্সিলে ইশতিয়াক আজিজ আবারও মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি এবং সাদেক খান সাধারণ সম্পাদক পদে পুনর্নিরবাচিত হন।

 



 

Show all comments
  • কাসেম ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৫:১৬ এএম says : 0
    বিএনপির অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে প্রস্তুত হতে হতে সামনের নির্বাচনও চলে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Robiul Robi ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:৪১ পিএম says : 0
    পরিবর্তনের জন্য চাই পরিকল্পনা, পরিশ্রম ও আন্দোলন। কিন্তু আপনাদের মধ্যে একটিও নাই।
    Total Reply(0) Reply
  • Noyan Ahmed ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:৪২ পিএম says : 0
    আসেন আমরা সবাই একযোগে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করি,,, এই দেশটাকে মুক্ত করি।
    Total Reply(0) Reply
  • Yeasin Bhuyan Rouvel ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:৪৪ পিএম says : 0
    আন্দোলনের প্রথম সারিতে আপনাকেও শামিল হতে হবে, তখন দেখবেন দেশের প্রতিটি মানুষ সাথে আছে
    Total Reply(0) Reply
  • Abdullah Al Mamun ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:৪৫ পিএম says : 0
    আন্দোলনের জন্য উপযুক্ত লোকদের যথাস্থানে পদায়ন করে তৃণমুল পর্যায়ে কমিটি করার ব্যবস্থা করুন। এমন ব্যবস্থা করুন যাতে গ্রেপ্তার শুরূ হলেও আন্দোলন চালিয়ে নেওয়ার লোক নিজ থেকেই তৈরী হয়ে যায়। দেশের প্রতি ভালবাসা আছে এমন সাহসী লোকদের প্রাধান্য দিন। দেশবাসী পরিবর্তনের আপেক্ষায় আছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Saddam Hossain ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:৪৬ পিএম says : 0
    আমরা প্রস্তুত আছি, ইনশা আল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply
  • Shohag Chowdury ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:৪৭ পিএম says : 0
    নির্বাচন জিততে হলে লাগবে সাহস ,উদ্যম ত্যাগী মনোভাব
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Tarek ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:৪৮ পিএম says : 0
    রাইট....
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খালেদা জিয়া

২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ