পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রয়োজন সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও যথার্থ নজরদারির
বরিশাল ব্যুরো : বরিশাল মহানগরীর ঐতিহ্যবাহী ‘বঙ্গবন্ধু উদ্যান’টি নিয়ে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ক্রমশ বাড়লেও এর সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণে কর্তৃপক্ষের খুব একটা নজর নেই। এমনকি মধ্য ব্রিটিশ যুগে স্থাপিত তৎকালীন বাকেরগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক ‘মি: বেল’-এর নামে প্রায় সাড়ে ৮ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত সরকারি এ উদ্যানটি ১৯৭৩ সালের মার্চে ‘বঙ্গবন্ধু উদ্যান’ নামে নামকরণসহ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তবে দীর্ঘ প্রায় চার দশক পর এর প্রথম উন্নয়ন কাজ শুরু হয় ২০০৫ সালে। দু’দফায় দু’জন সিটি মেয়রের একনিষ্ঠ প্রচেষ্টায় বঙ্গবন্ধু উদ্যান নগরীর মধ্যেই নগর জীবনের কোলাহল থেকে সবাইকে যথেষ্ট স্বস্তি দিলেও সাম্প্রতিককালে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এ ময়দানের সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ অনেকটাই বিপন্ন।
বঙ্গবন্ধু উদ্যানের দু’টি ওয়াকওয়ের অনেক স্থানই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ মাঠে সরকারি-বেসরকারি যানবাহনের অপ্রয়োজনীয় প্রবেশের ফলে। সিটি করপোরেশন থেকে ৯ জন দৈনিক মজুরিভিত্তিক পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও শ্রমিককে এ ময়দানের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য নিয়োজিত রাখা হলেও তাদের কাজের দেখভাল করার কেউ আছে বলে মনে হয় না। এমনকি সাম্প্রতিককালে এ ময়দানের ওয়াকওয়েতে মোটরসাইকেল নিয়ে দাপিয়ে বেড়ান কতিপয় বিবেকহীন মানুষ। মাঠটির চার দিকে যেসব বাতি স্থাপন করা হয়েছিল তার অনেকগুলোই প্রায়ই বন্ধ থাকছে। এক দিকে তহবিল সঙ্কটে সিটি করপোরেশন এখানকার বাতিগুলো নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করছে না, অপরদিকে এ উদ্যানের রক্ষণাবেক্ষণসহ সার্বিক দেখভালের দায়িত্ব কাদের হাতে তা কেউ জানে না। এ উদ্যানটি নিয়ে জেলা প্রশাসন, গণপূর্ত অধিদপ্তর ও সিটি করপোরেশনের ত্রিমুখী ব্যবস্থপনায়ও নানা সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু উদ্যানের জমির মালিক গণপূর্ত অধিদপ্তর। কিন্তু এ ময়দানের নিয়ন্ত্রণ অনেকটা অলিখিতভাবে জেলা প্রশাসনের। আর জেলা প্রশাসক প্রশাসনের তরফ থেকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সিটি করপোরেশনকে ময়দানটির পরিচ্ছন্নতাসহ সার্বিক দেখভালের অনুরোধ করেছেন। মূলত সরকারিভাবে সিটি করপোরেশনের এ ময়দানের জন্য কোনো ধরনের দায় না থাকলেও জেলা প্রশাসনের অনুরোধ ও নগরবাসীর স্বার্থে তারা এ উদ্যানটির দেখভাল করছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে।
কিন্তু সা¤প্রতিককালে এখানকার সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ অনেকটাই বিপন্ন। পুরো মাঠ ঘিরে প্রায় ৮শ’ মিটারের দু’টি ওয়াকওয়ের অনেক সিরামিক ইট ভেঙে গেছে। মাঠটির পশ্চিম-দক্ষিণ কোণে সীমানা বেষ্টনীর গ্রিল খুলে পড়ে আছে। মাঠটির পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত ঘেঁষে যে লেকটি রয়েছে তার কিনারা ধসে পড়ায় বেশ কয়েকটি স্থানে উদ্যানের সীমানা দেয়ালসহ তার ওপরের গ্রিল পর্যন্ত খুলে পড়ে আছে গত বছরখানেক যাবৎ। তা দেখারও মনে হয় কেউ নেই।
বঙ্গবন্ধু উদ্যানের উত্তর-পশ্চিম কোণের প্রবেশপথের সাথে একটি স্থায়ী ও বেশ কয়েকটি অস্থায়ী ফাস্ট ফুডের দোকান এখানে পরিবেশকে অনেকটাই বিপন্ন করছে। এমনকি উদ্যান সংলগ্ন মডেল স্কুল ও কলেজের দোকানটি থেকে খাবার কিনে অনেকেই মাঠের মধ্যে ও ওয়াকওয়ের ধারে বেঞ্চিতে বসে তার উচ্ছিষ্ট সেখানেই ফেলে আসছে। ফলে ঐ সব উচ্ছিষ্টের সন্ধানে মাঠটিতে বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কুকুর-বিড়ালের উপদ্রবও সহনীয় সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। খাবারের বাক্স ও তার মধ্যের উচ্ছিষ্ট পুরো মাঠ এবং ওয়াকওয়ের পরিবেশ নোংরা করছে। অনেক রাত পর্যন্ত কতিপয় বখাটে এবং কোচিংয়ের নামে ঘরের বাইরে থাকা তরুণ-তরুণী এখানে আড্ডাবাজি করে পুরো উদ্যানটির স্বাভাবিক পরিবেশকে বিপন্ন করে তুলছে।
এসব ব্যাপারে বরিশাল গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু উদ্যানটি তাদের মালিকানাধীন হলেও তহবিলের অভাবে নির্মিত রক্ষণাবেক্ষণও করা সম্ভব হচ্ছে না। তবুও তারা চেষ্টা করছেন তহবিল জোগাড় করে উদ্যানটির ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো উন্নয়ন করতে।
এ ব্যাপারে বরিশালের জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, ময়দানটির মালিকানা গণপূর্ত অধিদপ্তরের। জেলা ম্যাজিস্ট্র্রেট হিসেবে সিটি করপোরেশনকে পুরো উদ্যানটি পরিচ্ছন্ন রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে। এখানকার পরিচ্ছন্নতাসহ সার্বিক তদারকি করতে নগর ভবনকে চিঠি দেয়ার কথাও জানান তিনি। পাশাপাশি মডেল স্কুল সংলগ্ন ফাস্ট ফুডের দোকানটি যাতে স্কুল ছুটির সাথে সাথে বন্ধ করা হয় সে বিষয়টিও তিনি নিশ্চিত করার কথা জানান।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র মুজিবুর রহমান সারোয়ারের উদ্যোগে সরকারি থোক বরাদ্দে ২০০৫ সালে গণপূর্ত অধিদফতর তাদের মালিকানাধীন এ উদ্যানটির চার পাশে একটি ওয়াকওয়ে, বসার স্থান ও গার্ডেন লাইট স্থাপনসহ দৃষ্টিনন্দন বৃক্ষ রোপণ করা হয়। গণপূর্ত অধিদপ্তরের জমি হলেও পুরো পার্কটির পরিচ্ছন্নতাসহ এর সার্বিক দেখাশোনার জন্য সে সময় সিটি করপোরেশন থেকে জনবলও নিয়োগ করা হয়। সেই থেকে এখানে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক নারীÑপুরুষ ও শিশু বেড়াতে আসছেন। এমনকি এ মাঠের ওয়াকওয়েতে হাঁটার জন্যও বিপুল সংখ্যক মানুষ আসছে। জেলার বাইরে থেকেও অনেক মানুষ এসে এ পার্কে ভ্রমণ করত। এখানে সব বয়সী মানুষের ভ্রমণের একটি পরিপূর্ণ সুস্থ পরিবেশও সৃষ্টি হয়।
কিন্তু ১/১১ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এক অদৃশ্য শক্তির মৌখিক নির্দেশে সর্বসাধারণের হাঁটা ও ভ্রমণের এ মাঠ থেকে গার্ডেন লাইটগুলো অপসারণ করা হয়। এমনকি মাঠে হাঁটার ওপরও কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। ফলে এক অজানা আশঙ্কায় ভ্রমণার্থীর সংখ্যাও ধীরে ধীরে কমতে থাকে। সন্ধ্যার পর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে ঘুটঘুটে অন্ধার নেমে আসত।
২০১০-১১ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচিত মেয়র শওকত হোসেন হিরন মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ সংগ্রহ করে এ মাঠে দ্বিতীয় ওয়াকওয়ে নির্মাণসহ পুরো উদ্যানটি স্থায়ী আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করেন। সিটি মেয়র নিজেও এ পার্কটির পরিচ্ছন্নতাসহ সার্বিক বিষয় সরেজমিন দেখভাল করতেন। ফলে বঙ্গবন্ধু উদ্যান একটি পরিপূর্ণ ভ্রমণস্থলে পরিণত হয়। নগরীর মধ্যেই নগরজীবনের কোলাহল থেকে মানুষ একটি পরিপূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশের স্বাদ পেতে এখানে ভ্রমণে অসতেন।
কিন্তু সা¤প্রতিককালে গোটা বঙ্গবন্ধু উদ্যানের পরিবেশ অনেকটাই বিপন্ন। গণপূর্ত অধিদফতর তহবিলের কথা বলে এর দেখভাল করছে না। শুধুমাত্র বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসের আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজের আগে নামকাওয়াস্তে কিছু কাজ করে থাকে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি। ফলে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বঙ্গবন্ধু উদ্যান ক্রমে তার আসল রূপ হারাচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।