পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ছোট ও মাঝারি আকারের ফ্ল্যাটের চাহিদা বেশি রিহ্যাব মেলায়
হাসান সোহেল : দীর্ঘদিন থেকে নানা সমস্যায় জর্জরিত দেশের সম্ভাবনাময় আবাসন খাত। সে অবস্থা থেকে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে খাতটি। আর তাই আবারো সুদিন ফিরতে শুরু করেছে আবাসন খাতে। দীর্ঘদিন বিক্রি থমকে থাকার পর জমে উঠেছে শীতকালীন আবাসন মেলা। উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্য ও নিম্ন মধ্যবিত্ত সবার স্বপ্ন নিজের একটা বাড়ি। চলমান রিহ্যাব ফেয়ারে ফ্ল্যাট-প্লট বিক্রি অনেকে বেড়েছে। অবস্থার উন্নতি হওয়ায় এ খাতের সংশ্লিষ্টরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তবে দাম বাড়ায় ক্রেতাদের মধ্যে কিছুটা অস্বস্থি দেখা গেছে। তবে আবাসন মেলায় চাহিদার শীর্ষে স্বল্প মূল্যের ছোট ও মাঝারি আকারের ফ্ল্যাট। সবারই প্রত্যাশা সাধ্যের মধ্যে নিজের একটা বাসস্থান।
রাজধানী ঢাকায় একটি বাড়ি করার স্বপ্ন কার-ই না থাকে। তাই স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের সাধ ও সাধ্যের মধ্যে প্লট ও ফ্ল্যাটের পসরা নিয়ে বসেছে দেশের আবাসন শিল্পখাতের সবচেয়ে বড় আয়োজন ‘রিহ্যাব ফেয়ার-২০১৭’। সাধ আর সাধ্যমত পছন্দের আবাস খুঁজে পেতে বাড়ি, প্লট বা জমির খোঁজে অনেকেই ভিড় করছেন ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চলমান পাঁচ দিনব্যাপী এ মিলনমেলা। যা আজ শেষ হবে।
মেলায় ক্রেতারা দাম, বুকিং মানি, ডাউন পেমেন্ট, প্রকল্পের অবস্থান সম্পর্কে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। সবকিছু মিলে গেলে বুকিং দেওয়ার প্রতিশ্রæতি দিচ্ছেন। ক্রেতারা বলছেন, এক সঙ্গে অনেক প্রতিষ্ঠান থাকায় যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অনেকেই আবার তৈরি ফ্ল্যাট খুঁজছেন। তবে কয়েক মাসের তুলনায় বর্তমানে প্লট ও ফ্ল্যাটের দাম বেড়েছে। এতে ক্রেতারা বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আবাসন খাতে বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ, প্রবৃদ্ধিতে প্রায় ১৫ শতাংশ অবদান, লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। তারপরও দীর্ঘ্যদিন ধরে নানা সমস্যায় জর্জরিত দেশের সম্ভাবনাময় আবাসন খাত। তারা বলছেন, ২০১০ সালের পর থেকে ক্রমেই এ শিল্পের সমস্যা বাড়ছে। দেশব্যাপী আবাসন শিল্পের প্লট-ফ্ল্যাট বিক্রি ৮০ শতাংশ কমেছে। তবে বর্তমানে সে অবস্থা থেকে কিছুটা উন্নতি হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, নানা কর আরোপ ও সরকারের নীতি সহায়তার অভাব, ভূমির উচ্চমূল্য, নির্মিত ফ্ল্যাট বিক্রি না হওয়া, ক্রেতাপর্যায়ে ঋণ সুবিধার অভাব, ব্যবসায়ীদের অপরিশোধিত ব্যাংক ঋণ, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগের বিড়ম্বনাসহ মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছিল দেশের আবাসন খাত। তবে সেখান থেকে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে সহজেই ব্যাংক ঋণের সুবিধা মিলছে। প্লট- ফ্ল্যাট বিক্রি আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। একই সঙ্গে দামও কিছুটা বেড়েছে। সবমিলে দীর্ঘ দিন ধরে থমকে থাকা আবাসন খাত আবার চাঙ্গা হচ্ছে। এটা এখাতের ব্যবসায়ী ও দেশের অর্থনীতির জন্য ভালোর দিক বলে তিনি মন্তব্য করেন। দাম বাড়ায় ক্রেতাদের মধ্যে অসস্থির প্রসঙ্গে লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, প্রকৃত অর্থে দাম বাড়েনি। আসলে দীর্ঘ দিন ধরে বেচা-বিক্রি ছিল না। চরম মন্দা অবস্থা ছিল। তাই ব্যবসায়ীরা খরচ ও কর্মচারীদেও বেতন দেওয়ার জন্য বাধ্য হয়ে কম দামে প্লট-ফ্ল্যাট বিক্রি করতো। কিন্তু কতো দিন লোকসান দেওয়া যায়। তাই বর্তমানে লোকসান কমানোর জন্য দাম কিছুটা স্বাভাবিকে আনার চেষ্টা চলছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
রিহ্যাব পরিচালক ও প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া কমিটির কো-চেয়ারম্যান কামাল মাহমুদ বলেন, মেলা হচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতার সেতুবন্ধন। একজন ক্রেতা যেন এক ছাদের নিচে প্লট, ফ্ল্যাট ও ঋণসংক্রান্ত বিষয়গুলোর সম্পর্কে খোঁজ নিতে পারেন, এ জন্যই মেলার আয়োজন। বিপুলসংখ্যক ক্রেতা-দর্শনার্থীর আগমনে আবাসন ব্যবসায়ীরা আশান্বিত। তিনি বলেন, মেলার এ আমেজ আবাসন খাতের গতি ফেরাতে সহায়তা করবে।
এদিকে মেলায় ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ফ্ল্যাট বা প্লট বুকিংয়ে বিভিন্ন ধরনের পুরস্কার ও বিশেষ ছাড়ের অফার দিচ্ছে মেলায় অংশ নেওয়া আবাসন কোম্পানি ও বিভিন্ন হাউজিং প্রতিষ্ঠানগুলো। তুলনামূলক কিস্তি সুবিধা, কম দাম এবং সহজলভ্য অ্যাপার্টমেন্টগুলো ক্রেতাদের পছন্দে আসছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। এক ছাদের নিচে আবাসনের অ্যাপার্টমেন্ট-প্লট এবং নির্মাণ সামগ্রী ও হোম লোনের তথ্য পেয়ে আবাসন ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি খুশি ক্রেতা-দর্শনার্থীরাও। এছাড়া, ঢাকার আশপাশ ও রাজধানীর বাইরে জমি কিনতে চাইলেও মেলা থেকে কেনার সুযোগ আছে।
মেলায় ফ্ল্যাট ক্রয়ে আগ্রহীদের গৃহঋণ এবং এ সম্পর্কিত তথ্য জানাতে অংশ নিয়েছে ব্যাংক ও অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠান। সরকারি পর্যায়ে ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের (বিএইচবিএফসি) সিনিয়র অফিসার আব্দুলাহ আল মামুন বলেন, ফ্ল্যাট ক্রেতাদের সাড়ে আট শতাংশ সরল সুদে ঋণ দিচ্ছে বিএইচবিএফসি। প্রবাসবন্ধু, নগরবন্ধু, পলীমা, আবাসন উন্নয়ন ও আবাসন মেরামত খাতে এসব ঋণ দেওয়া হচ্ছে। মেলায় আসা ক্রেতা-দর্শনার্থীরা আমাদের ঋণ সম্পর্কে তথ্য জানছেন।
গতকাল রোববার মেলার চতুর্থদিন পর্যন্ত ভালো সাড়া পেয়েছে আয়োজকরা। গত শুক্রবার ও শনিবার ছুটির দিন হওয়ায় মেলা প্রাঙ্গণে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছিল। আয়োজকরা জানায়, মেলায় বিশেষ ছাড় ও অফারের কারণে বেচাকেনায় গতি পেয়েছে। আজ (সোমবার) বড়দিনের ছুটিতে ক্রেতা-দর্শনার্থীদেও উপস্থিতি আরো বাড়বে। ফলে প্লট-ফ্ল্যাটের বিক্রি আরও বাড়বে বলে জানান তারা। এদিকে স্বল্প মূল্যের ছোট ও মাঝারি আকারের ফ্ল্যাটের চাহিদা বেশি বলে জানান বিক্রেতারা।
আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবারের মেলায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীর উপস্থিতি বেশ ভালো। মেলার প্রতিদিনই সকাল থেকেই মেলায় আগত ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপস্থিতি বেশ লক্ষ্যণীয়। গতকাল বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখা গেছে, সব স্টলেই মানুষের ভিড়। সবাই প্লট ও ফ্ল্যাটের খোঁজ নিচ্ছেন। ক্রেতাদের অনেকে তথ্য নিয়ে পরে যোগাযোগ করবেন এমন কথা বলে চলে যাচ্ছেন। আর কেউ কেউ বুকিংও দিচ্ছেন। স্টলের পক্ষ থেকে রেজিস্টার খাতায় ঠিকানা ও যোগাযোগের নম্বরও রেখে দেওয়া হচ্ছে।
মেলায় মধ্যম আয়ের মানুষের পদচারণই বেশি দেখা যায়, যারা সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। নিজের জমানো অর্থ কিংবা চাকরির বেতনের বিপরীতে ঋণ নিয়ে ফ্ল্যাট কিনতে চান। ১০০০-১২০০ কিংবা ১২০০-১৪০০ বর্গফুটের মাঝারি আকারের ফ্ল্যাটে আগ্রহ বেশি।
গতকাল মিরপুর সাড়ে ১১ থেকে স্ত্রীসহ মেলায় এসেছিলেন মো. খোরশেদ আলম। স্টলে স্টলে ঘুরে ফ্ল্যাটের খোজ নিচ্ছেন তারা। যার আয়তন ১২০০-১৫০০ বর্গফুটের বেশি নয়। তাদের সঙ্গে মেলায় কথা হয়। তারা একটি প্রস্তুত করা ফ্ল্যাট কিনবেন। দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই নিজ ফ্ল্যাটে উঠতে পারেন এমন ফ্ল্যাটই খুঁজছেন তারা। বাসা খুঁজছেন তিনি।
ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ডিজিএম (মার্কেটিং) কামরুল আহসান বলেন, মেলায় মধ্যম আয়ের ক্রেতা বেশি। তাদের আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তারা মধ্যম বা মাঝারি আকারের ফ্ল্যাট খুঁজছেন। বাণিজ্যিক ফ্ল্যাটের চাহিদা থাকলেও মাঝারি আকারের ফ্ল্যাটের চাহিদা বেশি।
বাংলাদেশ ল্যান্ড ভেভেলপমেন্ট লিমিটেডও মেলা উপলক্ষে সাউথ টাউন প্রকল্পে প্লট বিক্রিতে বিশেষ অফার দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির রেডি প্লট ক্রয়ে এককালীন অর্থ পরিশোধে ৪০ শতাংশ এবং কিস্তিতে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হচ্ছে। মেলায় স্টল নিয়ে আসা আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনের বিপনন ও বিক্রয় শাখার প্রধান মোহাম্মদ তানভিরুল ইসলাম জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বিক্রি বেশ ভালো। একই সঙ্গে ভালো মানের ক্রেতারা বেশি এসেছেন। তবে বেশিরভাগেরই মধ্যম মানের ফ্ল্যাটে আগ্রহ। কোন এলাকার ফ্ল্যাটে সাড়া বেশি জানতে চাইলে তিনি জানান, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, উত্তরা, পল্টন, শান্তিনগর এবং মগবাজার এলাকার ফ্লাটে চাহিদা বেশ ভালো। মোহাম্মদ তানভিরুল ইসলাম জানান, এবার মেলায় ছুটির দিনের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, শীতকালীন রিহ্যাব আয়োজিত মিলনমেলায় ২০৫টি স্টল অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ৩০টি বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ও ১৩ অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর কো-স্পন্সর হিসেবে আছে মোট ২৪টি প্রতিষ্ঠান। এন্ট্রি টিকিটের রাফ্রেল ড্র তে ১ম পুরস্কার- একটি প্রাইভেট কার, ২য় পুরস্কার একটি মোটরসাইকেল, ৩য় পুরস্কার একটি ফ্রিজ, চতুর্থ পুরস্কার-একটি ৪৩ ইঞ্চি এলইডি টেলিভিশন, ৫ম পুরস্কার- একটি ওয়াশিং মেশিন এবং ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম পর্যন্ত মোবাইল ফোন। আজ মেলার শেষ দিন রাত ৯টায় রাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হবে। বিজয়ীদের নাম ও টিকিট নং রিহ্যাব ওয়েব সাইটে প্রচার করা হবে। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।