Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যাংকমুখী কৃষক বাড়ছে পেশার গুরুত্ব

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশ্বায়নের প্রভাব দেশের কৃষিতেও পড়েছে। উন্নয়ন প্রশ্নে যারাই কৃষিকে মূলধারার অর্থনীতিতে ঠাঁই দিয়েছে, তারাই তর তর করে এগিয়েছে। প্রযুক্তির সঙ্গে অর্থের গাঁথুনি দিয়েই কৃষিতে বিপ্লব এসেছে। কৃষিতে বিপ্লব এসেছে বাংলাদেশেও। বিশেষত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় কৃষিকে গুরুত্ব দেয়ায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনও এসেছে। এখন একজন ভূমিহীন কৃষকও ব্যাংকে হিসাব খুলতে পারছেন। মিলছে জামানত ছাড়া ঋণও। কৃষক যখন ব্যাংকমুখী হচ্ছেন, ব্যাংকও তখন কৃষকমুখী হচ্ছে। ব্যাংকের সহায়তায় গুণগত পরিবর্তনও আসছে এ খাতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন তথ্য অনুযায়ী, সরকারের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় কৃষকদের ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯১ লাখ ৯০ হাজার ৬৪টি। এসব হিসাবে জমা হয়েছে ২৬৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
শুধু ব্যাংক হিসাব খোলা নয়। গ্রামের কৃষক এখন ব্যাংকিং লেনদেন করছেন সারা দেশে। সচল হচ্ছে অর্থনীতির চাকা। কৃষকের হিসাবে আসছে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ও। চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ১৫২ কোটি টাকা রেমিট্যান্স এসেছে কৃষকের ব্যাংক হিসাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক মো. আবুল বশর বলেন, গ্রামীণ সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিশেষ করে কৃষককে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিতে কাজ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সঠিকভাবে পরিচালনা করলে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি ঘরে ঘরে ব্যাংকিংসেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, সহজ শর্তে সাড়ে ৯ শতাংশ সুদে জামানত ছাড়াই ৫০ হাজার টাকা পর্য়ন্ত ঋণ দেয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কৃষকদের বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।
এদিকে ব্যাংক হিসাবের পাশাপাশি বাড়ছে ঋণের পরিমাণও। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্র মালিকানাধীন এবং বেসরকারি প্রতিটি ব্যাংককে এ ঋণ বিতরণের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
বর্তমানে ৯ শতাংশ সুদে কৃষি ঋণ দেয়া হচ্ছে। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রথম তিন মাসে দেশের ব্যাংকগুলো মোট কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে ৪ হাজার ২৩৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা; যা লক্ষ্যমাত্রার ২০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে ব্যাংকগুলোর ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকগুলোর এখন কৃষি খাতে ঋণ বিতরণে আগ্রহ বেড়েছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোও লক্ষ্যমাত্রার আলোকে ঋণ বিতরণ করছে। ফলে আগের চেয়ে কৃষি ঋণ বিতরণের হার অনেক বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশকে বাঁচাতে হলে কৃষককে বাঁচাতে হবে। কৃষকদের এগিয়ে নিতে ব্যাংকিং খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। এ খাতে ঋণ বাড়াতে হবে। বিশেষ করে বর্গা চাষিদের সহজ শর্তে সুদবিহীন ঋণ দিতে হবে।

তিনি বলেন, কৃষি খাতে ব্যাংকগুলো এগিয়ে এসেছে। অনেক কৃষক ব্যাংকিংয়ের আওতায় এসেছে। ঋণ বিতরণও বেড়েছে। তবে এখনও অনেক ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও এনজিও কৃষি ঋণে অতিরিক্ত চার্জ নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।
জানা গেছে, দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) কৃষি খাতের অবদান ১৬ শতাংশ। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের ৮০ ভাগ লোক কৃষিতে নিয়োজিত। কৃষি ও কৃষকদের সঙ্গে বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। বর্তমানে দেশের খাদ্যশস্যের চাহিদা রয়েছে ২ কোটি ৮৮ লাখ টন। এ চাহিদার প্রায় ৯৫ শতাংশ সরবরাহ করেন দেশের কৃষকরা।
এদিকে বাংলাদেশকে দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে বিশেষ একটি পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচি চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কর্মসূচির আওতায় দুগ্ধ উৎপাদন ও কৃত্রিম প্রজনন খাতে ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়। এ তহবিল থেকে উদ্যোক্তারা সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ সুদহারে ঋণ পান।
আগে এ খাতে ঋণের বিপরীতে জামানত রাখার নিয়ম ছিল। এখন জামানত ছাড়াই ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিটি বকনা বাছুর ক্রয়ের জন্য ৪০ হাজার টাকা এবং রক্ষণাবেক্ষণ বা লালন-পালনের জন্য ১০ হাজার টাকা তথা প্রতিটি বকনা বাছুরের জন্য সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা ঋণ প্রদান করা যাবে। একজন উদ্যোক্তাকে সর্বোচ্চ ৪টি বকনা বাছুর ক্রয়ে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান করছে ব্যাংকগুলো।######



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্যাংকমুখী কৃষক
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ