Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

নাগরিকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান প্রধান বিচারপতির

প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে উদ্দেশ্য করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস. কে. সিনহা) সিনহা বলেছেন, আপনিও (এটর্নি জেনারেল) দেশের নাগরিক, আমিও এই দেশের নাগরিক। দেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষায় আমাদের মতো নাগরিককে আরো সচেতন হতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার ফৌজদারি কার্যবিধি ৫৪ ও ১৬৭ ধারার বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি এসব মন্তব্য করেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশে কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই, দেশের রাজনীতি এখন স্থিতিশীল। আর তাই অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিক দিয়ে আমরা অনেক ক্ষেত্রে ভারতকেও ডিঙিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধি ৫৪ ও ১৬৭ ধারা ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন এসেছে সে সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত। ১৯৭১ সালের পর বর্তমান সময়ে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভাল অবস্থানে রয়েছে। তাহলে কেন এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হবে না? বলেও প্রশ্ন রাখেন তিনি।
বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার সংক্রান্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা ও রিমান্ড সংক্রান্ত ১৬৭ ধারা নির্দেশনার বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি দীর্ঘ একযুগ পর গতকাল শুরু হয়। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চে এ শুনানি শুরু হয়। প্রথম দিনের শুনানির একপর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষে সময় আবেদন করলে আগামী ১১ মে পরবর্তী শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের এটর্নি জেনারেল এডভোকেট মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল এডভোকেট মুরাদ রেজা শুনানিতে অংশ নেন। রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ড. কামাল হোসেন।
ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এক যুগ আগে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা ও ১৬৭ ধারা সংশোধনে হাইকোর্ট রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের নির্দেশনা এখনো বহাল রয়েছে। কিন্তু সরকার ওই রায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়নি। যদি রায় বাস্তবায়ন করা হতো তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটত না।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ২৩ জুলাই ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে বেসরকারি ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র শামীম রেজা রুবেলকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করেন তৎকালীন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার (এসি) আকরাম হোসেন। ওই বছরের ২৪ জুলাই মিন্টো রোডের গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে মারা যান রুবেল। এ ঘটনায় রুবেলের বাবা রমনা থানায় এসি আকরামসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ২০০২ সালে বিচারিক আদালত এসি আকরামসহ ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ দেন। এরপর তৎকালীন সরকার রুবেল হত্যা তদন্তের জন্য বিচারপতি হাবিবুর রহমান খানের সমন্বয়ে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত শেষে কমিটি ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের পক্ষে কয়েকটি সুপারিশ করে। এ সুপারিশ বাস্তবায়িত না হওয়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) হাইকোর্টে রিট করে। ওই রিট মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল এ ব্যাপারে কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে ছয় মাসের মধ্যে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রচলিত বিধান সংশোধন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি ওই ধারাগুলো সংশোধনের আগে কয়েক দফা নির্দেশনা মেনে চলার জন্য সরকারকে বলা হয়। এর বিরুদ্ধে আপিলে যায় রাষ্ট্রপক্ষ। আপিল আবেদনে বলা হয়, এ দু’টি ধারা সংশ্লিষ্ট যে আইনে রয়েছে, তা যথেষ্ট ও সঠিক। এ জন্য আইন প্রণয়ন বা সংশোধনের কোনো প্রয়োজন নেই।
২০০৪ সালে আপিল বিভাগ সরকারের লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) মঞ্জুর করেন। তবে হাইকোর্টের ওই নির্দেশনাগুলো স্থগিত করেননি। এরপর ২০০৭, ২০০৮ ও ২০১০ সাল এবং গত ২০ জানুয়ারি চারবার শুনানির জন্য কার্যতালিকায় এলেও শুনানি হয়নি বলে জানা গেছে।
হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে- পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করতে পারবে না, কাউকে গ্রেপ্তার করার সময় পুলিশ তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে, গ্রেপ্তারের তিন ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার হওয়ার কারণ জানাতে হবে, বাসা বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য স্থান থেকে গ্রেপ্তার ব্যক্তির নিকটাত্মীয়কে একঘণ্টার মধ্যে টেলিফোন বা বিশেষ বার্তাবাহক মারফত বিষয়টি জানাতে হবে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে তার পছন্দসই আইনজীবী ও নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে পরামর্শ করতে দিতে হবে। এ ছাড়া গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশক্রমে কারাগারের ভেতরে কাঁচ নির্মিত বিশেষ কক্ষে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে, কক্ষের বাইরে তার আইনজীবী ও নিকটাত্মীয় থাকতে পারবেন। জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে ওই ব্যক্তির ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে, পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করবেন। বোর্ড যদি বলে ওই ব্যক্তির ওপর নির্যাতন করা হয়েছে তাহলে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট ব্যবস্থা নেবেন এবং তাকে দ-বিধির ৩৩০ ধারায় অভিযুক্ত করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নাগরিকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান প্রধান বিচারপতির
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ