Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আলেমদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী- জঙ্গিমুক্ত দেশ গঠনে সহযোগিতা করুন

প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদমুক্ত, শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গঠনে আলেম সমাজের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করা, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, নাশকতাকে শান্তির ধর্ম ইসলাম বরদাশত করে না তা মানুষের কাছে ভালোভাবে প্রচার করার পাশাপাশি এসব বিষয়ে সজাগ থাকার কথাও বলেন তিনি। গতকাল (মঙ্গলবার) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও জাতীয় খতিব সম্মেলনে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী পবিত্র শান্তির ধর্ম ইসলামকে ব্যবহার করে কেউ যেন অপরাধ সংঘটন, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি ও কুৎসা রটনা না করতে পারে সেদিকে লক্ষ রাখার জন্য খতিব-ইমামদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আপনারা দয়া করে দেখবেন পবিত্র শান্তির ধর্ম ইসলামকে কেউ যেন বিপথে ঠেলে দিয়ে এই ধর্মের নামে কোনো অপরাধ সংঘটন করতে না পারে। কোনো কুৎসা রটনা করতে না পারে।
তিনি বলেন, ইসলাম ধর্মে কোনো জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের স্থান নেই। ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম, ইসলাম পবিত্র ধর্ম। ইসলাম কখনো বোমাবাজি বা সন্ত্রাসকে বরদাশত করে না। যারা জঙ্গিবাদী বা সন্ত্রাসী কর্মকা-ে যুক্ত তাদের কোনো ধর্ম নেই, সীমারেখাও নেই। মুষ্টিমেয় কয়েকটি লোকের জন্য আমাদের এতবড় দুর্নাম। এটা সত্যিই কষ্টকর। শেখ হাসিনা বলেন, নাশকতা, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদÑ এগুলো যে ইসলাম ধর্মে নেইÑ সেটা ভালোভাবে প্রচার করবেন। যারা এসব কর্মকা- করে, আমরা চাই, আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ জনগণ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন, সজাগ থাকবেন। বিপথে গিয়ে কেউ যেন ইসলামের বদনাম করতে না পারে, সে সুযোগ যেন না দেয়া হয়।
ইসলামের সঙ্গে জঙ্গিবাদকে জড়ানোর প্রতিবাদ করে শেখ হাসিনা বলেন, ইতালিতে একটি অনুষ্ঠানে একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী বলছিলেন, ইসলামিস্ট টেরোরিস্ট। এটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে প্রচ- মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। আমার যখন বক্তৃতার সুযোগ এলো, তখন আমি সোজা বললাম, যারা টেরোরিস্ট বা সন্ত্রাসী বা জঙ্গি- ওই জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস ওটাই তাদের ধর্ম। আমার ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম, পবিত্র ধর্ম।
ফিলিস্তিনে গণহত্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সেখানে শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে, অন্তঃসত্ত্বা মায়েদেরও হত্যা করা হচ্ছে। এটা কি সন্ত্রাস নয়, জঙ্গিবাদ নয়? এটাও সন্ত্রাস, তো এটা বলেন না কেন? আরো অনেক দেশ ছিল, কেউ কিছু বলেনি।
জীবনে বহুবার তাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার ওপর বারবার হামলা করেছে। আল্লাহ জীবন দেয়ার মালিক, জীবন নেয়ার মালিক। আমি ব্যক্তিগতভাবে সব সময় বিশ্বাস করি, প্রত্যেকটা মানুষকে আল্লাহ একটা কাজ দিয়ে পাঠান। সেই কাজটা তাকে দিয়ে সম্পন্ন করান। যতক্ষণ সম্পন্ন না করান, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সেটা হেফাজত করবেন। একমাত্র মাথা নোয়াবো আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে, আর কারো কাছে নয়।
বিগত সময়ে বিএনপি-জামায়াতের সহিংস আন্দোলন, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা, বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটে আগুন দিয়ে কোরআন পোড়ানোর ঘটনার কথা উল্লেখ করে আলেম সমাজের উদ্দেশে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যেন কেউ এ ধরনের কাজ করতে না পারে সে ব্যাপারে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করি। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি, প্রায়ই সন্ত্রাসী কর্মকা- করে আমাদের দেশটাকে অস্থিতিশীল করতে চায় তারা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নস’র চেয়ারম্যান ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। স্বাগত বক্তৃতা করেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ে সচিব মোহাম্মদ আব্দুল জলিল। খতিবদের পক্ষে বক্তৃতা করেন জাতীয় খতিব কাউন্সিলের আহবায়ক জামিয়াতুল ফালাহ মসজিদের খতিব মাওলানা জালালুদ্দিন আল ক্বাদরী।
প্রধানমন্ত্রী আলেম সমাজের উদ্দেশে বলেন, আমার কষ্ট হয় কখনও কখনও জঙ্গিবাদ নাম নিয়ে যখন ইসলাম ও জঙ্গিবাদকে এক করে ফেলা হয়। মুষ্টিমেয় লোকের জন্য আমাদেরকে এত বড় দুর্নাম বয়ে বেড়াতে হয়। কাজেই ইসলামে যে জঙ্গিবাদের স্থান নেই, সন্ত্রাসবাদের স্থান নেই, ইসলাম যে পবিত্র ধর্ম শান্তির ধর্ম এই বিশ্বাস যেন মানুষের মধ্যে আসে। সে বিষয়ে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করি।
প্রধানমন্ত্রী পবিত্র কোরআনের আয়াত উল্লেখ করে বলেন- ‘লাকুম দিনুকুম ওয়ালিয়াদিন’ (যার যার ধর্ম তার তার কাছে)। যার যার ধর্মকর্ম পালনে তাদের যদি সেই সুযোগ না দেয়া হয় তাহলে বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেখানে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা কম তাদের ভাগ্যে কি ঘটবে। আমি এটা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব বলেই মনে করি। আমাদের রাসূল মুহাম্মদ (সা:)-এর শিক্ষাও তাই। কাজেই আমরা সবসময় এটাই বিশ্বাস করি যে, যার যার ধর্ম সেই সেই পালন করবে।
তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ জঙ্গিদের দেশে পরিণত হয়। ’৭১ সালে পাকিস্তান যেভাবে হত্যা চালিয়েছিল, ঘর-বাড়ি, মানুষ পুড়িয়ে দিয়েছিল। তারাও সেভাবে করেছে। একজন মসুলমান কিভাবে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করতে পারে প্রশ্ন উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাকে বহুবার হত্যার প্রচেষ্টা হয়েছে। আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিচালিত আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ ২২ জন নেতা-কর্মী নিহত হয়, বহু লোক পঙ্গুত্ববরণ করে।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু যেমন ছিলেন একজন খাঁটি বাঙালি, তেমনি ছিলেন মনেপ্রাণে একজন ঈমানদার মুসলমান। এদেশে ইসলামের সঠিক চর্চা এবং গবেষণা পরিচালনার জন্য জাতির পিতা ১৯৭৫ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন এদেশে ইসলামের সঠিক বাণী যেন মানুষের কাছে পৌঁছে। ধর্মকে যেন ভুলভাবে মানুষের কাছে তুলে ধরা না হয়।
তিনি ইসলামের প্রসারে বঙ্গবন্ধুর অবদান তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, ইসলামের প্রচার-প্রসারে জাতির পিতার সাড়ে তিন বছরের সরকারের অবদান সমকালীন মুসলিম বিশ্বে এক বিরল দৃষ্টান্ত। তিনি আইন করে মদ, জুয়া, হাউজি, ঘোড়দৌড় ও অসামাজিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করেন।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুই জাতীয় পর্যায়ে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা:) উদযাপন, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণ, বেতার ও টেলিভিশনে দিনের অনুষ্ঠান শুরু ও সমাপ্তিতে কোরআন তেলাওয়াতের ব্যবস্থা গ্রহণ, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা:), শবেকদর ও শবেবরাতে সরকারি ছুটি ঘোষণা, বিশ্ব এজতেমার জায়গা ও কাকরাইল মসজিদ সম্প্রসারণের জন্য জমি বরাদ্দ করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনকালেও বঙ্গবন্ধু ওআইসির সদস্য পদ গ্রহণে সমর্থ হন।
তিনি বলেন, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে তাবলিগ জামায়াত পাঠান এবং একাধিক ধর্মীয় প্রতিনিধিদল সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করেন। আরব-ইসরাইল যুদ্ধে ফিলিস্তিনি ভাই- বোনদের জন্য ত্রাণসামগ্রী ও মেডিকেল টিম প্রেরণ করেন। হজযাত্রীরা যাতে স্বল্প ব্যয়ে হজ করতে পারেন এ জন্য তিনি ‘হিজবুল বাহার’ নামে একটি জাহাজ ক্রয় করেন। অথচ যা পরে জেনারেল জিয়া ক্ষমতা দখলের পর প্রমোদতরীতে পরিণত করে। জিয়া সরকার মদ ও জুয়ার অবাধ লাইসেন্স প্রদান করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুসলমানদের শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের জন্য বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে ‘আইডিবি চার্টার’-এ স্বাক্ষর করেন। তার শাহাদাতের পর এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে জামায়াতীরা ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু একবারও তারা জাতির পিতার অবদানের কথা স্বীকার করেনি বরং তাকে ইসলামবিদ্বেষী বলে দেশে-বিদেশে অপপ্রচার চালায়।
তিনি বলেন, তার সরকার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৪৩টি জেলা কার্যালয় ও এর সকল জনশক্তিকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করে। ‘ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট’ গঠন করা হয়। তিনি আরও বলেন, আমরা বায়তুল মোকাররম মসজিদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণ কাজ শুরু করি। মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম গ্রহণ করি। দেশব্যাপী ইসলামী প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করি। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে আমাদের নেয়া উন্নয়ন কর্মকা-গুলো বন্ধ করে দেয়। এমনকি জাতীয় মসজিদের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজও বন্ধ করে দেয়। যাক সেটা আবার আমার হাতেই পরবর্তীতে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেষ হয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসেই দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটায়। আওয়ামী লীগের ২২ হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা চালায়। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্মম নির্যাতন শুরু করে। জামায়াত নেতাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দেয়। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে শান্তির ধর্ম ইসলামকে তারা কলুষিত করে। আমরা ২০০৮ সালে সরকার গঠন করে আবার দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনি। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করি।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

Show all comments
  • মোসলেম ২৩ মার্চ, ২০১৬, ১১:০০ এএম says : 0
    একটি শান্তিপূর্ন ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে আলেমদের সহযোগিতার কোন বিকল্প নেই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আলেমদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী- জঙ্গিমুক্ত দেশ গঠনে সহযোগিতা করুন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ