Inqilab Logo

শনিবার, ০৮ জুন ২০২৪, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

‘তোর মতো লোক মেরে ফেললে আমার কিছুই হবে না’

৭ খুন মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবীকে হুমকি

প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫০ পিএম, ২২ মার্চ, ২০১৬

নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার : ‘বেশি বেড়ে গেছ, গুলি করে তোকে হত্যা করব, তোর মতো লোক মেরে ফেললে আমার কিছুই হবে না।’ এভাবেই সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নুর হোসেনের আইনজীবী ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ এনে সাত খুন মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান নিরাপত্তা চেয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। তবে সাখাওয়াত হোসেন খানের আবেদনকে মিথ্যা, মানহানিকর অভিহিত করে প্রতিকায় চেয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির কাছে পাল্টা আবেদন করেছেন খোকন সাহা। দু’জনেই গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এ আবেদন করেন। অপরদিকে সেভেন মার্ডারের ঘটনায় দায়ের হওয়া দুটি মামলার একটির বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটরের (পিপি) বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে তাকে সাত খুনের মামলা পরিচালনা থেকে অব্যাহিত দেয়ার দাবি জানিয়ে আবেদন করেছেন। গতকাল বিকেলে জেলা প্রশাসকের কাছে তিনি এ আবেদন করেন।
সাখাওয়াত হোসেন খান তার আবেদনে উল্লেখ করেন, নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির একজন সিনিয়র আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ ৭ জন খুন ও গুম হওয়ার পর থেকে সকল আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়ে বিচারের দাবিতে তিনি আন্দোলন করেন। বর্তমানে মামলার ন্যায়বিচারের স্বার্থে এজাহারকারীদের পক্ষে পেশাগত দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় গতকাল একটি মামলা পরিচালনার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ‘খ’ অঞ্চলে সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে সাত খুন মামলার আসামি নুর হোসেনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খোকন সাহা তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং বেশি বেড়ে গেছ, গুলি করে তোকে হত্যা করব। তুই নারায়ণগঞ্জে থাকতে পারবি না। তোর মতো লোক মেরে ফেললে আমার কিছুই হবে না। এতে তিনি জীবনের নিরাপত্তার অভাববোধ করে সমিতির কাছে লিখিত আবেদন করেন।
এদিকে অ্যাডভোকেট খোকন সাহা তার আবেদনে বলেন, অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান তার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন, ষড়যন্ত্রমূলক ও মানহানিকর বক্তব্য সম্ব^লিত দরখাস্ত দিয়েছে সমিতিতে, যা তার জন্য অপমানজনক। তার দরখাস্ত আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত করার দাবি জানাই।
বিউটির আবেদন
এদিকে সাত খুনের একটি মামলার বাদী নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি তার আবেদনে উল্লেখ করেন, সাত খুনের মামলাটিতে বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাক্ষীগ্রহণ চলমান। কিন্তু সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন এই মামলার প্রধান আসামি নুর হোসেনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। নুর হোসেন ও মামলার অপর আসামী লে. কর্নেল (চাকরিচ্যুত) তারেক সাঈদের কাছ থেকে আর্থিকভাবে বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে আমি সাক্ষ্য দেয়ার সময় আমাকে বিভিন্নভাবে বিভ্রান্ত করেছে এবং নুর হোসেনসহ অন্যান্যের নাম প্রকাশ করতে নিষেধ করে। সবশেষ গত ২১ মার্চ ২, ৩ ও ৪নং (আবুল কালাম, জাহাঙ্গীর আলম টিপু ও ফখরুল ইসলাম) সাক্ষী বিজ্ঞ আদালতে সাক্ষ্য প্রদানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন আসামিদের রক্ষা করতে সাক্ষীদের সাক্ষ্য প্রদানে বাধ্য করে। প্রকাশ্য আদালতে পিপি আসামিদের সঙ্গে হাসাহাসি করে। এবং আসামিপক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছে। তাই এসব কারণে মামলার বিচারের ক্ষেত্রে আমি খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি। পিপি এই মামলা পরিচালনা করলে পরবর্তী সাক্ষীগণও সঠিকভাবে সাক্ষ্য প্রদান করতে পারবেন না, যার কারণে মামলাটি প্রমাণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। পিপি অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকনকে অব্যাহতি দিয়ে যোগ্য কোনো ব্যক্তিকে পিপি হিসাবে নিয়োগদান করা আবশ্যক।
মামলা বাতিলে তারেক সাঈদের দ্বিতীয় আবেদনও খারিজ
নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মামলায় চার্জ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে সাবেক র‌্যাব কর্মকর্তা তারেক সাঈদ মোহাম্মাদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের বেঞ্চ আবেদনটি ‘উত্থাপিত হয়নি মর্মে’ খারিজ করে দেন। আদালতে তারেক সাঈদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী গোলাম কিবরিয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ এ কে এম মনিরুজ্জামান কবীর ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল শহীদুল ইসলাম খান। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুলার লামাপাড়া থেকে নাসিক কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ ৭ জনকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ পাওয়া যায়। এরপর নজরুল ও তার চার সহযোগীকে হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি একটি এবং চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিমকে হত্যার ঘটনায় বিজয় কুমার অন্য মামলাটি দায়ের করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত বছরের ৮ এপ্রিল নূর হোসেন, র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে চলতি বছর ৮ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে দুই মামলার বিচার শুরু হয়। বিউটির করা মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আবেদন করেন তারেক সাঈদ। গত রোববার এ বিষয়ে শুনানি শেষে আদালত বিষয়টি আদেশের জন্য রাখেন।
এর আগে আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পালের করা মামলাও বাতিল চেয়েছিলেন তারেক সাঈদ। তার ওই আবেদন গত ১৫ মার্চ হাইকোর্ট খারিজ করে দেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ‘তোর মতো লোক মেরে ফেললে আমার কিছুই হবে না’
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ