পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সংসদ সদস্যদের জন্য নির্মিত মানিক মিয়া অ্যাভিনিউস্থ ন্যাম ভবনের লিফটের সমস্যা দীর্ঘদিনের। প্রায় প্রতিদিনই এমপিরা তো বটেই তাদের স্ত্রী-সন্তানদেরও লিফটে আটকে থেকে ধম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। ঘেমে-নেয়ে একাকার হওয়ার পাশাপাশি সবার মনেই ভর করেছে ভয়। তাই ভবনগুলোতে স্থাপন করা বিশেষ করে পুরনো ও জরাজীর্ণ লিফটগুলো অপসারণের দাবি করে আসছিলেন ওখানে বসবাসকারী এমপিরা।
তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এমপিদের সুযোগ-সুবিধা দেখভালের দায়িত্বে থাকা জাতীয় সংসদের ‘সংসদ কমিটি’ সরেজমিন পরিদর্শন করে বিষয়টি সমাধানে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়। এরপরই ভবনগুলোতে প্রতিস্থাপনের জন্য নতুন লিফট আমদানির উদ্যোগ নেয় সংশ্লিষ্ট দফতর। কিন্তু যে মানের লিফট আমদানির প্রক্রিয়া চলছে তাতে এমপিদের পরিবারের সদস্যদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ থেকে আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এমনকি জীবননাশের সম্ভাবনারও আশঙ্কা করছেন অনেকে। সংসদ কমিটির সভাপতি চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ ইনকিলাবকে বলেন, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউস্থ ন্যাম ফ্ল্যাটগুলোতে লিফটের সমস্যা দীর্ঘদিনের। প্রায় প্রতিদিনই এমপিরা তো বটেই তাদের স্ত্রী-সন্তানদেরও লিফটে আটকে থেকে ধম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা পূর্ত বিভাগকে বলেছি। তারা বলেছে ১২টি লিফট আনা হচ্ছে। এর জন্য টেন্ডার করা হয়েছে তা জানিয়েছে। তবে কবে লাগবে তা জানা নেই।
ভবনগুলোতে বসবাসরত একাধিক এমপি জানান, বিদ্যমান লিফটগুলোতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। প্রায় সময়ই লিফট আটকে যাচ্ছে। এতে পরিবারের সদস্যদের মনে এক ধরনের ভীতির সঞ্চার হয়েছে। কিন্তু এখন যে মানের লিফট আমদানির কথা শোনা যাচ্ছে এগুলো প্রতিস্থাপন করা হলে তো জীবনটাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। শোনা যাচ্ছে ভবনগুলোতে স্থাপনের জন্য অখ্যাত কোম্পানির নিকট থেকে অতি নিম্নমানের লিফট নিয়ে আসছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এমপিদের বাসস্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার যেখানে আন্তরিক হয়ে কাজ করছে সেখানে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম নিম্নমানের লিফট এনে সবার জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করার দুঃসাহস দেখাচ্ছেন কি করে? এটি কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না জানিয়ে ক্ষুব্ধ এমপিরা বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর শরণাপন্ন হবেন বলেও জানান।
সংসদ কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এমপিদের আবাসস্থলের লিফটগুলোর করুণ অবস্থা নিয়ে একাধিক সদস্য কমিটির একাধিক বৈঠকে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। লিফটগুলোকে নরকের দরজা বলে অভিহিত করে তারা বলেন, সুউচ্চ ভবনে বসবাসকারীদের জন্য লিফট অতি জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। মাসের পর মাস এগুলো সমস্যা নিয়ে চলতে পারে না। যান্ত্রিক গোলযোগে হঠাৎ হঠাৎ সমস্যা হতেই পারে। কিন্তু এমপি হোস্টেলের লিফটগুলোতে প্রতিয়িতই বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। লিফটে উঠলেই আটকে থাকতে হচ্ছে দীর্ঘ সময়। এটি তো চলতে পারে না। গণপূর্ত বিভাগের সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতা থাকা উচিত।
সম্প্রতি ভবনগুলো সরেজমিন পরিদর্শনে যান কমিটির সভাপতি চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজের নেতৃত্বে অন্য সদস্যরা। সে সময় নিজেরাই লিফটে আটকা পড়েন। পরিদর্শনকারী দলের ৭ সদস্য ৩ নং ভবনের লিফটে করে ওপরে উঠতে গেলে ৮ম তলায় গিয়ে লিফট আটকে পড়ে। প্রায় ১০ মিনিট আটকে থাকার পর লিফটম্যানের সহায়তায় তারা বের হয়ে আসেন। এরপরই সংসদ কমিটি ভবনগুলোতে নতুন লিফট প্রতিস্থাপনে পদক্ষেপ নিতে গণপূর্ত অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, সংসদ কমিটির নির্দেশনার পর গণপূর্ত মন্ত্রণালয় লিফট ক্রয় ও প্রতিস্থাপনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত অধিদপ্তরকে এ বিষয়ে ত্বরিত পদক্ষেপ নিতে বলে। প্রতিষ্ঠানটিও দ্রæত প্ল্যানিং ও ডিজাইন বিভাগের ছক অনুযায়ী লিফট ক্রয়ের উদ্যোগ নেয় এবং নিয়মানুযায়ী টেন্ডার আহ্বান করে। এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। কিন্তু বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাতের লোভে অস্বচ্ছ টেন্ডার প্রক্রিয়ায় নি¤œমানের অখ্যাত কোম্পানির লিফট আনতে নিজস্ব ঠিকাদারদের সাথে আঁতাত করেন দায়িত্বশীলরা।
জাতীয় সংসদের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর ৬টি ভবনের জন্য ১২টি লিফটের টেন্ডার করা হয়েছে। পৃথকভাবে করা এসব টেন্ডারের সব ক’টি কাজ ভাগাভাগি করে নিয়েছে দু’টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ৬টি লিফটের কাজ পেয়েছে ক্রিয়েটিভ ইঞ্জিনিয়ার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান এবং বাকি ৬টির কাজ পেয়েছে ডেফোডিলস লিমিটেড। অভিযোগ উঠেছে, ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করা হলেও গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের কঠোর নিয়ন্ত্রণের ফলে অন্য কোনো কোম্পানি টেন্ডারে অংশ নিতে পারেনি। সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন- শতাধিক লিফট কোম্পানির এজেন্ট আছে বাংলাদেশে। তাহলে ওপেন টেন্ডারে একটি মাত্র কোম্পানি অংশগ্রহণ করে কিভাবে? তারা বলছেন, ওপেন টেন্ডারে অনেক ঠিকাদার প্রতিযোগিতা করবে এটিই স্বাভাবিক। তাদের অনেকে ১০ শতাংশ কম দরে দরপত্র জমা দিলেও তাদের আমলে না নিয়ে সিন্ডিকেট করে ১০ শতাংশ ঊর্ধ্ব দরে একক টেন্ডার দিয়ে ২০ শতাংশ টাকা প্রধান প্রকৌশলী আত্মসাৎ করেন।
লিফটের টেন্ডারে কোনো ব্র্যান্ডের নাম উল্লেখ করার নিয়ম না থাকলেও নিয়ম ভেঙে দরপত্রে ৪টি ব্র্যান্ডের লিফট চাওয়া হয়। সেখানে তিনটি লিফট কোম্পানি টপ রেটিংয়ের। আর অন্যটি কোনো ক্যাটাগরির মধ্যেই পড়ে না, একেবারেই অখ্যাত। এই কোম্পানির মাধ্যমেই লিফটগুলো আমদানির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রাণ আরএফএল কোম্পানি প্রধান প্রকৌশলীর নিকট লিখিত অভিযোগ দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে ন্যাম ভবনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী (ই/এম) শেখর চন্দ্র বিশ্বাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তার দপ্তরে যাওয়ার নিমন্ত্রণ করেন। এদিকে সংসদ ভবন ও ন্যাম ভবনগুলোর দায়িত্বরত গণপূর্ত ই/এম সার্কেল-৩ এর তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হাসেমের সাথে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে উত্তরা প্রকল্পের ১২০টি লিফটের টেন্ডার কেবলমাত্র ডেফোডিল লিমিটেডকে দেয়ার জন্য প্রধান প্রকৌশলীর নির্দেশনা থাকায় অন্য কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেন্ডার জমা দিতে পারেনি বলেও অভিযোগ উঠেছে। তবে সবার অলক্ষে রওশন এন্টারপ্রাইজ নামের একটি কোম্পানি টেন্ডার জমা দিয়ে কাজটির সর্বনি¤œ দরদাতা হয়ে যায়। এতেই বিপত্তি ঘটে। মাথা খারাপ হয়ে যায় ডেফোডিল কর্তৃপক্ষের। তারা ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে জমা দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা চালায় রওশন এন্টারপ্রাইজ নামে কোনো প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে নেই। কিন্তু পরবর্তীতে দাপ্তরিক খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, রওশন এন্টারপ্রাইজ বাংলাদেশে একটি লিফট কোম্পানির বৈধ এজেন্ট। এভাবে সংসদের আমব্রেলা প্রকল্পের কাজেও অস্বচ্ছতা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অধিকাংশ কাজ দরপত্র মূল্যের অধিক দরে প্রধান প্রকৌশলীর পছন্দের ঠিকাদাররা পাচ্ছেন।
এ বিষয়ে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।