ডিসেম্বর : আমাদের গৌরব ও গর্বের মাস
ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের মাস। আমাদের গৌরবের এবং গর্বের মাস। একটি গর্বিত জাতি হিসেবে সগর্বে মাথা
ডিসেম্বর আসলে বিজয়ের সুবাতাস প্রবাহিত হতে থাকে। ১৬ ডিসেম্বর আমাদের মহান বিজয় দিবস। এইদিনে ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিবাহিনীর নিকট পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আমাদের বিজয় নিশ্চিত হয়। তাই এই দিনটির মাধ্যমে আমাদের বিজয় নিশ্চিত হয়। তাই এই দিনটিকে আমরা বিজয় দিবস হিসেবে প্রতিবছর পালন করে আসছি। পুরো জাতি এই দিনটি অন্যন্য এক মাত্রায় পালন করে আসছে। দেশে-বিদেশে সকল স্থানে বাঙালি তাদের মহান বিজয় দিবসকে মনের মাধুরী মিশিয়ে উৎযাপন করে আসছে। সারাবিশ্বকে জানিয়ে দেয় আমরা এক অন্যন্য জাতি। যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। পাকিস্তান সেনাবাহিনী যুদ্ধের মাধ্যমে পরাজয় বরণ করে। আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশ লাভ করতে সক্ষম হয়েছি। তাই বিজয়টা আমাদের নিকট অনেক বড় অর্জন।
কিন্তু কেন আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম। কি অর্জন আমরা করতে চেয়েছি যুদ্ধের মাধ্যমে। আজ কতটুকু আমাদের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। প্রকৃতি প্রশ্ন আমাদের মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিজয় দিবস আসলে আমাদের হৃদয় মনে স্বাধীনতার বিজয়ের স্বার্থকতার বিবেচনা ভেসে উঠে। আমরা মুক্তি চেয়েছিলাম। আমরা স্বাধীনতা চেয়ে যুদ্ধ করেছি। আমরা আমাদের বাক স্বাধীনতা চেয়েই অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য আমরা যুদ্ধ করেছি। তাই আজ বিজয়ের দিবস আমাদের প্রশ্ন আমরা কি বাক স্বাধীনতা পেয়েছি। এই নৈতিক মুক্তি কি আমাদের জীবনে এসেছে? আমাদের অর্জন অনেক। অনেক অনেক অর্জন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সফলতার উচ্চ শিখরে নিয়ে পৌঁছে দিয়েছে। বিজয় দিবসের ৪৬তম বছর আমরা অতিক্রম করছি। দীর্ঘ জীবনে আমাদের হিসাব-নিকাশ অনেক কষতে হবে। চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে হবে।
অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা : বিগত এক বছর ধরে দেশে ব্যাংকিং খাত বেশ ঝুঁকির মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। সরকারি ব্যাংকসমূহ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা উদাও। বিচারহীনতার কারণে ব্যাংকিং খাতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসেনি। হাজার হাজার কোটি টাকা আজ বেহাত। সরকার বিচার করার চেষ্টা করছেন। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা আন্তর্জাতিক চক্রের মাধ্যমে লুণ্ঠিত হয়েছে। কিছু অর্থ উদ্ধার হয়েছে। অবশিষ্টের কোন খবর নাই।
বেসরকারি ব্যাংকেও ঢালমাটাল অবস্থা। ইতিমধ্যে একই পরিবার একাধিক ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ নিয়েছে। তাই আগামীতে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক পালন না করলে বেসরকারি ব্যাংকসমূহে দুর্যোগ নেমে আসার সম্ভাবনা দেখা দেবে। দেশে আইনের শাসন কায়েম করতে হবে। ব্যাংককে ব্যাংকের নিয়মে চলার সুযোগ দিতে হবে। নতুবা অর্থনৈতিক খাত বড় বিপদের সম্মুখিন হবে।
বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ : বিগত বছরগুলোতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ আশানুরূপ হয়নি। সরকারি বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি অর্জনের মূল চালিকা শক্তি। সরকার বেশ কিছু বড় বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। তাই বিনিয়োগ বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ তেমন একটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত ব্যতীত অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ দেখা যাচ্ছে কম। তাই কর্মসংস্থান তেমন বৃদ্ধি পাই নাই। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কম হওয়ার কারণে কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি হয় নাই। আগামী দিনে বড় চ্যালেঞ্জ বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা। বিজয় দিবসে আমার ভাবনার মনে শিল্প-বাণিজ্যে বিনিয়োগ বৃদ্ধি না হওয়ার ভাবনায় বড় করে উঠে আসে।
কাঠামোগত সমস্যা : আজকের বিজয় দিবসে আমাদের মনে পড়ে ১৯৭১ সালে যে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য আমাদের সংগ্রাম যুদ্ধ, শহীদান প্রভৃতি। আমরা দারিদ্র্যতা থেকে মুক্তি চেয়েছিলাম। কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তি কি আমাদের এসেছে? না, পুরোপুরি অর্থনৈতিক মুক্তি আমাদের হয়নি। আজও ৪০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছে। এখন ৪০ শতাংশ মানুষ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। বিজয় দিবসে আমাদের মুক্তির জন্য আরও বেশী সংগ্রাম করতে হবে। আন্দোলন করতে হবে।
বিগত ১০ বছর ধরে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতি অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ার কারণে আশানুরূপ হয়নি।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি খাতের অপর্যাপ্ততার জন্য বেসরকারি খাতে শিল্প বিকাশ লাভ করতে পারেনি। আমাদের বন্দর, রাস্তায় রেল ও বিমান বন্দরের অপর্যাপ্ততা শিল্প বিনিয়োগ আশানুরুপ হয়নি। দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা যা রয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে অনেক কম। অন্যদিকে গ্যাসের গ্যাস উৎপাদনের ক্ষেত্রে একই অবস্থা। এই বিশাল ঘাটতি পূরণ ছাড়া শিল্প খাতের বিকাশ ঘটানো সম্ভব নয়। বিজয় দিবসে আমাদের প্রয়োজন এই চাহিদা পূরণ করা। তবেই মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য আমাদের পূরণ করা সহজ হবে। শিল্প বিকাশ ঘটবে। বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। বিনিয়োগ বৃদ্ধির পর কর্মসংস্থান বাড়বে। তবেই দেশ থেকে বেকারত্ব দূর হবে।
শিক্ষা ব্যবস্থায় মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধ : শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু এই অধিকার থেকে স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও আমাদের ৪০ শতাংশ মানুষ বঞ্চিত। উপকূলীয় দ্বীপ, চর পাহাড়ী এলাকার মানুষ সবচেয়ে বেশ অবহেলিত। কিন্তু আমাদের শিক্ষা অনেক উন্নতি হয়েছে। দেশে প্রায় ১০০ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রায় ৪ লক্ষের অধিক ছাত্র-ছাত্রী এই সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যা প্রায় ৩৬টি। তাতেও কয়েক লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়ন করছে। কিন্তু আমাদের মানবিক শিক্ষায় নৈতিক শিক্ষা থেকে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী বঞ্চিত। দিন দিন নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সততা যেন লোপ পেয়ে যাচ্ছে। এর কারণ কি?
আমাদের দেশে মাদ্রাসা শিক্ষা নামে আলাদা একটি শিক্ষার খাত রয়েছে। লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী এই সকল মাদ্রাসায় শিক্ষা দিচ্ছে। তারা কিন্তু আমাদের মূল স্রোত থেকে অনেক দূরে। এই সকল মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী বিসিএস দিয়ে দেশ পরিচালনায় আসার সুযোগ রাখা হয়নি। সমাজে তারা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসাবে বেড়ে উঠছে। এইটি তো আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যের মধ্যে ছিল না। সকলের সমান অধিকার নিশ্চিত করা ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধে।
অন্যদিকে প্রতিটি পরীক্ষায় নকল ও পরীক্ষা প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যতই ডিজিটাল ব্যবস্থার উন্নতি হচ্ছে ততোই সকল প্রশ্নপত্র ফাঁস ত্বরান্বিত হচ্ছে। এই ব্যবস্থার পরিবর্তন মানতে হবে। শিক্ষককে সকলের জন্য উপযোগী করতে হবে। শিক্ষাকে নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও ধর্মীয় অনুশাসন মানার উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। তবেই আমাদের বিজয় দিবসের উদ্দেশ্য পূরণ হবে।
মাদক ও নেশা থেকে মুক্তি : ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষ মাদক বলতে কিছুই চিনতো না। নেশা বলতে অনেক শিক্ষিত মানুষ পর্যন্ত কল্পনা করতে পারত না। মাদক ও নেশার জন্য আমরা আমাদের দেশকে স্বাধীন করি নাই। যুদ্ধ করি নাই। মাদকমুক্ত, নেশামুক্ত সমাজ গড়ার জন্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। কিন্তু আমাদের শহর, গ্রাম, চর, পাহাড়ী সকল অঞ্চলের মানুষ মাদককে আক্রান্ত। মাদক ও নেশা জাতীয় দ্রব্য ব্যবসায় আমাদের বিরাট একটি প্রভাবশালী মহল জড়িত হয়ে পড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি অংশ আজ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছে।
বর্তমানে আমাদের সরকার মাদক নিয়ে তেমন একটা চিন্তা করছেন বলে মনে হয় না। নেশা জাতীয় দ্রব্য নিয়ে যে দেশে বড় আকারে ব্যবসা চলেছে তা নিয়ে সরকারের বিজ্ঞ মহল তেমন একটা কর্মকাÐ পরিচালনা করতে দেখা যায় না। মাঝে মাঝে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাদকমুক্ত, নেশা মুক্ত সময় গড়ার আহŸান জানাচ্ছেন। কিন্তু প্রশাসনে তেমন একটা তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর রয়েছে। কিছু রুটিনমাফিক কাজ করছে তারা। কিন্তু এই অধিদপ্তর দিয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ, মাদক সেবন বন্ধ করা কোন কিছুই হচ্ছে না। দেশে একটি পত্রিকা মাত্র মাদকের বিরুদ্ধে বেশ কাজ করছে। কিন্তু অন্যান্য পত্রিকা, টিভি মিডিয়া মাদক নিয়ে তেমন কোন কর্মসূচি দেখছি না। সমাজে সকলকে মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। আইনের কড়া শাসনের মাধ্যমে মাদক মুক্ত সমাজ গড়ার জন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
দুর্নীতি আমাদের সর্বস্তরে : দুর্নীতি, অন্যায়, অত্যাচার, শোষণের বিরুদ্ধে ছিল আমাদের যুদ্ধ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। আমাদের সংগ্রাম ছিল অর্থনৈতিক শোষণ থেকে বাঁচার জন্য। দুর্নীতি, অন্যায় অবিচারের মাধ্যমে পাকিস্তানীরা বাংলাকে শোষণ করতে থাকায় আমাদের সংগ্রাম।
কিন্তু সেই দুর্নীতি থেকে কি আমরা মুক্তি লাভ করতে পেরেছি। আজ দুর্নীতি আমাদের সমাজের সকল স্তরে স্তরে স্থায়ী শাসন গেড়ে বসেছে। দুর্নীতির মাধ্যমে আজ সমাজের গুঁটিকয়েক ব্যক্তি দেশের অধিকাংশ সম্পদের মালিক। দুর্নীতি যেন তাদের অতি আদরের। দুর্নীতি করলে যেন তিনি মহৎ ব্যক্তি, শক্তিশালী ব্যক্তি। কিন্তু এক সময় আমাদের সমাজে দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর ঘৃণিত ব্যক্তি ছিল। ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে সমাজে ১৯৭১ সালের পূর্বে মানুষ ছেলে মেয়ে বিবাহ করাতে পর্যন্ত রাজি হতো না। আর এখন দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি হয়ে পড়েছেন। কিন্তু সমাজের এই অবস্থার জন্য আমরা দেশ স্বাধীন করেনি। মুক্তিযুদ্ধ ছিল ঘুষ, দুর্নীতি, অন্যায়, অনিয়মের বিরুদ্ধে। আজ বিজয় দিবসে আমাদের নতুন করে শপথ করতে হবে। দুর্নীতিকে ‘না’ বলার অভ্যাস সকল স্তর থেকে অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। আমাদের সকল উন্নয়ন দুর্নীতির জন্য থেমে পড়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল অর্জন আজ দুর্নীতি নামক অপকর্ম কর্তৃক ভুলুন্ঠিত ও অবহেলিত।
ঘুম, খুন ও আইনের শাসন : গুম শব্দটির সাথে আমরা কিছুদিন ধরে বেশ পরিচিত। ইদানিং গুম নিয়মিত হয়ে পড়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন আমাদের দেশের চেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গুমের সংখ্যা অনেক বেশী। গুম নিয়ে আমরা বেশ পিছিয়ে রয়েছি। ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, সমাজকর্মী, কবি সাহিত্যিক, কূটনীতিক সকল মহল থেকে নিয়মিত গুম হচ্ছে। ছাত্র, শিক্ষক গুম হওয়া প্রায় নিয়মিত ব্যাপার। গুম হওয়া কিছু কিছু ব্যক্তি ফিরে আসছে। কিছু কিছু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক আটক দেখা যাচ্ছে। কিছু কিছু গুমকৃত ব্যক্তির নাম পাওয়া যাচ্ছে। আর অনেক ব্যক্তির কোন খোঁজ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিতে পারছে না।
বিজয় দিবসে আজকের এই চিত্র আমাদের অতীত ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর কথা মনে করে দেয়। প্রথমে কিন্তু গুম ছিল না। তখন ছিল মুক্তিবাহিনী কর্তৃক পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর ওপর নানা প্রকারে হামলা। যুদ্ধ তখন মুক্তিকামী মানুষের মধ্যে।
আজ আমাদের দেশে থাকার কথা গণতান্ত্রিক সুষ্ঠু সুন্দর একটি স্বাধীন দেশের চিত্র। কিন্তু তা স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও আমরা পাই নাই। আমরা এখনও মুক্ত জীবনে গণতান্ত্রিক পরিবেশে জীবনটা অতিক্রম করতে পারছি না। খুন, গুম এখন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে পড়েছে। এই অবস্থার পরিবর্তন আমরা চাই। আমরা স্বাধীনভাবেই বেঁচে থাকতে চাই। যার জন্য আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ। এই জন্য প্রয়োজন আইনের সুশাসন। সকলের জন্য আইন সমান এ অধিকার আমাদের কাম্য।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন : ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন দেশে-বিদেশে বেশ সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট উক্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নাই। ১৫৪ জন সংসদ সদস্য বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। ভোটের কোন প্রয়োজন হয় নাই। তাই সেই নির্বাচনটি জাতীয় জীবনে তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি।
দেশের রাজনীতি আজ দুইভাগে বিভক্ত। ১৯৭১ সালে আমাদের রাজনীতি ছিল ঐক্যের রাজনীতি সকলে একমুখি রাজনীতিতে আমরা ছিলাম। জাতীয় জীবনের ৪৬ বছর পর আমাদের রাজনীতি হওয়া উচিত ছিল স্বচ্ছ গ্রহণযোগ্য। কিন্তু রাজনীতিকে আমরা আমাদের মর্যাদার স্থানে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি নাই।
আজকের বিজয় দিবসে আমাদের সবচেয়ে বড় ভাবনা হচ্ছে কিভাবে দেশ একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশে এগিয়ে যাবে। দেশে উন্নয়ন চলেছে। সরকার বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ গ্রহণ করছেন। বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নও চলছে। যোগাযোগ, জ্বালানি ও আইটি খাতে আমাদের উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। কিন্তু গণতান্ত্রিক চর্চার উন্নয়নের অভাবে সরকারের বড় বড় সকল উন্নয়ন ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। এই অবস্থা সরকার দলের জন্য খুবই খারাপ সংবাদ। সরকারকে তার অর্জনসমূহ ধরে রাখতে হলে গণতান্ত্রিক পরিবেশের উন্নয়ন সাধন করতে হবে। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা, বাক স্বাধীনতাসহ সকল প্রকার হুমকির বিরুদ্ধে সকলকে নিরাপদ থাকার পরিবেশ নিশ্চিত করা আজকের বিজয় দিবসের দাবি।
লেখক: সাবেক সহ-সভাপতি এফবিসিসিআই, বিটিএমএ, বিজেএমইএ, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি তাং-১২.১২.২০১৭
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।