Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় জাতি একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করেছে। দিবসটি উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং রায়েরবাজার বদ্ধভূমি এলাকায় জনতার ঢল ছিল লক্ষণীয়।
স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতি যেন মেধায়-মননে মাথা তুলে যেন দাঁড়াতে না পারে, সেজন্য তারা বুদ্ধিজীবীদের হত্যায় মেতে উঠে। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শহীদদের স্মরণ করতে আসা সাধারণ মানুষ স্বপ্ন দেখছেন একটি আধুনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। তারা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের দেশে ফিরিয়ে এনে দ্রুত বিচারের রায় কার্যকর করার দাবি জানিয়েছে।
ফুল দিতে আসা অনেকে বলেন, বাংলাদেশ যে পথে হাটছে সময়ের ব্যবধানে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। দীর্ঘদিন রাজনৈতিক রাষ্ট্রীয় বাধা ছিল। এখন সে বাধা দূর হয়েছে। দেশের প্রতি ত্যাগের মাধ্যমেই বড় হওয়া যায়, এটাই বুদ্ধিজীবীরা শিখিয়ে গেছেন।
বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে এসে শহীদ পরিবারের সন্তানরা বলেন, এবার আর আক্ষেপ নয়, পেছনে তাকানো নয়, এখন সময় এসেছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার।
দিবসটি উপলক্ষে গতকাল সকালে কালো পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করণ, শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জলন, শোক র‌্যালি, শ্রদ্ধা নিবেদন, চিত্রাঙ্কন, সাধারণ জ্ঞান ও হাতের লেখা প্রতিযোগিতা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
১৯৭১ সালের এই দিনে চুড়ান্ত বিজয়ের মাত্র দুদিন আগে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা পরিকল্পিতভাবে দেশের কৃতী সন্তানদের হত্যা করে। তারপর থেকে দিনটি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাতে সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। ভোরের সূর্য ওঠার আগেই হাজারো মানুষ ভিড় করেন মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের সামনে। সবার হাতে ছিল ফুলের তোড়া ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে লেখা কালো ব্যানার।
শ্রদ্ধা নিবেদনের সময়ে সবার দাবী ছিল বুদ্ধিজীবী হত্যাকারি দ্বন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করা।
সকাল ৭ টা ৫ মিনিটে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে শহীদদের স্মরণে স্মৃতিসৌধের বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। শহীদদের সম্মানে সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করেন। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রেসিডেন্ট যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার পক্ষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া শহীদ বেদীতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।
এছাড়াও একে একে শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা জানায় কেন্দ্রীয় ১৪ দল, শহীদ পরিবারের সন্তান ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম, জাতীয় পার্টি, রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলসহ (জাসদ) বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।
এছাড়াও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগ, তাঁতীলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, যুব মহিলা লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, জাতীয় জাদুঘর, শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, জাতীয় পার্টি (জাফর), জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), যুক্তফ্রন্টসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানায়।
এদিকে সকাল ৮ টা ৫০ মিনিটে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রায়ের বাজারের বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে সকালে মানুষের ঢল নামে। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের প্রাক্কালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর এদেশীয় দালাল রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামস সদস্যরা যেখানে জাতির মেধাবী সন্তানদের হত্যা করে ফেলে রেখেছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে জনতার স্রোত। সব স্রোত যেন এক মোহনায় মিশে একাকার হয়ে যায়।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে সকাল সাড়ে ১০ টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ প্রান্তে কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এ সময়ে মুক্তিযুদ্ধে নিহত সকল শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধা
সকাল ৭ টা ৫ মিনিটে প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে শহীদদের স্মরণে স্মৃতিসৌধের বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রেসিডেন্ট শহীদ বেদীর সামনে কিছুক্ষণ নিরবে দাড়িয়ে থাকেন। এ সময় বিউগলে করুন সুর বাজানো হয়। শহীদদের সম্মানে সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে।
শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রেসিডেন্ট যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের সংঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার পক্ষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কদের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষ থেকে শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, এ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপুমণি, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, একেএম এনামুল হক শামীম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুস সবুর, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়–য়াসহ কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
স্বাধীনতা লাভের আগ মুহুর্তে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরের এ দিনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর আলবদর, আল শামস ও রাজাকাররা জাতিকে মেধাশুন্য করতে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বরেণ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের রাতের আঁধারে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।
এ নির্মম হত্যাকান্ডের মাত্র দু’দিন পর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পন করে এবং পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

 



 

Show all comments
  • লিয়াকত আলী ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:৫৩ এএম says : 0
    শহীদদের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শহীদ বুদ্ধিজীবীদের
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ