পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন স্বীকৃতির প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। ফিলিস্তিনিদের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে মার্কিন দূতাবাসগুলোর সামনে বিক্ষোভ জারি রেখেছেন বিভিন্ন জাতি-ধর্ম-বর্ণের মানুষ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলছে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেও। চলতি মাসের শেষের দিকে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তাব নাকচ করেছে মিসরের কপটিক চার্চ। কোনও কোনও দেশে বিক্ষোভে সহিংসতা হওয়ারও খবর মিলেছে।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদ পর্যবেক্ষণকারী ব্রিটিশ ওয়েবসাইট মিডল ইস্ট মনিটর জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক ও ওয়াশিংটনের মানুষ জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতির বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসেন। নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন শত শত মানুষ। অনেকে আবার ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত জায়নবাদবিরোধী ইহুদিরাও ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
মিসিসিপিতে সিভিল রাইটস মিউজিয়ামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতির কথা শুনে অনেকে তা বর্জন করার ঘোষণা দেন। তারা ট্রাম্পকে বর্ণবাদী আখ্যা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার সংগঠন দ্য ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট ফর কালারড পিপল (এনএএসিপি) ট্রাম্পকে ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ না করার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিনিদের জন্য কিছু করেননি।
ব্রিটেনে হাজার হাজার মানুষ ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। লন্ডন, ম্যানচেস্টার ও বার্মিংহামসহ দেশটির প্রায় ১০টি শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। লন্ডনে মার্কিন দূতাবাসের সামনে জড়ো হয়ে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়।
ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় প্রার্থনার আয়োজন করে দক্ষিণ আফ্রিকার বেশ কয়েকটি গির্জা। এ উদ্যোগ গ্রহণকারী গির্জার নেতাদের একজন রেভেরেন্ড নোতুথুকু নোকোসি। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার খ্রিস্ট ধর্মীয় গুরু হিসেবে আমরা আশা করছি ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের যে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে তার অবশ্যই নিরসন হতে হবে। আমরা ফিলিস্তিনি খ্রিস্টানদের দুর্ভোগের কথা বললেও আমরা জানি একজন ফিলিস্তিনি যে ধর্মেরই হোক না কেন তাকে ইসরাইলের দমন-পীড়নের শিকার হতে হয়।
জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মিসরের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। এসব বিক্ষোভের একটি অনুষ্ঠিত হয়েছে কায়রোতে জার্নালিস্ট সিন্ডিকেটের সামনে। সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হামদীন সাবাহি, মানবাধিকারকর্মী তারিক আল-আওয়াধি এবং কেফায়া আন্দোলনের প্রতিনিধিরাসহ উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা এ বিক্ষোভে অংশ নেন। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির সরব ভূমিকা না থাকায় নিন্দা জানিয়েছেন তারা। ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বিক্ষোবকারীরা বলেন, ‘দুঃখিত ফিলিস্তিন, আমরা এক জায়নবাদী সরকারের শাসনাধীন আছি।’
জেরুজালেম ইস্যুতে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে গতকাল ইন্দোনেশিয়ায় ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা দেশটির রাজধানী জাকার্তায় মার্কিন দূতাবাসের সামনে গিয়ে ট্রাম্পের এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান। ইন্দোনশিয়ার ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল পিকেএস এর আয়োজন করে। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।
‘বিক্ষোভকারীরা হৃদয়ে জেরুজালেম’, ‘ফিলিস্তিনের জন্য দোয়া’, ‘সব ফিলিস্তিনির জন্য জেরুজালেম মুক্ত কর’ ইত্যাদি লেখা ব্যানার বহন করেন।
বুধবার ট্রাম্পের ওই ঘোষণার পর অন্য মুসলিম দেশগুলোর মতো ইন্দোনেশিয়ার নেতারাও এর প্রতিবাদ জানান। শনিবার দেশটির প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো বিষয়টি নিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানের সঙ্গে কথা বলেন। জেরুজালেম ইস্যুতে তুরস্কে অনুষ্ঠিতব্য ওআইসি’র জরুরি সম্মেলনেও দেশটি ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ১৯৪৫ সালে ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা লাভের পর দেশটিকে স্বীকৃতি দেওয়া রাষ্ট্রগুলোর তালিকায় প্রথম সারিতে ছিল ফিলিস্তিন।
এদিকে ট্রাম্পের ওই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ছে পুরো মুসলিম বিশ্বে। প্রতিবাদ বিক্ষোভের মুখে তিউনিসিয়ায় মার্কিন দূতাবাস বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আমেরিকার সঙ্গে মুসলিম দেশগুলোর সম্পর্ক ছিন্নের প্রস্তাব দিয়েছে আফগানিস্তানের পার্লামেন্ট। ট্রাম্পের ওই ঘোষণার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে রাশিয়া, ফ্রান্স, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, লেবাননসহ বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তুরস্কের প্রেসডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান। শুধু প্রতিবাদে সীমাবদ্ধ না থেকে জেরুজালেম ইস্যুতে মুসলিম দেশগুলোকে গঠনমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কাতার।
জেরুজালেম ইসরাইলের কবরস্থানে পরিণত হবে বলে মন্তব্য করেছে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী-আইআরজিসি। মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদিদের এই তীর্থস্থান নিয়ে ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্র ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মাদ আলি জাফারি। তেহরানে আইআরজিসির এক অনুষ্ঠানে জেনারেল জাফারি দাবি করেন, পবিত্র আল-আকসা মসজিদ ধ্বংস করার লক্ষ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বোকামি করেছে। আল্লাহর রহমতে জেরুজালেম হবে ইসরাইলিদের কবরস্থান’। এসময় তিনি ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘নইলে দেরি হয়ে যাবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে লেবানন। এ ঘটনাকে ‘বিপর্যয়কর’ উল্লেখ করে লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেবরান বাসিল প্রশ্ন রাখেন, ‘এরপরও আরবদেশগুলো ঘুম থেকে জাগবে কিনা। আরব লিগের এক জরুরি বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। শনিবার এ নিয়ে জরুরি বৈঠক ডাকে আরব লিগ। কায়রোয় অনুষ্ঠিত বৈঠকে জেবরান বাসিল বলেন, ‘ট্রাম্পের ঘোষণার বিরুদ্ধে আগাম ব্যবস্থা নিতে হবে...কূটনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে এ ব্যবস্থা শুরু করতে হবে, এরপর রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং তারপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক শেষে জোটের মহাসচিব একটি বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে আবুল গায়স বলেন, ‘ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইনের বিরোধী এবং এটি ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।’
তার মতে, মার্কিন নীতিতে পরিবর্তনের কারণে ‘ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর আরব বিশ্বের আস্থা ক্ষুণœ হতে পারে’। ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিনে ইসরাইলি দখলদারিত্বকে বৈধতা দেওয়ার শামিল বলেও উল্লেখ করেন আরব লিগ মহাসচিব।
এর আগে গত শুক্রবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকেও তোপের মুখে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি দেশটির মিত্র হিসেবে পরিচিত যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সও ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে। কার্যত পুরো বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে নিরাপত্তা পরিষদের অর্ধেকের বেশি সদস্য দেশের আহ্বানে এই জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিষয়টির মীমাংসায় ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে আলোচনার তাগিদ দেয় যুক্তরাজ্য। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো ক্ষমতা থাকায় এ নিয়ে ভোটাভুটির জন্য কোনও প্রস্তাব তোলা হয়নি। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, পার্স টুডে, এএফপি ও মিডল ইস্ট মনিটর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।