Inqilab Logo

সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বাংলাদেশ আইনের শাসন নিশ্চিত করতে পারেনি আদিলুর রহমান খান

ডি ডব্লিউ : | প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশ আইনের শাসন নিশ্চিত করতে পারেনি। জার্মান বার্তা সংস্থা ডি ডব্লিউর সাথে এক সাক্ষাতকারে বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মী আদিলুর রহমান খান এ কথা বলেন।
২০১৭ সালের ফ্রাংকো-জার্মান মানবাধিকার পুরস্কার প্রাপ্ত আদিলুর রহমান খান তার দেশে মানবাধিকার আন্দোলনকারীদের মারাত্মক পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কয়েক দশক ধরে গণতন্ত্র ও সুশীল সমাজের মূল্যবোধ গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। ১৯৯৪ সাল তেকে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সুশীল সমাজের মূল্যবোধ উন্নয়নে দেশব্যাপী সদস্যদের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে।
গ্রæপটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা থেকে নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, বিচার বহির্ভূত হত্যা ও বলপূর্বক গুমসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করছে। আদলুর রহমান খান ১৯৯৪ সাল থেকে অধিকারের সম্পাদক এবং বিশে^র অন্যতম নেতৃস্থানীয় মানবাধিকার আন্দোলনকারী।
সম্প্রতি জনাব খানকে মানবাধিকার ও আইনের শাসন বিষয়ক ২০১৭ সালের ফ্রাংকো -জার্মান পুরস্কার দেয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। বিশে^র বিভিন্ন স্থানের মানবাধিকার কর্মীদের ফ্রান্স ও জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ পুরস্কার দিয়ে থাকে। ডি ডবিøউডির সাথে আদিলুর রহমান খানের প্রশ্নোত্তর ছিল নি¤œরূপঃ
ডি ডবিøউঃ বাংলাদেশে গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যা বেড়েই চলেছ, বিশেষ করে বøগার ও মানবাধিকার কর্মীদের ক্ষেত্রে। সরকার কেন তা থামাতে পারছে না?
আদিলুর রহমান খানঃ কোনো সরকার যখন তার গণতান্ত্রিক চরিত্র হারায় এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করতে পারে না এবং যখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা অপরাধ করা সত্তে¡ও দায়মুক্তির সুবিধা ভোগ করে সেক্ষেত্রে ঐ দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির নিশ্চিত অবনতি ঘটে।
বাংলাদেশে আইনের শাসনের অভাব রয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বহু ঘটনার কথা জানিয়েছে যেগুলোতে লোকজন সরকারী সংস্থাগুলো দ্বারা হামলা, ক্ষতিগ্রস্ত ও নির্যাতিত হয়েছে। আপনি যদি আইনের শাসন নিশ্চিত করতে না পারেন তাহলে কিভাবে নাগরিকদের অধিকার রক্ষা করবেন?
ডি ডবিøউঃ সংবাদ মাধ্যমর স্বাধীনতা ও বাক স্বাধীনতার মত অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে সুশীল সমাজ কি করছে?
আদিলুর রহমান খানঃ বাংলাদেশে প্রচন্ড সরকারী চাপের কারনে সুশীল সমাজ কাজ করতে পারে নাা। যারা প্রকৃতই লোকজনের অধিকার রক্ষায় কাজ করছেন তারা প্রচন্ড চাপের মধ্যে থাকেন। এমনকি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও হয়রানি হওয়ার ভয় ছাড়া মত প্রকাশ করতে পারেন না। অধিকাংশ ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া সরকার সমর্থকদের দ্বারা পরিচালিত। বিরোধী মিডিয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে বিরোধীদের কথা বলার সুযোগ নেই।
ডি ডবিøউঃ আপনার সংস্তা অধিকার-এর বিরুদ্ধে সরকার বা ধর্মীয় সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে কোনো হয়রানি আছে কিনা?
আদিলুর রহমান খানঃ হ্যাঁ, এবং এই সরকারের সময়েই শুধু নয়, আমরা বিশেষ করে এর পূর্ববর্র্তী ২০০৭-৮ মেয়াদের সামরিক সমর্থিত সরকার কর্তৃক হয়রানির শিকার হয়েছি। সামরিক সরকার কর্তৃক অধিকার-এর পরিচালকরা আটক হয়েছেন এবং বর্তমান সরকারের সময়ে হয়রানি আরো বেড়েছে। অধিকার তার নিবন্ধন নবায়নের ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে , আমাদের তহবিল আটক ও ব্যাংক একাউন্ট বøক করা হয়েছে।
পাবনা জেলায় আমাদের এক কর্মীকে কর্তব্য পালনের সময় গুলি করে হত্যা করা হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে বহু কর্মী বিচারের সম্মুখীন।
ডি ডবিøউঃ বাংলাদেশে ২০ জনেরও বেশি সাংবাদিককে আইসিটি আইনে বিচার করা হয়েছে। আইসিটি আইন সম্পর্কে আপনি কি ভাবেন?
আদিলুর রহমান খানঃ এটা হচ্ছে নাগরিকদের নিপীড়নের জন্য। বাংলাদেশে এ নতুন নয়। ১৯৭৪ সালে সরকার একটি সন্ত্রাস দমন আইন বাস্তবায়ন করেছিল যা দিয়ে তারা তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন ও বিরোধীদের দমন করেছিল। বর্তমান আইসিটি আইন লোকজন সরকারের অনিয়ম সম্পর্কে কথা বললে তাদেরকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য।
ডি ডবিøউঃ ২০১৯ সালে বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একটি শানিতপূর্ন ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার বেশি সময় নেই। দেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কী পরিবর্তন ঘটবে?
আদিলুর রহমান খানঃ বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সকল দলের সমান অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দেয় না। এদেশে বিরোধী দল কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ করতে পারে না। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে সকল দল যাতে অংশগ্রহণ করদেত পারে সে জন্য সমান প্লেয়িং ফিল্ড প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। সরকারের উচিত বিরোধী দলীয় নেতাদের উপর নিপীড়ন বন্ধ করা এবং মিডিয়াকে মুক্তভাবে কাজ করতে দিতে হবে। তাছাড়া একটি অংশগ্রহণমূলক ও অর্থবহ সংসদ নির্বাচন সম্ভব নয়।
ডি ডবিøউঃ মানবাধিকার রক্ষা ও মুক্ত সংবাদ মাধ্যমের জন্য জার্মানি ও ইইউ বকীভাব ভ‚মিকা রাখতে পার বলে মনে করেন?
আদিলুর রহমান খানঃ ই ইউর মত জার্মানি ও ফ্রান্সের ম্যান্ডেটও হচ্ছে বিশ^ব্যাপী মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা। ই ইউ বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করছে। এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে যাতে বাংলাদেশের মত উদীয়মান দেশগুলো বৃহত্তর গণতন্ত্র ও মানবাধিকার লাভ করতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আদিলুর রহমান খান
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ