পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জাহেদ খোকন : প্রায় দুইযুগ পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে সাফল্য পেলো নেপাল। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতে এ যোগ্যতা অর্জন করলো তারা। গতকাল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে নেপাল ৩-০ গোলে বাহরাইনকে বিধ্বস্ত করে টুর্নামেন্টের নতুন চ্যাম্পিয়নের খেতাব পেলো। বিজয়ীদের পক্ষে ফরোয়ার্ড বিমল গাত্রি, নবযুগ শ্রেষ্ঠা ও মিডফিল্ডার বিশাল রায় একটি করে গোল করেন।
২৩ বছর আগে ১৯৯৩ সালে ঢাকাতেই সর্বশেষ শিরোপা জিতেছিলো ‘হিমালয় কন্যা’ নেপাল। ওই বছর সাফ গেমস (যা বর্তমানে এসএ গেমস নামে পরিচিত) ফুটবলের ফাইনালে ভারতকে টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে হারিয়ে স্বর্ণপদক জয় করে তারা। আন্তর্জাতিক ফুটবলে সেটিই ছিল তাদের সর্বশেষ শিরোপা। এরপর দীর্ঘ বিরতি। ১৭ বছর কোন টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলেনি নেপাল। ১৯৯৯ সালে সাফ গেমস ফুটবলের ফাইনালে উঠলেও বাংলাদেশের কাছে হেরে ওই আসরে স্বর্ণ বঞ্চিত হয়েছিল দেশটি। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ধরা দিলো শিরোপা। এখন বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের নতুন চ্যাম্পিয়ন তারা। কথা রাখলেন নেপালী কোচ বালগোপাল মহারজন। ফাইনালের আগেরদিন সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, ‘ছেলেরা মুখিয়ে আছে চ্যাম্পিয়ান হওয়ার জন্য। ২৩ বছরের শিরোপা খরা কাটাতে চায় তারা। ১৯৯৩ সালের সাফ গেমস ফুটবলের স্বর্ণজয়ী নেপাল দলের খেলোয়াড় ছিলাম আমি। এবার কোচের ভূমিকায় ঢাকায় আসলেও শিরোপা জয় করে এই শহরকে স্মরণীয় করে রাখতে চাই।’ সত্যিই ঢাকাকে স্মরণীয় করে রাখার উপলক্ষ্য খুঁজে পেলেন কোচ বালগোপাল। শীর্ষরা বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ফাইনালে অসাধারণ ফুটবল উপহার দিয়ে বাহরাইনকে হারিয়ে তার আশা পূরণ করলো। এমন অর্জনের পর মাঠে থেকেই নেপাল দলকে অভিনন্দন জানান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেমিফাইনালে মতই ফাইনালে ম্যাচের শুরু থেকে আক্রমণাত্ম ফুটবল উপহার দেয় নেপাল। শেষ চারের লড়াইয়ে যেমন মালদ্বীপ দাঁড়াতে পারেনি, ঠিক তেমনি ফাইনালেও বাহরাইন ম্যাচে ফেরার সুযোগই পায়নি। নেপালী ফরোয়ার্ডদের একের পর এক আক্রমণে প্রতিপক্ষ রক্ষণদুর্গকে অনেকটাই অসহায় মনে হয়েছে। শুরুতেই ভেঙ্গে যায় বাহরাইনের রক্ষণদুর্গ। যার ফলে ম্যাচের ৫ মিনিটেই এগিয়ে যায় নেপাল। এসময় অধিনায়ক বিরাজ মহারজনের ক্রসে হেড করেন অঞ্জন বিস্তা। বাহরাইন গোলরক্ষক মাহবুব আলদোশারী ঝাঁপিয়ে পড়ে ফিস্ট করলেও বল যায় নেপালী ফরোয়ার্ড বিমল গাত্রি মাগারের পায়ে। তিনি চমৎকার শটে গোল করে দলকে আনন্দে ভাসান (১-০)। তবে পরের মিনিটেই সমতায় ফেরার সুযোগ পায় বাহরাইন। কিন্তু নেপালের ডিফেন্ডার অদিত্য চৌধুরীর দৃঢ়তায় গোল পায়নি তারা। অবশ্য ২০ মিনিটের পর বল পজিশনে এগিয়ে যায় বাহরাইন। বেশ কয়েকটি জোড়ালো আক্রমণও শানায় তারা। ২১ মিনিটে মোহামেদ আলনারের লব ফিস্ট করেন নেপালের গোলরক্ষক বিকাশ কুঠু। ২৮ মিনিটে আরো একটি সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন আলনার। এবারো দলকে রক্ষা করেন অদিত্য। পাল্টা আক্রমণে ৩৩ মিনিটে নিশ্চিত গোলের সুযোগ পায় নেপালেরও। এসময় মাঠের বামপ্রান্তে অঞ্জন বিস্তাকে ফাউল করেন বাহরাইনের এক ডিফেন্ডার। ফ্রি কিক পায় নেপাল। তবে মিডফিল্ডার হিমেন গোরাঙ্গ বল বাইরে মেরে সুযোগটা হাতছাড়া করেন। প্রথমার্ধে আর কোন গোল হয়নি। দ্বিতীয়ার্ধে বেশকিছু সুযোগ পায় নেপাল। যা থেকে তারা আরো দু’টি গোল আদায় করে নেয়।
৫৩ মিনিটে ফরোয়ার্ড নবযুগ শ্রেষ্ঠার শট কর্ণারের বিনিময়ে রক্ষা করেন বাহরাইন গোলরক্ষক।
৫৫ মিনিটে বল নিয়ে নেপালের বক্সে ঢুকেছিলেন মিডফিল্ডার জসিম আলসায়িখ। কিন্তু প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের বাধার মুখে বল জালে পাঠানোর সুযোগ পাননি তিনি। বল দিয়েছেন সতীর্থ মিডফিল্ডার আব্দুল আজিজকে। বক্সের বাইরে থেকে করা তার জোড়ালো শট ফিস্ট করে ফিরিয়ে দেন নেপাল গোলরক্ষক কুঠু। ধারাবাহিক আক্রমণের মুখে ম্যাচের ৬২ মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ হাতছাড়া করে নেপাল। বক্সের বাম কোনা থেকে হিমান গোরাঙ্গের শট ডান পোস্ট ঘেঁষে মাঠের বাইরে চলে যায়।
৭০ মিনিটে দশজনের দলে পরিণত হয় দু’দলই। এসময় মাঠে রীতিমতো হাতাহাতি শুরু করেন বাহরাইনের আহমেদ এবং নেপালের বিক্রম লামা। বাহরাইনের আহমেদ আলতুয়ানী এবং নেপালের সুমন লামাকে লাল কার্ড দেখান ভারতীয় রেফারী ব্যানার্জী। ৮৭ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে নেপাল। এসময় প্রতিপক্ষ এক ডিফেন্ডারের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে বক্সের মধ্যে কাটব্যাক করেন অঞ্জন বিস্তা। দৌড়ে এসে দুর্দান্ত শটে বল জালে জড়ান বিশাল রায় (২-০)। ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে বাহরাইনের হারের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকেন নবযুগ। ইনজুরি সময়ে বিমলগাত্রির ক্রসে অসাধারণ এক হেডে গোল করেন তিনি (৩-০)। আর এই সময়েই নেপালের মানবাহাদুরকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন বাহরাইন অধিনায়ক আব্দুল আজিজ আল শেখ। এরই মধ্যে শেষ বাঁশি বাঁজলে আনন্দে আত্মহারা হয়ে মাঠেই উল্লাস করে নেপালী ফুটবলাররা। শেষ পর্যন্ত অসাধারণ ফুটবল খেলে ৩-০ গোলের জয় নিয়েই বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের শিরোপা নিশ্চিত করে হিমালয় কন্যা নেপাল।
ম্যাচে শেষে প্রধান অতিথি থেকে বিজয়ী ও বিজিতদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চ্যাম্পিয়ন নেপাল পুরস্কার হিসেবে পেয়েছে ৫০ হাজার মার্কিন ডলার ও রেপ্লেকা ট্রফি। রানার্সআপ বাহরাইনকে ট্রফির সাথে দেয়া হয়েছে ২৫ হাজার মার্কিন ডলার। নেপালী ফরোয়ার্ড বিমল গাত্রি ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে পান ক্রেস্ট। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় ও সর্বোচ্চ গোলদাতার (৪ গোল) পুরস্কার লাভ করেন চ্যাম্পিয়ন দলের ফরোয়ার্ড নবযুগ শ্রেষ্ঠা। তাকেও দেয়া হয় ক্রেস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।