Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রংপুর নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আসন্ন রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, রংপুর সিটি নির্বাচনে এখনও অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচনী পরিবেশ এখনও করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনী মাঠে প্রচারণায় সকল প্রার্থীর সমান সুযোগ তৈরি হয়নি। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবে ভোটাররা এখনও ভয়ভীতির মধ্যেই রয়েছেন। এমন অবস্থায় রংপুর সিটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কী না এ ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এজন্য তিনি বিএনপির পক্ষ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি ও ম্যাজিট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনেরও দাবি জানান। গতকাল (বৃহস্পতিবার) বেলা সাড়ে ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।
ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে পেছনের দরজা দিয়ে জেতানোর চেষ্টা হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে ১৯৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৩৩টিই ঝুঁকিপূর্ণ। নির্বাচন কমিশন দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বারবার আচরণ বিধি লঙ্ঘন করলেও ইসি তার বিরদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা গোটা এলাকায় ভয়ভীতি ছড়াচ্ছে বলেও প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীকে শুরু থেকে যেভাবে হয়রানী করা হয়েছে তাও নজিরবিহীন। আমরা আবারো নির্বাচন কমিশনকে বলতে চাই-ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে পেছনের দরজা দিয়ে জেতানোর কোন চেষ্টা করলে জনগণ সেটির উপযুক্ত জবাব দিবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে কমিশনের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের ‘মানসিকতা স্বাধীন না হলে কমিশনের আইনি স্বাধীনতা কোনো কাজে আসবে না’ বলেও মন্তব্য করেন রিজভী
আগামী ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সরফুদ্দীন আহমেদ ঝন্টু ও বিএনপির কাওসার জামান বাবলা ছাড়াও আরও পাঁচজন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। মেয়র পদের অন্য প্রার্থীরা হলেন, জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এটিএম গোলাম মোস্তফা বাবু, বাসদের আবদুস সালাম কুদ্দুস, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সেলিম আখতার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ।
বর্তমান দুর্নীতি দমন কমিশনকে সরকারের ‘রাবার স্ট্যাম্প’ প্রতিষ্ঠান করা হয়েছে বলে মন্তব্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, বেসিক ব্যাংকে দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারির বিষয়টি জনসম্মুখে স্পষ্ট হয়ে উঠলেও ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা জড়িত থাকায় দুদক বরাবরই সেটি এড়িয়ে গেছে। বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারী নিয়ে এখন পর্যন্ত ৫৭টি মামলা হলেও মূল হোতারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিএনপি’র পক্ষ থেকে বারবার ব্যাংক লুটপাটে জনগণের অর্থ আত্মসাতের কথা জাতির সামনে তুলে ধরলেও অত্যুগ্র ক্ষমতার প্রভাবে সরকার বরাবরই তাতে কর্ণপাত করেনি। যদিও উচ্চ আদালতের নির্দেশে এখন নতুন করে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে দুদক। এতে প্রতীয়মান হয় যে, আমরা বারবার যে অভিযোগগুলো উত্থাপন করেছিলাম তা ছিল তথ্যমূলক। সর্বমহলে একটি কথা রটনা আছে-সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের লোকদের আত্মীয়স্বজনরা এই কেলেঙ্কারীতে জড়িত। শুধু বেসিক ব্যাংক নয়, রাজকোষ কেলেঙ্কারিসহ সমস্ত আর্থিকখাতে যে লুটপাট হয়েছে এর পিছনে সরকারের রাঘববোয়ালরা জড়িত। ব্যাংক লুটের লাখ লাখ কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে গেলেও দুদক এসব বিষয়ে নির্বিকার। কিন্তু জনগণ তাদের ক্ষমা করবে না। লুটেরাদের একদিন জনতার কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে।
গুমের ঘটনার প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা বলেন, সারাদেশে বেআইনী গুম আতংক থামছেই না। মানুষ আজ কেউই নিরাপদ নয়। দেশ যেন এখন হালছাড়া জাহাজের মতোই লক্ষ্যভ্রষ্ট। ক্ষমতা বিকৃতি যখন কদর্য হয়ে ওঠে তখন জনসমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে সইতে হয় বিভিষিকাময় নির্মমতা। এবার রাজধানী থেকে নিখোঁজ হয়েছেন ভিয়েতনামে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান। এ ঘটনায় তার মেয়ে ধানমন্ডি থানায় ডায়েরী করলেও এখনও তাঁর কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। এরপর পরিবারের সদস্যরা মারুফ জামানকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে অবশেষে মঙ্গলবার সকালে ধানমন্ডি থানায় জিডি করেন। তিনি বলেন, একজন ব্যক্তি অপরাধী হলে তার আইনী প্রক্রিয়ায় বিচার হতে পারে, যেটি হবে প্রকাশ্য নিয়মমাফিক পদ্ধতিতে। কিন্তু সেই ব্যক্তিকে অদৃশ্য করে দেয়া হলে তা হবে ভয়ঙ্কর অপরাধ। বর্তমানে রাষ্ট্রের ছত্রছায়ায় এ সকল গুম সংঘটিত হচ্ছে। যা ক্ষমাহীন ও মানবতাবিরোধী ঘৃন্য অপরাধ।
গুমের পেছনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জড়িত বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্য হল- এই যে মানুষ গুম হচ্ছে, যদি যে অপরাধ করে থাকেন, অপরাধী হন তাহলে অপরাধের তো প্রকাশ্য আইনি প্রক্রিয়া আছে। সেই আইনি প্রক্রিয়ায় নেওয়া হচ্ছে না কেন? গুমের যে ধরন... যারা যাচ্ছেন, তুলে নিয়ে আসছেন, তারা বলছেন তারা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক। তাদের (নিখোঁজ) পরিবারের লোকরাও তাদেরকে প্রশ্ন করেন, সেটার কোনো উত্তর দেন না, তাদের যেসব দরকার ল্যাপটপ-কম্পিউটার নিয়ে যান। সে লোক যদি অপরাধী হয়ে থাকে তাহলে গুম করছেন কেন, লুকিয়ে রাখছেন কেন? অপরাধ প্রকাশ্যে জানান দিন। জনগণ বিশ্বাস করে যে, সরকারের অশুভ ইচ্ছাপূরণে এই বেআইনি গুমগুলো করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, সহসভাপতি নবী উল্লাহ নবী, আরিফুল ইসলাম আরিফ, সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, যুগ্ম সম্পাদক শেখ রবিউল আলম রবী, এম এ হান্নান, উত্তরের প্রচার সম্পাদক ভিপি হানিফ, যুবদল সভাপতি সাইফুল ইসলাম নিরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও স্বেচ্ছাসেবক দল মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামসহ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাকে মিথ্যা দাবি করে তা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, আবদুল খায়ের ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, আবদুল আউয়াল খান এবং মুনির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রংপুর নির্বাচন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ