পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : ‘অবসরে যাওয়ার পর বিচারপতিদের রায় লেখা আইন ও সংবিধান পরিপন্থী’Ñ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার এমন মন্তব্যে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাকবিত-ার ঝড় উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় নিয়ে। প্রতিদিনই এ নিয়ে নানা বক্তব্য আসছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে ছড়াচ্ছে উত্তাপ। এত কিছুর পরও প্রধান বিচারপতি তার মন্তব্যে অনড় রয়েছেন।
সরকারের পক্ষে খোদ আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল ইনকিলাবকে বলেছেন, সংবিধানে এমন কোন দিক-নির্দেশনা নেই যে, বিচারপতি অবসরে গেলে রায় লিখতে পারবেন না। কাজেই যে বিষয়টি সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই- তাকে সংবিধান পরিপন্থী বলা যাবে না। তিনি উদাহরণ হিসেবে বলেন, দেওয়ানী মামলা অনেক দিন চলে। জমি সংক্রান্ত এ ধরনের মামলায় একপক্ষ রায় পেল যে, এই জমিটির মালিক তিনি (বাদী কিংবা বিবাদী)। এক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ রায় বের না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না- তিনি কিভাবে এই জমির মালিকানা পেলেন। ওই সময় বিচারপতি অবসরে গেলেও তাকে ঠিকই তার পূর্ণাঙ্গ রায় লিখে যেতে হবে। তাছাড়া আমাদের সংবিধানের কোথাও বলা নেই যে, বিচারপতি অবসরে গেলে রায় লিখতে পারবেন না। যেহেতু সংবিধানে এমন কোন নির্দেশনা নেই- কাজেই এ ধরনের রায় লেখাকে সংবিধান
পরিপন্থী বলা যাবে না। আবার প্রধান বিচারপতি যেটি বলেছেন, তারও যুুক্তি রয়েছে। কাজেই এ নিয়ে সুপ্রীম কোর্ট একটি দিক-নির্দেশনা দিতে পারে। আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতির দেয়া বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বিএনপি খেলার চেষ্টা করছে। তারা চাচ্ছে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে। যা একবারেই অনুচিত।
পক্ষান্তরে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বলছেন, প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্য সরকারকে ভূকম্পনের মতো নাড়িয়ে দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল প্রধান বিচারপতির দেয়া বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান গতকাল জিয়াউর রহমানের ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে বলেন, প্রধান বিচারপতির দেয়া বক্তব্য সরকারকে ভূকম্পনের মতো নাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, বিচার বিভাগের শীর্ষে বসে আছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তিনি কিন্তু বিচারের মাথা, আমরা তার বক্তব্যকে স্বাগত জানাই। তিনি সাহস করে, তার উপর যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে সেই দায়িত্বের কথা মনে করে এসব কথা বলেছেন। তিনি বলেন, আজকের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন হয়েছে, সেই নির্বাচনকে গোটা দেশ প্রত্যাখ্যান করেছে। এই নির্বাচন অবৈধ। সেটা তো জাস্টিসই বলছেন। কাজেই প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে যে সংসদের উপর সরকার দাঁড়িয়ে আছে, সেই সংসদ বাতিল হয়ে যায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গত মঙ্গলবার দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে দেয়া বাণীতে অবসরের পর রায় লেখাকে আইন ও সংবিধান পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছিলেন প্রধান বিচারপতি। তার এ মন্তব্যের পর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় নিয়ে প্রশ্ন তোলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। এমন পরিস্থিতির মাঝেই বৃহস্পতিবার রাতে মৌলভীবাজার আইনজীবী সমিতি আয়োজিত নৈশভোজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আবারও একই কথার পুনরাবৃত্তি করলেন।
তিনি সিলেটে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, অবসরের পর বিচারকদের রায় লেখা আইন ও সংবিধান পরিপন্থী। আমি প্রধান বিচারপতি থাকাবস্থায় আইন এবং সংবিধানপরিপন্থী কোনো কাজ করতে দেব না। একজন বিচারক যখন অবসর নেন তখন আপনি (সাধারণ নাগরিক) আর আমি (বিচারক) সমান হয়ে যাই। কিন্তু আইন রক্ষা করার সাংবিধানিক ক্ষমতা কারো নেই। তিনি বলেন, সিভিল প্রশাসনের কেউ অবসরে যাওয়ার পর আর বাকি কোনো কাজ করার সুযোগ থাকে না। তারাতো কোনো শপথ নেন না। আর বিচারপতিরা আরো ওপরে। আইন সংবিধান রক্ষা করার জন্য শপথ নেন। তাই রিটায়ার করার পর বিচারকের রায় লেখার কোন অধিকার নেই? আমরা অনেক কিছু জানিনা। আমাদের সংশোধিত হতে হবে। এখানে গণতন্ত্র চলছে। সংবিধান সচল আছে। আমি প্রধান বিচারপতি থাকাবস্থায় আইন এবং সংবিধান পরিপন্থী কোনো কাজ করতে দেব না।
প্রধান বিচারপতি বলেন, অবসরের পর কোনো বিচারপতিকে পাবলিক ডকুমেন্টে হাত দিতে দেয়া হবে না। আমাদের এখানে একটি ভুল নীতি চলে আসছে। বিচারকরা অবসরে যাওয়ার পরও রায় লেখেন। পৃথিবীর কোনো দেশে এই নিয়ম নেই। আমাদের দেশ একটি আজব দেশ। অবসরের পর বিচারক রায় লিখেন ব্যক্তিগত ইন্টারেস্টে?
প্রধান বিচারপতি বলেন, আইনপেশা একটি মহান পেশা। কিন্তু এখন প্রত্যেকটি বার পলিটিক্যাল প্লাটফরম হয়ে গেছে। এখন অনেকেই আমার এই বক্তব্যের সূত্র ধরে নানা ফন্দি-ফিকির বের করছে। কোন কোন বিচারক বলছেন অবসরের পর আমাকে রায় লিখতে না দেয়া হলে আগের অনুরূপ লিখা রায়গুলো বাতিল করতে হবে। তিনি প্রশ্ন রাখেন- এ কেমন কথা?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।