Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দিলে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব থাকবে না : হেফাজত

সারাদেশে বিক্ষোভ-সমাবেশ শুক্রবার

প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম মুছে দেয়ার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে আগামী ২৫ মার্চ শুক্রবার বাদ জুমা দেশব্যাপী বিক্ষোভ-মিছিল ও সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ। ওইদিন চট্টগ্রাম আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের উত্তর গেইট চত্বরে সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। গতকাল (সোমবার) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী এ কর্মসূচী ঘোষণা করেন। সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দেয়া হলে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব থাকবে না। তিনি বলেন, সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দেয়া মানে এদেশে নাস্তিক্যবাদ প্রতিষ্ঠা করা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী। উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমীর আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর মাওলানা লোকমান হাকিম, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুঈনুদ্দীন রুহী, হেফাজত আমীরের প্রেসসচিব মাওলানা মুনির আহমদ, মাওলানা ইসহাক মেহেরী, মাওলানা মোজাম্মেল হক, মাওলানা ইবরাহীম খলীল সিকদার, মাওলানা রফিকুল ইসলাম, মাওলানা ইউনুস, মাওলানা ইকবাল খলীল, মাওলানা জুনায়েদ জওহার, আনম আহমদুল্লাহ প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, এ উপমহাদেশে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতা ‘মুখ ও মুখোশের’ অধিক কিছু হয়ে উঠতে পারেনি। আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল ঘোষিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ ও সমাজতন্ত্রের কোনো উল্লেখ ছিল না। তিনি বলেন, আগামী ২৭ মার্চ হাইকোর্টের কার্যতালিকায় থাকা রাষ্ট্রধর্ম বিষয়ক রিটটি যেন জনস্বার্থে ও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতি ও চেতনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে খারিজ করে দেয়া হয়। এটা নিয়ে যেন কাউকে পানি ঘোলা করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের সুযোগ করে দেয়া না হয়।
আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, আধুনিক বিশ্বের ৪৩টি মুসলিম দেশে রাষ্ট্র ইসলাম এবং ৫০টি দেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম নির্ধারিত রয়েছে। ইউরোপের অধিকাংশ দেশে খ্রিস্টধর্ম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃত। পোল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইটালি ও স্পেনে প্রধান ধর্ম রোমান ক্যাথলিক। বিশ্বের একমাত্র হিন্দুরাষ্ট্র নেপাল। বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকলে কোন কোন শ্রেণীর লোকদের গায়ে জ্বালা ধরার কারণ কী? তারাই রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে বাদ দিয়ে দেশে ধর্মহীন, বিশৃঙ্খল একটি নৈরাজ্যময় সমাজ তৈরির গভীর ষড়যন্ত্র করছে। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানে থাকলে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও জানমালের রক্ষণাবেক্ষণে রাষ্ট্রের কোন অসুবিধা নেই বলে আমরা মনে করি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের চেয়ে আমাদের দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও পারস্পরিক ধর্মীয় সহাবস্থান হাজারগুণে ভালো। সেকুলারিজম ভারতে সাংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। অথচ তা সত্ত্বেও ক্ষমতাসীন মৌলবাদী দল বিজেপির রাষ্ট্রীয় সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ও জিঘাংসার মুখোমুখি দেশটির সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলো।
আদালতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, হাদিস শরিফে আছে যে মুসলমান নিরীহ সংখ্যালঘুদের ওপর জুলুম করবে সে জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। তাই ৯২ ভাগ মুসলিম নাগরিকের এদেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকতে বাধা কোথায়? ইসলাম শান্তির ধর্ম। এ শান্তি শুধু মুসলিমের জন্যে নয়, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবার জন্য। এ শান্তি সকল সম্প্রদায়ের জন্য। সরকারের প্রতি আবেদন জানাবো, ইসলামবিদ্বেষীদের ফাঁদে পা দেবেন না। ১৯৮৮ সালসহ বিভিন্ন সময় এ ধরনের রিট করা হলেও আদালত খারিজ করে দিয়েছেন। আমাদের মনের ব্যথা হচ্ছে এবার শুনানির জন্যে গ্রহণ করলো কেন। মাননীয় আদালতকে জনগণের ভাষা বুঝতে হবে।
হেফাজতের মহাসচিব বলেন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলের ষড়যন্ত্র দেশবাসী কখনোই মেনে নেবে না। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকবে কি থাকবে না, এ নিয়ে কোনভাবেই আদালতে মামলা ও শুনানি চলতে পারে না। সরকারকেই এ মামলা বাতিলের জন্যে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে হেফাজত মহাসচিব বলেন, জনগণের মনের ভাষা বুঝার চেষ্টা করুন। ইসলামের বিধি-বিধান ও মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে আদালতকে দিয়ে রুল বা আদেশ জারির ষড়যন্ত্র বন্ধ করুন। তিনি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে দেশবাসীর আক্বিদা-বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যদি কোন রায় আসে, তাহলে দেশের সাড়ে চার লাখ মসজিদ থেকে কোটি কোটি মুসলমানের প্রতিবাদের দাবানল জ্বলে ওঠে ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্তকে ছারখার করে দেবে। তিনি বলেন, যারা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয় এবং যারা চায় না এদেশের সকল ধর্মমতের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মাধ্যমে সুখে-শান্তিতে সুন্দরভাবে বসবাস করুন, তারাই আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে রাষ্ট্রধর্ম বাতিল করে দেশে গোলযোগ তৈরী করতে চায়। এই ষড়যন্ত্রকারীরা দেশের শত্রু, দেশের গণমানুষেরও শত্রু, এরা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয়।
আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, বাংলাদেশে হাজার হাজার ফুল রয়েছে, এর মধ্যে শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল। হাজার হাজার পাখীর মধ্যে দোয়েল জাতীয় পাখী, হাজার হাজার মাছের মধ্যে ইলিশ জাতীয় মাছ, অসংখ্য ভাষার মধ্যে জাতীয় ভাষা বাংলা। তাহলে দেশের মোট নাগরিকের ৯২ ভাগ মানে ১৬ কোটি মুসলমানের একক ধর্ম ইসলাম জাতীয় ধর্ম হতে বাঁধা কোথায়? তিনি বলেন, নাস্তিক্যবাদিরা বর্তমান সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে ঢুকে পড়েছে। তারা সরকারকে ভুল বুঝিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, অর্থসম্পদ ও জনগণের ধর্মীয় আক্বিদা-বিশ্বাস লুটপাট ও ধ্বংস করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। ইতিপূর্বে ৯২ ভাগ মুসলমানের এই দেশের সংবিধান থেকে মহান আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাসের ধারা মুছে দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি সংযোজন করা হয়েছে, বিসমিল্লাহর ভুল অর্থ সংবিধানে লেখা হয়েছে, জাতীয় শিক্ষানীতি থেকে ইসলামী নীতি-আদর্শ ও চেতনাবোধকে বাদ দেয়া হয়েছে। সংস্কৃতিসহ সর্বক্ষেত্রে এখন ইসলাম বিরোধিতা, মুসলমানদেরকে হেয় করা এবং ইসলামী চেতনাবোধ মুছে ফেলার জোর অপতৎপরতা চলছে। বাংলাদেশের অর্থসম্পদ নিয়ে লুটপাট চলছে। ঈমান-আক্বিদা ও ধর্মীয় আদর্শকেও লুটে নিয়ে নাস্তিক্যবাদ ও ভোগবাদিতা প্রতিষ্ঠা করার জোর ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে। এটা কোনভাবেই আর চলতে দেয়া যায় না।
সংবাদ সম্মেলনে আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী দৃঢ়তার সাথে বলেন, আগামী শুক্রবার সারাদেশে ঈমান-আক্বিদাভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে দেশের আদালতসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে আমরা এ বার্তা পৌঁছাতে চাই যে, দয়া করে রাষ্ট্রধর্ম বাতিলের মামলাটি খারিজ করে ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্ত নস্যাত করুন। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল থাকাটা এদেশের মানুষের প্রাণের আকুতি, গভীর চাওয়া।
তিনি বলেন, বর্তমান সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখার পাশাপাশি হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টানসহ অন্যান্য সকল ধর্মাবলম্বীর মর্যাদা ও অধিকারের কথাও স্পষ্টভাবে লেখা হয়েছে। সুতরাং সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম বাতিলের অর্থই হচ্ছে সাংবিধানিকভাবে নাস্তিক্যবাদ প্রতিষ্ঠা। এই প্রতিবাদে অমুসলিমদেরও শামিল হওয়া চাই। তিনি রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদেরকে হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেন, আগুন নিয়ে খেলা করবেন না। পুড়ে ছারখার হয়ে যাবেন।



 

Show all comments
  • Rasel ২২ মার্চ, ২০১৬, ১০:৪৫ এএম says : 1
    হে মুসলমান!!!! আর কতো চুপ থাকবেন?
    Total Reply(0) Reply
  • Arif Hossain ২২ মার্চ, ২০১৬, ১০:৪৮ এএম says : 1
    ইসলামী সর্বদলীয় নেতাদের ঐক্যমতের ভিত্তিতে এক দফা এক দাবী রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম চাই ঘোষণা করা সময়ের দাবী।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Al Amin ২২ মার্চ, ২০১৬, ১০:৫১ এএম says : 1
    din islam jindabad
    Total Reply(0) Reply
  • Monir Ahammed ২২ মার্চ, ২০১৬, ১০:৫২ এএম says : 2
    শুধু হেফাজতেই কথা বলে বাকি মুসলমানরা চুপ কেন?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দিলে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব থাকবে না : হেফাজত
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ