পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : মালয়েশিয়ার সঙ্গে জিটুজি (সরকার থেকে সরকার) পদ্ধতিতে পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) উদ্যোগে উত্তরায় আট হাজার ৪০০ ফ্ল্যাট তৈরির প্রকল্প অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ প্রকল্প থেকে সরে যেতে বসেছে মালয়েশিয়া। কি কারণে এ অচলাবস্থা হচ্ছে তা কেই সঠিকভাবে জানাতে পারছে না।
জানা গেছে, মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের খসড়া চুক্তি সই হলেও ‘আইনি ও ব্যয়’ সংক্রান্ত বিষয়াদি বিবেচনায় নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারছে না সরকার। চুক্তির পর এরই মধ্যে পাঁচ বছর পার হলেও প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো ধরনের অগ্রগতি নেই। এ ব্যাপারে কোনো আশার বাণীও শোনাতে পারেনি কর্মকর্তারা। মালয়েশীয় সরকারের পক্ষ থেকেও সাড়া পাচ্ছে না বাংলাদেশ।
এছাড়া ইতিমধ্যে রাজউকের চেয়ারম্যানের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করা মালয়েশিয়ার গেমিলাং কনসোর্টিয়ামের প্রতিনিধিদের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। রাজউক তাদের পরিচয় জানতে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসে চিঠি পাঠায়; কিন্তু দূতাবাস তাদের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো উত্তর দেয়নি। ফলে ওই প্রতিনিধি দলের সদস্যরা মালয়েশিয়া সরকারের প্রতিনিধি কি-না, সে ব্যাপারেও সন্দেহ দেখা দেয়। রাজউক মনে করে, মালয়েশিয়ার অনাগ্রহের কারণেও এরকম হতে পারে। এ ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান না করায়ও সন্দেহ-সংশয় ঘনীভূত হচ্ছে।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, উত্তরার ১৮ নং সেক্টরে মালয়েশিয়ার আর্থিক ও কারিগরী সহায়তায় সরকারী পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে ‘বি’ ও ‘সি’ ব্লকে ১৬ তলা বিশিষ্ট ১০০টি অ্যাপার্টমেন্ট (ভবন) প্রায় ৮ হাজার ৪০০টি ফ্ল্যাট বানানোর উদ্যোগ নেয় সরকার। এ জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ২৮৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। মালয়েশিয়া সরকারের বিনিয়োগ করা এ অর্থ ৪২ মাসে ৪ কিস্তিতে পরিশোধ করার কথা।
নিম্ন ও মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য প্রকল্পগুলো হাতে নেয়া হলেও ফ্ল্যাটের প্রতি বর্গফুটের যে দাম পড়বে তাতে ওই দুই শ্রেণির মানুষদের পক্ষে ফ্ল্যাট কেনা সম্ভব হবে না। সব মিলিয়ে প্রতি বর্গফুটের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪৩৫ টাকা। এ হিসাবে ১২৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের দাম পড়বে ৪২ লাখ ৯৪ হাজার টাকা, ১০৫০ বর্গফুটের দুই ক্যাটাগরির ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে এক ক্যাটাগরির ফ্ল্যাটের দাম পড়বে ৩৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা এবং আরেক ক্যাটাগরির ফ্ল্যাটের দাম পড়বে ২৯ লাখ ২০ হাজার টাকা। এই দামে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষদের পক্ষে ফ্ল্যাট কেনা সম্ভব হবে কিনা সন্দেহ। ফলে এসব ফ্ল্যাট উচ্চবিত্তের মানুষদের হাতেই চলে যাবে। আর এ কারণে রাজউকের ফ্লাট নির্মাণ প্রকল্পে জনগণেরও তেমন আগ্রহ নেই।
অন্যদিকে রাজউক প্রথমবার এ সংক্রান্ত নথিপত্র চূড়ান্ত করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর মন্ত্রণালয় নথিপত্র ঘেটে এবং আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে বেশ কিছু ‘পর্যবেক্ষণ’ দিয়ে রাজউকে আবার সেই নথি ফেরত পাঠায়। এরপর আবার রাজউক থেকে সংশোধিত প্রস্তাবনা পূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে দ্বিতীয় দফায় ভেটিংয়ের জন্য নথিপত্র আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর সংশোধিত মাস্টার এগ্রিমেন্টেও আইন মন্ত্রণালয় বেশ কিছু ত্রুটি পেয়েছে।
আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাবটি মূল্যায়নের পর বলা হয়েছে, বিবেচ্য মাস্টার এগ্রিমেন্ট ও সেলস অ্যান্ড পারচেজ এগ্রিমেন্টের ক্ষেত্রে টাউন ইম্প্রুভমেন্ট অ্যাক্ট-১৯৫৩-এর সংশ্লিষ্ট বিধানসহ সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত আইন-২০০৬ এবং সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত বিধিমালা-২০০৮-এর বিধানগুলো অনুসরণ করা হয়নি। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর কোনো সারসংক্ষেপও রাখা হয়নি। ২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর আইন মন্ত্রণালয় মাস্টার এগ্রিমেন্টের এসব ত্রুটি উল্লেখ করে তা ফেরত পাঠায়।
সূত্র জানায়, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন অনেক দূর। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং-এর পর এটি যাবে কেবিনেট কমিটি ফর গভমেন্ট পারচেইস (সিসিজিপি) এ। তারা এর চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে বিষয়টি আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে।
সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশে এই প্রথম টেন্ডার ছাড়া অন্য দেশের সরকারের সঙ্গে ফ্ল্যাট নির্মাণে ড্রাফ্ট চুক্তি হয়েছে। এই জন্যই এটি নিয়ে এতো বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা। কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে প্রথমে ওপেন টেন্ডার দিতে হয়। এরপর যারা এই টেন্ডারে প্রতিযোগিতা করে তাদের মধ্যে থেকে একজনকে শর্তাবলী পূরণ সাপেক্ষে বাছাই করা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে এটি করা হয়নি। ফলে সব কিছু চিন্তা-ভাবনা করেই এগুতে হচ্ছে।
এ নিয়ে বিশিষ্ট সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, মালয়েশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতিতে বাংলাদেশী শ্রমিকদের অবদান বিরাট, কিন্তু তাদের থেকে সে প্রতিদান পাওয়া যাচ্ছে না। তার বিপরীতে বাংলাদেশের সঙ্গে মালয়েশিয়ার সরকার যে ব্যবহার করছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। কেন করছে তা তারাই ভালো বলতে পারবে। বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ শ্রমিক নেয়ার চুক্তিস্বাক্ষর করে পরে শ্রমিক নেয়া স্থগিতের ঘোষণা কোন সভ্য দেশের মানুষ করে? মালয়েশিয়া যে শুধু বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ কর্মী নেয়ার চুক্তি বাতিল করেছে তা-ই নয়, উত্তরায় ৮ হাজার ৪০০ ফ্ল্যাট নির্মাণে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে ওয়াদাবদ্ধ হয়েছিল, সেটা থেকেও সরে যাচ্ছে। ২০১১ সালের অক্টোবরে এ প্রকল্প নিয়ে মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, পাঁচ বছর আগে ২০১১ সালের ১৮ অক্টোবর বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত দাতো সেরি উতামা ও রাজউকের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন ভূঁইয়া পূর্ত মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সংশোধিত এমওইউ স্বাক্ষর করেন। ২০১১ সালে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সময় বলা হয়েছিল, সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটিতে বাংলাদেশ সরকারকে কোনো টাকা খরচ করতে হবে না। মালয়েশিয়া সরকার সম্পূর্ণ অর্থ বিনিয়োগ করবে। পুরো প্রকল্প সম্পন্ন করে দেয়ার তিন বছর পর তাদের কেবল বিনিয়োগের অর্থ ফেরত দিলেই হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।