পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আজ ৭ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এদিনে দেশজুড়ে চলছিল যুদ্ধের ঘোর ঘনঘটা। সবার মনে তখনো অনিশ্চয়তা- এ যুদ্ধ কতদিন চলবে? শক্তিশালী পাকিস্তানী বাহিনীকে কি পরাজিত করতে পারবে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা?
এদিকে রণাঙ্গনে অর্জিত হচ্ছিল একের পর এক সাফল্য। এদিন সকালে যশোর ও বিকেলে সিলেট হানাদারমুক্ত হয়। সকল জায়গাতেই সামরিক পরাজয়ের মুখে পিছু হটছিল পাকিস্তানী সৈন্যরা। এদিন ভারত-বাংলাদেশ যৌথ সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সিদ্ধান্ত হয়, বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী ভারতীয় ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক লেঃ জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার নেতৃত্বে। এর আগের দিন ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। আর পাহাড়ী রাষ্ট্র ভূটান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে ৩ ডিসেম্বর। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পরিস্থিতির ব্যাখ্যা গুরুত্ব লাভ করে। ইন্দোনেশিয়ার পত্রিকা ইন্দোনেশিয়া রায়া’র ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত সংখ্যায় লেখা হয়, পাকিস্তানের উচিৎ বাংলাদেশকে মেনে নেয়া এবং নিজেদের ভুল সংশোধন করা। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমেও বালাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে এদিন অভিমত প্রকাশ করা হয়। যেমন গার্ডিয়ান, দি টেলিগ্রাফ ও টাইমস। ‘গার্ডিয়ান’ পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়, বাস্তবতা হল, সদিচ্ছা ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয়া বাংলাদেশকে আর দমিয়ে রাখা যাবে না। এদিন পশ্চিম রণাঙ্গনেও ভারতীয় বাহিনীর ব্যাপক সাফল্য লক্ষ্য করা যায়। ভারতীয় নৌবাহিনীর দ্বারা করাচী বন্দর অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ভারতীয় জঙ্গী বিমান করাচীতে নির্বিচারে হামলা চালিয়ে যাচ্ছিল। পাকিস্তানের আকাশে তাদের অবাধ তৎপরতার প্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান নিরাপত্তার জন্য ইসলামাবাদে প্রেসিডেন্ট হাউসের নিচে ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে আশ্রয় নেন।
১৯৭১ সালের এদিনে যশোর, মাগুরাসহ নালিতাবাড়ি, শ্রীবর্দী, বরুড়া, গোপালগঞ্জ, বালাগঞ্জ, কোম্পানিগঞ্জ, রাজনগর, মেহেরপুর, শালিখা, সাতক্ষীরা, কেন্দুয়া, চুয়াডাঙ্গা, বেগমগঞ্জ, শেরপুর, হালুয়াঘাট প্রভৃতি স্থান শত্রæমুক্ত হয়।
আজ গোপালগঞ্জ মুক্ত দিবস
গোপালগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা : ৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ পাক হানাদার মুক্ত হয়। দলে দলে মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের মানুষ মেতে উঠে আনন্দ উল্লাসে। যা গোপালগঞ্জবাসীর কাছে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারো নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করা হবে দিবসটি।
১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ থেকে গোপালগঞ্জে শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার টেলিগ্রাম ম্যাসেজ গোপালগঞ্জে পৌঁছানোর পরই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের লড়াই। তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মহকুমা কর্মকর্তা আব্দুল মজিদের সহযোগীতায় ট্রেজারি থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ (তৎকালীন কায়েদে আযম মেমোরিয়াল কলেজ) মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ট্রেনিং ক্যাম্প চালু হয়। ২৫ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত গোপালগঞ্জ মুক্তিবাহিনীর দখলে ছিল।
অবশেষে ৭ ডিসেম্বর ভোর থেকে গোপালগঞ্জের আকাশে উড়তে থাকে স্বাধীন বাংলার বিজয় পতাকা। শহীদদের রক্ত আর বীর মুক্তিযোদ্ধারে সাহসী যুদ্ধে অবশেষে শক্রমুক্ত হয় গোপালগঞ্জ। সেদিনটির কথা মনে করে মুক্তিযোদ্ধারা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও গোপালগঞ্জবাসী আজও আনন্দে মুখরিত হয়ে ওঠে।
মাগুরা মুক্ত দিবস
মাগুরা জেলা সংবাদদাতা : আজ ৭ ডিসেম্বর মাগুরা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের ও মিত্র বাহিনীর অগ্রসরের মুখে মাগুরা পাকহানাদার মুক্ত হয়। স্বাধীনতার দীর্ঘ বছর পার হলেও মাগুরায় চিহিৃত রাজাকার ও স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচার না হওয়ায় হতাশ মুক্তিযোদ্ধাসহ স্বাধীনতা প্রিয় মাগুরার জনগণ।
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর যশোর, ঝিনাইদহ ও নড়াইল এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা এবং মিত্র বাহিনী মাগুরার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচন্ড গোলাগুলি চলতে থাকলে পাক সেনারা প্রচন্ড চাপে দিশেহারা হয়ে ৬ ডিসেম্বর দুপুরের পর মাগুরা থেকে ফরিদপুরের দিকে পালিয়ে যায়। ৭ ডিসেম্বর সকালে শ্রীপুর আঞ্চলিক বাহিনী জয় বাংলা সেøাগানে বর্তমান পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।
আখাউড়ায় মুক্ত দিবস পালন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা : বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল পতাকা উত্তোলন, পুষ্পস্তবক অর্পণ, আনন্দ শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা। উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, আওয়ামী লীগ, আমরা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমিটির সমন্বয়ে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়। সকাল ১০টায় উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনের স্মৃতি সৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পরে সেখান থেকে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়ে সড়ক বাজার এসে শেষ হয়। পোস্ট অফিসের সামনে (একাত্তরের ৬ ডিসেম্বর যেখানে স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উঠানো হয়) উত্তোলন করা হয় পতাকা।
আজ নাসিরনগর মুক্ত দিবস
আজ ৭ ডিসেম্বর বুধবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাসিরনগর মুক্ত দিবস। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিপাগল জনতা ও মুক্তিযোদ্ধারা নাসিরনগর থেকে পাকিস্তানি হানাদারদেরকে বিতাড়িত করে নাসিরনগরকে মুক্ত করেন।
যশোর মুক্ত দিবস পালন
যশোর ব্যুরো : গতকাল ছিল যশোর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে দেশের প্রথম জেলা হিসেবে হানাদারমুক্ত হয় যশোর। দিবসটি পালনে যশোর জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ শহরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করে। যশোর টাউন হল মাঠ থেকে শোভাযাত্রাটি বের হয়ে বকুলতলা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পার্ঘ অর্পণের মাধ্যমে শেষ হয়।
২১ নভেম্বর চৌগাছার জগন্নাথপুরে (বর্তমান নাম মুক্তিনগর) হানাদার পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে মেশিনগান, কামান, ট্যাঙ্ক, এমনকি বিমান পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়। শেষ পর্যন্ত হাতাহাতি বা মল্লযুদ্ধও হয় এখানে। পাকবাহিনী গ্রামে ঢোকামাত্রই তাদের সাতটি ট্যাঙ্ক ধ্বংস করে দেয় মুক্তি বাহিনী। একপর্যায়ে যশোর শত্রুমুক্ত হয়।
ঝিনাইদহে হানাদার মুক্ত দিবস পালিত
ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতা : ৬ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে গতকাল মঙ্গলবার ঝিনাইদহে শহরে বর্ণাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে শহরের পুরাতন ডিসি কোর্ট থেকে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আয়োজনে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি শহর প্রদক্ষিণ শেষে পায়রা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। র্যালিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের কমান্ডার মকবুল হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান, মাহমুদুল ইসলাম ফোটন, হরিণাকুন্ডু উপজেলা কমান্ডার মহিউদ্দীন মাস্টার, ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কমান্ডার সিদ্দীক আহমেদসহ জেলার মুক্তিযোদ্ধা নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।