Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ডিসি-ইউএনও অফিসের ৭ হাজার কর্মচারীর স্বপ্নভঙ্গ

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত নিয়োগ-বিধি ২০১৬ নিয়ে হতাশা-ক্ষোভ

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) নিয়োগ-বিধিমালা, ১৯৮৬ রহিত করে নতুন নিয়োগবিধি, ২০১৬ চূড়ান্ত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। নতুন নিয়োগ বিধিমালার সারাদেশে ৭ হাজারের মতো অফিস সহকারী আজও তৃতীয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে উন্নীত হতে পারেননি। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী পদোন্নতি তালিকাতেই তাদের বাতিল করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এ নিয়োগ-বিধিতে ব্যাপক অসামঞ্জস্য রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতি (বাকাসস)। আগামী ৯ নভেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর লিখিতভাবে এই দাবি জানায় সংগঠনটি।
বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতি (বাকাসস) সদস্য সচিব মো: আতাউর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, আমি ১৯৮৪ সালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহকারী পদে যোগদান করেছি। নানা জটিলতায় পদোন্নতি না পেয়ে আজও একই পদে আছি। তিনি আরো বলেন, ১৯৯৫ সালে অফিস সহকারী পদে যোগদান করে পদোন্নতি পেয়ে বর্তমান তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সহকারী সচিব হিসেবে চাকরি করছেন মো: নজরুল ইসলাম। আর আমি আগের জায়গায় আছি। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী পদোন্নতি তালিকাতেই তাদের রাখা হয়নি। উল্টো প্রস্তাবিত নিয়োগ-বিধি ২০১৬ কে বিষ-ফোঁড়ার মতো চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। আমরা তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর লিখিতভাবে স্বারক্ষলিপি প্রদান করবো।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রচলিত নিয়মে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরে কর্মরত কর্মচারীদের পদমর্যাদাসহ সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র জেলা প্রশাসনের কার্যালয় ও এর আওতাধীন অফিস গুলোতে কর্মরত কর্মচারীদের নিয়োগবিধি সংশোধনের ক্ষেত্রে পদোন্নতিসহ বিবিন্ন সুযোগ-সুবিধা সংকুচিত ও ক্ষেত্রমতে বঞ্চিত করা হয়েছে। প্রস্তাবিত জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) নিয়োগ-বিধিমালা, ২০১৬ তে প্রধান সহকারী, ট্রেজারী হিসাব রক্ষক ও উচ্চমান সহকারী পদ বাদ দিয়ে শুধুমাত্র অফিস সুপার ও সিএ কাম উচ্চমান সহকারী হতে পদোন্নতির মাধ্যমে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে পদোন্নতির প্রস্তাব করা হয়েছে। নিয়োগ বিধি, ১৯৮৬ তে এক বা একাধিক ফিডার পদে কমপক্ষে ৫ বছরের চাকরির যোগ্যতা ছিল, কিন্তু প্রস্তাবিত নিয়োগ বিধি-২০১৬ তে ফিডার পদে কমপক্ষে ৫ বছরের চাকরিসহ কোন স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রি অথবা ফিডার পদে ৮ বছরের চাকরিসহ স্বীকৃত বোর্ড হতে উচ্চমাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। প্রস্তাবিত বিধিতে উচ্চমান সহকারী পদ বাদ দিয়ে প্রধান সহকারী, ট্রেজারী হিসাব রক্ষক, সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর পদ হতে পদোন্নতির মাধ্যমে অফিস সুপার পদে পদোন্নতির প্রস্তাব করা হয়েছে। তাছাড়া অফিস সুপার পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর পদটি নতুনভাবে সংযোজন করা হয়েছে। উচ্চমান সহকারী পদ বাদ দিয়ে প্রধান সহকারী, ট্রেজারী হিসাব রক্ষক, সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর পদ হতে পদোন্নতির মাধ্যমে সিএ কাম উচ্চমান সহকারী পদে পদোন্নতির প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে অফিস সহকারী বা সমমানের পদ হতে উচ্চমান সহকারী, প্রধান সহকারী, সিএ কাম উচ্চমান সহকারী অফিস সুপার ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি রুদ্ধ করা হয়েছে এবং ওই পদধারীরা পদোন্নতি হতে বঞ্চিত হবেন।
প্রস্তাবিত নিয়োগবিধিতে চতুর্থ শ্রেণীর পদ সংকুচিত করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে প্রস্তাবিত নিয়োগবিধিতে বলা হয়েছে- পদোন্নতি/অবসর/মৃত্যু বা অন্য কোন কারণে চতুর্থ শ্রেণীর পদ শূন্য হলে আউটসোর্সিং নীতিমালা-২০০৮ অনুযায়ী শূন্যপদ পূরণ করতে হচ্ছে। অর্থাৎ আগে চতুর্থ শ্রেণীর পদ নিয়মিত হিসেবে ছিল। কিন্তু নতুন বিধিতে ওই পদ বিলুপ্ত করা হবে। জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের সকল নির্বাচন কর্মকান্ডে সম্পৃক্তসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মোবাইল কোর্ট, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, আশ্রয়ণ ও আদর্শগ্রাম প্রকল্প বাস্তবায়ন, সরকারের রাজস্ব আদায়সহ ই-নথির মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা বাস্তবায়নের চালিকাশক্তি হিসেবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও এর আওতাধীন অফিসসমূহে কর্মরত কর্মচারীদের নিয়োগ-বিধি সংশোধনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বৈষম্যের সৃষ্টি করা হচ্ছে। ফলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও এর আওতাধীন অফিস গুলোতে কর্মরত কর্মচারীদের মাঝে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অফিস সহকারী পদ হতে পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়ে উচ্চমান সহকারী হয়. প্রত্যেক কালেক্টরেটের আওতায় কমপক্ষে ১০০ জন করে সাকুল্যে সম্ভাব্য ৬ হাজার ৪০০ জন অফিস সহকারী আছে। উচ্চমান সহকারী প্রত্যেক কালেক্টরেটে ১০/১৫টি করে সম্ভাব্য ৭৬৮টি পদ আছে। প্রধান সহকারী/ট্রেজারী হিসাব রক্ষক পদ প্রত্যেক কালেক্টরেটে একটি করে ১২৮টি পদ রয়েছে। অন্যদিকে সারা দেশে ৪৭০টি অফিস সুপার পদ আছে। যে কারণে কম সংখ্যক প্রধান সহকারী /ট্রেজারী হিসাব রক্ষক পদ হতে বেশি সংখ্যক অফিস সুপার পদে পদোন্নতি প্রদান সম্ভব নয়। অন্যদিকে সাঁট মুদ্রাক্ষরিক প্রত্যেক কালেক্টরেটের আওতায় উপজেলা ওয়ারী একটি করে এবং কালেক্টরেটে ১/২টি করে সম্ভাব্য ৫৯৮টি পদ আছে, যে কারণে সাঁটমুদ্রাক্ষরিকগণ অফিস সুপার পদে দ্রুত অল্প সময়েই পদোন্নতি পেয়ে অফিস সুপার/প্রশাসনিক কর্মকর্তা হবে; অন্যদিকে উচ্চমান সহকারী/অফিস সহকারী কয়েক হাজার কর্মচারী পদোন্নতি হতে বঞ্চিত হবে, অর্থাৎ উক্ত পদ দুইটি বøক পদ হয়ে যাবে। প্রস্তাবিত প্রশাসনিক কর্মকর্তার ফিডার পদে পাঁচ বছর চাকরি করতে হলে অফিস সহকারী পদধারীদেরকে পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়ে অধিকাংশ কর্মচারী অবসরে গমন করবে ফলে অফিস সহকারীগণের প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি প্রাপ্তির সুযোগ সীমিত হয়ে যাবে। অফিস সহকারী পদে নিয়োগ যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, অথচ পদোন্নতির ক্ষেত্রে স্নাতক করা হয়েছে; যা যথার্থ নয়। তাছাড়া বর্তমান নিয়োগ বিধিতে প্রশাসনিক কর্মকর্তার ফিডার পদ গুলো অর্থাৎ অফিস সুপার, সিএ কাম উচ্চমান সহকারী, প্রধান সহকারী, ট্রেজারী হিসাব রক্ষক ও উচ্চমান সহকারীর এক বা একাধিক পদে পাঁচ বছর চাকরিকাল হতে হবে উল্লেখ করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে প্রধান সহকারী, ট্রেজারী সহকারী ও উচ্চমান সহকারীগণ প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি প্রাপ্তিতে দীর্ঘ সময় বিলম্বিত হওয়ায় পদোন্নতি হতে বঞ্চিত হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি দফতরের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদে (উচ্চমান ও নিুমান সহকারী, সাঁটলিপিকার-কাম কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী, ডেসপাস রাইডার, দফতরি ও এমএলএসএস ইত্যাদি) জনবল নিয়োগে অভিন্ন বিধিমালা করতে গত জানুয়ারী মাসে উদ্যোগ শুরু করে সরকার। এতে বিভিন্ন সংস্থায় একই সময়ে একই পদে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের চাকরি স্থায়ীকরণ, নিয়মিতকরণ ও পদোন্নতিতে নানা অসামঞ্জস্য ও জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। এ জটিলতা দূর করতে ‘মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও সংযুক্ত অধিদফতর, পরিদফতর, দফতর এবং সংবিধিবদ্ধ সংস্থা ও কর্পোরেশনের কমন পদের নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৬’ চ‚ড়ান্ত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবিত বিধিমালাটি জানুয়ারী মাসেই প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে উপস্থাপন করা হতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, রাজউকে ইউডি পদে ৮ বছর চাকরি করলে অফিস সুপার হিসেবে পদোন্নতি পাওয়া যায়। অথচ একই পদে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরে ১২ বছর চাকরি করার পর ওই পদে পদোন্নতি মেলে। এ ধরনের বহু নজির রয়েছে সরকারি দফতরে। আর এসব নিয়ে বিশৃঙ্খলার পাশাপাশি সরকারের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঝামেলা এড়াতে কমন পদের জন্য অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়নের এ উদ্যোগ নেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, বর্তমানে চতুর্থ শ্রেণীর অনেক পদে মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের শীর্ষ ব্যক্তিরা নিজেদের পছন্দমতো প্রার্থীদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন। এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় লিখিত পরীক্ষা, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে মৌখিক পরীক্ষাও নেয়া হয় না। প্রস্তাবিত খসড়ায় বলা হয়েছে, এসব পদে নিয়োগ দিতে হলে অবশ্যই নিয়োগ কমিটি গঠন করতে হবে। কমিটি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে সুপারিশ প্রণয়ন করবে। পাশাপাশি কোন পদে কত নম্বরের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হবে তাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সরকারি বিভিন্ন দফতরের ১৩টি কমন পদের মধ্যে রয়েছে উচ্চ ও নিম্নমান সহকারী, প্লেইন পেপার কপিয়ার, ডুপ্লিকেটিং মেশিন অপারেটর, সাঁটলিপিকার, সাঁটমুদ্রাক্ষরিক, অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক, মুদ্রাক্ষরিক কাম অফিস সহকারী, ডেসপাস রাইডার, দফতরি, নিরাপত্তা প্রহরী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও এমএলএসএস। সচিবালয়ে উল্লিখিত পদের জন্য বিশেষ নিয়োগ বিধিমালা ২০১০ অনুসরণ করা হয়। এছাড়া সচিবালয়ের ক্যাডারবহির্ভূত গেজেটেড কর্মকর্তা ও নন-গেজেটেড কর্মচারী নিয়োগে বিধিমালা ২০১৪ অনুসরণ করা হয়। এক সংস্থার সঙ্গে অন্য সংস্থার নিয়োগবিধির কোনো মিল নেই। বরং প্রায় ক্ষেত্রেই তা বিপরীতধর্মী। ফলে বিভিন্ন সংস্থায় একই সময়ে একই পদে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তির চাকরি স্থায়ীকরণ, নিয়মিতকরণ এবং পদোন্নতিতে কেউ এগিয়ে কেউ বা পিছিয়ে পড়ছেন।



 

Show all comments
  • Md. Abdul Hamid, UDA, Establishment Sec. Office of the Deputy Commissioner, Tangail ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৮:০১ পিএম says : 1
    জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৮ প্রণয়ন বিষয়ে অভিমত। (১) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, প্রশাসন-৩ শাখার স্মারক নং-০৫.০০.০০০০.১১২.২২.০৫৮. ১৪(অংশ-২), তারিখ: ২৯ মাঘ ১৪২৪/ ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ এবং (২) বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, ঢাকা বিভাগ, ঢাকার সংস্থাপন শাখার স্মারক নং-০৫.৪১.৩০০০.০১৪.১১.০০৪.১৮-২৪, তারিখ: ০১ ফাল্গুন ১৪২৪/ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ মোতাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ মাঠ পর্যায়ের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের কর্মচারী নিয়োগ বিষয়ে ১৯৮৬ সনের নিয়োগ বিধির অবসান কল্পে নতুন নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে খসড়ার উপর মতামত চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতি (বাকাসস), টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে এ বিষয়ে আমার অভিমত নিম্নরূপ: জেলা প্রশাসন ঐতিহ্যবাহী এবং জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ দপ্তরের ব্যবস্থাপনায় দক্ষ জনবলের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। দক্ষ ও বর্তমান ডিজিটাল অফিস ব্যবস্থাপনার জন্য যুগোপযোগী জনবল সৃষ্টিসহ মেধাবীদের জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের এ নিয়োগ বিধিমালার আওতাভুক্ত নন ক্যাডার পদসমূহে চাকরিতে আকৃষ্ট করার নিমিত্ত পদোন্নতির সুযোগ থাকা জরুরি। উল্লেখ্য যে, জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ এর ১৬ থেকে ১৩ নং গ্রেডের (৩য় শ্রেণিভুক্ত) সকল পদের বর্তমান কাজের পরিধি মূলতঃ একইরূপ। আরও দৃঢ়ভাবে বলা যায়, মুখ্য কাজ কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটভিত্তিক। এ কারণে উল্লিখিত বিভিন্ন ক্যাটাগরি পদে পৃথক বেতনক্রমে নিয়োগের বিধান রহিত করে উচ্চতর গ্রেডভুক্ত পদসমূহ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হলে দক্ষ জনবল গড়ে উঠবে বলে প্রতীয়মান হয়। বিদ্যমান ব্যবস্থাপনা বা প্রণীত খসড়া নিয়োগ বিধিতে উল্লিখিত (১৬-১৩ গ্রেডভুক্ত) বিভিন্ন পদের পরিবর্তে চাকরিতে প্রবেশের একটি মাত্র এন্ট্রি পদ (১৬নং গ্রেডে) থাকা বাঞ্ছনীয় এবং বিদ্যমান বাস্তবতায় উক্ত গ্রেডভুক্ত (১৬নং) বিভিন্ন পদবির পরিবর্তে ‘‘সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা’’ পদবি প্রবর্তন করে এ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষার হার বৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে সরাসরি নিয়োগের শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরিবর্তে স্নাতক বা সমমান ডিগ্রিকরণসহ এ পদটি ১৫নং গ্রেডভুক্ত করা আবশ্যক। ‘‘সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা’’ পদবি প্রবর্তন করা হলে এর মাধ্যমে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের জনবল ব্যবস্থাপনা যুগোপযোগী ও গতিশীল হবে। এতে একদিকে, কর্মরত কর্মচারীদের পদবি পরিবর্তনসহ পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টির ফলে তাদের বহুদিনের কাঙ্খিত প্রত্যাশা পূরণ হবে, অপরদিকে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনে দক্ষ জনবল সৃষ্টির মাধ্যমে তৃণমূলের জনগণের প্রত্যাশিত সেবা প্রদান গতিশীল হবে মর্মে আশা করা যায়। এর ফলে জেলা প্রশাসনের রাজস্ব বিভাগের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা/ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারী কর্মকর্তা পদবি প্রবর্তন করায় উদ্ভূত পরিস্থিতে মহামান্য বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, হাই কোর্ট বিভাগে রীট পিটিশন চলমান থাকায় তা নিষ্পত্তিসহ উক্ত পদ দু’টির নিয়োগ/পদোন্নতি নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত যে স্থবির অবস্থা রয়েছে তারও অবশান হবে বলে আশা করা যায়। প্রাসঙ্গিক বিষয়ে আরও উল্লেখ্য যে, ১৬ নং গ্রেডে নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মচারীগণ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনে ক্ষেত্রভেদে ২৫-৩০ বছর চাকরি করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শাখাসমূহে উচ্চমান সহকারী পদে (১৫নং গ্রেডে) পদোন্নতি পেয়ে থাকেন। জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ জারি পূর্বকালে তত দিনে তাঁরা ১৫বছর চাকরি করে ৩(তিন)টি টাইম স্কেল পেয়ে ১৩নং গ্রেডে উন্নীত হন [টাইম স্কেল প্রবর্তনের পূর্বে এরূপ পদোন্নতির সাথে বেতনক্রম পরবর্তী ধাপে উন্নীত হওয়ার সুযোগ ছিল। বর্তমানে এসুযোগ রহিত হয়েছে; যার কারণ বোধগম্য নয়]। এ পর্যায়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উচ্চমান সহকারী পদে কর্মরত থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ১৩নং গ্রেডে গোপনীয় সহকারী-কাম-উচ্চমান সহকারী অথবা অফিস সুপারিনটেন্ডেন্ট পদে পদোন্নতি নিয়ে উপজেলা পর্যায়ে পদায়নের জন্য মানসিক প্রস্তুতি বা আগ্রহ কোনটি থাকে না এবং উক্তরূপ পদোন্নতি গ্রহণে আগ্রহ না থাকায় পদোন্নতির ক্ষেত্রে স্থবিরতা দেখা দেয়। এ অবস্থার নিরসনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শাখাসমূহে বিদ্যমান উচ্চমান সহকারী পদবি পরিবর্তন করে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদবি করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে সম্প্রতি সৃজিত প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ দুটি পরস্পর বদলিযোগ্য করা হলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা সুদৃঢ় হবে।
    Total Reply(1) Reply
    • মোস্তফা ১৩ মার্চ, ২০১৮, ১০:৪৬ এএম says : 4
      জনাব আব্দুল হামিদ সাহেবের মতামতের সাথে আমি একমত।
  • মোঃ সাইফুল ইসলাম ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৩:২৪ পিএম says : 0
    ভূমি মন্ত্রানলয়ের অফিস সহকারী ও অফিস সহায়ক সরকারী নিতি ভুক্ত বাবে বেতন/ভাতা পায়। কিন্তু ঐ একই মন্ত্রালয়ে পরিচন্ন কর্মী মাত্র ৩০০০/ টাকা হরে বেতন পায়। আর বাংলাদেশের অন্যান্য মন্ত্রালয়ের পরিচন্ন কর্মী ৪থ শ্রেনীর পদ হিসেবে বেতন পাচ্ছে। একই দেশে দুই আইণ।যার হলে তারা মনবতায় জিপন জাপন করছে। এমতাবস্থায় তাদেকে ৪র্থ শ্রেনী হিসেবে পদোন্নতি মাধ্যমে অফিস সহায়ক প্রধান করা হোক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডিসি-ইউএনও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ