পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কূটনৈতিক সংবাদদাতা : পায়রা কিংবা সোনাদিয়াÑবাংলাদেশের যেকোনো জায়গায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে যুক্ত হতে আগ্রহী চীন। সেইসাথে বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগেও আগ্রহী চীন। ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিংকিয়াং গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিকাব টক অনুষ্ঠানে তার দেশের এ অবস্থানের কথা জানান। বাংলাদেশে অঅইএস-বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আইএসের উপস্থিতির ব্যাপারে জাজমেন্ট দেয়া কোনো কূটনীতিকের কাজ নয়। ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ডিকাব) সভাপতি আঙ্গুর নাহার মন্টির সঞ্চালনায় ওই অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পান্থ রহমান।
সাংবাদিকরা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীনের বিনিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে মা মিং কিয়াং বলেন, সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীনের দুটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছিল। আমি মনে করি, ওই গভীর সমুদ্রবন্দরটি এখন আর অগ্রাধিকার প্রকল্প নয় এবং এখন পায়রার ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। পায়রা কিংবা সোনাদিয়া, যেখানেই হোক না কেন, গভীর সমুদ্রবন্দর বাংলাদেশের জন্য সুফল বয়ে আনবে। কেননা এখন বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানির জন্য সিঙ্গাপুর কিংবা শ্রীলঙ্কার ওপর নির্ভর করতে হয়। কাজেই বাংলাদেশে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে যুক্ত হতে চীন আগ্রহী।
বাংলাদেশ একাধিক পক্ষকে নিয়ে কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করলে চীন তাতে যুক্ত হবে কি না, জানতে চাইলে মা মিং কিয়াং বলেন, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে যেকোনো দেশের যুক্ত করার ব্যাপারে আমাদের অবস্থান নমনীয়। সোনাদিয়া কিংবা পায়রা যেখানেই হোক না কেন, বন্দরটির মালিক বাংলাদেশের সরকার ও তার জনগণ। আমরা এখানে ঠিকাদার, বড়জোর পরিচালনাকারী। কাজেই এখানে কোনো বন্দর হলে যেকোনো দেশের সঙ্গে আন্তরিকতার সঙ্গে আমরা সহযোগিতা করতে রাজি আছি।
তিনি বলেন, ভূ-প্রাকৃতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ একটি সুবিধাজনক অঞ্চলে অবস্থান করছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। গত দুই-তিন বছরে চীনা বিনিয়োগ কম থাকলেও চলতি বছর প্রচুর বিনিয়োগকারী এ দেশে আসবে। বিশেষ করে জ্বালানী খাত, সরকারি প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণ ও তৈরি পোশাকখাতে বিনিয়োগে আগ্রহী চীন। এজন্য বাংলাদেশ ও চীনকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
চীন বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য করতে প্রস্তুত এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ এবং চারদেশীয় অর্থনৈতিক জোন বাস্তবায়নেও বাংলাদেশ সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ ও চীনের সামরিক সহযোগিতার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সহযোগিতা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। কারণ, দুই দেশের সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে কৌশলগত আস্থার সম্পর্ক আছে। এই সম্পর্ক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখছে। প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামর্থ্য পর্যায়ক্রমে বেড়ে উঠুক, এটাই আমরা দেখতে চাই।
বিনিয়োগ নিয়ে তিনি বলেন, গত বছরে ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমারসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে চীন ব্যাপকহারে বিনিয়োগ করেছে। ‘এক বন্ধনী এক রাস্তা’ এ নীতিতে চীন এ অঞ্চলের উন্নয়নে শরিক হতে চায়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে প্রচ- বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। আগামী ৫ বছরে চীন বিদেশ থেকে ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করবে। এ পণ্য তৈরি করে চীনে রফতানি করলে বাংলাদেশ লাভবান হবে এবং বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা কমে আসবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, চীনে প্রায় ১.৩ বিলিয়ন মানুষ বাস করে। সে হিসেবে আসলে আমাদের অর্থনীতি অতটা বড় নয়। আমি মনে করি গড় হিসেবে চীনের অর্থনীতি ৮০ থেকে ৯০তম দেশের মধ্যে পড়বে।
রাষ্ট্রদূত মা মিংকিয়ান বলেন, বাংলাদেশ মধ্যম-আয়ের দেশ হিসেবে যেমন ২০২১ সালকে টার্গেট ধরেছে। চীনও তেমনি ওই বছরটিকে একইভাবে টার্গেট ধরেছে। কারণ ওই বছরে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১০০ বছর পূর্ণ হবে।
তিনি বলেন, ঐতিহাসিক দিক থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক নিবিড়। নবী বলেছেন, জ্ঞান অর্জন করতে হলে চীনে যাও। কিন্তু আমাদের দেশে প্রচলিত আছে ‘জ্ঞান অর্জন করতে হলে বাংলা যাও।’ এ বাংলা থেকে হাজার বছর আগে অতীশ দীপঙ্কর চীনে গিয়ে জ্ঞান বিতরণ করে এসেছিলেন। তাছাড়া এ অঞ্চলে আমরা গণিত, দর্শন ও বিশেষ করে বৌদ্ধ বাণীর অমূল্য শিক্ষা অর্জন করতে এসেছি।
সন্ত্রাসবাদ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, এটি কোনো দেশের একক সমস্য নয়। এটি এখন বিশ্বায়িত সংকট। একটি দেশ যত শক্তিশালীই হোক সে একা এটি যেমন মোকাবিলা করতে পারবে না, তেমনি একটি দেশ যতই গরিব হোক এর আক্রমণ থেকে রেহাই পাবে না। সকলকে মিলে এটির মোকাবিলা করতে হবে।
দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার পর পশ্চিমা বিশ্ব বাংলাদেশে ‘আইএস’-এর অবস্থান রয়েছে যে তথ্য দিয়েছে তা তদন্ত না করেই চীন এ ধরনের সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে না বলে জানান চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিংকিয়াং।
তিনি বলেন, তদন্তের আগে কোনো বিষয় সম্পর্কে পূর্বানুমান করাটা সমীচীন নয় এবং জাজমেন্ট দেয়া কোন কূটনীতিকের কাজ নয়। ওই হামলাগুলোর সঙ্গে আইএস ছিল, না সন্ত্রাসীরা ছিল সে ব্যাপারে চীন পুলিশ ও র্যাবের তদন্তের ওপর নির্ভর করতে চায়। আমি একজন কূটনীতিক হিসেবে আগেই কোনো অনুমান করতে পারি না। অনুমানের ভিত্তিকে চীনের লোকজনকে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যেতে বলতে পারি না। এখানে কিছু বলার গুরুত্ব সম্পর্কে আমি জানি। তাই আমার সতর্ক থাকা উচিত।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ ও চীনের ৪০ বছরের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন চীনা রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, শুরু থেকে বাংলাদেশের উন্নতিতে চীন যেভাবে পাশে ছিল ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।