পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রামে মিটারে চলছে না অটোরিকশা। পুলিশের তোড়জোড়ও থেমে গেছে। যাত্রীদের জিম্মি করে গলা কাটা ভাড়া আদায় চলছে। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার কয়েক গুণ ভাড়া আদায় করছে চালকেরা। গণপরিবহন সংকটের কবলে পড়া নগরবাসী বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত ভাড়া গুনছে।
এদিকে মহানগরীতে চলাচলকারী অটোরিকশার মাত্র দুই ভাগ সরকারি নির্দেশনা মেনে মিটারে চলছে। অটোরিকশার ৯৮ ভাগই চলে চুক্তিতে। বকশিস দাবি করে ৮৭ ভাগ সিএনজি অটোরিকশা চালক। ৩৩ ভাগ অটোরিকশা এখনও মিটারবিহীন। আর মিটার থাকলেও তা নষ্ট ২৮ ভাগ সিএনজি অটোরিকশার। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক পর্যবেক্ষণে এমন চিত্র উঠে এসেছে। রাজধানী ঢাকায় ১ নভেম্বর থেকে সরকার নির্ধারিত ভাড়া কার্যকর হয়। তবে চট্টগ্রাম মহনগরীতে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে মিটারে অটোরিকশা চলাচল বাধ্যতামূলক করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল সিএমপি। কিন্তু পরবর্তীতে মালিক সমিতির অনুরোধে মিটার সংযোজনের সময় এক মাস বাড়িয়ে দেয়া হয়।
সর্বশেষ গত ২৭ জানুয়ারি সিএনজি অটোরিকশার চালক-মালিক এবং বিআরটিএ’র প্রতিনিধিদের সঙ্গে পুলিশের বৈঠকে তারা ৩১ জানুয়ারির মধ্যে মিটার সংযোজনের অঙ্গীকার করেন। পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে মিটারে ভাড়া আদায় বাধ্যতামূলক করা হয়। প্রথম কয়েক দিন মিটারে ভাড়া আদায় নিশ্চিত করতে বেশ তোড়জোড় দেখিয়েছিল নগর পুলিশ ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। কিছু অটোরিকশা আটক করা হয়। মামলা দেয়া হয় কয়েক হাজার অটোরিকশার বিরুদ্ধে।
মামলার ভয়ে কয়েক হাজার অটোরিকশা মিটার সংযোজন করে। তবে মিটারে ভাড়া আদায় নিশ্চিত করতে পুলিশি তৎপরতা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এই সুযোগে সিএনজি অটোরিকশা চালকেরা তাদের পুরনো পদ্ধতিতে ফিরে যায়। মিটার থাকলেও তারা মিটারে ভাড়া আদায় করছে না। পুলিশ বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছে। বাধ্য হয়েই যাত্রীরা অটোরিকশা চালকদের কথামতো ভাড়া দিচ্ছে।
রোববার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মাঠে নামে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সকাল ১১টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত নগরীর বহদ্দারহাট, কর্ণফুলী সেতু, কালুরঘাট, চকবাজার, লালদীঘি পাড় এলাকায় নগরীতে সিএনজি অটোরিকশার মিটারে চলাচল পর্যবেক্ষণ করে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সমিতির মহাসচিব মো: মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সিএনজি অটোরিকশার মিটারে চলাচল পর্যবেক্ষণে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে সমস্যার প্রকৃত অবস্থা জনসাধারণ ও প্রশাসনের সামনে তুলে ধারার চেষ্টা করা হয়েছে। এছাড়া পর্যবেক্ষণে বিশেষ কিছু সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে, তার ভিত্তিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে।
তিনি বলেন, বন্দরনগরীতে সিএনজি অটোরিকশার ভাড়ার হার পুনর্নির্ধারণের পর প্রথম কয়েক দিন বেশ তোড়জোড় দেখিয়েছিল নগর পুলিশ ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এতে সংখ্যায় কম হলেও মিটারেই চলছিলেন অটোরিকশা চালকরা, স্বস্তিও এসেছিল নগরবাসীর মধ্যে। কিন্তু কয়েক দিন যেতে না যেতেই আবার পুরনো চিত্রের দেখা মিলছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চালক মিটার অনুযায়ী ভাড়া নিতে আগ্রহী নন। হয় তারা মিটার বন্ধ রাখেন, নয়তো মিটারে ওঠা ভাড়ার চেয়ে বেশি দাবি করেন।
সমিতির প্রতিবেদনে বলা হয়, নি¤œ ও মধ্যবিত্ত আয়ের যাত্রীসাধারণের বাহন হিসেবে পরিচিত দেশীয় প্রাকৃতিক গ্যাসে নামমাত্র খরচে পরিচালিত হয় সিএনজি চালিত অটোরিকশা। কিন্তু যাত্রীদের কথা বিবেচনায় না এনে মালিক ও চালক সমিতির দাবি অনুযায়ী সরকার এক লাফে যাত্রী ভাড়া ৬০ ভাগ বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু সরকার নির্ধারিত এই ভাড়া আদায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি। আর এ সুযোগে চালকেরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেই চলেছে।
ফেব্রুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলকারী অটোরিকশাসমূহে মিটারে চলাচল ও যাত্রীদের পছন্দের গন্তব্যে যাতায়াত নিশ্চিত করার ঘোষণা দেয়া হয় সরকারিভাবে। তারপরও চট্টগ্রাম মহানগরীতে সিএনজি অটোরিকশা মিটারে চলে না এবং যাত্রীদের পছন্দের গন্তব্যেও যায় না। এ সেক্টরে চলমান সীমাহীন অতিরিক্ত ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি নিয়ে যাত্রীসাধারণের অভিযোগের অন্ত নেই।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটির ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নগরীর পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ স্পটে সিএনজি অটোরিকশা মিটারে চলাচল কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য মাঠে নামে। এই সময়ে ৩৬২টি অটোরিকশা, ৩৮৪ জন যাত্রী ও ৩৬২ জন চালকের সাথে কথা বলে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। প্রতিবেদনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলরত অটোরিকশার ৯৮ ভাগ চুক্তিতে চলাচল করে। মিটারে চলাচলকারী অটোরিকশার ৮৭ শতাংশ ২০ টাকা থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বকশিস দাবি করে। যাত্রীদের চাহিদার গন্তব্যে যেতে রাজি হয় না ৮৫ ভাগ অটোরিকশা।
চট্টগ্রাম মহানগরীতে বৈধ অটোরিকশা ১৩ হাজার। অবৈধ আরও অন্তত ৭ হাজার অটোরিকশা চলছে নগরীতে। মহানগরীর লোকসংখ্যা অনুযায়ী গণপরিবহনের সংখ্যা কম। এ কারণে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে অটোরিকশায় চড়তে বাধ্য হচ্ছে যাত্রীদের। সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন ভাড়া ৪০ টাকা হলেও এ ভাড়া ৭০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বিশেষ অভিযান আপাতত বন্ধ রয়েছে। তবে যাত্রীদের অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েক হাজার অটোরিকশার বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। নিয়মিত অভিযানে মিটারে ভাড়া আদায় মনিটর করা হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।