পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মাদকের চোরাচালান, বাজারজাত ও সামগ্রিক বিপণন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িয়ে পড়ছে কোমলমতি শিশু-কিশোররাও। পথশিশুদের কাছে মাদক হিসেবে আকর্ষণীয় মরণঘাতী নেশা ড্যান্ডি
দেশের যুবসমাজ থেকে শুরু করে নারী-শিশুরাও আজ মাদকের ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এই ধ্বংসাত্মক লীলা থেকে বাদ নেই কেউ। ভয়াল নেশায় জড়িয়ে পড়ছে শিশু-কিশোররা। মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানসহ বাদ নেই কোনো শ্রেণীই। তবে নেশাসক্ত শিশু-কিশোরদের মধ্যে পথশিশুদের সংখ্যাই বেশি। যাদের অধিকাংশের বাস আবার ফুটপাথ আর বস্তিতে। বলা হয়ে থাকে, আজকের শিশু আগামী দিনের কর্ণধার। অথচ আগামী দিনের কর্ণধারদের এভাবে সমূলে ধ্বংস করে দিচ্ছে ভয়াবহ মাদক। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৭০ লাখ। তার মধ্যে শিশু ও কিশোর মাদকাসক্ত রয়েছে ৪ লাখের অধিক। তবে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার হিসাব মতে, এই সংখ্যা আরো বেশি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শিশু ও কিশোররা প্রথমে সিগারেট দিয়ে নেশার জগতে প্রবেশ করে। এরপর তারা আস্তে আস্তে ফেনসিডিল ও ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকে আসক্ত হয়। তবে পথশিশু বা বস্তির শিশুদের মধ্যে ড্যান্ডি নামক মাদকে আসক্ত। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট সূত্র মতে, ঢাকা বিভাগে মাদকাসক্ত শিশুর প্রায় ৩০ শতাংশ ছেলে এবং ১৭ শতাংশ মেয়ে। মাদকাসক্ত ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী ছেলে এবং মেয়ে শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রচন্ড ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, মাদকাসক্ত শিশু ও কিশোররা বয়স বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। মাদকের বিষাক্ত নিকোটিনের কারণে তাদের কোষগুলো দুর্বল হতে থাকে। এতে তার শরীর থেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। মধ্য বয়সে বিকলাঙ্গও হয়ে যেতে পারে। ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে ৮০ ভাগ। এছাড়াও দৃষ্টিশক্তি লোপ পাওয়া, টাকা চুরির প্রবণতা বাড়া, পড়াশোনায় মনোযোগী না হওয়া, কর্মের শক্তি কমে যাওয়া, ঝগড়াপ্রবণ হওয়া, পরিবারের কথা না শোনা, ওজন কমে যাওয়া, খাওয়ায় অরুচিসহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বিপিএম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মাদক বেশিরভাগ সোর্স মাধ্যমে উদ্ধার ও জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বসে নেই, তারাও সক্রিয় মাদক ব্যবসায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। এ জন্য সমাজের সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মনিরুল ইসলাম খান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মাদক সব সময় ছিল। এখন দেশে মাদক ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। মানুষ নৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। প্রধান সমস্যা হচ্ছে মাদকসেবী ও যারা মাদক বিক্রির সাথে সম্পৃক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের দেখছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ ক্ষেত্রে যা করার তা করছে না। তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর হতে হবে। কোনোভাবেই এদের ছাড় দেয়া যাবে না। রাষ্ট্রকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মনিরুল ইসলাম খান মন্তব্য করেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে আরো জানা গেছে, গ্রামের চেয়ে শহরে বসবাসরত নারীরা আনুপাতিক হারে মাদকে বেশি আসক্ত হচ্ছে। তারা উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। পরিবারে সচ্ছলতা রয়েছে। তাদের মধ্যে আবার শিক্ষিত তরুণীরাও রয়েছে। এই সংখ্যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ পড়ুয়া তরুণীরাও। অনেকে হতাশাগ্রস্ত এবং বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় অথবা বন্ধুদের কাছে বিভিন্ন রকম কুমন্ত্রণা পেয়ে ওই মাদকগুলো গ্রহণ করে থাকে। সিগারেট, গাঁজা, ইয়াবা, প্যাথিড্রিন, ফেনসিডিল ও হেরোইনে আসক্ত হচ্ছে। তবে শহরে নারীরা বেশি আসক্ত ইয়াবা আর এলকোহলে। আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে, আশঙ্কাজনকভাবে এই পুরো প্রক্রিয়াটির সাথে প্রতিদিন জড়িয়ে পড়েছে হাজারো নারী ও শিশু। মাদকের চোরাচালান, বাজারজাত ও সামগ্রিক বিপণন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িয়ে পড়ছে নারীদের পাশাপাশি কোমলমতি শিশু-কিশোররাও। একশ্রেণির অসাধু চোরাকারবারি ও কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্যের কাছে বলি হচ্ছে এসব নারী-শিশু। এদের দিয়ে এসব অনৈতিক ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডে ব্যবহার করা হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে নারী-শিশুদের জোরপূর্বক কাজে লাগানো হচ্ছে। এসব মাদক চোরাকারবারের আড়ালে পাচার হচ্ছে নারী-শিশুসহ হাজার হাজার কোটি টাকা। নেপথ্যে চলছে অবৈধ অস্ত্রের রমরমা ব্যবসাও। শিশু মাদকাসক্তের বিষয়ে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, দেশে শিশু ও কিশোর মাদকসেবীর সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। এদের মধ্যে ৪৪ শতাংশই হচ্ছে পথশিশু। তিনি আরো জানান, ওই শিশু মাদকসেবীরা বেশি বসবাস করে বস্তিতে, গ্রামে অথবা রাস্তার ধারে। শিশুরা যাতে মাদক সেবন না করে এ জন্য পরিবারকে সচেতন করার জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রচারণা চালানো হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মানসিক রোগ বিভাগের চিকিৎসক ডা: রশিদুল হক জানান, যারা শিশু ও কিশোর অবস্থা থেকে মাদক সেবন করে থাকে তাদের মস্তিষ্কে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা তারা বেশিক্ষণ মনে রাখতে পারে না। মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে যায়। কাজেই তাদের এই নেশা থেকে বাঁচানোর জন্য পরিবারের কর্তাব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঠিকানাবিহীন পথশিশুরা সারাদিন কাগজ কুড়িয়ে, বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ড করে কিংবা কাজ করে পারিশ্রমিক হিসেবে যা পায় তা দিয়েই চলে এদের মাদক সেবন। নিকোটিন, সিলিকসিন ও সোনালি নামের নেশার ট্যাবলেট খাচ্ছে। পথশিশুদের কাছে মাদক হিসেবে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় হচ্ছে মরণঘাতী নেশা ড্যান্ডি। তারা জানায়, ড্যান্ডি খুব সহজলভ্য। জুতা জোড়া লাগানোর কাজে ব্যবহৃত আইকা গাম ড্যান্ডির প্রধান উপকরণ। পথশিশুরা মাদক ব্যবসা, বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত হওয়া ছাড়াও ধীরে ধীরে মাদকের ছোবলে আক্রান্ত হয়ে শারীরিক-মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় সবচেয়ে বেশি। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনসহ সব ধরনের বাসস্ট্যান্ড, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম চত্বরসহ রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মাদকাসক্ত শিশু-কিশোরদের হরহামেশাই চোখে পড়বে। তবে ঢাকার বাইরেও এরা সংখ্যায় কম নয়। চট্টগ্রাম মহানগরীতে পথশিশুর সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা গেছে, আসক্ত শিশু-কিশোর দিয়েই মাদক বিক্রি করা হচ্ছে। কমলাপুর রেলওয়ে থানার ওসি জানান, মাদকাসক্ত শিশুদের স্টেশন চত্বর থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। বিভিন্ন ট্রেনে করে এসব শিশু-কিশোর মা-বাবা কিংবা অন্য কারো হাত ধরে রাজধানীতে আসছে। অনেক মাদকাসক্ত শিশু-কিশোরকে আটক করে আদালতের নির্দেশে শিশু-কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। সূত্র জানায়, যারা শিশু-কিশোরদের দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি ও মাদক বিক্রি করায় তারা খুবই হিংস্র ও পাষন্ড প্রকৃতির হয়। এসব শিশুকে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সামনে কৌশলে বসানো হয় মাদক বিক্রির জন্য। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, আসক্ত শিশু-কিশোর দিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবাসিক হলগুলোতে মাদক পাচার করা হয়। শিশু-কিশোরদের ভালো পোশাক পরিয়ে, হলে থাকা শিক্ষার্থীদের স্বজন বানিয়ে ভেতরে প্রবেশ করানো হয়। ওই সব শিশু-কিশোরের সাথে থাকে ইয়াবা, হেরোইনসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। সম্প্রতি রাজধানীর কমলাপুরে ১০-১২ বছর বয়সী টোকাই আলম, জনি ও কামাল বসে জুতার আঠা শুঁকে নেশা করছিল। এ ধরনের নেশা করার কারণ জানতে চাইলে ওদের সবাই বলে, এই আঠা শুঁকলে মাথা ঝিমঝিম করে ঘুম আসে। বাবা-মা হারানোর কষ্ট ভুলে থাকতে এবং হাত-পা কেটে গেলে প্রচন্ড ব্যথা ভুলে থাকতে তারা এই নেশা করে। এ নেশার নাম জানতে চাইলে ওরা বলে, ড্যান্ডি। আর ড্যান্ডি কী জানতে চাইলে ওরা বলে নেশা। পলিথিনের ভেতর সল্যুশন ঢুকিয়ে নাকে-মুখে তার গন্ধ নিলেও ভীষণ নেশা হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কয়েক প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় ওই এলাকায় মাদক ব্যবসা পরিচালিত হয়। ওই চক্রটির সঙ্গে জড়িত রয়েছে পাঁচ শতাধিক খুচরা মাদক বিক্রেতা। বিভিন্ন সময়ে চক্রের খুচরা বিক্রেতা ও কয়েক পাইকারি বিক্রেতা গ্রেফতার হলেও মূল হোতারা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। আড়ালে থেকে মোহাম্মপুর, লালমাটিয়া, মিরপুর এলাকায় মাদকের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে ইশতিয়াক, নাদিম ওরফে পঁচিশ, পাপিয়া, পাঁচু, তানভীর, শামীম ও রানী। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও অদৃশ্য আশীর্বাদে পাপিয়া, পঁচিশ, পাঁচু ছাড়া উল্লেখযোগ্যরা গ্রেফতার হয়নি। তাদের গ্রেফতার করতে গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের হামলার শিকার হয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা। একইভাবে তেজগাঁও রেললাইন এলাকায় ডালায় সাজিয়ে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করা হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে। এখানে প্রকাশ্যে ডেকে ডেকে বিক্রি করা হয় ইয়াবা, গাঁজা। ওই রেললাইন দিয়ে হাঁটলে কিছুক্ষণ পরপর একটি জিজ্ঞাসার মুখোমুখি হতে হয় মামা লাগবে? সূত্র মতে, এখানে শতাধিক খুচরা ব্যবসায়ী রয়েছে। তারা মাদক বিক্রিকে পেশা হিসেবে নিয়েছে। ভয়ানক তথ্য হচ্ছে, নারী-পুরুষের পাশাপাশি শিশুরাও বিক্রি করছে মাদক। প্রায় সন্ধ্যায় রেললাইনে বসে মাদক বিক্রি করতে দেখা যায় মিনা, মাহমুদা, নীলা, জরিনা, সাথী নামে কয়েক নারীকে। পাশাপাশি আনোয়ার, সালাম নামে ১২-১৩ বছরের দুই শিশুকেও গাঁজা বিক্রি করতে দেখা গেছে। এ রকম অন্তত ৩০ শিশুকে মাদক বিক্রি করানো হচ্ছে ওই এলাকায়। এভাবে রাজধানীর অনেক এলাকাতেই শিশুদের দিয়ে মাদক বিক্রি করাচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নির্বিকার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।