পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তারেক সালমান : কয়েকজন মন্ত্রীর বিতর্কিত বক্তব্যে বিব্রত সরকার। মন্ত্রীদের অহেতুক বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রীদের বক্তব্য নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে চলছে নানান সমালোচনা। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির পর এ নিয়ে দেশে-বিদেশে সমালোচনার ঝড় বইছে। এতে করে সরকার বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে। এ অবস্থায় অর্থমন্ত্রী একটি পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাৎকারে বিষয়টি নিয়ে অনেক খোলামেলা কথা বলে সরকারকে আরও বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছেন বলে দলের অনেক সিনিয়র নেতা মনে করছেন। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর বিচার নিয়ে প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে বক্তব্য দিয়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এখন আদালতের কাঠগড়ায়। এ দুই মন্ত্রী প্রধান বিচারপতি নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে তার আদালত অবমাননা তথা শপথ ভঙ্গ করেছেন বলে এ সংক্রান্ত শুনানীতে প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধ তথা যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়টি এ সরকারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে দেশে-বিদেশে নানা চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র চলছে এমন কথা সরকার বার বার বলছে। এই চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করে বেশ কয়েকটি রায় কার্যকর করা সরকার সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে সরকারের দুই মন্ত্রীর বক্তব্য সরকারের জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, দায়িত্বশীল পদে থেকে আমাদের আরও সংযত হয়ে কথা বলা উচিত। সব বিষয়ে সকলে কথা বললে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় একটি জাতীয় পত্রিকায় অর্থমন্ত্রী দেয়া সাক্ষাতকার নিয়েও ক্ষমতাসীন দলে তোলপাড় চলছে। অর্থমন্ত্রীর এ সাক্ষাতকারে দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রচ- ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত। গত শুক্রবার রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় তিনি মন্ত্রীদের অহেতুক বিতর্কিত বক্তব্য ও কর্মকা-ে নিজের বিরক্তি প্রকাশ করেন।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ইস্যুতে বিদায়ী গভর্নর ড. আতিউর রহমানের পক্ষে-বিপক্ষে মন্ত্রীদের বক্তব্যে বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী। এ ইসুতে কেউ কেউ তদন্তের আগেই আতিউরকে নির্দোষ আবার কারও কারও দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টায় তিনি ক্ষুব্ধ।
ওইদিন গণভবনের সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ইস্যুতে গভর্নর ড. আতিউর রহমানের বিদায়ের পর তাকে নিয়ে অর্থমন্ত্রীর খোলামেলা বক্তব্যে কথা প্রথমে উঠে আসে। সভায় যোগদানকারী বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও দলীয় সিনিয়র নেতারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে অর্থমন্ত্রীর অতিকথনের বিষয়ে নিজেদের বিরক্তির কথা তুলে ধরেন। বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাড়াবাড়ি রকমের আচরণ করছেন বলেও অনেকে মন্তব্য করেন। তারা নিজেদের মতামত তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলেন, অর্থমন্ত্রীর অতিকথনের জন্য সরকারের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হচ্ছে। প্রতি উত্তরে প্রধানমন্ত্রী নিজেও মন্ত্রী পরিষদের অন্যতম সিনিয়র মন্ত্রী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বক্তব্যে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, একজন সিনিয়র মন্ত্রী হয়ে এভাবে তার কথা বলা ঠিক হয়নি। চিন্তা-ভাবনা করে কথা বলা উচিত ছিল। শুধু অর্থমন্ত্রী নয়, সম্প্রতি জামায়াত নেতা মীর কাসেমের বিচার ইস্যুতে খাদ্যমন্ত্রীসহ অন্য মন্ত্রীদেরও লাগামছাড়া বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে যেকোনো স্পর্শকাতর বিষয়ে সবাইকে ভেবে-চিন্তে মতামত প্রকাশেরও নির্দেশ দেন।
বৈঠকে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার মুখে ‘শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে’ আগামী নির্বাচনের কথাকে নিজের প্রাণনাশের হুমকি হিসেবে দেখছেন।
শনিবার বিএনপির কাউন্সিলের রুদ্ধদ্বার অধিবেশনে খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়েই আগামী নির্বাচন হবে’।
আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকের প্রারম্ভিক বক্তব্যে খালেদার ওই বক্তব্য প্রসঙ্গ তুলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, খালেদা জিয়া দেখলাম, হাসিনাবিহীন নির্বাচনের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, হাসিনাবিহীন নির্বাচন বলতে খালেদা জিয়া কী বোঝাতে চাইছেন? ২১ আগস্টের মতো আবার গ্রেনেড হামলা বা আবার হত্যার পরিকল্পনা করছে কি না? সেটাই হচ্ছে আমার প্রশ্ন। তার মানে আরও কিছু একটা ষড়যন্ত্রের ঘোঁট পাকাচ্ছে সে (খালেদা জিয়া)। কারণ, আর কোনো পথ তার (খালেদা জিয়া) নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাখে আল্লাহ মারে কে? শকুনের দোয়ায় তো গরু মরে না। আল্লাহ জীবন দিয়েছে, আল্লাহ কাজ দিয়েছে, যতক্ষণ কাজ শেষ না হবে, ততক্ষণ আল্লাহ হেফাজত করবে। একুশে আগস্ট বোমা হামলার আগে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য মনে করিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, যে পথে আমার বাপ গেছে, সে পথেই আমাকে যেতে হবে, এমন বক্তব্যও দিয়েছিল তারা (বিএনপি)। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তো নয়ই বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারবে না’; প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়ার এই বক্তব্যও মনে করিয়ে দেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, তারা বলেছিল, আমি আর রাজনীতি করতে পারব না। মানে, আমার অস্তিত্বই থাকবে না। তারপরই হল ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা। তিনি বলেন, দেশবাসীর জন্য কাজ করি। দেশবাসীর দোয়া আছে। দেশবাসীর কল্যাণের জন্যই আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখবে।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আশা করি, গণতন্ত্রের যে চর্চাটা, সেটা তৃণমূল থেকে হয়ে আসুক। সেটাই আমরা ব্যবস্থা করছি। জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে, যে প্রতিনিধির মাধ্যমে তাদের উন্নয়ন হবে।
দলীয় সূত্র জানায়, বৈঠকের শুরুতেই তোপের মুখে পড়েন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন। সদ্য বিদায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া এবং একটি দৈনিক পত্রিকায় কলাম লেখা নিয়ে তাকে সতর্ক করা হয়। এ সময় লেনিন বলেন, ভবিষ্যতে তিনি এ ধরনের লেখা বা কোনো মন্তব্য করবেন না।
মন্ত্রী ও দলের সিনিয়র নেতাদের বিতর্কিত মন্তব্যের ব্যাপারে বৈঠকের শুরুতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলের সভাপতিম-লীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
তিনি বলেন, ঘটনার তদন্ত হওয়ার আগেই কাউকে দোষী বলে অভিযোগ করা ঠিক নয়। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ও মন্ত্রীরা বক্তব্য দিয়ে ক্রাইসিস সৃষ্টি করছেন। কেউ কেউ কোর্টের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে কাঠগড়ায়ও দাঁড়াচ্ছেন। এতে করে দল ও সরকারের ভাবমর্যাদা নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া বিরোধী দলের কাছে ইস্যু চলে যাচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে।’ নাসিমের এ বক্তব্য বৈঠকের অন্যান্য নেতারা সমর্থন জানান।
এরপর, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. আতিউর রহমানকে নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। তারা মনে করেন অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। বিষয়টি নিয়ে শুধু গভর্নরকে আক্রমণ করে বক্তব্য দেয়াটা দায়িত্বশীলতার পরিচয় বহন করে না।
এ প্রসঙ্গে দলটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বৈঠকে বলেন, দায়িত্বশীল পদে থেকে আমাদের আরও সংযত হয়ে কথা বলা উচিত। সব বিষয়ে সকলে কথা বললে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
এরপর শেখ হাসিনা সবাইকে কড়া ভাষায় সতর্ক করে দিয়ে বলেন, দলের সিনিয়র নেতারা এমন বেফাঁস মন্তব্য করলে দল ও সরকারের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হয়। এ থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে।
জানা গেছে, দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বৈঠকে বলেন, রিজার্ভ ব্যাংক থেকে টাকা লুটের ঘটনায় শুধু বাংলাদেশকে দোষারোপ করলে ঠিক হবে না। এটা আমেরিকার রিজার্ভ ব্যাংক। কোনো টাকা রিজার্ভ ব্যাংক থেকে উঠছে, তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি না নিয়ে এত টাকা দিল কেন?
দলের সভাপতিম-লীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ঘটনার তদন্ত হওয়ার আগেই কাউকে দোষী করা ঠিক না। সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা বক্তব্য দিয়ে ক্রাইসিস সৃষ্টি করছেন। কেউ কেউ কোর্টের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে কাঠগড়ায়ও দাঁড়াচ্ছেন। এতে একদিকে সরকারের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হচ্ছে। অন্যদিকে বিরোধীদলের কাছে ইস্যু চলে যাচ্ছে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার।
আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য অনুযায়ী, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য সাবেক গভর্নর ড. আতিউরকে নিয়ে গণমাধ্যমে যে সব কথা বলেছেন তা অনেকটাই ব্যক্তি আক্রমণ। পদত্যাগ করার পর ড. আতিউরকে নিয়ে গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্যও সেই ব্যক্তি আক্রমণ ফুটে উঠেছে। নেতারা বলেন, অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। বিষয়টি নিয়ে শুধু গভর্নরকে আক্রমণ করে বক্তব্য দেয়াটা দায়িত্বশীলতার পরিচয় বহন করে না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, ওবায়দুল কাদের, কাজী জাফর উল্লাহ, নূহ আলম লেলিন, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা, দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আহমদ হোসেন, ড. আব্দুর রাজ্জাক, ড. হাছান মাহমুদ, এইচএন আশিকুর রহমান, কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান, আবদুর রহমানসহ অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা বক্তব্য দেন।
অন্যদিকে, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর বিচার নিয়ে প্রধান বিচারপতিকে জড়িয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছেন খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। গত ৪ মার্চ শনিবার একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম মৃত্যুদ-প্রাপ্ত মীর কাসেম আলীর মামলার পুনঃশুনানি দাবি করেন। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, সেই নতুন শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ্যাটর্নী জেনারেল অংশ নিতে পারবেন না। একই অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকও প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন। পরদিন রোববারও সচিবালয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় নিজের আগের দিনের কথার পুনরাবৃত্তি করেন কামরুল ইসলাম।
দেশের বিচার বিভাগের প্রধান সম্পর্কে এ ধরণের নেতিবাচক ও অসম্মানজনক বক্তব্যর পর এ দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধেও সর্বত্র এমনকি খোদ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগেও সমালোচনা শুরু হয়। মন্ত্রীদের এ বিতর্কিত বক্তব্য ঘরে-বাইরে সমালোচিত হয়। মানবতাবিরোধী বিচার নিয়ে আইনমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি ও এ্যাটর্নি জেনারেলের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার ও প্রতিপক্ষ বানিয়ে খাদ্যমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যও গ্রহণ করেনি আওয়ামী লীগের কোনও মহল।
এদিকে, মীর কাসেম আলীর বিচার ইস্যুতে প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ উঠে। এ অভিযোগে প্রধান বিচারপতি এসব মন্ত্রীদের আদালতে তলব করেন। গতকাল রোববার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে হাজির হলে দুই মন্ত্রীকে কঠোর ভাষায় তিরস্কার করেন আদালত। দুই মন্ত্রীর উপস্থিতিতেই শুনানির এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা) তাদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘যত বড় ক্ষমতাধর হোন না কেন আইন সোজা পথে চলে। আমরা অনেক সহ্য করেছি। সংবিধান রক্ষায় যে কোনো আদেশ দিতে দ্বিধাবোধ করবো না। আপনারা সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়ে তা ভঙ্গ করলে পরিণতি কি হবে?’
প্রধান বিচারপতি বলেন, এই কোর্ট সংবিধানের অঙ্গ। সরকারের অঙ্গ নয়। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। মন্ত্রী শুধু প্রধান বিচারপতিকে ছোট করেননি, গোটা বিচার বিভাগকে পদদলিত করেছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, মন্ত্রীদের শপথ ভঙ্গ সম্পর্কে সর্বোচ্চ আদালতের এ বক্তব্যেও নতুন করে সরকার বিব্রতকর অবস্থায় পড়ল। বিষয়টির চূড়ান্ত মীমাংসার জন্য আগামী ২৭ মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ওই দিন সর্বোচ্চ আদালতে এ বিষয়টির মীমাংসা হওয়ার কথা।
আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, অবসরের পরে বিচারপতিদের রায় লেখা যাবে কি যাবে না, এ নিয়ে প্রধান বিচারপতি ও অবসরে যাওয়া বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের মধ্যে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, তার সমাধানে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়। সেই বিতর্কের রেশ কাটতে না কাটতেই দুই মন্ত্রী নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন, যা সরকার ও দলের জন্য অস্বস্তিকর।
আরেক সিনিয়র নেতা বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধী মীর কাসেম আলীর পক্ষ থেকে বিচার ঠেকানোর অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। তাই এ নিয়ে কৌশলী রাজনৈতিক চাপ তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু দুই মন্ত্রী যেভাবে প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করেছেন, তাতে মনে হতে পারে সরকার বিচার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে চায়। তিনি আরও বলেন, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের মনোভাব বুঝে আগেও বিভিন্ন ইস্যুতে বক্তব্য দিয়ে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক কিছু না ভেবে হাওয়ায় গা ভাসিয়েছেন। এটা প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষুব্ধ করেছে এবং মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি তা প্রকাশও করেছেন।
এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের দুই সদস্য বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পরই গম কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলেন কামরুল। তবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ক্ষমা করেও দেন। এবার তিনি আরও বড় অপরাধ করেছেন। ওই দুই নেতা আরও বলেন, সরকারকে বেকায়দায় ফেলার মতো বিভিন্ন সময়ে অনেক অপ্রয়োজনীয় কথাও বলেছেন কামরুল, যা সরকারের ও দলের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিষয়ে কথা বলে প্রধান বিচারপতি ও এ্যাটর্নি জেনারেলকে নিয়ে খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সরকারের ভাবমর্যাদা নষ্ট করেছে।
প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর বিতর্কিত বক্তব্যর বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, দায়িত্বশীল সবাইকে আরও দায়িত্ববান হতে হবে। যে কোনও বিষয়ে যে কেউ কথা বলবেন, এমন প্র্যাকটিস ঠিক নয়। আমাদের সবাইকে কথার চেয়ে কাজের প্রতি আরও যতœবান হতে হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে এডভোকেট কামরুল ইসলাম যা বলেছেন, এটা সরকারের কথা নয়। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তা পরিষ্কার করেছেন। অতীতের ভুল-শুদ্ধ নিয়ে কাউকে কোনও কথা না বলার পরামর্শ দিয়ে হানিফ বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করবে; এটাই জাতির প্রত্যাশা। সব বিষয়ে সবাইকে কথা চালাচালি না করারও পরামর্শ দেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।