পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কঙ্গোতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দুর্গম ও ভিন্ন পরিবেশের কাজকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর দুই নারী পাইলট- ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাইমা হক এবং তামান্না-ই-লুৎফী। নিষ্ঠা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সফলভাবে মিশন শেষ করে দেশে ফিরে আসবেন বলেও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তারা। হেলিকপ্টারে ওঠার আগে পাইলট নাইমা ও তামান্না গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসে বিমান বাহিনীর ঘাঁটি বাশার-এ উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে এসব কথা বলেন এই দুই নারী পাইলট। মিশনে বিমান বাহিনীর আরও নারী সদস্য থাকলেও এই প্রথমবারের মতো দুই নারী পাইলট নাইমা হক এবং তামান্না-ই লুৎফী কঙ্গোতে শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দিতে আগামী বৃহস্পতিবার ৭ ডিসেম্বর রাতে বাংলাদেশ ছেড়ে যাবেন। সেখান তারা থাকবেন একবছর। কঙ্গোতে হেলিকপ্টারের পাইলট হিসেবে শান্তিরক্ষা মিশনে অন্যদের কাজে সহায়তা করবেন তারা। উড্ডয়ন শেষে নেমে এলেন নাইমা ও তামান্নাফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাইমা হক সাংবাদিকদের বলেন, দুর্গম ও ভিন্ন পরিবেশে কঙ্গোতে কাজ করতে হবে। সেজন্য বাংলাদেশ বিমান বাহিনী আমাদের অনেক প্রশিক্ষণ দিয়েছে। কঙ্গোর পাহাড়ি অঞ্চলে দায়িত্ব পালনের জন্য এরইমধ্যে আমরা বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে ফ্লাই করে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এছাড়া, আমরা বিভিন্ন ধাপে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এবারই প্রথমবারের মতো কঙ্গোতে যাচ্ছি। তারা বলেন, গত ১৪ বছর ধরে বিমান বাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করে আসছে। গত সাত বছর যাবত বিমান বাহিনীর নারী সদস্যরা কাজ করছেন। কিন্তু প্রথমবারের মতো আমরা দুই পাইলট সেখানে যাচ্ছি। নারী পাইলট নাইমা হক বলেন, আমরা সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। বৈরি পরিবেশে কিভাবে কাজ করতে হবে সে বিষয়ে আমাদের প্রশিক্ষণ রয়েছে। সব ধরনের বৈরি পরিবেশ ও পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবার দোয়া কামনা করেন তিনি। পাইলট হিসেবে তাদের মিশনে যাওয়া নিয়ে স্বজনদের প্রতিক্রিয়া কী জানতে চাইলে নাইমা হক বলেন, স্বজন হিসেবে নার্ভাসনেসতো থাকবেই। তবে পরিবারের সদস্যরা এ নিয়ে গর্বিত। তারা আমাদের উৎসাহ দিয়েছেন।
যারা এমন চ্যালেঞ্জিং পেশা নিতে চান সেসব নারীর উদ্দেশে তাদের পরামর্শ সম্পর্কে জানতে চাইলে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তামান্না-ই লুৎফী বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একটি ডায়নামিক ও অপারেশনাল ফোর্স। এয়ারফোর্সেও অনেক সুযোগ আছে। এখানে মেয়েদের কাজ করার পরিবেশ খুবই চমৎকার। বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে এখানে আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হয়েছে। কারও কাজ করার ইচ্ছা থাকলে অবশ্যই তারা স্বাচ্ছন্দ্যে এখানে আসতে পারেন। অবশ্যই আমরা দেশের প্রতিরক্ষার জন্য কাজ করছি। এটা বড় সম্মান ও গৌরবের বিষয়। পাইলট তামান্না- ই- লুৎফীতিনি বলেন, বিমানবাহিনীতে বর্তমানে তারা তিন কর্মকর্তা হেলিকপ্টারে রয়েছেন। তিন জন রয়েছেন ট্রান্সপোর্টে। আরও কিছু নারী প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময় শেষে দুই নারী পাইলট হেলিকপ্টার উড্ডয়নের মহড়ায় অংশ নেন। আইএসপিআর জানায়, ২০০০ সালে প্রথম বাংলাদেশ বিমান বাহিনীসহ সামরিক বাহিনীতে নারী কর্মকর্তা নিয়োগ শুরু হয়। সময়ের পরিক্রমায় বর্তমানে বিমান বাহিনীর বিভিন্ন শাখায় নারী কর্মকর্তারা কাজ করছেন। তারা জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পেশাদারিত্ব ও দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছেন। আর এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী দু’জন নারী পাইলটকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োগ দিয়েছে। প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাইয়ের পর বিমান বাহিনীর দুই নারী কর্মকর্তা ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাইমা হক এবং ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তামান্না-ই-লুৎফী উড্ডয়ন প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত হন। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ঘাঁটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের ১৮ নম্বর স্কোয়াড্রনে বেল-২০৬ হেলিকপ্টারে বেসিক কনভারশন কোর্সের জন্য মনোনীত হওয়া এই দুই নারী কর্মকর্তা ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট থেকে তাদের গ্রাউন্ড প্রশিক্ষণ শুরু করেন। একই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো তাদের উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ শুরু করেন। পরবর্তীতে ২৫ ঘণ্টা সফল প্রশিক্ষণ উড্ডয়ন শেষ করেন তারা। ওই বছরের ১৭ ডিসেম্বর তারা বৈমানিক হয়ে ওঠার প্রাথমিক ধাপের একটি অংশ শেষ করে এককভাবে উড্ডয়ন করেছেন। নাইমা হকএরপর তারা ৬৫ ঘণ্টা উড্ডয়নের প্রাথমিক ধাপ শেষ করার পর বিমান বাহিনীর বিভিন্ন হেলিকপ্টার স্কোয়াড্রনে দায়িত্ব পালন করেন। নাইমা ও তামান্না বেল-২০৬ হেলিকপ্টার কনভারশন কোর্স, এমআই-১৭, এমআই-১৭১ এবং এমআই-১৭১ এসএইচ হেলিকপ্টার প্রশিক্ষণ শেষ করেন। তারা ভারত থেকে এভিয়েশন মেডিসিনে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। দু’জনই পার্বত্য চট্টগ্রামে অপারেশন্স উত্তরণে অপারেশনাল পাইলট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সাবেক কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হক ও গৃহিণী নাসরীন বেগমের মেয়ে নাইমা হক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হিসেবে ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর কমিশন লাভ করেন। এরআগে ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি ক্যাডেট হিসেবে প্রশিক্ষণ শুরু করেন। হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি শেষ করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস থেকে তিনি বিএসসি কোর্স শেষ করেন। অন্যদিকে বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত গ্রæপ ক্যাপ্টেন লুৎফর রহমান ও গৃহিণী আয়েশা সিদ্দিকার মেয়ে তামান্না-ই-লুৎফী বিএএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি শেষ করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস থেকে বিএসসি কোর্স শেষ করেছেন। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর দুই পাইলটদেশের গন্ডি পেরিয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নারী পাইলট নিয়োগ নারীর ক্ষমতায়ন ও সামরিক বাহিনীর ইতিহাসে একটি মাইল ফলক হিসেবে কাজ করবে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর। ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত তিনটি কন্টিনজেন্টে বিমান বাহিনীর মোট ৩৫৮ জন শান্তিরক্ষী রয়েছে। এদের মধ্যে পাইলট নাইমা ও তামান্নাকে নিয়ে নারী অফিসারের সংখ্যা দাঁড়াবে ১৫ জনে। আইএসপিআর আরও জানায়, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে প্রতিস্থাপন কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিমান বাহিনীর ১১৫ জন সদস্য গত বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) কঙ্গোর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। কন্টিনজেন্টের অন্য সদস্যরা আগামী ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে কঙ্গোতে যাবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।