এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের নারীরাও
আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। লিঙ্গ সমতার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দিনটি
ওয়াসফিয়া নাজরীন ও নিশাত মজুমদারকে এ নামে চেনে বিশ্ব। দেশের এ দুই কৃতী সন্তান বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট জয় করে শুধু দেশবাসীকেই নয়, গোটা পৃথিবীকে দেখিয়ে দিয়েছেন বাংলার নারীকে গ-িবদ্ধ করে রাখার দিন শেষ। আর সে কারণেই এখন সংসারের কাজ করার পাশাপাশি পরিবারের সচ্ছলতা আনতে এবং দেশের জন্য নিজ মেধাকে ব্যবহারের উদ্দেশ্য নিয়ে গতানুগতিক পেশার বাইরেও চ্যালেঞ্জিং, সৃষ্টিশীল ও বৈচিত্র্যপূর্ণ পেশায় নারীরা সফলভাবে কাজ করছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত একদশকে বিভিন্ন পেশার নারীর সরব অংশগ্রহণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে। মেধা ও যোগ্যতা থাকলে সব বাধা-বিপত্তিই যে মোকাবিলা করা সম্ভব, বাংলাদেশের বিভিন্ন পেশার কর্মজীবী নারীরা তা প্রতিনিয়ত প্রমাণ করে যাচ্ছেন। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে তুলে ধরেছেন এমনই দু’জন নারীর জীবনচরিত।
ওয়াসফিয়া নাজরীন
প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে মুসা ইব্রাহীমের এভারেস্ট বিজয়ের পর বিষয়টি সাধারণ মানুষের আলোচনায় আসে। সেখানে এই দেশের এক নারী একেবারে সেভেন সামিটের ঘোষণা দিলেন! একটু অবাক হতে হয়। ‘বাংলাদেশে যা দেখেছি, নারীদের প্রাধান্য দেয়া হয় না। কিন্তু আমি নারীদের নিয়েই কাজ করতে চাই। এ বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রায় ৪ যুগ হতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষ্যেই সেভেন সামিট অভিযান। একদিকে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমর্যাদা, অপরদিকে নারীর শক্তিকেও তুলে ধরতে চাই।’ নারীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আমার। তাই চেষ্টা করি নারী গাইড খুঁজে বের করার। মোটামুটি নির্বিঘেœই জয় করেন কিলিমানজারো। ২ অক্টোবর স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ২৯ মিনিটে কিলিমানজারোর চূড়া উহুরু পিকে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান ওয়াসফিয়া। বললেন, ‘সাধারণত বরফ থাকে না কিলিমানজারোর এই রুটে। তবে এবার বরফ পড়েছিল।’ উঁচুতে ওঠার যাত্রা বর্ণনা করেন আর বলেন, পর্বতারোহণের মতো কঠিন কাজে শারীরিক গঠনের কারণেই পুরুষদের চেয়ে নারীরা একটু পিছিয়ে থাকে। ‘এ পর্যন্ত চার শতাধিক পর্বতারোহী সেভেন সামিট করেছেন। এর মধ্যে মাত্র ৩৭ জন নারী। এশিয়া থেকে দু’জন নারী সেভেন সামিট করেছেন।’ বলেন ওয়াসফিয়া। ‘তাই আমি নিজের দেশ ও নারীদের নিয়ে পর্বতারোহন করতে চাই’।
নিশাত মজুমদার
নিশাত ১৯ মে সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্বের সর্বোচ্চ স্থানে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান। বাংলাদেশে এক নতুন ইতিহাস গড়ে তুললেন নিশাত মজুমদার। বাংলাদেশের প্রথম নারী হিসেবে জয় করলেন এভারেস্ট চূড়া। নিশাত বলেছিলেন, তার এই স্বপ্ন দেখেছে অনেক চোখ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনিই সক্ষম হলেন তা সফল করতে। তিনি হয়ে গেলেন ইতিহাসের অংশ। বাবা-মা সবসময়ই তাকে পাহাড়ে যাবার ব্যাপারে উৎসাহ দিতেন। নিশাত ক্লাব বিএমটিসি আয়োজিত নারী অভিযাত্রী দলের সঙ্গে এভারেস্ট বেস ক্যাম্প (১৭ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতা) ট্যাকিংয়ে অংশ নেন। ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পাঁচ সদস্যের বাংলাদেশের প্রথম নারী দলের এভারেস্ট বেস ক্যাম্প ও কালাপাথার ট্যাকিংয়ে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ২০০৭ সালের মে মাসে বিএমটিসির অর্থায়নে দার্জিলিংয়ের হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট থেকে মৌলিক পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে হিমালয়ের ২১ হাজার ৮৩০ ফুট উঁচু মেরা পর্বতশৃঙ্গ জয় করেন। ২০০৮ সালের মে-জুন মাসে দলনেতা হিসেবে নেপালের অন্নপূর্ণা হিমালয় অঞ্চলের ২১ হাজার ৩২৮ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট সিংগুচুলি পর্বতশৃঙ্গ জয় করেন। একই বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি ভারতের উত্তর কাশীর গঙ্গোত্রী হিমালয়ের গঙ্গোত্রী-১ পর্বতশৃঙ্গে (প্রায় ২২ হাজার ফুট) বাংলাদেশ-ভারত যৌথ অভিযানে অংশ নেন। নিশাত ২০০৯ সালের এপ্রিলে পৃথিবীর ৫ম উচ্চতম শৃঙ্গ মাকালুতে (২৭ হাজার ৮৬৫ ফুট) ভারত-বাংলাদেশ যৌথ অভিযানে অংশ নেন। নিশাতই একমাত্র বাঙালি নারী যিনি ৩টি ছয় হাজার মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট পর্বতশৃঙ্গ জয় করেছেন। তিনি বলেছিলেন, তিনি এভারেস্ট জয় করে ইতিহাস গড়ে তুলতে চান।
য় নাহার ইসলাম
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।