পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাতিয়ার দেয় সুরক্ষা। তবে অপব্যহার হলে তা ভয়ঙ্কর। যন্ত্র ভাল এবং প্রয়োজনীয়। কিন্তু যন্ত্রের পেছনের মানুষগুলো অসৎ হলে তাতে ক্ষতির কারণ ঘটবে। তেমনি ই-টেন্ডারের বেলায়ও তা সমভাবে প্রযোজ্য। ‘ভাল’ উদ্দেশ্য নিয়ে দেশে দরপত্র প্রক্রিয়ায় ডিজিটালাইজেশনের জন্য ই-টেন্ডারিং পদ্ধতি চালু হয়েছে। কিন্তু এরজন্য দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এখন পর্যন্ত কোনো রক্ষাকবচ (সেইফ গার্ড) তথা সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রবর্তন করা হয়নি। এতে করে ই-টেন্ডার ব্যবস্থা কাগজে-কলমে ‘স্বচ্ছ’ বলা হলেও মাঠের বাস্তবতায় ই-টেন্ডার কার্যক্রম চলছে নানামুখী ঘাপলা, অনিয়ম আর অস্বচ্ছতার মধ্যদিয়েই। এনিয়ে ভুক্তভোগীদের মাঝে অভিযোগ ও হয়রানির যেন শেষ নেই। ই-টেন্ডারের প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল ফাঁক-ফোঁকরে বঞ্চিত হচ্ছেন ক্ষুদ্র ঠিকাদাররা। আর নেপথ্যে তৎপর অসৎ চক্র। তারাই কাজ হাতিয়ে নিচ্ছে। এরফলে ই-টেন্ডারে প্রত্যাশিত সুফল মিলছে না। অবশ্য বড়সড় অঙ্কের আন্তর্জাতিক দরপত্রের ক্ষেত্রে এখনও ই-টেন্ডার চালু হয়নি।
অনিয়ম দুর্নীতি লাগাম ধরতে ই-টেন্ডার (ইলেকট্রনিক টেন্ডারিং) চালু হলেও তাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়েছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেছে। ডিজিটাল পদ্ধতির এ দরপত্র প্রক্রিয়াতে রয়েছে নানা ফাঁক-ফোকর। ঠিকাদারদের অভিযোগ আগের নিয়মেই কাজ পাচ্ছেন সংশ্লিষ্টদের পছন্দের ব্যক্তিরা। এই ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবের কোন হেরফের হয়নি। তবে সরকারি কর্মকর্তারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তারা বলেন, ই-টেন্ডারের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হওয়ায় কাজের মান বাড়ছে। যারা যোগ্য তারাই কাজ পাচ্ছেন। এক্ষেত্রে অনিয়মের কোন সুযোগ নেই। ই-টেন্ডারে সংঘাত সহিংসতার ঘটনাও বন্ধ হয়েছে। এতে ঠিকাদারদের হয়রানীও কমছে। অন্যদিকে ভোক্তা অধিকার নিয়ে যারা কাজ করছেন তারা বলছেন দেশে দুর্নীতির বড় একটি উৎস টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম। এটি দূর করতে ই-টেন্ডার চালু হলেও এই প্রক্রিয়ায় এখনও স্বচ্ছতা আসেনি। ই-টেন্ডারিংয়ের পর দেশের ব্রীজ, কালভার্ট, সড়ক-অবকাঠামো নির্মাণ কাজে দৃশ্যমান কোন উন্নতি দেখা যায়নি। বরং বিশ্বের যে কোন দেশের চেয়ে বেশি ব্যয়ে এদেশে উন্নয়ন কাজ করা হচ্ছে। তাদের মতে সর্বস্তরে সুশাসন ও জবাবদিহিতার অভাবে এমনটা হচ্ছে।
সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের পুরাতন দরপত্র প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে চালু হয়েছে ই-টেন্ডারিং। এলজিআরডি, সড়ক ও জনপথ, শিক্ষা প্রকৌশল, রেলওয়ে, পিডিবিসহ বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান ই-টেন্ডার চালু করেছে। ই-টেন্ডার চালুর মূল উদ্দেশ্য ছিল টেন্ডারবাজি, সংঘাত-সহিংসতা বন্ধ এবং দুর্নীতি দূর করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। ই-টেন্ডার চালু করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে চূড়ান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১১ সালে। মূলত এরপর থেকেই ই-টেন্ডারিং প্রক্রিয়া শুরু হয়। দাতা সংস্থাগুলোও সরকারকে ই-টেন্ডারিং চালু করতে নানামুখী চাপ দিয়ে আসছিল।
ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সরকার যে উদ্দেশে ই-টেন্ডার চালু করেছে তার কিছুটা পূরণ হয়েছে। বিশেষ করে টেন্ডারবাজি নিয়ে সংঘাত সহিংসতা একেবারেই কমে গেছে। তাছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঠিকাদারদের হয়রানি ও ঝামেলাও কমেছে। তবে এ প্রক্রিয়াতেও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে গেছে। ঠিকাদাররা বলছেন, ই-টেন্ডারেও নানা ফাঁক-ফোকর আছে। এর ফলে স্বচ্ছতা পুরোপুরি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রকৌশলী মোঃ আফতাব হোসেন খান বলেন, ই-টেন্ডারে কোন রকমের অনিয়মের সুযোগ নেই। এ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা শতভাগ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা আছে। সড়ক বিভাগের প্রতিটি দরপত্র ই-টেন্ডারে চলে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, স্বচ্ছতা নিশ্চিত হওয়ায় এখন মাঠপর্যায়ে কাজের গুণগত মানও বাড়ছে। প্রক্রিয়াটি নতুন হওয়ায় হয়তো ঠিকাদারদের কেউ কেউ বিড়ম্বনায় পড়তে পারেন। কয়েকজন ঠিকাদার অভিযোগ করেন, ই-টেন্ডারে ওপেন টেন্ডারিং মেথড বা ওটিএমের ক্ষেত্রে (নির্মাণ) দর দেয়া থাকে না। এতে করে ঠিকাদাররা তাদের দরপত্রে দর উল্লেখ করতে হিমশিম খান। আর এ সুযোগে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অসাধু কর্মকর্তারা তাদের পছন্দের ঠিকাদারদের গোপনে দর জানিয়ে দেয়। ফলে নির্দিষ্ট কিছু ঠিকাদারের ভাগ্যে কাজ জোটে। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস বা পিপিআর তিন কোটি টাকার উপরে যে কোন কাজের জন্য ওটিএম পদ্ধতির টেন্ডার আহ্বান করতে হয়। আর তিন কোটি টাকার নিচে হলে তা এলটিএম বা লিমিটেড টেন্ডার মেথডে দরপত্র আহ্বান করা হয়। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান এই নীতি মানছে না। এলটিএম হলে যেকোন ঠিকাদার তাতে অংশ নিতে পারেন। আর লটারির মাধ্যমে কাজ দেওয়া হয়। কিন্তু ওটিএম হলে নানা শর্তের বেড়াজালে পড়ে অনেক ঠিকাদার অংশ নিতে পারেন না। এতে টেন্ডার শিডিউল কম বিক্রি হয় সরকারও রাজস্ব বঞ্চিত হয়।
ওটিএম পদ্ধতিতে ৮৫ লাখ টাকার দরপত্রের জন্য যোগ্যতা হিসেবে একজন ঠিকাদারের বছরে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকার কাজ করার অভিজ্ঞতা চাওয়া হচ্ছে। এতে করে অনেক ঠিকাদার এ দরপত্রে অংশ নিতে পারছেন না। এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের অধীন ছোট ঠিকাদাররা কোন কাজই পাচ্ছেন না। এ প্রসঙ্গে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জালাল উদ্দিন বলেন, ই-টেন্ডারের ক্ষেত্রে ওটিএম পদ্ধতিতে দর উল্লেখ করার ব্যবস্থা নেই। এটি এ প্রক্রিয়ার একটি দুর্বল দিক হিসেবে মনে করা হচ্ছে। তবে কাউকে গোপনে দর বলে দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
ই-টেন্ডারে ঠিকাদাররা সহজে তাদের দরপত্র সিডিউল কিনে তা জমা দিতে পারে। তবে কাজ পাওয়ার পর তাদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। এতে করে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হলেও কাজ শুরু করতে বেশি সময় লাগে। একটি পে-অর্ডার ফেরত পেতে ৬ মাসের বেশি সময় লেগে যায়। এ প্রসঙ্গে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শাহ আলমগীর বলেন, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার তার কাগজপত্র স্ক্যানিং করে অনলাইনে জমা দেন। এসব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা সময় সাপেক্ষ। তিনি বলেন, টেন্ডার ডিজিটাল পদ্ধতিতে হলেও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া এখনও আগের মতো রয়ে গেছে। এটি ই-টেন্ডারিংয়ের ক্ষেত্রে একটি দুর্বল দিক বলা যায়। তবে এ সময় ক্ষেপণ কমাতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ঠিকাদারদের অভিযোগ, দরপত্রের জন্য নির্বাচিত না হলে কেন তিনি নির্বাচিত হলেন না ই-টেন্ডারিং প্রক্রিয়ায় তা জানার সুযোগ নেই। এমন অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, অবশ্যই একজন ঠিকাদার কেন কাজ পেলেন না তা জানতে পারেন। শুধু তাই নয়, পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে কোন অভিযোগ থাকলে তিনি তা ই-জিপি সিস্টেমের মাধ্যমে অভিযোগ এবং তাতে সন্তুষ্ট না হলে রিভিউও করতে পারেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তার এ অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করতে পুরো টেন্ডার প্রক্রিয়া যাচাই-বাছাই করতে পারে। অভিযোগের সত্যতা পেলে মন্ত্রণালয় টেন্ডার বাতিলও করতে পারে।
এদিকে সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার প্রক্রিয়া ই-টেন্ডারে আসলেও আন্তর্জাতিক দরপত্র এখনও আগের নিয়মেই চলছে। যদিও এর মাধ্যমে বড় ধরনের ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) যুগ্ম সচিব মোঃ জাফর আলম বলেন, আন্তর্জাতিক দরপত্র এখনও ই-টেন্ডারিংয়ের আওতায় আনা যায়নি। আন্তর্জাতিক দরপত্রও এ প্রক্রিয়ার আনার কাজ চলছে। ই-টেন্ডারিংয়ে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সরকার নিবিড় তদারকি করছে বলেও জানান তিনি। আইটি বিশেষজ্ঞ চট্টগ্রাম বন্দরের চীফ সিস্টেম এনালিস্ট সুফি মোঃ শোয়েব বলেন, ই-টেন্ডারের ক্ষেত্রে কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা আছে। আবার তা সমাধানেরও সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, এলজিইডিসহ সরকারী কিছু প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ই-টেন্ডারিংয়ে কোন সমস্যা না হলেও চট্টগ্রাম বন্দর বা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ই-টেন্ডার করার পাশাপাশি ম্যানুয়েল পদ্ধতিতেও কিছু কাজ করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সার্বিকভাবে ই-টেন্ডারিংয়ে সুবিধাই বেশি। যে কেউ এই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেন-এই সুযোগে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কোন কর্মকর্তা বেনামে দরপত্র জমা দিতে পারেন। সম্প্রতি এমন ঘটনা ধরাও পড়েছে ঢাকায়। একটি আইপি থেকে একাধিক দরপত্র জমা পড়েছে। অর্থাৎ ই-টেন্ডারিংয়ের ক্ষেত্রে জালিয়াতি করার সুযোগ আছে। আবার তা ধরারও সুযোগ আছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোশিয়েন অব বাংলাদেশ-ক্যাবের ভাইস চেয়ারম্যান নাজের হোসাইন বলেন, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন হলেও সার্বিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে এখনও দৃশ্যমান কোন উন্নতি হয়নি। এর অর্থ হলো শুধুমাত্র পদ্ধতির পরিবর্তন করে সুফল পাওয়া যাবে না। এ জন্য সুশাসন, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। যন্ত্রের পেছনে যারা তারা তাদের মানসিকতার পরিবর্তন না হলে প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক তা ভোক্তাদের জন্য সুফল আনবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।