Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উপকূলীয় অঞ্চলে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার বাড়ছে

খুলনা এলাকায় আমন ধানে বাম্পার ফলন

আবু হেনা মুক্তি | প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খুলনাঞ্চলে আমন ধানে বাম্পার ফলন হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এ অঞ্চলের প্রধান ফসল কৃষকের আমন ক্ষেত সম্ভাবনার সোনালী রোদ্দুরে চকচক করছে। বৃহত্তর খুলনায় প্রায় পৌনে ৩ লাখ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। ধানের চারা গাছে থোড় এসেছে। কৃষক এখন ফুরফুরে মেজাজে। চোখে মুখে আশা আকাক্সক্ষার ঝিলিক। কিন্তু লোনা অঞ্চল বলে খ্যাত উপকূলীয় অঞ্চলের ফসলি জমিতে ক্ষতিকর রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে অনেক প্রাণী পশু পাখি কীটপতঙ্গ।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত প্রকৃতিক জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে হবে এবং ফসলি জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে হবে। না হলে ভবিষ্যতে কৃষিখাতে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। এমনিতেই খুলনা বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা এবং উপকূলীয় অঞ্চল দেশের অন্য যে কোন স্থানের তুলনায় অধিক লবনাক্ত। তারপর সিডর আইলার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ রয়েছে। নানা প্রতিক‚লতার মধ্যে দিয়ে এ অঞ্চলের মানুষ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে জমিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক ফসল ফলাতে প্রাণান্ত চেষ্টা করে। চলতি আমন মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকরা গত বছরের তুলনায়ও বেশি রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছে। ফলে কৃষিখাতে এ অঞ্চলে আপাত দৃষ্টিতে কৃষি বিপ্ল­­ব ঘটলেও ভবিষ্যতে চরম কৃষি বিপর্যয়ের সম্ভবনা রয়েছে। সংশ্লি­­ষ্টদের সাথে আলাপকালে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে সা¤প্রতিক প্রাকিৃতিক দুর্যোগে নাবি জাতের কিছু ধানে কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিলেও কৃষি বিভাগের তৎপরতা ও আগাম সর্তকতায় কারণে ক্ষতির পরিমাণ সামান্য।
ইতোমধ্যে আগাম জাতের প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমির ধান কর্তন করা হয়েছে। কৃষকের গোলায় ধান ওঠা শুরু করেছে। খুলনায় বি আর ২৩, বি আর ৩০, বি আর ১০ ও ১১ বেশী চাষ হচ্ছে। এ সব ধান হাইব্রিড জাতের। প্রতি হেক্টরে চাল হচ্ছে ২ দশমিক ৮৫ মেট্টিক টন। ধান রোপন করার মৌসুম হচ্ছে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এবার অতিবৃষ্টির কারণে কিছুটা সময় পিছিয়ে যায়।
শুধুমাত্র খুলনা জেলায় ৯৩ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে চাষ করা হয়েছে উচ্চ ফলনশীল ও স্থানীয় জাতের ৯১ লাখ ৮৭০ হেক্টর জমি। গত বছর চাষ হয়েছিল ৯১হাজার ৬২৫ হেক্টর। যা গত বছরের চেয়ে এ বছর ১৪৫ হেক্টর বেশী। এ মৌমুমে উচ্চ ফলনশীল ও স্থানীয় জাতের ২লাখ ৩২ হাজার ৩৩৬ মেট্টিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৫শ’ ৪ মেট্টিক টন।
কৃষি প্রধান আমাদের এই দেশে কৃষির আবাদ ক্রমশ: কমছে। দেশের মোট জাতীয় আয়ের শতকরা ২২ ভাগ অর্জিত হয় কৃষিখাত থেকে। শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা ৬ কোটির উপর। যার মধ্যে ৮১ ভাগ মানুষ গ্রামীন শ্রমজীবী মানুষ গ্রামের। তাদের মধ্যে আবার ৬৮ দশমিক ৫ শতাংশ শ্রমজীবী মানুষ সরাসরি কৃষির সাথে সম্পর্কিত।
এতদাঞ্চলের কৃষকরা অধিক উৎপাদনের আশায় ফসলি জমিতে সার ও কীটনাশক ব্যবহারের পাশাপাশি হাইব্রীড জাতের বীজ ব্যবহার করা হয়। আর হাইব্রিড জাতের বীজ থেকে ভাল ফসল পেতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে পড়ে। অধিক উৎপাদনক্ষম এই সকল শস্য শিশুর মতো। প্রকৃতির রূক্ষতা তারা সইতে পারে না। যে কারণে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে, কীটনাশক ব্যবহার করে ফসল উৎপাদনে সহায়তা করা হয়। ফলে বাড়তে থাকে সার ও কীটনাশকের ব্যবহার। এ প্রসঙ্গে কৃষিবিদ রতি কান্ত বিশ্বাস বলেন, জমিতে অব্যাহতভাবে সার কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পাখিরা কিচির মিচির করতে শুরু করে। শস্যদানা খাওয়ার লোভে পাখিরা শস্য দানা খেয়ে বিষক্রিয়ার মারা যাচ্ছে। এখন অনেক প্রজাতির পাখি হারিয়ে গেছে। বিলুপ্তি ঘটেছে ফসলের ক্ষেত্রে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগের, ফলে প্রাকৃতিক লাঙ্গন বলে খ্যাত কেঁচো দেখা যায় না। এক সময়ে বিল খালে জলাশয়ে শামুকের অবাধ বিচরণ ছিল। শামুক প্রায় হারিয়ে গেছে। মিষ্টি পানির ছোট প্রজাতির মাছের অস্তিত্বও বিলুপ্তি ঘটেছে।
কৃষিবিদ রুবায়েত আরা এর মতে, কীটপতঙ্গ ধ্বংসের জন্য আমরা ফসলের ক্ষেত্রে কীটনাশক ব্যবহার করি। কিন্তু সব কীটপতঙ্গ ক্ষতিকর নয়। কীটনাশক প্রয়োগের ফলে সকল প্রকারের কীটপতঙ্গ নষ্ট হচ্ছে। হাইব্রীড জাতীয় ফসলের মতে হাইব্রীড জাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়াতে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে জৈব সার ব্যবহার করেও উৎপাদন বাড়ানো যায়।
গত দুই মাসে কয়েক দফা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কিছু ক্ষেতে কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। কৃষি দপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ১৬ নভেম্বর পোকাদমনে আলোর ফাঁদ স্থাপনের ফলে দেখা গেছে কিছু জমিতে বিপিএইচ (কারেন্ট পোকা) পোকার আক্রমন দেখা দেয়। কৃষি অধিদপ্তরের তাৎক্ষণিক পরামর্শে পোকার আক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। কৃষি বিভাগ মাঠ পর্যায়ে চাষীদের উঠান বৈঠক, মতবিনিময়, প্রচারপত্র বিতরণ দেয়ালে পোস্টার লাগিযে স্থানীয় চাষিদের সচেতন করে পোকা দমনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাসায়নিক সার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ