পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার অফিস : বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেছেন, জমিয়াতুল মোদার্রেছীন দেশের আলেম ওলামা, পীর-মাশায়েখের বৃহত্তম সংগঠন। জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের পরিচয় আজ দেশের আলেম-ওলামার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। মাদরাসা শিক্ষা দেশের জন্য বড় একটি আশীর্বাদ। এখান থেকে দেশপ্রেমিক যোগ্য নাগরিক তৈরী হচ্ছে। দেশের কোন মাদরাসা থেকে জঙ্গি তৈরী হয় না। বিভিন্ন সংগঠন-সংস্থা তাদের চাকরির প্রমোশনের জন্য জঙ্গিবাদের ধুয়া জিইয়ে রেখেছেন বলে মন্তব্য করে তিনি এসব মিথ্যা অপবাদ বন্ধের আহবান জানান। মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বিশেষমহলের অপপ্রচার বিষয়ে দেশবাসী সজাগ রয়েছে। গতকাল সকালে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত জমিয়াতের জেলা সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন এসব কথা বলেন।
জমিয়াত সভাপতি বলেন, আলেম-ওলামা আজ অনেক বেশী শক্তিশালী। মাদরাসা শিক্ষা বাদ দিয়ে দেশের উন্নতি অগ্রগতি কল্পনা করা যাবে না। আলেম সমাজকে সাথে নিয়েই দেশের সব কাজ করতে হবে। বর্তমান সরকারও সে বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, সারা বিশ্বে ইসলাম বিদ্বেষীরা মুসলমানদের মাঝে বিবাদ-বিসম্বাদ জিইয়ে রেখেছে। সেই সঙ্কটের মাঝেও নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে। দেশকে ইসলামবিদ্বেষী প্রমাণ করতে বিভিন্ন এনজিও সংস্থা কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছে। কিন্তু তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এরপরও ইসলাম বিদ্বেষীদের অপতৎপরতা অব্যাহত আছে। অথচ ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক পশ্চিমা দেশে আজ ইমামদের গুরুত্ব বেড়েছে। সেখানে ইসলামের দাওয়াতের ক্ষেত্র বেড়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে ওহাবী-সালাফীরাও নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করে এক কাতারে চলে আসছে।
রাশিয়া-ভারতে মুসলমানদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটিই বিশ্বব্যাপী ইসলামী জাগরণ ও মুসলমানরা শক্তিশালী হওয়ার প্রমাণ। সম্প্রতি উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলাম বিষয়কমন্ত্রী নিয়োগ দেয়া হলেও বাংলাদেশের অধিকাংশ মন্ত্রীর ইসলাম সম্পর্কে কোন ধারণাই নেই। তাই আলেম ওলামা ও মসজিদ-মাদরাসা নিয়ে তারা জঙ্গিবাদের অপবাদ দিয়ে থাকেন।
তিনি বলেন, ইসলাম আমাদের মূল পরিচিতি। ওয়াজ নসিহত ও খুতবার মাধ্যমে মুসলমানদের সচেতন করা হয়। মসজিদে খুতবা নিয়ন্ত্রণ করার পরিকল্পনা কাজে আসবে না। সেই দিন এক মিনিটের ভূমিকম্পে দেশের সব মানুষ মসজিদে এক কাতারে চলে আসে। এতে কী প্রমাণ হয়?
দাবী আদায়ের জন্য দেশের জেনারেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে হরতাল অবরোধ হলেও দেশের মাদরাসাগুলোতে একদিনের জন্যও ক্লাস বন্ধ হয়নি উল্লেখ করে জমিয়াত সভাপতি বলেন, আলেম ওলামারা কৃতজ্ঞ ও শান্ত। তিনি বলেন, সরকারের আন্তরিকতায় জমিয়াতের মাধ্যমে মাদরাসা শিক্ষকদের অনেক দাবী পূরণ হয়েছে। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। ২০১৬ সালের মধ্যে এবতেদায়ী মাদরাসা সরকারিকরণের দাবীও পূরণ হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি আরো বলেন, দেশে ইসলামের নামে যারা রাজনীতি করছেন তাদের ক্ষমতা ও রাজনৈতিক অভিলাষের কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে সঙ্কটের পরেও নতুন পথ তৈরী হচ্ছে। মতপার্থক্য কমিয়ে আলেম-ওলামাকে এক কাতারে শামিল হওয়ার আহবান জানান তিনি। শিক্ষার্থীদের উন্নত বিশ্বের চ্যালেঞ্জ উপযোগী গড়ে তুলতে পাঠদান নিশ্চিত করার পাশাপাশি সরকারের নীতিমালার ভেতরে থেকে প্রতিষ্ঠান চালাতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর এ কে এম সায়েফউল্ল্যা বলেন, সরকার মাদরাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করতে অনেক পরিকল্পনা নিয়েছে। ৩১ হাজার মাদরাসায় অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। ৩৫টি মাদরাসাকে মডেল মাদরাসা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। আরো ৯৫টি মাদরাসাকে মডেল মাদরাসায় পরিণত করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত। মাদরাসার ৬০ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। ৯ হাজার ৪শ’ মাদরাসায় নিজস্ব ওয়েব পোর্টাল খুলে দেয়া হয়েছে। সেখানে সমস্ত ডকুমেন্ট সন্নিবেশিত করা হয়েছে। সেখানে ৭৪ ধরনের অনলাইন সেবা নিশ্চিত করা হবে। দুই হাজার ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রধান আলোচক জমিয়াতের মহাসচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আলেম-ওলামার একশত বছরের দাবি পূরণ করেছেন। তিনি জমিয়াতের সব দাবি আন্তরিকতার সাথে বিবেচনা করেন। তার আন্তরিকতায় বেতন স্কেল দ্বিগুণ হয়েছে। বই, বেতন দাবি ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী দিয়ে দিয়েছেন। মাদরাসা শিক্ষকরা এতে কৃতজ্ঞ ও খুশি।
তিনি বলেন, এবতেদায়ী মাদরাসা সরকারিকরণ ও এমপিওভুক্ত করণের বিষয়ও প্রধানমন্ত্রী আন্তরিকতার সাথে বিবেচনা করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। মাদরাসাগুলো জমিয়াতের মাধ্যমে দেশপ্রেমিক যোগ্য লোক তৈরির জন্য কাজ করছে। মাদরাসায় শিক্ষার্থী বৃদ্ধির জন্য তিনি সকল মাদরাসা প্রধানসহ মাদরাসা শিক্ষকদের পাড়ায় মহল্লায় এবং ঘরে ঘরে যাওয়ার আহবান জানান। তিনি বলেন, আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীনকে একজন যোগ্য সভাপতি পেয়ে জমিয়াত ধন্য হয়েছে।
জমিয়াতের জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা কামাল হোছাইনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জমিয়াতের কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম মহানগর জমিয়াতের সভাপতি মাওলানা আবুল বয়ান হাশমী, কক্সবাজার ইসলামিয়া মহিলা কামিল (মাস্টার্স) মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা জাফর উল্লাহ নূরী।
জেলা জমিয়তের সাধারণ মাওলানা শাহাদাত হোছাইনের পরিচালনায় সম্মেলনে অধ্যক্ষ মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ, অধ্যক্ষ মাওলানা ফরিদ আহমদ চৌধুরী, অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ ওমর হামজা, অধ্যক্ষ মাওলানা আমির হোছাইন, অধ্যক্ষ মাওলানা কফিল উদ্দিন ফারুক, অধ্যক্ষ মাওলানা বদরুদ্দোজা বক্তব্য রাখেন।
সম্মেলনে জমিয়াতের পক্ষে দাবি-দাওয়ার কথা তুলে ধরেন জেলা জমিয়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা ছালাহ উদ্দিন মোহাম্মদ তারেক।
গত এক সপ্তাহ ধরে এই সম্মেলনকে ঘিরে কক্সবাজারের দু’শতাধিক মাদরাসা ও প্রায় দু’হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর মাঝে দেখা দেয় ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। সকাল ১০টায় সম্মেলন শুরুর সময় নির্ধারিত থাকলেও আগেই কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মিলনায়তন উপচে অংশ গ্রহণকারীদের বাইরে বসতে হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।