পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা চুরির ঘটনা তদন্তে এফবিআই প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেছে সিআইডি। বৈঠকে এফবিআইয়ের কাছে খোয়া যাওয়া টাকা ফেরত আনা ও যারা এই টাকা চুরি করেছে তাদের শনাক্তে সহযোগিতা চাওয়া হয়।
এদিকে, ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তদন্তকারী সংস্থাগুলোর কাজে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ উঠেছে। দেশী ও বিদেশী মিলে ৮টি সংস্থা তদন্ত করছে বিচ্ছিন্নভাবে। এতে তদন্তের ফলাফল নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে বলে আশংকা করছেন অনেকেই। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমন্বয় না থাকলে তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। এতে করে মূল অপরাধীরা আড়ালেই থেকে যেতে পারে। এমনকি প্রকৃত ঘটনাও অজানা থেকে যেতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষক সমাজ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এ কে এম আমানউল্যাহ ইনকিলাবকে বলেন, বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, ‘অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট’। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় যেভাবে দেশী-বিদেশী সংস্থা সমন্বয়হীনভাবে তদন্ত শুরু করেছে তাতে এর ফলাফল হয়তবা অতলে হারিয়ে যাবে। তিনি বলেন, চুরির টাকার বেশিরভাগই ফিলিপাইনে আছে। যে কারণে সেখানে তোলপাড় চলছে। তার সিকিভাগও আমাদের এখানে হচ্ছে না। হয়তো ‘কেঁচো খুড়তে গেলে সাপ বের হয়ে যাবে’- এই ভয়ে এখানে সব কিছু ধীরলয়ে চলছে। প্রফেসর ড. আমানউল্যাহ বলেন, সরকারের উচিত ছিল হাইপ্রোফাইলের কোনো কর্মকর্তাকে অনেক আগেই ফিলিপাইনে পাঠানো। যিনি ওখানে বসে সবকিছু মনিটরিং করতেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা চুরির ঘটনা তদন্তে তথ্য আদান-প্রদানে সিআইডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এর প্রতিনিধি দল। রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে গতকাল রোববার বেলা আড়াইটা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়- দুুটি বিষয়কে সামনে রেখে রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনা তদন্ত হচ্ছে। বৈঠকশেষে জানতে চাইলে মামলার তদন্তসংস্থা সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি মো: শাহ্আলম উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, যারা চুরির টাকায় লাভবান হয়েছে তাদেরকেও শনাক্ত করবো। লাভবান বিদেশীদের দেশীয় কোন সহযোগী আছে কিনা বা পরস্পরের যোগসাজশে এই চুরি হয়েছে কিনা সেটার জন্য আমরা এফবিআইয়ের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবো।
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, অতীতে অনেক ঘটনার তদন্তে সিআইডি সহযোগিতা দিয়েছে এফবিআইকে। এই ঘটনা তাদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এখানে পরস্পরের স্বার্থ রয়েছে। কারণ অর্থগুলি গেছে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে। এখানে হ্যাক হয়ে থাকলে আগামীতে এধরনের ঘটনা আরেকবার ঘটার আগেই যাতে অপরাধী ও পদ্ধতি চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া যায় সেটি আমরা করছি। এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, আমরা আইটি ফরেনসিক ইস্যুতে কথা বলেছি। যে আইপি থেকে হ্যাক হয়েছে সেটা খুঁজে বের করবো। হ্যাকার শনাক্ত ও চূড়ান্ত লাভবান ব্যক্তি ও তার অন্য স্টেক হোল্ডারদের খুঁজে বের করবো। তদন্তে আর কারা সহযোগিতা করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা শুধু এফবিআই নয় ইন্টারপোলেরও সহযোগিতা নিয়েছি।
মামলা তদন্তের অন্যতম প্রধান কর্মকর্তা মীর্জা আব্দুল্লাহেল বাকী বলেন, এটি ছিলো আমাদের প্রথম বৈঠক। ঘটনাটি একটি অর্গানাইড ক্রাইম। এই অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে কিভাবে সনাক্ত করা যায় এ বিষয়ে এফবিআইয়ের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এদিকে, এফবিআই প্রতিনিধি দল সিআইডির সঙ্গে বৈঠকের আগে গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকে যান। সেখানে তারা ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথাও বলেছেন।
জানা গেছে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরি হয়। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমান ৮শ’ কোটি টাকা। এ নিয়ে ২৯ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ফিলিপাইনের সংবাদপত্র ইনকোয়ারার। এরপর বিষয়টি নিয়ে হৈচৈ শুরু হয়। প্রথমে তদন্ত শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি কনসালটেন্ট ভারতীয় প্রতিষ্ঠান রাকেশ আস্তানা। ওই সময়ে তারা বলেছিল, এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দেবে। কিন্তু শুক্রবার তারা বলেছে, রিপোর্ট দিতে আরও দুই মাস সময় লাগবে। এদিকে ঘটনার পর ছায়াতদন্ত শুরু করেছিল এলিট ফোর্স র্যাব। এরপর আলাদাভাবে তদন্ত শুরু করে পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ (ডিবি), স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এবং অপরাধ অনুসন্ধান বিভাগ (সিআইডি)। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুরোধে তদন্ত কাজ শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এবং বেলজিয়ামের প্রতষ্ঠান সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন (সুফইট)। ঘটনা তদন্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তবে কমিটি এখনও কাজ শুরু করতে পারেনি।এ প্রসঙ্গে সমাজ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এ কে এম আমানাউল্যাহ বলেন, এই ঘটনা ফাঁস হওয়ার পরে যাদেরকে চাকরি থেকে বহিস্কার বা সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত ছিল। বরখাস্ত বা বহিষ্কার তো কোনো সমাধান নয়। তিনি বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি তদন্তের বিষয়গুলো প্রতিদিনই মিডিয়াতে চলে আসছে। এতে করে দেশে বিদেশে যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত তারা সাবধান হয়ে যাচ্ছে, অথবা লুকানোর পথ খুঁজে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। তদন্ত কার্যক্রম আরও গোপনীয়ভাবে হওয়া উচিত উল্লেখ করে ড. আমানউল্যাহ বলেন, পাশ্ববর্তি দেশের এক্সপার্টকে আমাদের ন্যাশনাল সিকিউরিটি সিস্টেমের মধ্যে না ঢুকিয়ে এফবিআই বা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে দিয়ে তদন্ত করলে ভালো হতো। তিনি বলেন, এই ঘটনার পর সারাবিশ্বে একটা এলার্মিং ম্যাসেজ কিন্তু চলে গেছে। তা হলো বাংলাদেশে আর্থিক ব্যবস্থাপনা খাত অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এটা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। আমার ধারণা সরকার যেভাবে এগুচ্ছে তাতে চুরি যাওয়া টাকা উদ্ধারের সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীণ। উল্লেখ্য, গত ৪ ফেব্রুয়ারি আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে সুইফট কোডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করা হয়। ঘটনা জানার পরও বিষয়টি গোপন রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। চুরি হওয়া অর্থ ফেরত আনতে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান ফিলিপাইনের ব্যাংকো সেন্ট্রালের গভর্নর আমান্ডো টেটাংকো জুনিয়রের কাছে সহযোগিতা চেয়ে চিঠি লেখেন। কিন্তু, দেশে তিনি এই ঘটনা চেপে যান। এরপর গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ফিলিপাইনের দৈনিক দি ফিলিপিন্স ডেইলি ইনকোয়ারারের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির খবর জানায়। বাংলাদেশী সংবাদমাধ্যমেও এ খবর এলে তোলপাড় শুরু হয়। পরে গত ৭ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা চুরির ঘটনা স্বীকার করে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক দাবি করে, দেশের বাইরে থেকে হ্যাকাররা অর্থ চুরি করেছে। কিন্তু, সংবাদমাধ্যমের একাধিক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, যেভাবে টাকা চুরি হয়েছে তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদেরও সম্পৃক্ততা রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।