Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারত যড়যন্ত্রে বাংলাদেশ ক্রিকেট : ‘শত্রু তুমি বন্ধু তুমি’

প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টালিন সরকার : ‘শত্রু তুমি বন্ধু তুমি/ তুমি আমার সাধনা/ তোমার দেয়া আঘাত আমায়/ দেয় যে মধুর বেদনা/ তুমি আমার সাধনা’। গান শুধু বিনোদন নয়; মানুষের জীবন ও রাজনীতির কথা বলে তা শিল্পী আবদুল জব্বারের কণ্ঠে ‘অনুরাগ’ ছবির এ গানেই প্রমাণ মেলে।
মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী প্রতিবেশী বন্ধু ভারত পানিতে মারছে/সীমান্তে নিত্যদিন যন্ত্রণা দিচ্ছে; তারপরও আমাদের রাজনীতিকদের চেতনা যেন ‘ভারত বন্ধু/ তুমিই জীবন/তুমিই মরণ/ তুমিই আমার ক্ষমতার মই’। অথচ বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ঠেকিয়ে দিতে চায় সেই বন্ধু (!) ভারত। অবশ্য বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা আইসিসির তাকসিন-সানি নিষিদ্ধের নাম দিয়েছেন ‘ভারত ষড়যন্ত্র’।
ভারত ষড়যন্ত্রে দুই বোলারকে নিষিদ্ধ করায় টি-২০ বিশ্বকাপে খেলতে যাওয়া মাশরাফি বিন মুর্তোজা সংবাদ সম্মেলনে কেঁদেছেন, অন্যদের কাঁদিয়েছেন। এ কান্না শুধু মাশরাফির নয়; এ যেন বাংলাদেশের কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর আর্তনাদ। ভারত ষড়যন্ত্রে বোলিং এ্যাকশন পরীক্ষার নামে আইসিসির অন্যায় অবিচারে তাসকিন-সানি নিষিদ্ধ হওয়ায় বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ২০১৫ সালে অষ্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপের ভারত বনাম বাংলাদেশ কোয়াটার ফাইনালে সেই যে আম্পায়ারদের নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্বের শিকার হয় টাইগাররা সে ষড়যন্ত্র এখনো চলমান। ‘ভারত যার বন্ধু তার শত্রুর প্রয়োজন নেই’ প্রবাদটি সর্বৈবই সত্য। অথচ আমাদের নেতানেত্রীরা শয়নে-স্বপনে জাবর কাটছেন ‘ভারত বন্ধ’ু ‘ভারত বন্ধু’। দেশের ছোট দু’চারটি দল ছাড়া আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত, বামদলসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীরা ‘দিল্লীর ছায়া’ পেতে তোয়াজ প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। কেউ বিজেপির সভাপতি ফোন করেছে প্রচার করলে অন্য পক্ষ হিন্দুত্ববাদী ওই দলের সাধারণ সম্পাদককে তোয়াজ করে ঢাকায় এনে দেশবাসীকে বুঝিয়ে দেন দাদারা ওদের নয় আমাদের সঙ্গে আছেন। ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করলেও ৪৪ বছর ধরে ভারত আমাদের পানিতে মারছে, সীমান্তে মারছে, টিপাইমুখে বাঁধ দিয়ে মারছে, ইয়াবা-মাদক দিয়ে তরুণ সমাজকে ধ্বংস করছে। তারপরও ‘ও বন্ধু আমার শুনতে কি পাও’ চিৎকার চেঁচামেচি। হায় আল্লাহ! ৯১ ভাগ মুসলমানের দেশে হিন্দুত্ববাদী ভারতের সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর ছায়া পেতে আমাদের দেশপ্রেমী নেতানেত্রীরা কতই না কসরত করছেন। দিল্লী আনুগত্যের পরীক্ষা দিচ্ছেন। প্রশ্ন হলো ভারত কি আমাদের বন্ধুত্বের নিদর্শন দিচ্ছে? নাকি সবকিছুতেই দাদাগিরি করছে? ক্রিকেটে দাদাগিরি করতে না পারায় কি বাংলাদেশ ক্রিকেটের সম্ভাবনাকে ঠেকিয়ে রাখতে আইসিসিকে ব্যবহার করছে না?
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গতকাল বেশ কিছু তরুণ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। তারা ক্রিকেটে দুনিয়ায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের নোংরা রাজনীতির প্রতিবাদে নীরব প্রতিবাদ জানান। খবর হলো টি-২০ বিশ্বকাপ চলাকালে তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানির বোলিং অ্যাকশনকে অবৈধ ঘোষণার মাধ্যমে নিষিদ্ধ করেছে আইসিসি। তাদের বক্তব্য বিশ্বক্রিকেটের তিন পরাশক্তির অন্যতম ভারত পরিকল্পিতভাবে নোংরা রাজনীতির মাধ্যমে তাসকিন-সানিকে নিষিদ্ধ করিয়েছে। আম্পায়ারদের মাধ্যমে দুই বোলারের এ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। অথচ ভারতের একাধিক বোলারের বোলিং এ্যাকশন নিয়ে বিতর্ক আছে। দুই বোলার নিষিদ্ধ হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্তজা কেঁদেছেন; অন্যদের কাঁদিয়েছেন। তার বক্তব্য- আইসিসি তাসকিন-সানির ওপর অবিচার করেছে। খেলোয়ার হিসেবে এর চেয়ে শক্ত কথা বলা তার পক্ষ্যে সম্ভব নয়। দলের পক্ষ থেকে শক্ত বার্তা দেওয়া হয়েছে বিসিবিকে; তারা যেন আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রতিবাদ করেন। বিসিবিও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। বিসিবি সভাপতি নাজমূল হক পাপন জানিয়েছেন তারা সর্বচ্চো চেষ্টা করছেন। মাশরাফির বক্তব্য এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের মানববন্ধনের তরুণদের কণ্ঠে গোটা বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের কণ্ঠস্বর ধ্বনিত হয়েছে। নবাব সিরাজ উদ দৌলার ঐতিহাসিক উক্তি ‘বিপদে যে পাশে দাঁড়ায় সেইতো বন্ধু’। তাহলে যারা ষড়যন্ত্র করে বিপদে ফেলায় তারা কি? প্রতিবেশির এই অন্যায় আচরণে দেশের ১৬ কোটি মানুষ ক্ষুব্ধ-লজ্জিত; ধিক্কার দিচ্ছেন ভারত ষড়যন্ত্রকারীদের। নিত্যদিন দিল্লীকে তোয়াজ করা আমাদের নেতানেত্রীরা কি ক্রিকেট নিয়ে ভারতের আচরণে মর্মাহত, লজ্জিত হবেন না?
ইংল্যা--অষ্ট্রেলিয়া-ভারতকে বলা হয় বিশ্বক্রিকেটের মোড়ল সি-িকেট। তাদের অর্থেই আইসিসি পরিচালিত হওয়ায় সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ কার্যত তাদের হাতেই। খেলা নিছক বিনোদনের জন্য হলেও ক্রিকেট বাণিজ্যিকীকরণের ফলে বিশ্বক্রিকেটে নতুন নতুন দেশ উঠে আসায় ওই তিন মোড়ল প্রচ- বিক্ষুব্ধ। বিশেষ করে বাংলাদেশ ক্রিকেটে নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ায় ভারতের মন বেজায় খারাপ। কারণ ভারতের অনেক শিল্পপতি ব্যাবসায়ীক স্বার্থে বাংলাদেশের ক্রিকেটে লগ্নি করছেন। এটাকে ভারতের ক্রিকেট সংগঠনকরা ভাল চোখে দেখছে না। ভারত চায় রাজনীতিকদের মতোই ক্রিকেটেও বাংলাদেশ ভারতের দাদাগিরি মেনে চলবে। তা হচ্ছে না। যার জন্যই ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাকে বাংলাদেশের ক্রিকেটের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। পারফরম্যান্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেয়; অথচ ভারতের বিপক্ষে ওই ম্যাচে আম্পায়ারদের নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশকে হারিয়ে দেয়। যা দর্শকদের চোখ এড়ায়নি। আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে কায়ার্টার ফাইনাল থেকে ভারতকে যায়গা দিয়ে বাংলাদেশকে বিদায় নিতে হয়। আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তের তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন আইসিসির সভাপতি আহম মোস্তফা কামাল। এতে ভারত ও আইসিসির সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে বাংলাদেশের। ভারতের শ্রীনিবাস নামের দুর্নীতিবাজ ক্রিকেট সংগঠন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নতুন করে ষড়যন্ত্রের জাল বোনেন। তারই প্রতিবাদে আইসিসির সভাপতির পদ ছাড়েন আহম মোস্তফা কামাল। তাতেও ভারতের তল্পিবাহক আইসিসির রোষানল থেকে মুক্তি মেলেনি। আইসিসির এসব ষড়যন্ত্র যখন ভাল খেলে মাঠেই জবাব দেয় বাংলাদেশ; ঠিকই তখনই টাইগারদের উপর নেমে আসে নতুন এক ধাক্কা। এই ধাক্কার প্রাথমিক পদক্ষেপই হচ্ছে আরাফাত সানি ও তাসকিন আহমেদের বোলিং এ্যাকশনকে অবৈধ ঘোষণা করে খেলায় নিষিদ্ধ করা। এখন প্রশ্ন হলো ভারত বাংলাদেশ ক্রিকেটের বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র করতেই থাকবে; আর আমরা ভারত বন্ধু ভারত বন্ধু বলে চিৎকার করতেই থাকবো? বন্ধুর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে জর্জ হার্ভার্ট বলেছেন, ‘একজন বন্ধু হলো সর্বোৎকৃষ্ট আয়না’। এই আয়নাতে এক বন্ধু অন্য বন্ধুকে প্রতিমুহূর্তে নিজেকে দেখবে। শুধু বাহ্যিক অবয়বকে নয়, ভেতরটাকেও। নিজের মনের আয়নায় আমরা প্রতিবেশি বন্ধু দেশটির কেমন চেহারা দেখছি?



 

Show all comments
  • neamul sumon ২১ মার্চ, ২০১৬, ৬:২৩ এএম says : 0
    Excellent
    Total Reply(0) Reply
  • AB Mamun ২১ মার্চ, ২০১৬, ১০:৫৭ এএম says : 0
    india is the real foe of bangladesh. but we are very unfortunate that our government is pretty rash to it. they woo indian more than bangladeshies who are religious.
    Total Reply(0) Reply
  • arif Khan ২১ মার্চ, ২০১৬, ১২:০২ পিএম says : 0
    R ki chaw india . Ja chayteso tai payetso . . But cricket k tomader deya jabe na .
    Total Reply(0) Reply
  • Múhàmmäd Mázèdúr Ráhmàñ ২১ মার্চ, ২০১৬, ১২:০২ পিএম says : 0
    শত্রুকে বন্ধু ভাবলে পরিণাম ভয়াবহ হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mollah Liton ২১ মার্চ, ২০১৬, ১২:০৪ পিএম says : 0
    এক তরফা বন্ধুত্য কে গোলামি বলে
    Total Reply(0) Reply
  • Taj Uddin Ahmed ২১ মার্চ, ২০১৬, ১২:০৪ পিএম says : 0
    শত্রু তুমি বন্দু তুমি তুমি যে আমার সাধনা।তুমি সবই লুট পাট কর তাতে নেই মোর যাতনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Abdur Karim ২১ মার্চ, ২০১৬, ১২:০৫ পিএম says : 0
    right
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত যড়যন্ত্রে বাংলাদেশ ক্রিকেট : ‘শত্রু তুমি বন্ধু তুমি’
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ