স্টাফ রিপোর্টার : এ মাসের মধ্যেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কার্গো বিমান আবার যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া যাবে। নিরাপত্তা সংক্রান্ত যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল তা ইতোমধ্যে নিরসন হতে যাচ্ছে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা সহযোগিতার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ব্রিটিশ কোম্পানি রেডলাইন অ্যান্ড কন্ট্রোল রিস্কস নামের সংস্থাটিকে। গতকাল মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে। আজ (সোমবার) সিভিল এভিয়েশনের সাথে রেড লাইনের চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে। দুই বছরের জন্য এ চুক্তি হচ্ছে। তবে তা প্রয়োজনে দুই বছর পর আবার নবায়ন করা যাবে। আর রেড লাইন দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই তাদের কাজ শুরু করবে। গতকাল মন্ত্রণালযের বৈঠকের পর তা অনুমোদনের জন্য অর্থনৈতিক বিষয়ক ও সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে তা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গতকাল (রোববার) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ব্রিটিশ কোম্পানিকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত করা হয় বলে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন। এখন এই কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হবে জানিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আজ (সোমবার) থেকেই কার্যক্রম শুরু হবে। ৩১ মার্চের মধ্যে কাজ শেষ করবে। অনেক লোক এখানে কাজ করবে। ৩৯ জন তাদের দেশ থেকে আসবে। ব্রিটিশ কোম্পানিকে নিয়োগের মাধ্যমে শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো সঙ্কট কেটে যাবে বলেও মনে করছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, যে সঙ্কট দেখা দিয়েছিল তা নিরসন হলো। আমরা মনে করি, শিগগিরই বিধিনিষেধ প্রত্যাহার হবে এবং রপ্তানি আবার আমরা শুরু করতে পারব।
নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে অসন্তোষ থেকে গত ৮ মার্চ ঢাকা থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দেয় যুক্তরাজ্য। বাণিজ্যিক ক্ষতির মুখে পড়ে এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হয় সরকার। এরপর যুক্তরাজ্যের পরামর্শ নিয়ে নিরাপত্তাব্যবস্থার উন্নয়নের সিদ্ধান্ত হয়।
বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন সাংবাদিকদের বলেন, ব্রিটিশ কোম্পানি পলিসি লেভেলে কিছু পরামর্শ দেবে, অন্য কাজের সুপারভাইজ করবে সিভিল এভিয়েশন।
তিনি বলেন, ব্রিটিশ এই কোম্পানিকে দুই বছরে ৭৩ কোটি ২৫ লাখ ৭৯ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। তিনি বলেন, সোমবার চুক্তি করে পরদিন থেকেই কাজ শুরু হবে। ব্রিটিশ এই কোম্পানিকে নিয়োগ দিতেই রোববার অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এবং সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক ডাকা হয়।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, তড়িঘড়ি সভা করতে আইনে কোনো বাধা নেই।
শাহজালালের নিরাপত্তা উন্নয়নে ব্রিটিশ কোম্পানির নিয়োগ প্রস্তাবটি প্রথমে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দেয় পরে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি তা চূড়ান্ত অনুমোদন করে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত উভয় কমিটির সভাপতি হলেও রোববারের বৈঠকে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। কী কারণে মুহিত বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন সে বিষয়ে কেউ কিছু বলেননি।
অর্থমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এসব সভায় সভাপতিত্ব করলেও রোববারের বৈঠকে তিনিও ছিলেন না। তাই বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এই মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের আগে সকালে সরাসরি কার্গোতে পণ্য পরিবহনে যুক্তরাজ্য আরোপিত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে গঠিত স্টিয়ারিং কমিটির দ্বিতীয় সভা হয় বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ে। এতে মন্ত্রী মেনন সভাপতিত্ব করেন।
ওই বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রেড লাইন এভিয়েশন সিকিউরিটিকে আমরা আমাদের কনসালটেন্সি ও সেবা দেয়ার জন্য নিয়োগ করতে যাচ্ছি।
বিমানবন্দরের পুরো নিরাপত্তা তারা দেখবে কি নাÑ জানতে চাইলে মেনন বলেন, ‘না, না, না। সিকিউরিটি দেখবে আমাদের লোকজন। তারা সুপারভাইজারি কাজ করবে। কনসালটেন্সি দেবে, জনবলকে ট্রেইন করবে।
সিভিল এভিয়েশনের এক কর্মকর্তা বলেন, রেড লাইন বিশ্বের বিভিন্ন বিমানবন্দরে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরাপত্তার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। রেড লাইনকে দায়িত্ব দিলে ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়া যেসব কারণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তা কেটে যাবে। স্ক্যানিং মেশিন থেকে শুরু করে সব ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহারে এ সংস্থাটি দক্ষ এবং তাদের বেশ সুনাম রয়েছে।