Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বার্থান্বেষী মহলের নির্দেশে তদন্ত কর্মকর্তা অসত্য সাক্ষ্য দিয়েছেন -খালেদা জিয়া

জবানবন্দীতে চাঞ্চল্যকর তথ্য

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্বার্থান্বেষী মহলের নির্দেশে বিরাগের বশবর্তী হয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে অসত্য সাক্ষ্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, মামলার স্বাক্ষী পি. ডব্লিউ-১ হারুন-অর-রশীদ সম্পূর্ণরূপে একজন ইন্টারেস্টেড সাক্ষী। তিনি অতি উৎসাহী। আওয়ামী লীগ সরকারের আজ্ঞাবহ। এই মামলায় একই সাথে তিনি অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা, মামলার বাদী এবং তিনিই এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। ফলে তিনি নিরপেক্ষ কোনো অনুসন্ধান করেন নাই বা নিরপেক্ষ কোনো তদন্তও করেন নাই। গতকাল (বৃহস্পতিবার) বকশীবাজারের আলীয়া মাদরাসায় স্থপিত বিশেষ আদালতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার অসমাপ্ত জবানবন্দীদান কালে তিনি এসব কথা বলেন।
ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আদালতে দেয়া জবানবন্দীতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে যে জবানবন্দী প্রদান করেছেন তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষীদের সাক্ষ্যে আমি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আমার ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এতিম তহবিল সংক্রান্তে কোনোরূপ অনুদান গ্রহনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম- এরূপ কোনো বক্তব্য কোনো পর্যায়ে কোনো সাক্ষী দেয় নাই। আমি প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল সংক্রান্ত কোনো অনুদান গ্রহণ বা বিতরণের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম- এরূপ সাক্ষ্য রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীগণের কেউই বলেন নাই। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীগণের সাক্ষ্যে এটা দৃশ্যমান যে, প্রধানমন্ত্রীর দফতরে ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল এবং স্বেচ্ছাধীন তহবিল সংক্রান্ত নথি চলমান ছিল এবং আছে। ওই দু’টি তহবিল পরিচালনা সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্র আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীগণ দ্বারা উপস্থাপন করা হয়েছে। এই দু’টি তহবিল সংক্রান্ত যাবতীয় আবেদন নোটশীটের মাধ্যমে উপস্থাপন এবং সংশ্লিষ্ট সাচিবিক দ্বায়িত্ব পালনের মাধ্যমে যথার্থ বিবেচিত হয়েছে বলে তাদের মতামত নোট আকারে নোটশীটের মাধ্যমে উপস্থাপনের পরেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব ও কর্তব্য হিসেবে আমি তাতে আমার স্বাক্ষর দিয়েছি। এরূপ মূল নথি এবং যাবতীয় রেকর্ডপত্র উপস্থাপন করা হয়েছে এবং রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীগণ তা প্রমাণ করেছেন। এ বিষয়ে আমার দায়িত্ব পালনে কোনো ব্যতয় ঘটে নাই।
তিনি বলেন, ১৯৯১ সালের ৯ জুন থেকে ২০০৭ সালের ২৮ মার্চ পর্যন্ত এই মামলার ঘটনার বিবরণ রয়েছে এবং ২০০৯ সালের ৫ আগস্টে এই মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল হয়েছে। এই ১৮ বছরের দীর্ঘ সময়কালের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পর্কে ন্যায়বিচারের স্বার্থে আপনার নিকট প্রকৃত তথ্য ও ব্যাখ্যা তুলে ধরা প্রয়োজন। আদালতের উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়া বলেন, এই মামলার এজাহারকারী মোঃ হারুন-অর-রশীদ পি.ডব্লিউ-১ হিসাবে মামলায় সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। তার জবানবন্দির কিছু অংশ আমাকে শুনানো হয়েছে। পি.ডব্লিউ-১ হারুন-অর-রশীদ মামলা দায়েরের পূর্বে অনুসন্ধানের কাজ করেছেন বলে দাবী করেন। তিনি গত ২০০৮ সালের ২৫ জুন একটি অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করেন। তার পূর্বে ২০০৮ সালের ১১ জুন দুদকের সহকারী পরিচালক মোঃ নুর আহাম্মদও একটি পুর্ণাঙ্গ অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করেন। সেই প্রতিবেদনে মোঃ নুর আহাম্মদ এই মামলায় আমার কোনরূপ সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় আমার বিরুদ্ধে তিনি কোন মতামত প্রদান করেন নি। অথচ মোঃ নুর আহাম্মদ কর্তৃক এইরূপ একটি পুর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিলের পর সম্পূর্ণ বে-আইনীভাবে হারুন-অর-রশীদকে একই বিষয়ে পুনরায় অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং তিনি আমার বিরুদ্ধে কোনো তথ্য প্রমান ছাড়াই ২০০৮ সালের ২৫ জুন একটি মনগড়া অনুসন্ধান রিপোর্ট দাখিল করেন।
বেগম জিয়া বলেন, এই দুইটি অনুসন্ধান রিপোর্ট পাশাপাশি পর্যালোচনা করলে আপনি দেখতে পাবেন অনুসন্ধান রিপোর্ট দুইটি ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি কর্তৃক দাখিল হওয়া স্বত্তে¡ও দুইটি রিপোর্টের ভাষা, বাক্য ও শব্দ চয়ন এক ও অভিন্ন। ২০০৮ সালের ১১ জুনের রিপোর্টে “সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপক মোঃ আজিজুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।” মর্মে একটি বাক্য আছে। ২০০৮ সালের ২৫ জুনের রিপোর্টেও “সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপক মোঃ আজিজুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।” মর্মে অনুরূপ একটি বাক্য রয়েছে। দুইটি রিপোর্টের দুইটি বাক্যেই “আজিজুল” নামটি কেটে একই হাতে আজিজুলের উপরে “মফিজুল” নামটি বসানো হয়েছে। দুইজন অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুইটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে দুইটি ভিন্ন ভিন্ন রিপোর্ট দাখিল করলেও একই হাতের লেখায় একই নাম অনুরূপভাবে কাটাকাটি কী করে সম্ভব তা আপনি বিবেচনা করে দেখবেন। তিনি বলেন, এতে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, সাক্ষী হারুন-অর-রশীদ কোনো নিরপেক্ষ অনুসন্ধান না করে একটি মহল কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে পূর্বের রিপোর্ট অর্থাৎ নুর আহাম্মদ কর্তৃক ২০০৮ সালের ১১ জুনের রিপোর্টটিই হুবহু প্রিন্ট করে রিপোর্টের শেষাংশে শুধু আমার নামটি সংযোজন করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা সাক্ষী হারুন-অর-রশীদ নিরপেক্ষ অনুসন্ধান না করে নিজেই দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহন করে একটি অসত্য রিপোর্ট দাখিল করে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। ফলে এই সাক্ষীর সাক্ষ্য আইনের দৃষ্টিতে অগ্রহনযোগ্য।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ২০০৮ সালের ১১ জুনের রিপোর্টে আমার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে কোনো প্রাথমিক অভিযোগ না পাওয়ায় পি.ডব্লিউ-১ হারুন-অর-রশীদকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এবং বে-আইনীভাবে পুনরায় অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ ও দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা-২০০৭ অনুযায়ী একই ব্যক্তি কর্তৃক বারবার কিংবা একই বিষয়ে বারবার অনুসন্ধান কিংবা প্রতিবেদন দাখিলের কোনো আইনগত বিধান নাই।
বেগম জিয়া হারুন-অর-রশীদকে ইন্টারেস্টেড সাক্ষী উল্লেখ করে বলেন, তিনি অতি উৎসাহী। আওয়ামী লীগ সরকারের আজ্ঞাবহ। তিনি নিরপেক্ষ কোনো অনুসন্ধান করেন নাই বা নিরপেক্ষ কোনো তদন্তও করেন নাই। তিনি আরও বলেন, দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক হিসাবে এই সাক্ষী ২০০৮ সালের ২৫ জুন অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করেন। এই হারুন-অর-রশীদ ১৯৭৯ সালে ‘এ্যাসিস্টেন্ট’ পদে তৎকালীন ব্যুরো অব এন্টিকরাপশনে যোগদান করেন বলে দাবী করেছেন। অথচ ১৯৭৯ সনের ব্যুরো অব এন্টিকরাপশনের অর্গানোগ্রামে ‘এ্যাসিস্টেন্ট’ নামের কোনো পদ বা পদবী ছিল না। এই এ্যাসিস্টেন্ট পদটি ব্যুরো অব এন্টিকরাপশনে স্থান পায় ১৯৮৫ সনের ১১ সেপ্টেম্বর। তাহলে ১৯৭৯ সালে এ্যাসিস্টেন্ট হিসাবে তার নিয়োগ প্রশ্নবিদ্ধ এবং অবৈধ। তার নিয়োগ অবৈধ হওয়ায় তিনি নিরপেক্ষ অনুসন্ধান বা তদন্ত করার মতো তার কোনো নৈতিক মনোবল ছিল না। ফলে সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে তাদের নির্দেশিত মতে অনুসন্ধান ও তদন্ত করে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সাক্ষী ১৯৭৯ সালে এ্যাসিস্টেন্ট পদে প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগের পর বিভিন্ন কৌশলে ১৯৮৫ সালে এ্যাসিস্টেন্ট ইন্সপেক্টর এবং ১৯৯২ সনে ইন্সপেক্টর পদে পদোন্নতি নেন। ২০০৫ সালে বিএনপি ও চার দলীয় জোট সরকারের শাসনামলে তাকে অযোগ্য হিসাবে দুর্নীতি দমন কমিশনে আত্তীকরণ না করে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সেই অব্যাহতি আদেশের বিরুদ্ধে এই সাক্ষী হাইকোর্টে রীট পিটিশন দায়ের করে হেরে যান। সেই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টে লীভ টু আপীল ফাইল করে তিনি অদৃশ্য ইশারায় সেই লীভ টু আপীল প্রত্যাহার করে নেন এবং তার পরপরই ২০০৮ সনে তাকে সরাসরি উপ-সহকারী পরিচালক পদে দুর্নীতি দমন কমিশনে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগের মাত্র দুই দিন পর এই মামলার অনুসন্ধানের দায়িত্ব তাকে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, আমার বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিলের সময়ের মধ্যেই তাকে পদোন্নতি দিয়ে সহকারী পরিচালক করা হয়। আর চার্জশীট দাখিলের পর ২০১২ সালে পুরস্কার স্বরূপ আবারো তাকে পদোন্নতি দিয়ে করা হয় উপ-পরিচালক।
আদালতকে খালেদা জিয়া বলেন, পি.ডব্লিউ-১ হারুন-অর-রশীদ ২০০৫ সালে চাকুরীচ্যুত হওয়ার কারণে তিনি আমাদের উপরে ক্ষিপ্ত ছিলেন। তারই ফলশ্রুতিতে আমাদের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্য তাকে বেছে নেওয়া হয়। ফলে এই সাক্ষী বিরাগের বশবর্তী হয়ে স্বার্থান্বেষী মহলের ইচ্ছা ও নির্দেশ অনুযায়ী আমার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন এবং তারই ধারাবাহিকতায় আমার বিরুদ্ধে আদালতে অসত্য সাক্ষ্য প্রদান করেন।
তিনি বলেন, পি.ডব্লিউ-১ আদালতে দেওয়া তার জবানবন্দিতে বলেছেন যে, ১৯৯১-১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে আমি নাকি প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল নামে চলতি হিসাব খুলি। সাক্ষীর এই বক্তব্য মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। সোনালী ব্যাংক লিঃ, রমনা কর্পোরেট শাখার হিসাব নং-৫৪১৬ খোলার ফরমে আমার কোনো স্বাক্ষর নাই। অথবা বাগেরহাটে জিয়া মেমোরিয়াল ট্রাস্ট কিংবা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে টাকা বিলি বন্টনের ক্ষেত্রে কোনো ফাইলেও আমার স্বাক্ষর নাই। এই নামে কোনো তহবিলও নাই। অথচ আমার নিজের ও দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার উদ্দেশ্যে এই সাক্ষী উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা জবানবন্দি প্রদান করেছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সাক্ষী সোনালী ব্যাংক, রমনা কর্পোরেট শাখা থেকে উপরোক্ত হিসাবের সমস্ত তথ্যবিবরণী কিংবা সংশ্লিষ্ট রেজিস্টার আপনার সামনে উপস্থাপন করেন নাই। ১৯৯১ সালের ২ জুনের পূর্বে সোনালী ব্যাংক, রমনা কর্পোরেট শাখায় কে ম্যানেজার ছিলেন, সেই তথ্যও আপনার সামনে আনেন নাই। ফরেন কারেন্সিতে রেমিটেন্স আসলে কী কী তথ্য থাকা প্রয়োজন বা এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিলো কিনা কিংবা এই সংক্রান্ত লেনদেনের ক্ষেত্রে আমার কোনো সম্পৃক্ততা আছে কিনা সেই সব বিষয়ে কোনো তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই আমার বিরুদ্ধে তিনি এজাহার দায়ের করেছেন। এই টাকার উৎস সম্পর্কে তিনি কোনো তথ্য প্রাপ্তি ছাড়াই এজাহার রুজু করেছেন।
খালেদা জিয়া বলেন, সাক্ষী হারুন-অর-রশীদ আমার কোনোরূপ সংশ্লিষ্টতা না পাওয়া স্বত্তে¡ও ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সময়কালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সোনালী ব্যাংক, রমনা শাখায় প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল নামীয় একটি চলতি হিসাব খুলেন যার হিসাব নং-৫৪১৬” মর্মে এজাহারে সম্পূর্ণ মিথ্যা উক্তি করেছেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট সম্পূর্ণরূপে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়া স্বত্তে¡ও ঐ প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রধানমন্ত্রীত্বের পদকে অহেতুক সম্পৃক্ত করে কতিপয় গোঁজামিল ও মিথ্যা বক্তব্য এজাহারে উল্লেখ করেন। এই সাক্ষী “চেক নং- ৮৪৩১১০৩, তারিখ ১৩/১১/১৯৯৩ মূলে অনুদানের অর্থ হইতে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বগুড়ায় একটি এতিমখানা স্থাপনের নামে জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্টের অনুকুলে প্রদান করেন” মর্মে প্রধানমন্ত্রীর পদ জড়িয়ে যে বক্তব্য প্রদান করেছেন তা উদ্দেশ্যমূলক ও মিথ্যা। আমি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কিংবা আমি নিজে স্বাক্ষর করে এইরূপ কেনো চেক প্রদান করি নাই।
তিনি বলেন, এই সাক্ষী আমাকে জড়িয়ে এজাহারে ও জবানবন্দিতে বলেছেন যে, আমি নাকি বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে প্রাইম ব্যাংক, গুলশান শাখায় এফডিআর হিসাব খোলার নামে অর্থ স্থানান্তর করেছি। সাক্ষীর এইরূপ অভিযোগ মনগড়া ও ভিত্তিহীন। তিনি ব্যক্তিগত ও চাকরি জীবনে বিশেষ সুবিধা পাওয়ার আশায় এবং ক্ষমতাসীনদের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য এবং আমি এবং আমার দলকে সামাজিক ও রাজনৈকিভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করার উদ্দেশ্যে এইরূপ মিথ্যা উক্তি তিনি এজাহারে উল্লেখ করেছেন এবং জবানবন্দি প্রদান করেছেন। তার এই মিথ্যা বক্তব্যের সূত্র ধরেই আমার প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল জনসম্মুখে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করে চলেছে।
বেগম জিয়া বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্টের সাথে আমার ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক নাই। অথচ এই সাক্ষী আমার নামটি জড়িয়ে এজাহারে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন এবং আমার নামে মিথ্যা জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার বিচার্য বিষয় প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল সংক্রান্ত কোনো মূল নথি দুদক কর্তৃক মৌখিক এবং লিখিতভাবে চাওয়ার পরেও এইরূপ নথি উপস্থাপন করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলে বিদেশী অনুদান সোনালী ব্যাংক রমনা কর্পোরেট শাখায় এসেছে, এরূপ দাবির সমর্থনে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখা থেকে মূল ডি.ডি. সোনালী ব্যাংক দিতে পারেনি। এ সংক্রান্ত বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখা থেকে একটি একাউন্ট খোলার আবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে এবং তা প্রধানমন্ত্রীর দফতরের তদানীন্তন সচিব ড. কামাল সিদ্দিকী কর্তৃক খোলা হয়েছে বলে দাবি করা হয়। উক্ত একাউন্ট সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা কোনো লেজার বা অন্য কোনো ডকুমেন্ট দ্বারা কোনো সাক্ষ্য প্রদান করেন নাই। একাউন্ট ওপেনিং ফরমের কোথাও প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কোনো দাপ্তরিক আদেশ অথবা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমার অনুমোদন গ্রহন করা হয়েছে- এরূপ কোনো দালিলিক সাক্ষ্য কেউ উপস্থাপন করেননি। এই একাউন্ট ওপেনিং আবেদনে কোথাও আমার কোনো সই-স্বাক্ষর নেই। সাক্ষীগণের সাক্ষ্যের স্বীকৃত মতে তদানিন্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ.এস.এম. মোস্তাফিজুর রহমান নিজ উদ্যোগে এই অনুদানের অর্থ আনার ব্যবস্থা করেন। পি.ডব্লিউ-৩১ ও পি.ডব্লিউ-৩২ উভয়ে তাদের সাক্ষ্যে তদানিন্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের নাম মূল অনুদান আনার বিষয় বিভিন্ন তথ্যাবলী সংগ্রহের মাধ্যমে স্বীকার করেন। সোনালী ব্যাংক সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তা একাউন্ট খোলা সম্পর্কিত অভিযাচনপত্রের পরেও কোনরূপ তথ্য সরবরাহ করতে পারেন নাই। এক্সিবিট-৪৮-এ এই সাক্ষ্য আছে।



 

Show all comments
  • Md Jaberul Korim ২৪ নভেম্বর, ২০১৭, ২:১৮ এএম says : 0
    100% right
    Total Reply(0) Reply
  • Rezaul Karim ২৪ নভেম্বর, ২০১৭, ২:৩৫ এএম says : 0
    আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোন মন্তব্য নাই।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Mijanur ২৪ নভেম্বর, ২০১৭, ২:৩৬ এএম says : 0
    তীব্র নিন্দা জানাই
    Total Reply(0) Reply
  • Md Alamgir Hosain ২৪ নভেম্বর, ২০১৭, ২:৩৬ এএম says : 0
    দেশনেত্রীকে স্হায়ী জামিন দেয়া উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • বাবুল ২৪ নভেম্বর, ২০১৭, ২:৩৮ এএম says : 0
    আসল সত্য একদিন না একদিন বেড়িয়ে আসবে
    Total Reply(0) Reply
  • Siddik ২৪ নভেম্বর, ২০১৭, ১০:০২ এএম says : 0
    শুভ হোক আগামী দিনের পথ চলা
    Total Reply(0) Reply
  • Nur hossain Bulbul ২৪ নভেম্বর, ২০১৭, ১০:০৩ এএম says : 0
    Mother of democracy
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খালেদা জিয়া

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ