দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
চতুর্থত : নস অথবা শব্দতত্তে¡র মধ্যে বৈপরিত্যের ক্ষেত্রে এর মধ্যে সমন্বয়, ধারাবাহিকতার পদ্ধতি অবগত হওয়া।
উসূলবিদগণের শর্তানুযায়ী যদি এসবের মধ্যে বৈপরিতা থাকে তবে সেক্ষেত্রে করণীয়। ১. উভয়ের মধ্যে সমন্বয় করা ২. সমন্বয় সম্ভব না হলে একটিকে অগ্রাধিকার দেয়া ৩. অগ্রাধিকার সম্ভব না হলে ইখতিয়ার প্রদান।
আলিমগণ একমত যে, সুস্থ বিবেক সহীহ বর্ণনামূলক দলীলের বিরোধী নয়। তারপরেও যদি সহীহ বর্ণনার সাথে আকলের সংঘাত হয় সেক্ষেত্রে বর্ণনাকেই গ্রহণ করতে হবে ও আকল পরিত্যাগ করতে হবে। ফিকহী কায়িদায় মাধ্যমে বিধান নির্ণয়: ফিকহী কায়িদা মুজতাহিদ, গবেষক ফকীহ, মুফতী, বিচারক ও শাসকের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ শরঈ ইলম। ফিক্হী কায়িদার সংজ্ঞা প্রদানের ক্ষেত্রে ফকীহগণ দুটি মতামতে বিভক্ত হয়েছেন। প্রথম মত অনুযায়ী এটি এমন এক সামগ্রিক বিষয় যা তার অধীনস্থ বিধান বা অধিকতর প্রভাব বিস্তারকারী বিষয়, সামগ্রিক নয় যা অধিকাংশ শাখার বিধান নির্ণয়ের জন্য প্রয়োগ করা হয়।
দ্বিতীয় মত অনুযায়ী এটি একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধান বা অধিকতর প্রভাব বিস্তারকারী বিষয়, সামগ্রিক নয় বা অধিকাংশ শাখার বিধান নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজ করা হয়। ফিকহ ও উসূল মূলত একটি গাছের দুটি শাখা স্বরূপ। একজন ফকীহকে যেমন-উসূলে পারদর্শী হতে হয়, একইভাবে একজন উসূলবিদকে ফিকহে পারদর্শী হতে হয়। তবুও উভয়টি স্বতন্ত্র বিজ্ঞান হিসেবে উভয় কায়িদার মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। ইমাম কারাফী সর্বপ্রথম এ দুই শ্রেণীর কায়িদার মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করেন। তিনি তাঁর আল-ফুরুক গ্রন্থের ভূমিকায় বলেন, মুহাম্মদ সা. এর শরীয়ত উসূল ও ফুরু এ দু’টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে। আর এ উসূল দু’ভাগে বিভক্ত-
প্রথম: উসূলে ফিকহ যার মধ্যে বিশেষত আরবী শব্দতত্তে¡র ভিত্তিতে উদ্ভাবিত বিধান সমূহের মূলনীতি বর্ণিত হয়েছে।
দ্বিতীয়ত: সামগ্রিক ফিকহী কায়িদা, যার মধ্যে শরীয়াতের বিধান প্রবর্তনের গুঢ়রহস্য বর্ণিত হয়েছে। যার কোন কিছুই উসূলে ফিকহে বর্ণিত হয়নি। অতএব বলা যায়, ফিকহী কায়িদা এমন এক বিধান যার অধীনে ফিকহের অসংখ্য গৌণ বিষয় একত্র হয়। আর উসূলের কায়িদাক মূলত এমন নীতিমালাকে বলা হয় যা একজন ফকীহকে শরঈ দলীল থেকে বিধান নির্ণয়ের পন্থা বাতলে দেয়।
ফিকহী জাবিত বলা হয় এমন এক সামগ্রিক বিধানকে যা ফিকহের একটি নির্দিষ্ট অধ্যায়ের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার উপর প্রয়োগ করা হয়। “কাহতানী, ড. মুফসির, মানহাজু ইসতিখরাজ, প্রগুক্ত, খ. ২, পৃ. ৪৮৬। উপরিউক্ত সংজ্ঞা থেকেই উভয়ের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট হয় যে, কায়িদা বা মূলনীতি এমন এক সামগ্রিক বিষয় যা বিভিন্ন অধ্যায়ের বিভিন্ন বিষয়ের বিভিন্ন মাসআলার ওপর প্রয়োগ করা হয়। পক্ষান্তরে জাবিত শুধুমাত্র নির্দিষ্ট অধ্যায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
উদাহরণ (উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে বিধান নির্ধারিত হয়) কায়িদাটি ফিকহের বিভিন্ন অধ্যায় যেমন- তাহারাত, সালাত, যাকাত, সাওম, নিকাহ, তালাক ইত্যাদি বিষয়ের উপর প্রয়োগ করা যায়। এমনকি ইমাম শাফিঈ থেকে বর্ণিত হয়েছে, এটি সত্তরটি অধ্যায় প্রবিষ্ট হয়। কিন্তু জাবিত শুধু একটি অধ্যায়ে অন্তর্ভুক্ত হয়। যেমন-‘মৃতব্যক্তি ব্যতীত যার উপর গোসল ফরয তার ওপর অযুও ফরয’ এটি শুধু তাহারাতের অধ্যায়কে অন্তর্ভুক্ত করে।
যে কায়িদাটি প্রয়োগ করা হবে সে কায়িদা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শর্ত বাস্তবে থাকা। কষ্ট বা ক্লেশ বাস্তবেই বর্তমান থাকা। কষ্ট বা ক্লেশ স্বাভাবিক মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়া। উক্ত কষ্ট প্রদান শরীয়াত প্রণেতার উদ্দেশ্য না হওয়া। কায়িদাটি প্রয়োগ করলে যেন এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোন কিছু ছুটে না যায়।
কায়িদা সংশ্লিষ্ট বিধান তার চেয়ে শক্তিশালী দলীল বা কায়িদা বিরোধী না হওয়া। কিন্তু এটি মাছের ক্ষেত্রে প্রয়োগ হবে না। কেননা মৃত মাছ খাওয়ার বৈধতার ব্যাপারে মহানবী সা. এথেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যে বিষয়ের বিধান নির্ণয়ের জন্য কায়িদা প্রয়োগ করা হবে বিষয়ে কুরআন সুন্নাহ, ইজমার কোন নস বর্ণিত না থাকা। অন্যান্য কায়েদার ক্ষেত্রে একই ধরণের সতর্কতা নিতে হবে।
যে ব্যক্তিকে ওঈট তে খরভব ঝঁঢ়ঢ়ড়ৎঃ দিয়ে রাখা হয়েছে তার ব্যাপারে শরঈ বিধান কী হবে? এ সম্পর্কে যে ফিকহী কায়িদা প্রয়োগ করা যায় তাহল, “কৃত্রিম জীবন অস্তিত্বহীনের মত।” একজন রোযাদার এক দেশ থেকে সাহরী করে বিমান যোগে অন্য দেশে গেলেন যেখানে তার ইফতারের সময়ের ব্যবধান কয়েক ঘন্টা। তিনি কখন ইফতার করবেন? মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতির ফলে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এর সমাধানে “বাহ্যিক অনুধাবনের ভিত্তিতে বিধান নির্ধারিত হয় অজ্ঞাত বাস্তবতা গ্রাহ্য নয়। এ ফিকহী কায়িদাটি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।
তাখরীজ ফিকহীর সংজ্ঞা তাখরীজ ফিকহীর সংজ্ঞা বর্ণনায় ইবনে ফারহুন মালিকী বলেন, “নসভিত্তিক কোন মাসআলার বিধান েেক (সাদৃশ্যপূর্ণ) মাসআলার বিধান নির্গমণ। শায়খ আলভী আসসাক্কাফ বলেন, মাযহাবের ফকীহগণ কর্তৃক কোন বিষয়ে তাদের ইমামের বর্ণিত বিধানের অনুরূপ বিধান অন্য বিষয়ের জন্য নির্ধারণ করাকে তাখরীজ ফিকহী বলা হয়। আহমদ ইবনে তাইমিয়া বলেন, “কোন মাসআলার বিধানকে তার অনুরূপ মাসআলার জন্য বহন করা এবং এ বিষয়ে উভয়ের মধ্যে সামঞ্জস্যবিধান করা।” এককথায়, মাযহাবের ইমামগণের মতামত ও নীতিমালার আলোকে শরঈ প্রয়োগিক বিধান বা বিধানের নীতিমালা নির্ণয় করাকে ফিকহী তাখরীজ বলে।
(চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।