দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পুণ্যময় সত্ত¡া ছিলো অনুপম চরিত্র-মাধুরী, মহোত্তম গুণাবলী ও সার্বিক সৌন্দর্যে সুষমামন্ডিত ও শ্রেষ্ঠ। তাঁর সবগুলো গুণ ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা দেয়া মানুষের সাধ্যাতীত। কেননা সৃষ্টিজগতে যতো পরাকাষ্ঠা ও উৎকর্ষতা কল্পনা করা সম্ভব তার সবকিছুই নবীকরীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অর্জিত ছিলো। আম্মাজান হযরত আয়েশা রা.কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো প্রিয়নবীজীর চারিত্রিক গুণাবলী সম্পর্কে। তিনি উত্তরে বলেছিলেন- ‘পবিত্র কোরআনই ছিলো তাঁর চরিত্র’। অর্থাৎ পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আদেশসমূহ পালন ও নিষিদ্ধ বিষয়াবলী বর্জনই ছিলো মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চরিত্র। অন্য কথায় বলা যায়, কোরআনুল কারীমে বর্ণিত সকল প্রশংসনীয় চারিত্রিক গুণাবলী দ্বারা তিনি ছিলেন গুণান্বিত। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসংখ্য চারিত্রিক গুণাবলীর মধ্যে ‘ধৈর্য ও ক্ষমা’ ছিলো অন্যতম। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআন-হাদীছ ও সীরাতের কিতাবসমূহে বহুবিধ ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। বক্ষমান নিবন্ধের সংক্ষিপ্ত পরিসরের কারণে সেগুলো থেকে কিঞ্চিত আলোচনা নি¤েœ প্রদান করা হলো।
‘মু’জামে তবরানী’ নামক গ্রন্থে মুনীর গামেদী রা. থেকে বর্ণিত (তিনি বলেন), আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে দেখতে পেয়েছি, তিনি মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলছেন- হে মানুষ! তোমরা বলো, আল্লাহ ব্যতিত কোন উপাস্য নাই- তাহলে তোমরা সফলকাম হবে; কিন্তু কতক দুর্ভাগা তাঁকে গালি দিচ্ছিলো, তাঁর প্রতি থুথু নিক্ষেপ করছিলো। আবার কতক হতভাগ্য তাঁর প্রতি মাটি নিক্ষেপ করছিলো। এভাবে দুপুর হয়ে গেলো, তখন এক বালিকা পানিসহ আগমন করে তাঁর (সা.) জ্যোতির্ময় মুখমন্ডল মোবারক ধৌত করলেন। আমি বালিকাটির পরিচয় জানতে চাইলাম। উপস্থিত লোকজন বললো, বালিকাটি নবীকরীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুলালী যয়নব রা.। [সূত্র: সীরাতুল মোস্তফা সা.- আল্লামা ইদ্রীস কান্দলভী রাহ.]
হাদীছে আছে, রাসূলুল্লাহ সা. কখনো ব্যক্তিগত ব্যাপারে কিংবা ধনৈশ্বর্যের খাতিরে কারো কাছ থেকে প্রতিশোধ নেননি। কিন্তু এমন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রতিশোধ নিয়েছেন, যে আল্লাহর হালাল করা বস্তুকে হারাম সাব্যস্ত করেছে। আর এ ধরণের লোকের কাছ থেকে আল্লাহর ওয়াস্তেই প্রতিশোধ নিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সা. এর সর্বাধিক কঠিন সবর ছিলো ওহুদ যুদ্ধে, যেখানে কাফেররা তাঁর সাথে যুদ্ধ ও মোকাবেলা করে এবং গুরুতর কষ্ট দেয়। কিন্তু তিনি কেবল সবর ও ক্ষমা করেই ক্ষান্ত হননি, বরং তাদের প্রতি ¯েœহ ও অনুকম্পা প্রদর্শন করে তাদের এ অন্যায় ও মূর্খতাপ্রসূত কাজকে ক্ষমার্হ সাব্যস্ত করে বলেছেন: হে আল্লাহ! আমার সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করুন। কেননা, ওরা অজ্ঞ।’ এক রেওয়ায়েতে আছে -‘হে আল্লাহ! ওদেরকে ক্ষমা করে দিন।’ কিন্তু ব্যাপারটি সাহাবায়ে কেরামের কাছে অসহনীয় ঠেকে। তাঁরা বললেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি ওদের জন্যে বদ-দো’য়া করুন, যাতে ওরা নির্মূল হয়ে যায়। তিনি জওয়াব দিলেন : আমি অভিসম্পাত করার জন্য প্রেরিত হইনি। বরং আমি সত্যের দা’ওয়াত ও বিশ্বজাহানের জন্যে রহমতরূপে প্রেরিত হয়েছি। ‘শেফা-মাদারেজুন্নবুওয়ত, সূত্র: ওসওয়ায়ে রসূলে আকরাম সা. (আল্লামা মুহীউদ্দীন খান রাহ. অনুদিত) পৃ:-৪৫’
হযরত আনাস রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন : আল্লাহর পথে আমাকে যতটুকু ভয় দেখানো হয়েছে, ততটুকু অন্য কাউকে দেখানো হয়নি। আল্লাহার পথে আমাকে যতটুকু নির্যাতিত করা হয়েছে, ততটুকু অন্য কাউকে করা হয়নি। একবার ত্রিশটি দিবারাত্র আমার এমন অতিবাহিত হয়েছে, যখন আমার ও বিলালের জন্যে এমন কোন আহার্যবস্তু ছিলো না, যা কোন প্রাণী খেতে পারে, সেই বস্তু ছাড়া-যা বেলাল তার বগলে লুকিয়ে রেখেছিলো। ‘মা’আরেফুল হাদীস, শামায়েল, সূত্র : প্রাগুক্ত’
মহানবী সা. তায়েফবাসীকে ইসলামের দা’ওয়াত দেন। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে মহানবী সা. এর উপর নির্যাতন চালাতে উদ্যত হয়। এমনকি প্রস্তরাঘাতে তাঁর শরীর মোবারক বক্তাক্ত করে ফেলে। তিনি হুঁশ হারিয়ে ফেলেন। এহেন দু:খ ও বেদনার মুহুর্তেও তিনি তাদের জন্য বদদো’য়া করেননি। যেহেতু তিনি ছিলেন ‘রাহ্মাতুল্লিল আলামীন’ বা সারাজগতের রহমত স্বরূপ। বরং তিনি বললেন- ‘আমি ওদের ধ্বংসের জন্য দোয়া কিরূপে করবো ? ওরা ইসলাম গ্রহণ না করলেও আশা করা যায় যে, তাদের ভবিষ্যৎ বংশধরেরা অবশ্যই আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে।’ ‘সহীহ মুসলিম, সূত্র: প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-৪৭’
মক্কার কাফেররা অনেক বছর পর্যন্ত হযরত রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের প্রতি সীমাহীন জুলূম অত্যাচার করেছে। এমনকি তাঁদেরকে বাস্তুভিটাচ্যুত করেছে। অবশেষে মুসলমানরা তাঁদের প্রিয়জন্মভূমি মক্কা ছেড়ে মদীনায় চলে যেতে বাধ্য হন। কিন্তু মক্কাবিজয়ের পর ইসলামের দুশমনেরা সম্পূর্ণভাবে মহানবী সা. এর দয়া ও কৃপার পাত্র হয়ে পড়ে। প্রিয়নবী সা. এদেরকে হাতের নাগালে পেয়েও কোন ধরণের প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। বরং এদেরকে ক্ষমা করে দিলেন। ফলে মহানবী সা.এর এ উদারতায় মুগ্ধ হয়ে মক্কার কাফেররা দলে দলে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে অংশ গ্রহণ করে।
(চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।