পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
লুকানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নির্দেশও : দুদকে দেয়া সম্পদ বিবরণীতে ব্যাপক অসঙ্গতি : তৃতীয়বারের মতো অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ
নৌ-পরিবহন অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. এস এম নাজমুল হক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সেগুলো হলো- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে তার বিরুদ্ধে আনা অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে গঠিত কমিটির চলমান কার্যক্রম, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্তৃক তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ ও দ্বিতীয় দফায় সম্পদবিবরণী তলব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংশ্লিষ্ট আয়কর শাখায় দাখিল করা আয়কর রিটার্নে উল্লিখিত সম্পদ বিবরণীর বাইরে একটি প্রাইভেট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে তিনি ও তার স্ত্রী সাহেলা নাজমুলের নগদ তিন কোটি ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ। সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র পর্যালোচনা করে এ তথ্য জানা গেছে।
এ ছাড়া দুদকে দাখিল করা নাজমুল হকের নামে ঢাকা, খুলনা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানের স্থাবর সম্পত্তির যে ক্রয়মূল্য দেখানো হয়েছে তা সম্পূর্ণ বাস্তবতাবিবর্জিত বলেও অভিযোগ উঠেছে। যে কারণে দুদক তার বিরুদ্ধে তৃতীয়বারের মতো নতুন অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ করেছে। এ ছাড়া দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীর বাইরেও এই সরকারি কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর নামে আরো কয়েক কোটি টাকার স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এরপর দুদক নাজমুল হক, তার স্ত্রী সাহেলা নাজমুল, তাদের সন্তান ও পরিবারের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব তলব করেছে। দুদকের উপ-পরিচালক ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা বেনজির আহমেদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে হিসাব চাওয়া হয়। এসব বিষয় জানাজানি হওয়ার পর নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ও নৌপরিবহন অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
নৌ-পরিবহন অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম ফখরুল ইসলাম গত ১৮ জুলাই দুদকের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। এরপর অধিদফতরের পরীক্ষক ড. এস এম নাজমুল হককে গত ২০ আগস্ট প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়। সরকারি বিধি অনুযায়ী, কোনো কর্মকর্তা গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত হলে উচ্চতর পদে পদোন্নতি কিংবা চলতি দায়িত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আর দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হলে দুদকের ছাড়পত্র (দায়মুক্তির সনদ) নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে দুদক অনেক আগেই নাজমুল হকের সম্পদের হিসাব তলব এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে নৌ-মন্ত্রণালয় তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন ও সে তদন্ত চলমান থাকলেও চলতি দায়িত্ব প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তিনি এসব তথ্য গোপন করেছেন।
জানা গেছে, নাজমুল হকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিতকরণের জন্য নৌ-মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়। এই নির্দেশের পর নৌ-মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো: রফিকুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে মন্ত্রণালয়। সে তদন্ত দীর্ঘ এক বছরেও শেষ হয়নি। এমনকি যেদিন (২০ আগস্ট ২০১৭) নাজমুল হককে প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব দিয়ে অফিস আদেশ জারি করা হয়, সেদিন তদন্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামই মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিবের দায়িত্বে ছিলেন।
জানা যায়, দুদক ২০১৪ সালে নাজমুল হকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয় তৎকালীন সহকারী পরিচালক (বর্তমানে উপ-পরিচালক) মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে। দীর্ঘ কালক্ষেপণের পর ২০১৬ সালে তিনি নাজমুল হককে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি প্রদানের সুপারিশ করেন। তবে দুদকের বৈঠকে (কমিশন সভা) সে সুপারিশ নাকচ হয়ে যায় এবং উপ-পরিচালক হামিদুল হাসানকে নতুন অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ করে দুদক। দুদক সূত্রে জানা গেছে, নৌ-পরিবহন অধিদফতরের পরীক্ষক ড. এস এম নাজমুল হকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানকালে হামিদুল হাসান স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব চেয়ে নাজমুল হককে চিঠি দেন এবং এরপর তিনি সম্পদ বিবরণী জমা দেন। কিন্তু অনুসন্ধান প্রতিবেদনে হামিদুল হাসানও তাকে অব্যাহতির সুপারিশ করেন। তবে প্রতিবেদনে উল্লিখিত মূল্যের চেয়ে তার স্থাবর সম্পদের প্রকৃত বাজারমূল্য বহুগুণ বেশি। ফলে দুদকের নীতি-নির্ধারকদের কাছে নাজমুল হকের বৈধ আয়ে এই বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে। যে কারণে দ্বিতীয় দফা অনুসন্ধান প্রতিবেদন ও নাজমুল হককে অব্যাহতির সুপারিশ নাকচ করে তার বিরুদ্ধে তৃতীয়বারের মতো অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ করেছে দুদক। নতুন অনুসন্ধান কর্মকর্তা বেনজির আহমেদ গত ১২ জুলাই এক চিঠিতে নাজমুল হক এবং তার স্ত্রী, সন্তান ও পরিবারের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিবর্গের যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব তলব করেছেন।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, অনুসন্ধান কর্মকর্তা হামিদুল হাসানের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে নাজমুল হক তার নিজের নামে থাকা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও খুলনার কিছু স্থাবর সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে ২০০৭-৮ অর্থবছরে ক্রয়কৃত রাজধানীর ২ নং সিদ্ধেশ্বরী রোডে ‘ডম ইনো প্যাসিও’র চার কক্ষবিশিষ্ট একটি ফ্ল্যাট (ফ্ল্যাট নম্বর এ-১); যার মূল্য দেখানো হয়েছে মাত্র আট লাখ ৫০ হাজার টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে ক্রয়কৃত রাজধানীর খিলক্ষেতে ‘ডম ইনো’র পাঁচ কাঠার একটি আবাসিক প্লটের মূল্য দেখানো হয়েছে ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নাজমুল হক ২০১২-১৩ অর্থবছরে পূর্বাচল মেরিন সিটিতে পাঁচ কাঠার একটি আবাসিক প্লটের ক্রয়মূল্য দেখিয়েছেন মাত্র তিন লাখ টাকা। একই বছর (২০১২-১৩ অর্থবছর) তিন লাখ টাকা ক্রয়মূল্য দেখানো হয়েছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পাঁচ কাঠার একটি আবাসিক প্লটের। তিনি ২০০৩-৪ অর্থবছরে খুলনা মহানগরীর নিরালা আবাসিক এলাকায় ৩ দশমিক ৭৫ কাঠা জমির ক্রয়মূল্য দেখিয়েছেন মাত্র দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা। এসব সম্পত্তি বেতন-ভাতার টাকা থেকে ক্রয় করা হয়েছে বলে সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়। তবে উল্লিখিত সম্পদের মূল্য ‘অবিশ্বাস্য’ মনে করছেন দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তাদের ধারণা, এসব স্থাবর সম্পত্তির প্রকৃত বাজারমূল্য অন্তত দশগুণ বেশি হবে। যে কারণে উপ-পরিচালক হামিদুল হাসানের অনুসন্ধান প্রতিবেদন ও নাজমুল হকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ নিষ্পত্তির সুপারিশ দুদক আমলে নেয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
এ ছাড়া নাজমুল হকের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক ২০১৬ সালে পৃথকভাবে তদন্ত শুরু করে; যার অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিযুক্ত হন দুদকের উপ-পরিচালক মো: জুলফিকার আলী। তিনি অভিযোগকারীর বক্তব্য গ্রহণের জন্য তাকে চিঠি দিয়ে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর দুদক কার্যালয়ে সশরীরে আসতে বলেন। বাদী যথাসময়ে সেখানে গেলেও অনুসন্ধান কর্মকর্তা বিশেষ কারণে সেদিন কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। এরপর এ বিষয়ে অনুসন্ধানের অগ্রগতি সম্পর্কে অভিযোগকারীকে কিছুই জানানো হয়নি বলে অভিযোগকারী জানিয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, দুদকে জমা দেয়া সম্পদ বিবরণীর বাইরেও নাজমুল হকের নামে-বেনামে বিপুল অঙ্কের টাকার সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর মিরপুর ১৩ ও ৪ নম্বরের মাঝামাঝি সেকশনে পুলিশ স্টাফ কলেজের পেছনে ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি ‘বিজয় রাকিন সিটি’র বহুতল আবাসিক ভবনে নাজমুল হকের স্ত্রী সাহেলা নাজমুলের নামে দু’টি ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট রয়েছে; যার নম্বর এ-৬ এবং এ-৭। তিন বছর আগে কল্যাণপুর গার্লস স্কুলের কাছে একটি বহুতল ভবনেও স্ত্রীর নামে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন তিনি। এ ছাড়া রাজধানীর মালিবাগ মোড়ের কাছে ইস্টার্ন হাউজিং কোম্পানির একটি আবাসিক ভবনে এবং ইস্কাটনের দিলু রোডে নাজমুল হকের আলাদা দুটি ফ্ল্যাটের তথ্য পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, স্থাবর সম্পত্তির বাইরে নাজমুল হক ও তার স্ত্রী সাহেলা নাজমুলের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে অঢেল অর্থ রয়েছে। সাহেলা নাজমুল কোনো ব্যবসায়ী বা চাকরিজীবী নন, তিনি একজন গৃহিণী। অথচ ২০১৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বের লোভে গুলশানের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিককে এক কোটি ৭০ লাখ টাকা দেন তিনি। একইদিন নাজমুল হকও ওই ব্যক্তিকে দেন এক কোটি ৫০ লাখ টাকা। পরবর্তী সময়ে অংশীদারিত্ব ও লভ্যাংশ না পেয়ে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে একটি মামলা করেন তার স্ত্রী; যার নম্বর ৪২২/১৪। মামলার সূত্রে জানা যায়, সোনালী ব্যাংক, ভিকারুন্নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ শাখায় সাহেলা নাজমুলের নামে খোলা হিসাবে গত কয়েক বছরে অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে। স্ত্রীর মতো তিনিও অংশীদারিত্ব ও লভ্যাংশ বঞ্চিত হয়ে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে একটি মামলা করেন; যার নম্বর ১৯০১/১৪। এই মামলার সূত্রে জানা যায়, সোনালী ব্যাংক, রাজউক ভবন শাখায় নাজমুল হকের নামে খোলা হিসাবে গত কয়েক বছর ধরে অস্বাভাবিক লেনদেন হচ্ছে। অথচ সরকারি চাকরিজীবী হয়েও ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বের আশায় মোটা অঙ্কের পুঁজি বিনিয়োগের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেননি তিনি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়কর শাখায় দাখিল করা ২০১২-১৩ অর্থবছরের আয়কর রিটার্নেও এই এক কোটি ৫০ লাখ টাকার তথ্য নেই।
এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য নৌ-পরিবহন অধিদফতরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. এসএম নাজমুল হকের কার্যালয়ে গেলে সেখান থেকে জানানো হয়, ‘স্যার এসব বিষয়ে কোনো কথা বলবেন না’।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।