Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সেচ সংযোগ না থাকায় ১০ একর বোরো রোদে পুড়ে নষ্ট

প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা সংবাদদাতা ঃ ময়মসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ অফিস-৩-এর ঈশ্বরগঞ্জ সাবজোনাল অফিসের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। প্রায় দুই মাস ধরে উপজেলার আশ্রবপুর এলাকায় বোরো চাষি গোলাপ মিয়ার একটি সেচ লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় প্রায় ১০ একর জমির চারা রোদে পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীরা। প্রায় দুই মাস পূর্বে ওই এলাকার একটি ট্রান্সফরমার বিকল হলে ঈশ্বরগঞ্জ সাবজোনাল অফিসে ট্রান্সফরমারটি মেরামতের জন্যে আনা হয়।
অফিসের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বে থাকা লোকজনের হাতে-পায়ে ধরেও অদ্যাবধি ট্রান্সফরমারটি লাগানো সম্ভব হয়নি। এতে একটি সেচ লাইনের আওতাভুক্ত বোরো আবাদি জমি হুমকির মুখে পড়ে। আশপাশের অন্য একটি সেচ মেশিন থেকে রোপিত কিছু জমি নষ্টের হাত থেকে বাঁচাতে পারলেও এরই মধ্যে প্রায় ১০ একর জমি রোদে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। গোলাপ মিয়া জানান, ট্রান্সফরমারটির মেরামতের খরচ দিতে রাজি থাকলেও তারা ট্রান্সফরমারটি এখনো মেরামত করে দেননি। এতে তার ৫ একরসহ এলাকার আরো ৫ একর জমি পানি সেচের অভাবে পুড়ে গেছে। দুটি পুকুরে প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকার মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুধু আশ্রবপুর গ্রাম নয়, এরকম আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে অন্যান্য এলাকা থেকেও।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে মেলে না কাক্সিক্ষত সেবা। চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন সংযোগ প্রত্যাশীরা। ইলেকট্রিশিয়ান-রূপী দালাল ও এলাকাভিত্তিক দালাল সদস্যদের কাছে জিম্মি বিদ্যুৎ গ্রাহকরা।
এতে বিদ্যুৎ পেতে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ কাক্সিক্ষত সেবা পাওয়ায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দাপুটে দালাল চক্র। তাদের খপ্পরে পড়ে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন আবেদনকারীরা। শুধু দালাল চক্রই নয় এদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। তারপরও কর্র্র্তৃপক্ষের দাবি গ্রাহকদের সেবা ঠিকঠাকই দেয়া হচ্ছে। নিয়মনীতি মেনেই আদায় করা হচ্ছে সংযোগ সংশ্লিষ্ট অর্থ। অন্য দিকে ভৌতিক বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে নাভিশ্বাস অবস্থা দেখা দিয়েছে সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মাঝে। সাব-জোনাল অফিস স্থাপনের পর থেকে এমন অরাজকতা বিরাজ করলেও প্রতিকারের জন্যে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ-৩ থেকে কোন উদ্যোগই গ্রহণ করা হয়নি বলে জানা গেছে।
গ্রাহকদের অভিযোগে জানা যায়, সরকারি হিসেব অনুযায়ী একটি নতুন সংযোগ পেতে সর্বোচ্চ খরচ হয় মাত্র ৮৫০ টাকা। অনলাইনে আবেদন করলে ১০০টাকা, অফিসে আবেদন জমা বাবদ ফি ১০০ টাকা, মিটার জামানত ৬০০ টাকা, সদস্য ফি ৫০ টাকা। অথচ নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে তাদের।
জরুরী হলে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে দালাল চক্র। শুধু নতুন আবেদন নয়, বিদ্যুৎ অফিসের যে কোন কাজই দালাল ছাড়া হয় না। আবার দালালরা নিজেরাই সিল মেরে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সত্যায়িত করে। এমনকি কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরও নকল করে তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দালাল জানান, একটা নতুন মিটার পাস করাতে ওয়্যারিং ইন্সপেক্টরকে ৫০০ টাকা, অর্ডিনেটর ৩০০ টাকা, লাইন মেন ২০০ টাকা, বিলিং সেকশনের ১০০ টাকাসহ বিভিন্ন কর্মকর্তাকে ১হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা দিতে হচ্ছে। ওই টাকা না দিলে ফাইল এক টেবিলেই পড়ে থাকে অন্য টেবিলে যায় না।
কোন কোন সময় ফাইলটিই গায়েব হয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে গ্রাহকদের।
আবার কোন কোন গ্রাহক অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে আবাসিক ও সেচ মিটারকে বাণিজ্যিক ভাবে ব্যাবহার করে আসছে। কোন কোন গ্রাহক বিদ্যুৎ চালিত অটোবাইক ও অটোরিকশা চার্জ দিয়ে ব্যাবসা করে আসলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রাহণ না করে চুক্তি ভিত্তিক বিল আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে। আবার কোন ক্ষেত্রে একটি মিটার থেকে পুরো এলাকায় ৫০ থেকে ১০০টি পার্শ্ব সংযোগ দিয়ে প্রতি সংযোগে ১০০ টাকা করে চাঁদা তুলে বাণিজ্যি করে আসছে। আর এ সবকিছুই নিয়ন্ত্র করে আসছে ইলেকট্রিশিয়ান রূপী দালাল ও এলাকাভিত্তিক দালাল সদস্যদের সহযোগিতায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
ট্রান্সফরমার আপগ্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে চরম হয়রানির শিকার হয় গ্রাহকরা। দালালের মাধ্যমে এক সপ্তাহর মধ্যে ট্রান্সমিটার পৌছানো সম্ভব হলেও গ্রাহকরা সরাসরি যোগাযোগ করলে সময় লাগে ৪থেকে ৫মাস।
জুনিয়র আবাসিক প্রকৌশলী আজহারুল ইসলাম বলেন, সংশ্লিষ্ট এলাকায় পলট্রি ও রাইস মেইল সহ অনেক অবৈধ সংযোগ ব্যবহারের ফলে ট্রান্সফরমারটি বিকল হয়। ট্রান্সফরমারটির মূল্য পরিশোধ করলেই ওখানে আরেকটি ট্রান্সফরমার লাগানো হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সেচ সংযোগ না থাকায় ১০ একর বোরো রোদে পুড়ে নষ্ট
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ